ভালবাসা মানে বিশ্বাস, ভালোবাসা মানে সাহস। ভালোবাসা মানে ভয় ভেঙে বাধা পেরিয়ে কাছে আসার। আর সেই সব কাছে আসার গল্প নিয়ে সাজানো হয়েছে " কাছে আসার গল্প " ব্লগ সাইটি।☞হাজারো 'কাছে আসার গল্প' শুনতে আমাদের সাথেই থাকুন সব সময়।

Search

Latest update

Banner

11/05/2018

কাছে আসার গল্প : ভাবির সাথে বিয়ে



গল্প : ভাবির সাথে বিয়ে- লেখক : ফরহাদ

* ১ম পর্ব

টিং টিং টিং
>আসসালামু ওয়ালাইকুম(আমি)
>অলাইকুম আসসালাম,,বাবা ভালো আছিস(আব্বু)
>হ্যা, আব্বু আমি ভালো আছি... আপনি কেমন আছেন?
>আমি ভালো আছি... তোর পরিক্ষা কেমন হচ্ছে?
>ভালো হচ্ছে আব্বু।
>শোন, পরিক্ষা শেষ হলে বাড়ি চলে আসবি।
>কেনো আব্বু, বাসায় কিছু হয়ছে।
>আরে না, বাসায় সবাই ঠিক আছে... তুই তো অনেকদিন আসিস না।
>ঠিক আছে আব্বু, আমার পরিক্ষা শেষ হলেই আমি আসছি।
>ঠিক আছে,,এখন রাখছি তাহলে।
ঠিক আছে..এবার আমার পরিচয় টা দিয়... আমি ফরহাদ অনার্স ১ম বর্ষ। আর যার সাথে কথা বলছিলাম তিনি আমার আব্বু... আমি সেই ভয় পায়।আর আমার আম্মু আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। আর আমার একটা ভাই আছে.. আমার বড়ো।

আজ বাড়ি যাচ্ছি কিন্তু কাউকে কিছু জানাই নি।বাড়ি যেয়ে দরজায় নক করছি... একটু পর আম্মু এসে দরজা খুলে দিলো। আর আমি আম্মুকে জড়িয়ে ধরলাম।
>তুই কখন আসছিস?
>আম্মু আমি সোজা তোমার কাছে আসছি।
>তো আমাদের বলিস নি কেন তুই আসছি।
>তোমাকে চমকে দিবো বলে।
>ঠিক আছে যা ফ্রেশ হয়ে নে।
তারপর আব্বু ভাইয়ার সাথে কথা বলে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে একটু বাইরে গেলাম।প্রথমে ফোন দিলাম আমার ফ্রেন্ড আকাশ রে। আমাদের পাশের গ্রামে বাড়ি।
>দোস্ত কই তুই?
>বাড়িতে আছি.. তুই কোথায়?
>আমি বাড়িতে আসলাম আর এখন তোদের ওখানে আসছি।
>ঠিক আছে চলে আয়।
আমি আকাশ দের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছি... তখনি একটা মেয়ে সামনে দিয়ে হেটে যাচ্ছে। মেয়েটার রুপের যে বর্ণনা দিবো সেটাই কম হয়ে যাবে। এক কথায় অপরূপ সুন্দরি। ঠিক তখনি আকাশ আসলো
>দোস্ত ওই মেয়েটা কে?
>তুই নীলা আপুর কথা বলছি(আকাশ)
>নীলা আপু মানে।
>আরে আপু এখন ২য় বর্ষে পড়ছে।
>কসসস কি,,,এতোদিন কয় ছিলো আগে তো দেখি নি।
>আগে নানার বাড়ি থেকে পড়তো.. এখন বাড়ি ফিরে আসছে।
>দোস্ত তোর এই আপুর লগে আমার প্রেম করায় দিতে হবে।
>কিইইই বললি,,, জানিস ও তোর সিনিয়র।
>তুই তো জানিস আমার সিনিয়র আপুর সাথে প্রেম করার ইচ্ছা।
>ঠিক আছে পরে দেখবো এখন চল ঘুরে আসি।
>ঠিক আছে,, তুই কিন্তু আমার কথা বলবি নীলার সাথে।
>ওকে দেখবো।

একটু ঘুরে বাড়িতে চলে আসলাম।রুমে বসে নীলার কথা ভাবছি যে আল্লাহ মনে হয় নিজের হাতে ওকে সৃষ্টি করছে। তখনি আম্মু আসলো
>কি এতো খুশি খুশি লাগছে কেনো(আম্মু)
>না আম্মু তেমন কিছু না।
>না,আমি আমার ছেলে কে জানি কখন সে খুশি হয়।
>আজ না আম্মু একটা মেয়েকে দেখে অনেক ভালো লাগছে।
>ও এই জন্য আমার ছেলের মনে এতো খুশি।
>মেয়েটা না আম্মু অনেক সুন্দর।
>ঠিক আছে বলে দে না হলে পরে আর বলতে পারবি না।
>আচ্ছা আম্মু বলে দিবো।

তারপর দিন সকালে আকাশ দের বাড়ি গেলাম।

>দোস্ত আজ একটু নীলার সাথে  দেখা করায় দিবি (আমি)
>ঠিক আছে চল... কিন্তু আজ যেনো কিছু বলিস না(আকাশ)
>হুম,, কিছু বলবো না শুধু দেখবো।
আমরা কিছুক্ষণ পর নীলা দের বাড়ি গেলাম।
>আপু কেমন আছেন?(আকাশ)
>ভালো.. তুমি কেমন আছো?(নীলা)
>ভালো.. এখান দিয়ে যাচ্ছিলাম ভাবলাম আপনার সাথে দেখা করে যায়।
>ভালো করছো... বসো,আর এই ছেলেটা কে? (আমাকে দেখিয়ে নীলা)
>আপু ও আমার বন্ধু এখানে ঘুরতে আসছে।
>তুমি কেমন আছো?
>ভালো  (আমি শুধু নীলার দিকে তাকিয়ে আছি)
>তোমরা বসো আমি চা দিচ্ছি।
>আপু আর চা লাগবে না।
>আরে না বসো আমি চা দিচ্ছি।
>আপু আন্টি কোথায় গেছে দেখছিনা যে।
>আম্মু তো ছাদে।
তারপর আপু চা নিয়ে আসলো। নীলা অনেক সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে পারে।আর হাঁসলে গালে টোল পড়ে যা তাকে অনেক আকর্ষনীয় করে তেলে। আমি শুধু নীলার কথা বলা দেখছি। আমরা কিছুসময় গল্প করে চলে আসলাম।

>দোস্ত যে ভাবেই হোক তোর নীলা আপুরে তোর ভাবি বানাতে হবেই।
>চেষ্টা করে দেখ পারিস কি... আমার মনে হয় পারবি না।
>এমন ভাবে বলিস না... ওরে যে অনেক ভালোবেসে ফেলছি।
>লেগে থাক হবে, আর আমি তোকে হেল্প করবো।
>ঠিক আছে, এখন যাচ্ছি তাহলে।
>ওকে, বাই
একটু পরে বাসায় চলে আসলাম।বাসায় ডুকতেই আম্মু বললো
>কোথা থেকে আসছেন আমার নবাবপুত্র।
>আম্মু আকাশ দের বাড়িতে গেছিলাম।
>আকাশ দের বাড়ি নাকি অন্য কোথাও।
>না আম্মু তেমন কিছু না।
>ঠিক আছে যা ফ্রেশ হয়ে খেতে আয়।

ফ্রেশ হয়ে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম থেকে উঠে বিকালে মাঠে খেলতে গেলাম।তখনি আমার কলেজ এর এক ফ্রেন্ড ফোন দিলো
>হ্যালো,দোস্ত তুই আসবি কবে?(রিয়াদ)
>কিছুদিন পর আসবো দোস্ত।
>কলেজে একটা অনুষ্ঠান আছে.. আর সেখানে তোর থাকতে হবে। তুই কাল চলে আয়।
>ওকে, কাল বিকালে তাহলে আসছি।
>ওকে, তাহলে সময় মতো চলে আসিস।
>ঠিক আছে,পরে কথা হবে বাই।
খেলা শেষে বাসায় চলে আসলাম।রাতে আব্বু আম্মুকে বললাম আমি কাল চলে যাবো।আমি ভাবছি চলে যাওয়ার আগে নীলাকে মনের কথা বলে যেতে হবে।

নীলা দের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছি যে ভাবে হোক মনের কথা বলে যেতে হবে...না হলে আমি ফিরে যেতে পারবো না।কিন্তু এখনো আসছে না কেনো। একটু পরে নীলা আসলো
>আপু আপনার সাথে কিছু কথা ছিলো।
>ঠিক আছে বলো।
>আপু যদি অন্য কোথায় যেয়ে বসতেন।
>ঠিক আছে চলো।
আমি নীলাকে নিয়ে একটা পার্কে নিয়ে আসছি।
>আপু আমি আজ বিকালে চলে যাচ্ছি।
>হুম যাও,কিন্তু আমাকে বলছো কেনো।
>কিন্তু যাওয়ার আগে আপনাকে কিছু কথা বলতে চায়।
>হুম বলো শুনছি।
>আমি প্রথম যেদিন আপনাকে দেখি সেদিন থেকে আপনাকে ছাড়া কিছু ভাবতে পারছি না।আমার চোখের সামনে শুধু আপনার চেহারা ভেসে উঠছে। আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলছি। জীবনে প্রথম তো সেজন্য ঠিক ভাবে প্রপোজ করতে পারি নি... কিন্তু আপনাকে অনেক ভালোবেসে ফেলছি।
>কিইইই বললা... তুমি যানো আমি তোমার সিনিয়র?
>প্রেম কখনো বয়স দেখে হয় না।
>কিন্তু আমি তোমাকে কখনো ভালোবাসতে পারবো না।
>বিশ্বাস করেন আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি।
>তোমার ভালোবাসা এ সমাজ কখনো মেনে নিবে না।
>আমি আপনাকে ভালোবাসি এ সমাজ কি বললো আমি মানি না।
>কিন্তু আমি মানি (বলে চলে গেলো)

আমি বিকালে কলেজে চলে আসছি। এখানে এসে কোনো কিছুতে মন ববসছে না।কিছুদিন পর ভাবছি আবার বাসায় যাবো। ঠিক তখনি আম্মু ফোন দিলো
>হ্যালো বাবা কেমন আছিস তুই।
>ভালো আম্মু তুমি কেমন আছো।
>ভালো,, শোন তোর ভাই এর বিয়ে ঠিক করছি তুই চলে আয়।আর বিয়ে কিন্তু তিনদিন পর।
>আম্মু হর্ঠ্যা ভাইয়ের বিয়ে ঠিক করলে... আর মেয়েটা কে।
>তোর আব্বুর বন্ধুর মেয়ের সাথে বিয়ে ঠিক করছে।তুই আজকেই চলে আয়।
>ঠিক আছে আম্মু আমি আজকেই আসছি।
>আচ্ছা সাবধানে আসিস।

আমি বিকালে বাড়িতে আসছি।
>আব্বু আপনি এতো তাড়াতাড়ি ভইয়ার বিয়ে দিচ্ছেন যে।
>আমার সেই বন্ধু একটু অসুস্থ সে জন্য।
>আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে।
বিয়ের এই কিছুদিন ব্যস্ততার কারনে নীলাকে দেখতে যাওয়া হয় নি।কিন্তু শনলাম ভাইয়ের বিয়ে হচ্ছে নীলা দের গ্রামে। আজ ভাইয়ের বিয়েতে বরযাত্রী যাচ্ছি। রাস্তায় আমি আর ভাইয়া এক গাড়িতে যাচ্ছি। কিন্তু ভাইয়া কোনো কথা বলছিলো না। আমি ভাবছি ভাইয়া মনে হয় একটু টেনশনে আছে। কিছুক্ষণ পরে গাড়িটা নীলা দের বাড়ির সামনে এসে থামলো। আর ওদের বাড়ি ফুল দিয়ে সাজানো। আমি একটু ভয় পেয়ে গেলাম।আমি ভাই কে বললাম
>ভাইয়া এটা কি ভাবি দের বাড়ি?
>হুম
>ভাবির নাম কি নীলা?
>হ্যা, কেনো? (রেগে )

#২য় পার্ট

হর্ঠ্যা যেনো আমার কথা বলার শক্তি হারিয়ে গেলো। আমি যাকে ভালোবাসি সেই আমার ভাবি হবে। আর আমায় নীলাকে ভাবি বলে ডাকতে হবে। আমার সমস্ত শরির যেনো ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে।
>এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো ভিতরে চল।(কাজিন)
>.........
>কথা বলছিস না কেনো.. চল।(আমার গায়ে হাত দিয়ে)
>হ্যা চল।
>আমরা আগে চল ভাবিকে দেখে আসি। ( কাজিন)
>আমি যাবো না তোরা যা।
>না চল তোকে যেতে হবে।
আমাকে তারা ধরে নিয়ে গেলো। আজ নীলাকে লাল বেনারসি শাড়িতে এক অপরূপ সুন্দর লাগছে। কিন্তু এ সাজ যে অন্যর জন্য।কিন্তু নীলাকে দেখলাম মন মরা হয়ে বসে আছে।দেখেমনে হলো যেনো সে এ বিয়েতে রাজি না।আমি নীলার সামনে যেতেই সে আমার দিকে করুন এক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে... আমাকে যেনো কিছু বলতে চায়।আমি সেখান থেকে চলে আসলাম।আমি আর সেখানে থাকতে পারলাম না।

ভাইয়ার সাথে নীলার বিয়ে হয়ে গেলো। আমরা বিকালে নীলাকে নীয়ে বাড়িতে চলে আসছি।আমি তারপর এক প্যাকেট সিগারেট কিনে নদীর ধারে বসে আছি।
>তুই এখানে বসে কি করছিস? (আকাশ)
>তুই কখন আসলি।
>আমি একটু আগে ঢাকা থেকে আসছি... আর এসে শুনলাম নীলা আপুর সাথে তোর ভাইয়ের বিয়ে হয়ছে।
>যেটা শুনছি সেটাই ঠিক।
>কিন্তু এসব কিভাবে হলো।
>আমি কিছু জানি না... আব্বু সবকিছু ঠিক করছে।
>আমি শুনে তোর বাসায় গেছিলাম কিন্তু তোর আম্মু বললো তুই বাসায় নেই। আর আমি তো জানি তোর মন খারাপ থাকলে তুই কোথায় যাস।
>দোস্ত আজ জানিস আমার সব থেকে খারাপ লাগছে। এর আগে এতো কষ্ট কখনো পায় নি।
>এটা নিয়ে মন খারাপ করিস না... যেটা হয়ে গেছে সেটা মেনে নে।
>আমি কিভাবে মানবো বল আমি যে ওরে অনেক ভালবাসি।
>তুই যদি এখন কিছু করিস তাহলে নীলা আপুর সম্মান নষ্ট হবে। আর তোর ফ্যামিলি তে সবাই কষ্ট পাবে।
>ঠিক বলছিস আমি কালকেই এখান থেকে চলে যাবো।
>ঠিক আছে তুই কিছুদিন ওর কাছ থেকে একটু দুরে থাক দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।

আমি সেখান থেকে সোজা বাড়ি চলে আসলাম। বাড়ি এসে ঘরের দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়লাম।আম্মু পিছন থেকে ডাকছিলো আমি ভালো লাগছে না বলে চলে আসছি।আমি যে নীলাকে অনেক ভালোবাসি।ভালোবাসার মানুষকে না পেলে যে কতটা কষ্ট হয় আজ সেটা বুঝতে পারছি।রাতে দুইটা ঘুমের ওষধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ছি,, না হলে ঘুম আমার চোখে আজ ধরা দিতো না।

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে বাইরে আসছি। আজ বাড়িতে বউ ভাত। সারাদিন কিছু কাজ করছি কিন্তু কাউকে কিছু বুঝতে দেয় নি।সারাদিন কাজ শেষে আম্মুকে বললাম
>আম্মু আজ আমাকে চলে যেতে হবে।
>আজই কেনো যেতে হবে.. আজ যাওয়া যাবে না।
>আম্মু আমার সামনে পরিক্ষা... না গেলে সমস্যা হবে।
>তোর কি হয়ছে আমাকে আগে বল... কেনো চলে যেতে চাচ্ছি।
>আম্মু আমার আবার কি হবে... কিছুই হয় নি তো।
>তুই কি মনে করছিস তোর কষ্ট আমি বুঝি না।
>আম্মু বিশ্বাস করো আমার কিছুই হয় নি।
>এবার বল তোর কি হয়ছে (মাথায় হাত রেখে)
> (আমি আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললাম)
>তুই কাঁদছিস কেনো কি হয়ছে আমাকে বল।
>আমি যে মেয়েকে ভালবাসতাম সেই নীলা।
>কিইইই,, তুই আমাকে আগে বলিস নি কেনো।
>আমি তো পরে জেনেছি... আর বললে কি হতো।
>তোর ভাইয়া এই বিয়েতে রাজি ছিলো না।তোর আব্বু জোর করে ওকে বিয়ে দিয়েছে।
>আমি কি করবো বলো। আমি এখানে থাকতে পারবো না আম্মু।
>তুই চলে গেলে আমি কিভাবে থাকবো বল।
>আমি কিছুদিন পর আসবো আম্মু।
>ঠিক আছে যা কিন্তু আবার আসতে হবে।
>ঠিক আছে আম্মু।
আমি চলে যাবো তখনি আব্বু আসলো
>কোথায় যাচ্ছিস তুই।
>আব্বু আমার কলেজে একটু কাজ আছে যেতে হবে।
>না বাড়িতে এতো লোকজন আছে এখন যাওয়া যাবে না।
>ও যখন যেতে চাচ্ছে তখন যাক(আম্মু এসে আব্বুকে বললো)
>ঠিক আছে তাহলে যা... কিন্তু সাবধানে যাস।
আমি যাওয়ার সময় ভাইয়ার সাথে কথা বলে চলে আসছি। কিন্তু ভাইয়ার দেখলাম এখনো মন খারাপ.. সে জন্য আমি কিছু বললাম না। আমি আমার কলেজে চলে আসছি। আমাদের বাড়ি থেকে কলেজ একটু দুরে। বাড়ি থেকে যাওয়া আশা করা যায় কিন্তু আমি বাইরে থাকি।আমি বাড়ি থেকে চলে এসছি শুধু মাএ নীলাকে ভুলে থাকার জন্য।কিন্তু কোনোভাবে ওকে আমি ভুলতে পারছি না। আমি যে ওকে অনেক বেশিই ভালোবেসেছি।কি ভাবে ভুলে থাকবো। যতো বেশি ভুলে থাকার চেষ্টা করি ততো বেশিই যে মনে পড়ে ওর মায়াবী চেহারাটা।আমি যে সেই মায়ার প্রেমে পড়ছিলাম।

এভাবে বেশ কিছুদিন কেটে গেলো হর্ঠ্যা একদিন আব্বু আমাকে ফোন দিলো।
>কেমন আছিস তুই।
>ভালো আব্বু, আপনি কেমন আছেন।
>ভালো না,, তুই আজই বাড়ি চলে আয়।
>কেনো আব্বু কি হয়ছে।
>সব পরে বলবো তুই আগে চলে আয়।

আমাকে আর কোনো কথা বলতে না দিয়ে আব্বু ফোন কেটে দিলো। আমি ভাবছি আম্মুর কিছু হয় নি তো। সে জন্য আমি তখনি বাড়ি চলে গেলাম। বাসায় যেতেই আম্মু আমার কাছে আসলো।
আম্মু আমাকে একটা চিঠি দিলো সেখানে লেখা ছিলো-
আমি তোমাদের বলেছিলাম আমি এই বিয়ে করতে পারবো না। আমি অন্য একজন কে ভালোবাসি কিন্তু তোমরা আমাকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দিলে।সে জন্য আমি তার কাছে চলে গেলাম।
>তোর ভাইয়া নীলাকে ছেড়ে চলে গেছে (আম্মু)
>ঠিক আছে,, আমি যেখান থেকে হোক ভাইয়া কে খুঁজে আনবো।
>ওকে আর খুঁজতে হবে না... আমরা চায় তোর সাথে নীলার বিয়ে দিতে(আব্বু)
>কি বলছো আব্বু এটা কিভাবে সম্ভব। আর ভাবি তো রাজি হবে না(ভাবি বলতে কেমন জানি হচ্ছিলো)
>আমি নীলাকে রাজি করাবো... তুই যদি রাজি থাকিস।
>ও রাজি আছে তুমি নীলাকে রাজি করো আগে (আম্মু আব্বুকে বলে আমাকে নিয়ে গেলো)

>এবার আমি আমার ছেলেকে সবসময় আমার কাছে পাবো(আম্মু আমাকে সব থেকে বেশি ভালোবাসে)
>কিন্তু আম্মু নীলা যদি রাজি না হয়।
>আমরা ওকে রাজি করবো... তুই চিন্তা করিস না।
>ঠিক আছে আম্মু।
>এখন তুই যা ফ্রেশ হয়ে নে।
আমি ফ্রেশ হয়ে আমার রুমে গেলাম।কিছুসময় পর আম্মু খাবার নিয়ে আসলো।
>নীলাকে তোর আব্বু রাজি করছে।
>বলো কি আম্মু,, নীলা রাজি হয়ছে তাহলে।
>হুম,, তুই খেয়ে নে।
>না খাবো না।
>কেনো খাবি না।
>তুমি খাইয়ে না দিলে কি আমি খাইতে পারি বলো।
>কিছুদিন পর বউ খাইয়ে দিবে তখন খাবি।
>কি যে বলোনা আম্মু।
>আর লজ্জা পেতে হবে না হা কর।

আম্মু আমাকে খাইয়ে দিয়ে চলে গেলো। আর আমি ভাবছি নীলা মনে হয় আমাকে ভালোবাসে না হলে তো রাজি হতো না। এভাবে কিছুদিন কেটে গেলো ভাইয়ের সাথে নীলার ডিভোর্স হয়ে গেলো।এ কিছুদিন নীলার সাথে দেখা হলেও আমার সাথে কথা বলতো না।আমিও  কিছু বলতাম না কারন আমি তো ওকে পাচ্ছি।

আজ নীলার সাথে আমার বিয়ে। বিয়েটা আমাদের বাসায় হয়ছে। তেমন কোনো কাউকে বলা হয় নি।সারাদিনের ব্যস্ততার পর আমি রাতে ছাদে দাঁড়িয়ে আছি তখনি আম্মু আসলো।
>এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো..ঘরে যা বৌমা বসে আছে।
>আম্মু কেমন যানি ভয় লাগছে... আমাকে মেনে নিবে তো।
>কিছুই হবে না তুই যা।
আমি ছাদ থেকে নিচে আসলাম। এখন রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।আস্তে আস্তে ভিতরে গেলাম। নীলা খাটের মাঝখানে বসে আছে। নীলাকে ঠিক সে দিনের মতো সুন্দর লাগছে লাল বেনারসি শাড়িতে। আমি দরজা দিয়ে খাটে বসতেই নীলা একটা বালিশ আমার দিকে ছুড়ে দিলো।
>তুমি নিচে ঘুমাবে।

#৩য় পার্ট

>তুমি নিচে ঘুমাবে(নীলা)
>কিন্তু আমি তো নিচে ঘুমাতে পারি না।
>তুমি খাটে আমার পাশে ঘুমাতে পারবে না।
>আমি নিচে ঘুমালে আমার ঠান্ডা লগবে.... আর জ্বর আসবে তো।
>আমি কিছু জানি না... তুমি আমার পাশে ঘুমাতে পারবে না।
>আমি এতো কিছু জানি না... আমি খাটেই ঘুমাবো(বলে খাটে বসলাম)
>তুই এখনি নিচে নাম নাহলে তোর খবর আছে।
>(কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম আমি ভাবছিলাম এমনি মজা করছে)তুমি এমন করছো কেনো... আমি তো তোমার স্বামী।
>আমি তোকে স্বামী হিসাবে মানি না... আর তুই খাটে ঘুমাতে পারবি না।
>ঠিক আছে তুমি না চাইলে আমি তোমাকে জোর করবো না।

নীলা আর কোনো কথা বললো না। আমিও আর কিছু না বলে নিচে বিছানা করে শুয়ে পড়লাম।ভাবছি আজ আমার ফুলসজ্জা আর আমাকে নিচে ঘুমাতে হচ্ছে। কি কপাল আমার  কতো স্বপ্ন ছিলো বউয়ের সাথে একটু রোমান্স করবো... সেটা তো হলো না উল্টে ঠান্ডার মধ্য ঘুমাতে হচ্ছে আর মশার কামড় তো ফ্রিতে পাচ্ছি। কিন্তু আমিও ছেড়ে দেওয়ার পাএ না। সকালে এর মজা দেখাবো। এখন আর কিছু না বলে ঘুমিয়ে পড়লাম।

সকালে নীলার ডাকে ঘুম ভাঙলো
>এই উঠো.. এই এই উঠো (নীলা)
>ওওওও নো।
>কি হলো।
>বুকের ভিতরে কেমন যানি লাফিয়ে উঠলো।
>কেনো।
>এমন মিষ্টি করে ডাকলে আমি তো পাগল হয়ে যাবো।
>তোমার ডাকতে আমার বয়ে গেছে...নেহাত আম্মা ডাকছে সে জন্য তোমার ডাকছি।
>কেনো একটু ডাকলে কি এমন হয় শুনি।
>আমি তোমারে ডাকতে যাবো কেন শুনি।
>কারন তুমি আমার বউ.. সে জন্য।
>আমি তোমাকে মেনে নিতে পারবো না... আমার মনে অন্য কেউ আছে।

বলে চলে গেলো আমার মনকে কষ্ট দিয়ে। কিন্তু আমিও আমার ভালোবাসা দিয়ে তোমাকে অর্জন করবো।আমি ফ্রেশ হয়ে নাস্তার টেবিলে গেলাম।যেয়ে একটু সর্দির অভিনয় করছি...বার বার হাকছি তুলছি।
>কি হয়ছে তোর (আব্বু)
>আব্বু একটু ঠান্ডা লাগছে (বলে নীলার দিকে আড় চোখে দেখছি.. নীলা আমার দাকে তাকিয়ে আছে)
>ওষধ খেয়েছিস (আব্বু)
>না আব্বু খাওয়া লাগবে না ঠিক হয়ে যাবে।
>না ঠিক হবে না। নাস্তা করে ওষধ খাবি আগে।
>ঠিক আছে।
আমি বসে আছি খাচ্ছি না।
>কি হলো খাচ্ছিস না কেনো।
>কি ভাবে খাবো তুমি খাইয়ে না দিলে।
>কেনো তুই কি ছোটো আছিস এখনো।
>আমি তো তোমার কাছে কখনো বড়ো হবো না। আমার তোমাকে খাইয়ে দিতে হবে।
>এবার থেকে বৌমার হাতে খাস (বলে আম্মু খাইয়ে দিলো আর আমি নীলা দিকে তাকিয়ে দেখলাম সে লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে আছে)

খায়ে আমি আমার রুমে এসে বসে আছি। একটু পরে নীলা আসলো
>এ নেও ওষধ।
>না খাওয়া লাগবে না.. এমনি ঠিক হয়ে যাবে।
>তোমাকে বলছি না খেতে।
>আরে বললাম সামান্য তো সর্দি কিছু হবে না।
>তোরে আমি খাইতে বলছি। (অনেক রেগে)
আমি ভয়ে ভয়ে খেয়ে নিলাম ভাবছি এবার সত্যি সর্দি আসবে না তো।তারপর নীলা সেই যে গেলো আর আসলো না। আর আমাকেও আজ বাইরে যেতে দেয় নি। গোসল করে দুপুরে খেতে বসলাম একসাথে। তখনো আম্মু আমাকে খাইয়ে দিলো। আমি খেয়ে রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম কিন্তু নীলা আসলো না। ও নাকি আম্মুর সাথে ঘুমাবে। বিকালে ঘুম থেকে উঠে একটু বাইরের দিকে গেলাম একটু আড্ডা দিতে। যেয়ে আকাশের সাথে দেখা হলো
>নতুন বউকে পেয়ে ভুলেই গেলি নাকি।
>আরে না তোকে ভুলতে পারি.. এই তো দেখ চলে আসলাম।
>তো নীলা আপুর সাথে কেমন কাটছে।
>আর বলিস না... নীলা আমাকে মেনে নেই নি।
>কিন্তু কেনো?
>ওর মনে নাকি অন্য কেউ আছে।
>কে আছে?
>সেটা বলছে না তো।
>তুই দেখিস সব ঠিক হয়ে যাবে। তুই ওর একটু দেখাশুনা কর।
>ঠিক আছে।
বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে নীলার জন্য আইসক্রিম আর ফুচকা নিয়ে গেলাম...এগুলো নাকি নীলা অনেক পছন্দ করে।যেয়ে আম্মুর হাতে দিলাম
>আম্মু এগুলো তোমাদের জন্য।
>আমর জন্য নাকি বৌমার জন্য
>না আম্মু তোমাদের সবার জন্য।
>ঠিক আছে।
রাতে খেয়ে রুমে সোফায় বসে ফেসবুক চালাচ্ছিলাম তখন নীলা আসলো।
আমি একটা বালিশ নিয়ে নিচে ঘুমাতে গেলাম
>নিচে ঘুমাতে হবে না.. উপরে আসো।
>না না নিচে ঠিক আছি।
>তোমাকে বললাম না উপরে আসতে।
>ঠিক আছে (আমি তো এটাই চাচ্ছিলাম)
>মাঝখানে একটা বালিশ দেওয়া থাকবে। তুমি একদম এপশে আসবে না।
>যদি রাতে ঘুমের ঘরে চলে যায় তাহলে কি হবে।
> তুমি যদি এপাশে আসো তাহলে আমি কালই চলে যাবো।
>ওকে যাবো না (এখন আর ওপাশে যাওয়া যাবে.. যে রাগ বলা যায় না চলে যেতে পারে)
সকালে ঘুম থেকে উঠলে আম্মু বলছে শশুর বাড়ি যেতে হবে।শশুর বাড়ির কথা শুনে আজ মনে হলো আমি অনেক বড় হয়ে গেছি।আর ভাবছি ওখানে গেলে মনে হয় নীলা একটু ভালো ভাবে কথা বলবে।

শশুর বাড়ি যেয়ে সবার সাথে সালাম বিনিময় করে ভিতরে গেলাম।আজ শশুর বাড়ির জামাই আদর কাকে বলে বুঝতে পারছি।আম্মা তো সবকিছু আমার পছন্দমত জিনিস রান্না করছে।নীলার বাবা আগে একটু অসুস্থ ছিলো কিন্তু এখন একটু সুস্থ। নীলা এখানে এসেও আমার সাথে প্রয়োজনীয় কথা ছাড়া বলছে না। আমার সামনেও তেমন আসছে না।আমরা সেখানে দুইদিন থেকে চলে আসলাম।

আমি বাড়ি ফিরে তারপর দিন কলেজে যাবো বলে বের হচ্ছি
>তুই কলেজে যাচ্ছি তাহলে নীলাকেও নিয়ে যা... একটু ঘুরে আসুক ভালো লাগবে।(আপনাদের তো বলা হয় নি নীলা আমাদের কলেজে পড়ে কিন্তু আমি আগে জানতাম না... আর আপনারা তো জানেন আমার বাসা থেকে কলেজ একটু দুরে কিন্তু বাসা থেকে যাওয়া যায়)
>ঠিক আছে আম্মু নীলাকে ডেকে দেউ
>আম্মা আমি এখন যাবো না (নীলা)
>না যা দেখবি ভালো লাগবে।
>আচ্ছা যাচ্ছি।
>ভালো করে ধরে বসো।
নীলা আমার কাঁধে হাত দিয়ে ধরে বসে আছে। আজ কেনো জানি বাইক চালাতে অনেক ভালো লাগছে। কেনো যানি মনে হচ্ছে এ সময় টাকে যদি ধরে রাখতে পারতাম।কিন্তু আনন্দর সময় মুেহূর্তেই চলে যায়।আমি কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে গেটের সামনে নীলার জন্য ওয়েট করছি কিন্তু ও আসছে না। একটু পরে ফোনটা বেজে উঠলো নীলা ফোন করছে

>আমি আগে চলে আসছি তুমি এসো।
আমি আর কোনো কথা না বলে ফোন কেটে দিলাম।আর আমার ফোন বন্ধ করে রাখছি। আমি আর বাসায় ফিরে যায় নি। আমি বাসায় গেলাম রাতে... বাসায় গেলে আম্মু বলছে
>কোথায় ছিলি তুই
>আমার কলেজে একটা কাজ ছিলো।
>তুই মিথ্যা বলছিস কি হয়ছে বল আমাকে।
>আম্মু নীলা আমাকে মেনে নিতে পারি নি।
>কি বলছিস তুই... আমি বৌমার সাথে কথা বলছি।
>না আম্মু তোমাকে কিছু বলতে হবে না।
>না আমি বলবো আমার ছেলেকে কষ্ট দেয়।
>না, আম্মু তুমি যদি কিছু বলো তাহলে আমি বাসা থেকে চলে যাবো।
>ঠিক আছে তুই যেটা ভালো বুঝিস কর।
আমি আমার রুমে আসলাম
>আম্মা কি বলছিলো?
>তেমন কিছু না।
>আমি সব শুনছি কিন্তু।
>কি আর বলবে বলো..... তুমি তো আমাকে ভালোবাসো না।আমি যে তোমাকে কতটা ভালোবাসি সেটা কখনো বুঝতে চেয়েছো তুমি। আমি শুধু তোমাকে ভালো বাসি শুধু তোমাকে।আমি তোমাকে ছাড়া কোনো কিছু কল্পনা করতে পারি না। কিন্তু তুমি সেটা কখনো বুঝলে না।

নীলা কোনো কথা না বলে চলে গেলো। আমি না খেয়ে নিচে বিছানা করে ঘুমিয়ে পড়লাম। নীলা একটু পরে আমাকে ডাকতে আসলো কিন্তু আমি খেতে গেলাম না।নীলা অনেক বললো আমি তাও গেলাম না ঘুমিয়ে পড়লাম।

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলাম নীলা খাটের অন্য পাশে নিচে ঘুমিয়ে আছে। একটু পরে নীলার ঘুম ভাঙলো
>তুমি নিচে ঘুমালে কেনো?
>এমনি।
>কেনো আমি কি তোমাকে কিছু বলছি।
>তুমি আমাকে কিছু বলো নি তাহলে আজ নিচে ঘুমালে কেনো।
>তুমি তো আমাকে মেনে নিতে পারো নি তাহলে আমি তোমার পাশে কিভাবে ঘুমাবো।
তখনি বাইরে দেখলাম আব্বু কার সাথে যেনো জোরে কথা বলছে।আমি বাইরে যেয়ে দেখি ভাইয়া আসছে।

ভাবির সাথে বিয়ে

#শেষ পর্ব

আমি রুম থেকে বাইরে যেয়ে দেখি ভাইয়া আর তার সেই গার্লফ্রেন্ড আসছে।
>ভাইয়া তুমি কখন আসছো?
>আমি একটু আগে আসছি... তুই আব্বুকে একটু বল না যেনো আমাদের মেনে নেয়।
>ও কি বলবে আমি কখনো তোদের মেনে নিবো না (আব্বু)
>আব্বু এবারের মতো ওদের ক্ষমা করে দেও (আমি)
>আমি এই মেয়েকে কখনো আমার বাড়িতে উঠতে দিবো না।
>ঠিক আছে, যেখানে ওর কোনো জায়গা নায় সেখানে আমিও থাকবো না(ভাইয়া)
>ভাইয়া এটা তুমি কি বলছো... তুমি যেয়ো না।
>ওকে যেতে দে ওর কোনো জায়গা নায় আমার বাড়িতে।যে আমার মান-সম্মান এর কথা ভাবে না তাকে আমি ছেলে হিসাবে মানি না।

ভাইয়া চলে গেলো বাড়ি থেকে।আমি নাস্তা করে একটু বাইরে গেলাম আড্ডা দিতে। এমন ভাবে কিছুদিন কেটে গেলো। নীলা মাঝে মাঝে কলেজ যায় কিন্তু আমার সাথে যায় না একা যায়।আমি একদিন কলেজে বসে আড্ডা দিছি তখন আমার ফোনটা বেজে উঠলো আম্মু ফোন দিছে
>হ্যা আম্মু বলো।
>তুই এখনি........ এই হাসপাতালে চলে আয়।
>কেনো আম্মু কি হয়ছে।
>নীলাকে একটা গাড়িতে ধাক্কা দিছে।
>আমি এখনি আসছি।
আমি ফোন রেখে দ্রুত হাসপাতালে চলে গেলাম।যেয়ে দেখি সেখানে সবাই ছিলো।
>আম্মু নীলা কোথায়?
আম্মু আমাকে ওটির দিকে দেখিয়ে দিলো। আমি ওটির জানালা দিয়ে দেখছি নীলা ঘুমাচ্ছে। আর ওর মুখে অক্সিজেন দেওয়া আছে। আমার চোখ দিয়ে একফোটা জল গড়িয়ে পড়লো।
>বাবা তুই চিন্তা করিস না দেখবি বৌমার কিছু হবে না।
> ওর কিছু হয়ে গেলে আমি বাঁচবো না আম্মু।
>না বাবা ডাক্তার বলছে তেমন কিছু হয় নি... শুধু মাথায় একটু আঘাত পায়ছে।

নীলার তিন দিন পর জ্ঞান ফিরলো। আমি এই তিনদিন বাসায় যায় নি। সব সময় নীলার পাশে ছিলাম।একটু পরে ডাক্তার আসলো
>আর কোনো ভয় নায়... একটু রেস্ট আর কেয়ার করলে ঠিক হয়ে যাবে।
>ঠিক আছে,, আমরা বাসায় নিয়ে যেতে পারবো কবে?
>দুই তিন দিন পর নিয়ে যেতে পারবেন।
>ঠিক আছে।
কিছুক্ষণ পর আম্মু আসলো।
>তুই এখন বাসায় যা আমি থাকছি এখানে।
>না আম্মু আমি পরে যাচ্ছি।
>তুই তিনদিন বাসায় যাস নি একটু ঘুরে আয় যা।
>(নীলা ইশারার আমাকে যেতে বললো)
আমি বাড়ি চলে আসছি বিকালে আবার যাবো।বাড়ি এসে ঘুমিয়ে পড়ছি... তিনদিন তেমন ভালো ঘুম হয় নি।ঘুম থেকে উঠে বিকালে আবার গেলাম। আমি যেয়ে আম্মু আর নীলার আম্মুকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিলাম। আমি রাতে নীলার পাশে ছিলাম।নীলাকে খাওয়া, ওষধ খাওয়ানো সবকিছু আমি দেখাশুনা করছি।

তিনদিন পর আজ নীলার হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়া হবে। আমি সে জন্য ডাক্তার এর সাথে কথা বলে যেয় রুমের ভিতর যাবো তখন দেখি নীলা আর নার্স কথা বলছে... আর আমি বাইরে দাঁড়িয়ে শুনছি।
>আপনার এখানে যে ছিলো সে কি হয়?
>আমার বর।
নীলার মুখে কথাটা শুনে আজ আমার অনেক ভালো লাগছে।
>এমন বর অনেক কপাল নিয়ে আসলে পাওয়া যায়।
>কেনো।
>আপনি অসুস্থ ছিলেন বলে সে তেমন বাড়ি যায় নি।আর সারাক্ষণ আপনার সেবা করছে। সত্যি এমন বর পাওয়া ভাগ্যে।

নীলা আর কোনো কথা বলছে না। আমি একটু পরে ভিতরে গেলাম।
>ডাক্তার এর সাথে কথা হয়ছে আজই তোমাকে বাড়িতে নিয়ে যেতে পারবো। আর সবাই একটু পরে আসছে।
>ঠিক আছে।
একটু পরে আব্বু আম্মু, আর নীলার আব্বু আম্মু আসলো। আমরা নীলাকে বাড়ি নিয়ে আসছি।নীলার সুস্থ হতে আরও কিছুদিন লাগলো।

এখন নীলা আমার সাথে একটু ভালো ভাবে কথা বলে। আমি জানি নীলা তার ভুল বুঝতে পারছে। কান্তু আমিও এখন আর তেমন ধরা দিচ্ছি না। হর্ঠ্যা একদিন সকালে কেউ যেনো দরজা নক করলো। আমি যেয়ে দরজা খুলে দেখি ভাইয়া আসছে
>ভাইয়া তুমি।
>কেমন আছিস তুই?
>ভালো তুমি ভালো আছো... আর ভাবি কোথায়?
>কে আসছে (আব্বু)
>আব্বু ভাইয়া আসছে।
>তুই কেনো আসছিস আবার(ভাইয়ার কথা শুনে আব্বু চলে আসছে)
>আব্বু আপনি আমকে ক্ষমা করে দিন।
>তোর কোনো ক্ষমা নেই আমার কাছে।
>আব্বু এবারের মতো ক্ষমা করে দেন...আমি ওকে ছেড়ে চলে আসছি(ভাইয়া)
>আব্বু ভাইয়াকে ক্ষমা করে দেন(আমি)
>তুই যখন বলছিস ক্ষমা করতে পারি... কিন্তু ওই মেয়ে কখনো আমার বাড়ি উঠবে না।(বলে আব্বু চলে গেলো)
>ভাইয়া তুমি টেনশন করো না.. আব্বুর রাগ কমে গেলে তুমি ভাবিকে নিয়ে এসো।
>তোর ভাবি যে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।
>কেনো, কেনো?
>সে আমাকে ভালোবাসতো না.. ভালেবাসতো আমাদের টাকাকে।
>তুমি চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে।

তার দুই দিন পর আমি কলেজ যাচ্ছি তখনি নীলা আসলো
>আমি যাবো তোমার সাথে।
>ঠিক আছে চলো।
আমি রাস্তায় তেমন কোনো কথা বলছি না... আর নীলাও তেমন কোনো কথা বলছে না।কলেজে নেমে যাওয়ার সময় বলে গেলো
>বাড়ি যাওয়ার সময় আমাকে নিয়ে যেয়ো।
>ঠিক আছে তুমি গেটের সামনে অপেক্ষা করো।

আমি ক্লাস শেষ করে হর্ঠ্যা একটা কাজ পড়ে গেলো.. আমি সে জন্য নীলার কাছে গেলাম
>তুমি আজ একটু একা যেতে পারবে।
>তুমি কোথাও যাবে?
>আমার একটা ছোট কাজ আছে তারপর যাবো।
>ঠিকআছে আমি যাচ্ছি তুমি পরে এসো। (নীলা একটু মন খারাপ করে কথা বললো)
>তুমি সাবধানে যেয়ো।
>আচ্ছা।
বলে নীলা চলে গেলো। আমি কাজটা শেষ করে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম যেয়ে দেখি নীলা অনেক কাঁদছে
>কি হয়ছে তোমার কাঁদছো কেনো?
>না কিছু হয় নি আমার।
>তাহলে কাঁদছো কেনো?
>বললাম তো কিছু হয় নি।
>তোর ভাইয়া বলছে বৌমা নাকি কোন ছেলের সাথে রাস্তায় ঘুরছিলো।(তখনি আম্মু এসে কথাটা বললো)
>তুমি বিশ্বাস করো সে আমার বন্ধু ছিলো। হর্ঠ্যা দেখা হলো সে জন্য একটু কথা বলছিলো আমার সাথে। আমি তার সাথে কোথাও যায় নি।
>আমি তো তোমাকে কিছু বলি নি তাহলে তুমি কাঁদছো কেনো।
>বৌমা এসে কোনো কিছু খায় নি... তুই খাবারটা নিয়ে খাইয়ে দে।
আমি যেয়ে প্লেটে ভাত নিয়ে আসছি।
>ভাত খেয়ে নেও।
>আমি খাবো না।
>নেও হা করো (আমি খাইয়ে দিচ্ছি)
>তুমিও তো খাও নি... খেয়ে নেও।

তারপর দুজন একসাথে খেয়ে নিলাম।খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ছি। এমন ভাবে কিছু দিন কেটে গেলো। কিন্তু এই কয় দিন ভাইয়া বিভিন্ন ভাবে নীলার খারাপ করার চেষ্টা করছে। ভাইয়া জানি তার ভুল বুঝতে পারছে। সে জন্য নীলাকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে চায়।আর নীলাও এখন সব সময় মন খারাপ করে থাকে। আমি নীলার মন ভালো করার জন্য নীলাকে বললাম
>চলো আজ একটু বাইরে যাবো ঘুরতে।
>কোথায়
>গেলে বুঝতে পারবে।
নীলাকে নিয়ে নদীর পাড়ে বসে আছি।
>কি দেখো ওমন করে।
>তোমার ওই মায়াবী চেহারা... যেটা আমার মনকে কেড়ে নিছি।
>কোনো আগে দেখো নি বুঝি(লজ্জা ভাব নিয়ে)
>যতই দেখি মনে হয় এই যে আজ প্রথম দেখছি।
>আর দেখতে হবে না চলো রাত হয়ে যাচ্ছে।
>এখন না পরে যাবো।
>রাত হয়ে যাবে তো।
>গেলে যাবে কিন্তু আমি এখন যাবো না।

একটু রাত হয়ে গেলো
>চলো এবার ফিরে যায়...না হলে আম্মা টেনশন করবে।
>আমি আম্মুকে বলে দিয়েছি আজ আমরা ফিরবো না।
>কোথায় যাবে?
>বলছি আগে চোখ বন্ধ করো।
>ঠিক আছে করলাম.... এবার বলো।
>এখন চোখ বন্ধ করে চলো আমার সাথে।
>কোথায় নিয়ে যাচ্ছ আমার।
>এবার চোখ খুলো।

নীলা তো অবাক চারপাশে ছোট বড়ো লাল নীল আলো, গোলাপ আর রজনীগন্ধা এর সুভাষ, খোলা আকাশ, নদীর মাঝখানে ছোট একটা বোর্ড... আমি নীলার সামনে হাটু গেড়ে বসে একটা আংটি বাড়িয়ে দিলাম-

      তোমার হাতে হাত রেখে জীবনের বাকিটা পথ পাড়ি দিতে চায়... জীবনের শেষ মুহূর্তেও তোমার হাত ধরে রাখতে চায়... সকালে তোমার ঠোঁঠের মিষ্টি পরশে আমার ঘুমটা ভাঙাতে চায়...তোমাকে আমার জীবনসঙ্গী হিসাবে পাশে পেতে চায়...তোমাকে অনেক বেশি যে ভালোবাশি।দেবে কি আমার তোমার ভালোবাসা।

নীলা আমাকে জড়িয়ে ধরলো। অনেক শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আর কাঁদছে।
>এই কাঁদছো কেনো তুমি।
>আমাকে তুমি ক্ষমা করে দেও... আমি তেমার সাথে অনেক খারাপ ব্যাবহার করছি।
>তোমার ওপর আমার কোনো রাগ নেই যে তোমাকে ক্ষমা করতে হবে।
>কিন্তু আমি যে তোমাকে অনেক কষ্ট দিছি।
>ভালোবাসার মানুষের ওপর কখনো রাগ থাকে না....থাকে একটু মিষ্টি অভিমান।
>আমি তোমাকে অনেক ভালোবেসে ফেলছি।(আবার আমাকে জড়িয়ে ধরলো)
>আমিও যে তোমাকে অনেক ভালোবাসি।

আমি নীলার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছি।
>এই তুমি একবার আমার দিকে আর একবার চাঁদের দিকে দেখছো কেনো।
>আমি দেখছি কে বেশি সুন্দর।
>কি দেখলে কে বেশি সুন্দর (লজ্জা ভাব নিয়ে)
>ওই ওপরের চাঁদ আর আমার নিচের এই চাঁদ দুটোই যে এক অপরুপ সুন্দর। কারন দুটোই যে সৃষ্টিকর্তার নিজের হাতে তৈরি।
>তুমি এমন ভাবে ভালোবাসবে তো আমায়।
>তোমার জন্য রাখা আমার  ভালোবাসার ভান্ডারে কখনো কম পড়বে না... কানায় কানায় পরিপূর্ণ থাকবে।

                               ( সমাপ্ত)


     * কমেন্ট বক্সে অবশ্যই কমেন্ট করে
    জানাবেন গল্পটি কেমন লাগব.....ধন্যবাদ *



ভালোবাসা বিষয়ক টিপস -১০

love-tips ♥ তুমি পাশে নেই তবুও তোমায় অনুভব করি। তুমি আমার হবে না জানি তবুও তোমার পথ চেয়ে আছি। সপ্ন সত্যি হবে না জানি তবু তোমায় নি...