ভালবাসা মানে বিশ্বাস, ভালোবাসা মানে সাহস। ভালোবাসা মানে ভয় ভেঙে বাধা পেরিয়ে কাছে আসার। আর সেই সব কাছে আসার গল্প নিয়ে সাজানো হয়েছে " কাছে আসার গল্প " ব্লগ সাইটি।☞হাজারো 'কাছে আসার গল্প' শুনতে আমাদের সাথেই থাকুন সব সময়।

Search

Latest update

Banner

17/05/2018

গল্প : ম্যাডাম

কাছে আসার গল্প : ম্যাডাম

লেখক : রবিউল হোসেন

মেডাম
কাছে আসার গল্প : ম্যাডাম



#১ম_পর্ব.....


ম্যাডাম বিরক্ত হয়ে লাস্ট বেঞ্চের দিকে তাকালেন...
লাস্ট বেঞ্চ বেয়াদব ছাত্রদের আড্ডাখানা.....!!

তিনি রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে লাস্ট বেঞ্চের সামনে এসে দাঁড়ালেন......
দুটো ছেলে দুটো মেয়ে পাশাপাশি বসে হাসাহাসি করছে......!!

ম্যাডামকে দেখে  তাদের হাসি বন্ধ হয়ে গেল.....!!

ম্যাডাম অসহ্য রূপবতী, বয়স ২৪ হবে মনে হয়.... অবিবাহিত......!!

 ম্যাডাম রাগে গজ গজ করতে করতে  বললেন.....
-- দাঁড়াও...?
-- চারজন দাঁড়ালো.....!!

ম্যাডাম চারজনের দিকে কিছুক্ষণ
তাকিয়ে থেকে বিরক্তগলায় বললেন--
-- কথা বলছিলে কেন? ঢাকা ভার্সিটি কি কথা বলার জায়গা...?

ছেলে দুটোর মধ্য থেকে আমি বললাম---
-- ম্যাডাম, আমি জাহাঙ্গীরনগর ভার্সিটি-তে পরীক্ষা দিয়েছিলাম.....!!
সেখানে একটা না চারটা দেয়ালে বড়করে লেখা ছিল,
'চুপ থাকলে ভাল লাগে'.....!!
কিন্তু ঢাকা ভার্সিটি আমরা
পুরাটা ঘুরে কোথাও এই লেখাটা দেখলাম না।তাই মনে
হচ্ছে,ঢাবি কথা বলারই জায়গা.....!!

ম্যাডামের চোখমুখ শক্ত হয়ে গেল।কি বেয়াদবের মতো
কথাবার্তা.....
ভার্সিটি ছাত্রের গায়ে হাত তুলতে নেই.....!!

কিন্তু তার মনে হচ্ছে,আমাকে ধরে আচ্ছামতো একটা
ছেঁচা দিতে পারলে দিলটা ঠান্ডা হতো....!!
ম্যাডাম রেগে বললেন---
-- আমার সামনে ওভার স্মার্টনেস দেখাবে না,এটা আমার খুব অপছন্দ,বুঝলে....?

আমি আবার হাসি হাসি গলায় বললাম--
-- ওভার স্মার্টনেস কোথায় দেখালাম,ঠিক বুঝলাম না।যেটা সত্য,সেটাই বললাম.....!!

আমার পাশে তুহিন দাঁড়িয়ে ছিল.....!!

ম্যাডাম তার দিকে তাকিয়ে বললেন--
-- তোমার নাম....?

তুহিন দ্রুত উত্তর দিল--
-- গাঁজাবাবা....!!

উত্তর দিয়েই চুপ হয়ে গেল,মুখ থেকে ফস করে শব্দটা বের হয়ে গেছে.....!!

ম্যাডাম হতভম্বের মতো তার দিকে তাকিয়ে
আছেন.......
কি অদ্ভুত নাম হয় আজকালকার ছেলেমেয়েদের....!!

ম্যাডাম অবাক গলায় বললেন--
--  তোমার নাম গাঁজাবাবা কেনো.? গাঁজা বেশী খাও,এজন্য..?

তুহিন থুতো মুতো  খেয়ে বলল--
-- ম্যাডাম আমার নাম, সাইফুল ইসলাম তুহিন,
বন্ধুরা ডাকে, গাঁজাবাবা.....!!

কতদিন নিজের নাম শুনি না....
সবার মুখ থেকে এই নামটা শুনতে শুনতে আসল
নামটা প্রায় ভুলেই গেছি......!!

ম্যাডাম অস্বস্তি নিয়ে আমাদের দেখছেন.....!!

আমার ভীষণ ভালই লাগছে.....
ভার্সিটিতে সুন্দর ম্যাডাম না পেলে দমবন্ধের মতো অবস্থা হতো......!!

ম্যাডাম আমার দিকে তাকিয়ে শান্তগলায় বললেন--
--  খুব কষ্ট লাগে কখন জানো.? যখন অনেক কষ্ট করে তোমাদের পড়াই,অথচ তোমরা তা বুঝতে চেষ্টা না করে নিজেদের মধ্যে গল্প করো। তোমরা তো আমার কষ্ট বুঝবা না।কারণ তোমাদের কোনও কষ্ট নেই.. ( ম্যাডাম)

আমি অপমানবোধ করে বললাম--
-- ম্যাডাম, আমারও কষ্ট হয়,
যখন দেখি এত কষ্টকরে লেখা আমার গল্পটা কপি  হয়ে গেছে....!!

ম্যাডাম চোখমুখ লাল করে বললেন--
-- তুমি খুব অতিমাত্রায় বেয়াদব একটা ছেলে।কোন কলেজে ছিলে.?( ম্যাডাম)

-- সরকারি বিজ্ঞান কলেজ, ( আমি)

-- সরকারি বিজ্ঞান কলেজের কি সবগুলা স্টুডেন্টই
তোমার মতো এমন পেইন.?( ম্যাডাম)

-- না ম্যাডাম,কিছু পেইন কিলারও আছে...( আমি)

-- ওরা কেমন..?( ম্যাডাম)

-- খুব ভাল ছেলে ম্যাডাম।নিয়মিত ক্লাস করে,পড়া নোট
করে, হোমওয়র্ক করে।কলেজে উঠেও ক্লাস মিস দিলে
প্রাইমারি বাচ্চার মতো দরখাস্ত লিখে,মাগরিব এর
আযান দিলে ঘরে ফেরে।ভূমিকম্প না হলে রাতে বাসা
থেকে বের হয় না, টঙ দোকানে দাঁড়িয়ে চা খায় না,
কলেজে উঠলেও মা এখনও তাদেরকে বলেন,বাবা,আজ ক্লাসে মিস কি পড়িয়েছেন? দেখেন অবস্থা, ছেলে কলেজে পড়ে,তবুও মা ছেলের কলেজের খাতা চেক করে, মা কলেজে দিয়ে যায়,নিয়ে যায়।মেয়ে দেখলে  সিটি দেয়া তো আকাশের চাঁদ, উল্টো দাঁড়িয়ে সম্মান জানায়।ম্যাডাম, এরাই হচ্ছে, পেইন কিলার...( আমি)

-- ও আচ্ছা, এধরণের ভালো ছেলেদের তোমাদের মতো
ব্যাকবেঞ্চারদের কেন পছন্দ হবে? ওরা তো ভাল ছেলে, তোমাদের মতো বেয়াদব না।আমার খুব লজ্জা
হচ্ছে,তোমাদের মতো ছেলে আমি ঢাবিতে পেয়েছি..( ম্যাডাম)

-- আমারও খুব লজ্জা হচ্ছে ম্যাডাম...( আমি)

-- কেন...?( ম্যাডাম)

-- আমি দুই নম্বরের জন্য বুয়েটে চান্স পাই নি।নইলে কি আর ঢাবিতে পড়ে থাকতাম..( আমি)

-- তো বের হয়ে যাও না।বসে আছো কেন?( ম্যাডাম)

আমরা নিশ্চুপ....!!

ম্যাডাম একটু সময় নিয়ে বললেন--
-- জীবনে কি হতে চাও..?( ম্যাডাম)

--  লেখক...( আমি)

তিনি অবাক হয়ে বললেন--
-- লেখক? লেখকরা কি ভাত খেতে পারে?( ম্যাডাম)

আমি এ কথায় সামান্য অপমানবোধ করলাম,কিন্তু
পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম--
-- ম্যাডাম আমি বাসমতী চালের ভাত খাই..( আমি)

-- কি চাল..?( ম্যাডাম)

-- বাসমতী চাল..( আমি)

-- ফাযলামী করো আমার সাথে..?( ম্যাডাম)

আমি শান্তভাবে ব্যাগ থেকে এককেজি বাসমতী চাল
বের করে ম্যাডামকে দেখালাম.....!!

ম্যাডাম হতভম্ব হয়ে গেলেন।কিছুক্ষণ আমার দিকে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে থেকে বললেন--
--  তুমি বাসমতী চাল ব্যাগে নিয়ে ঘুরছো কেন.?( ম্যাডাম)

-- অনেকে বিশ্বাস করে না যে, লেখকরাও বাসমতী চালের ভাত খেতে পারে...( আমি)

-- তুমি আস্ত একটা পেইন।এমন ইডিয়ট ছেলে আমি আগে কখনও দেখে  নি..( ম্যাডাম)

বিড়বিড় করে বললাম, আপনার বয়সও বা কত..?

-- কি বললা তুমি..?( ম্যাডাম)

-- না, কিছু না..( আমি)

আমার পাশে রাএী আর হিমু  দাঁড়িয়ে আছে...
তারা আমার দিকে এমনভাবে তাকাচ্ছে মনে হচ্ছে যেন আমার কারণেই দাঁড়িয়ে আছে....!!

নিজেদের কোনও দোষ নেই, তারা দুগ্ধ শিশু....!!

ম্যাডাম রাগে গজ গজ করে বললেন--
-- তোমাকে দশটা প্রশ্ন করবো।সবগুলার উত্তর দিতে না
পারলে তোমরা চারজন সারা ঢাকা ভার্সিটি কানে ধরে
হাঁটবে...( ম্যাডাম)

-- হাসি দিয়ে, আর সবগুলার উত্তর পারলে..?( আমি)

-- আমি বই থেকে প্রশ্ন করব না।কোথা থেকে করব তাই ভেবে কূল পাবা না,আর তোমার মতো পেইন সবগুলার উত্তর পারবে...? হাসালে...!!( ম্যাডাম)

-- যদি পারি? আত্মবিশ্বাসের সাথে বললাম..( আমি)

-- তাহলে তোমার দুটা ইচ্ছে পূরণ হবে..( ম্যাডাম)

গোটা ক্লাস আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে....
সবাই বেশ মজা পাচ্ছে....!!

কৌতুহল জাগছে, আমি কি চাই...
আমি হাসিমুখে বললাম---
-- আমার প্রথম ইচ্ছে আপনার সাথে
কক্সবাজার ডেটিং-এ যাব,মেয়াদ -তিনদিন। আর...
আর...?
দ্বিতীয় ইচ্ছে, আপনার ঠোঁটে চুমু খাব...( আমি)

পুরো ক্লাস আমার কথায় হতভম্ব হয়ে গেল....!!

ভেবেছিলাম,আমার এই আবদারে ম্যাডাম ভয় পেয়ে
যাবেন.....
কিন্তু তিনি ভয় পান নি.....!!

তিনি একপ্রকার ধরেই
নিয়েছেন,আমি তার কোনও প্রশ্নেরই উত্তর পারবো না..........

#ম্যাডাম.....

#২য়_পর্ব....

ম্যাডামের সামনে দাঁড়িয়ে আছি.....
ম্যাডাম বললেন--
প্রথম,
প্রশ্ন; সূর্য কোনদিকে উঠে....?

পুরা ক্লাস হেসে উঠল....
তাদের সবার কেন্দ্রবিন্দুতে এখন
আমি আর ম্যাডাম.....!!

আমি ধাঁধায় পড়ে গেলাম....
আসলেই
তো,সূর্য কোনদিকে উঠে...?

 এত সহজ প্রশ্ন ম্যাডামের করার কথা না....
নিশ্চয় এরমধ্যে কোনও রহস্য আছে.......!!

সহজ প্রশ্নের উত্তরগুলো সবসময় জটিল হয়,জটিল প্রশ্নের উত্তর হয় সহজ....!!

আমি হাসিমুখে বললাম--
-- সূর্য কোনও দিকেই উঠে না,সূর্য সূর্যের জায়গাতেই থাকে,শুধু পৃথিবীটাই ঘুরে যায়...!!

ম্যাডাম হাসিমুখে বললেন,গুডবয়...!!
 দ্বিতীয় প্রশ্ন;
-- কোন কবির কবিতা ছাত্রাবস্থায়ই তার পাঠ্যবইয়ে চলে এসেছিল....!!

এ প্রশ্নের উত্তর না পারলে বিপদ....
আমি বলেছিলাম, আমি লেখক হতে চাই....!!

মানুষ ভাবে,লেখকরা সাহিত্য সম্পর্কিত...
সব প্রশ্নের উত্তর জানবে....
এটা ভুল ধারণা.....!!

তারাও খেটে খাওয়া মানুষ.....!!

উত্তরটা আমার জানা ছিল.....
বললাম, -- কবি জসিমউদ্দীন.....!!

ম্যাডাম সরু চোখে তাকিয়ে বললেন, গুডবয়....!!
তৃতীয় প্রশ্ন,
-- তোমার বন্ধু গাঁজাবাবা...

আমি শুধরে দিয়ে বললাম, ম্যাডাম, ওর নাম তুহিন...!!

-- সে যাই হোক,বন্ধুর নাম তোমরা দিলে গাঁজাবাবা,কয়দিন পর তো আমার নাম দিবে,গাঁজাআপু... কি, দিবে না.....?

আমি চুপ থেকে মাথানিচু করে দাঁড়িয়ে থাকলাম....
এর উত্তর, দিতেও পারি, নাও দিতে পারি....!!

ম্যাডাম আবার বললেন--
-- তুহিন কথা বলার সময় অন্যদিকে তাকিয়ে কথা... বলে।সে একবারও আমার চোখ বা ঠোঁটের..
দিকে তাকিয়ে কথা বলে নি।এটা একটা রোগ...
মনোবিজ্ঞানের ভাষায় এ রোগের নাম কি.......?

আমি বিড়বিড় করে বললাম--
-- আমিই মানা করে দিয়েছিলাম,আপনার দিকে না তাকাতে.....
শুরু থেকেই আপনাকে আমার ভাল লেগে গিয়েছিল...!!

ম্যাডাম বিরক্ত হয়ে বললেন--
--  স্পষ্ট করে বল....!!

আমি মুখে হাসি এনে বললাম--
-- আমার ভাষায় এর নাম শ্রদ্ধা। ম্যাডামের প্রতি বিনীত শ্রদ্ধা....!!

ম্যাডাম প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে বললেন--
-- মনোবিজ্ঞানের ভাষায় কি বলে ইডিয়ট....?

আমি ইডিয়টের মতো হেসে বললাম--
--  এর নাম মনোবিজ্ঞানের ভাষায় 'সোশ্যাল ফোবিয়া'। এই রোগে আক্রান্ত রোগীরা শ্রোতার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে অস্বস্তিবোধ করে।এটি 'আই কন্টাক্ট'গত (Eye
contact) সমস্যা হিসেবে পরিচিত।
সোশ্যাল ফোবিয়ার
রোগীরা ভাবে,তাদের মুখে গন্ধ , তারা দাঁত ব্রাশ করে
নি।শ্রোতা তার মুখের গন্ধ পেয়ে যাবে। তারা আরও
ভাবে,কথা বলার সময় তাদের মুখ থেকে থুথু নির্গত হয়।শুধু তাই না, এই থুথু স্প্রে এর মতো করে শ্রোতাকে ভিজিয়ে দেয়।মূলত, এসবের কিছুই ঘটে না।যা ঘটে তা তার পুরাটাই নিজের মস্তিষ্কে ঘটে, আর অস্বস্তিতে ভোগে.......!!

ম্যাডাম স্বাভাবিকভাবে হেসে বললেন,গুড....!!

ভয় টা কেন উদাও হয়ে গেল, বুঝলাম না।আমি নিজের
উত্তরে নিজেই মুগ্ধ হয়ে গেলাম,সেখানে ম্যাডাম এত
স্বাভাবিক....!!

এরপর আমাকে দুটা রহস্য প্রশ্ন করা হলো।আমি আমাকে.....
অবাক করে দিয়ে প্রশ্ন দুটির সঠিক জবাব দিলাম....!!

ম্যাডাম বললেন,এবার --
ষষ্ঠ প্রশ্ন; কোন জিনিস যত বড় হয়,
তত ছোট হয়....?

আমি ধাঁধায় পড়ে গেলাম।কিছু প্রশ্নের অনেকগুলো উত্তর হয়....
এটাও এধরণের প্রশ্ন....!!

উত্তরটা ম্যাডামের মনমতো না.....
হলে আমার ইচ্ছে দুটি অপূর্ণই থেকে যাবে....!!

আমি একটু,
মাথা চুলকিয়ে বললাম, Small - Smaller - Smallest.
বানানের দিক থেকে বড় হচ্ছে,কিন্তু গঠনগতভাবে ছোটই বোঝাচ্ছে......!!

ম্যাডাম এই প্রথম আমার দিকে অবাকচোখে একইসাথে ভালভাবে তাকালেন.....!!
হেসে বললেন--
সপ্তম প্রশ্ন,
'ইলেভেন মিনিটস' বইয়ের লেখকের স্ত্রীর নাম কি....?

এই সেরেছে! এ আবার কি ধরণের প্রশ্ন...?
লেখকের স্ত্রীকে নিয়ে টানাটানি....!!
 কয়দিন পর তো বলা হবে, 'দ্য
নেকেড ফেস' বইয়ের লেখকের বড় ছেলের নাম কি.?
কোনও মানে হয় - এসব প্রশ্নের...?
কোনওই মানে হয় না.....!!

আমি ইলেভেন মিনিটস বইটা পড়েছি।দারুণ একটা বই....
লেখক ব্রাজিলীয়ান, বর্তমানে তিনি সুইটজারল্যান্ডের
জেনেভাতে অবস্থান করছেন....!!
তাঁর বই বাংলাদেশে
তেমনভাবে অনুবাদ করা হয় নি বলে আমরা তাঁর নাম খুব কমই জানি.....!!

তিনি যদি নোবেল পেয়ে যান,তবে...
বাংলাদেশের অনুবাদকরা ব্যস্ত হয়ে পড়বেন তাঁর বই
অনুবাদ করতে.....!!
অনেকে নোবেল বিজয়ী লেখকদেরকে
সবচেয়ে  সেরা মনে করেন.....!!
এটা ঠিক না,লিও তলস্তয়-ও
নোবেল পান নি।তাতে কি তাঁর জনপ্রিয়তার কমতি
ঘটেছে....?
আমাদের নজরুল-ও তো নোবেল পান নি।তিনি কি
তার যোগ্য ছিলেন না....?

আমি হাসিমুখে বললাম--
--  লেখকের নাম পাওলো কোয়েলহো...
বড়ই ভাল মানুষ। আমার আইকন।তাঁকে একবার
জড়িয়ে ধরতে পারলে দিলটা ঠান্ডা হতো....!!

ম্যাডাম সরুচোখে আমার দিকে তাকালেন...
তার বিরক্তি সপ্ত আসমানে উঠল....!!

রাগে গজ গজে তিনি বললেন--
-- তাঁর নাম বলি নি, তাঁর স্ত্রীর নাম জানতে
চেয়েছি। তুমি কম কথা বলার চেষ্টা করবে, ঠিক আছে...?

আমি লজ্জিতভাবে মাথা নেড়ে বললাম, ঠিক আছে...!!
তাঁর স্ত্রীর নাম হচ্ছে,Cristina Oticica.....!!

ম্যাডাম বিরক্তভঙ্গীতে মাথা নেড়ে বললেন, কারেক্ট....!!

ক্লাসের সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে....
সবাই চাচ্ছে আমি যেন জিতে যাই...!!

কোন ম্যাডাম কোনদিন কোন অভাবীর মুখে ভাত তুলে দিয়েছেন,তা কেও মনে রাখে না।কোন ম্যাডাম কোন বাজে স্ক্যান্ডালে.....
জড়িয়েছেন,তা সবাই রসিয়ে রসিয়ে বলেন.....!!

আমার ম্যাডামের জন্য খুব মায়া হচ্ছে।তাকে কাছে পেতে ইচ্ছে করছে।আদর করতে ইচ্ছে করছে....!!ক্লাসের সবাই...
এটাকে যৌনতা বলবে,আমি এটাকে বলব,ভালবাসা। আমি ভালবাসার কাঙাল,যৌনতার না.....!!

এবার লাস্ট কোশ্চেন....
ম্যাডাম চারপাশে একবার তাকিয়ে নিলেন....!!

আমার মতো ছেলে নয়টা প্রশ্নেরই উত্তর পারবে,তা তার জানা ছিল না....
খুব সম্ভব এখন তার ভেতর অনুশোচনা হচ্ছে।এমন চ্যালেঞ্জ না নিলেও হতো....!!

আমাকে দুটা থাপ্পড় দিয়ে ক্লাস থেকে বের করে
দিলেও তো হতো....
আমি ম্যাডামের ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছি।ভীষণ মায়া হচ্ছে এই মেয়েটার জন্য....!!

তিনদিন এই মেয়েটার হাত ধরে কক্সবাজার ঘুরে
বেড়ালে মন্দ হয়না.....!!
ম্যাডাম ভয় পেয়ে যাচ্ছেন।তার চোখে পানি জমছে....
ভালবেসে সেই পানি মুছে দিতে
ভীষণ ইচ্ছে করছে.....!!

ম্যাডাম কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন,
লাস্ট কোশ্চেন,
-- একটি কুকুর একটি জঙ্গলের কতদূর পর্যন্ত
দৌঁড়াতে পারবে...?

আমি হতভম্ব হয়ে ম্যাডামের দিকে তাকালাম....
আমার
চোখমুখ থেকে হাসি উড়ে গিয়ে ম্যাডামের চোখেমুখে
চলে এল......!!

আমি মাথা চুলকাতে থাকলাম....
এই একটা প্রশ্নের উপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে....!

তীরে এসে তরী ডুবানো বাঙালির স্বভাব....
আমার মনে হচ্ছে, এই একটা,
প্রশ্নের জন্য বাঙালি না হলেও চলবে.....!!

আমি অস্থির হয়ে
ভাবছি, উত্তরটা কি, উত্তরটা কি...?
কুত্তা বিষয়ক কোনও
প্রশ্নে হেরে যাওয়ার কোনও মানে হয়...?

#ম্যাডাম......

#৩য়_পর্ব.....

আমি বোকার মতো দাঁড়িয়ে আছি....
প্রশ্নের উত্তরটা কিছুতেই মাথায় আসছে না.....!!

 ম্যাডাম আমার দিকে তাকিয়ে আছেন,চোখেমুখে তার বিজয়ের হাসি.....
বড় কঠিন প্রশ্ন করা হয়েছে আমাকে খুব সম্ভব, কঠিন প্রশ্নগুলো শেষে করারই নিয়ম.....
আমি গাল চুলকাচ্ছি......!!

মুখে প্রচুর ব্রণ,এপালিন ক্রিম আর লিনডেক্স বি জেল লাগাচ্ছি, তবুও কমছে না.....
ডাক্তারের পরামর্শে না,তুহিন  আমাকে সাজেস্ট করেছিল........!!
আমার মনে হচ্ছে শুধু শুধু টাকা নষ্ট হলো,কাজের কাজ কিছুই হলো না,কিছুই হবে না....!!

আমি আমতা আমতা করে বললাম,কুত্তা.....

ম্যাডাম চোখমুখ গরম করে আমার দিকে তাকালেন, কড়া গলায় বললেন--
-- সুন্দর করে বলো,তার নাম কুকুর। তিন শব্দের নাম,একে সংক্ষেপ করার কোনও মানে হয়...?

আমিও  বললাম--
-- ম্যাডাম,কুত্তাও তিনশব্দের।ত+ত=ত্ত।হি হি...

ম্যাডাম আমার দিকে সরুচোখে তাকিয়ে বললেন------উত্তর বলো.....??

আমি হাসিমুখে বললাম--
-- একটা কুকুর একটা জঙ্গলের পুরাটাই দৌঁড়াতে পারবে।আরও বেশী পারবে,তবে তখন সে জঙ্গলের বাইরে রাস্তায় চলে আসবে.....!!( আমি)

পুরো ক্লাস ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে আছে....
উত্তরটা সঠিক হয়েছে কি না,তা শুনতে সবাই আগ্রহী...!!

ম্যাডাম মাথানিচু করে বললেন-- কারেক্ট....!!

পুরো ক্লাসে হৈ চৈ পড়ে গেল.....
সবাই তালি দিয়ে আমাকে শুভেচ্ছা জানাল,কেও কেও স্লোগান এর মতো করে বলতে লাগল,কিস কিস কিস....!!

আমি বিজয়ের হাসি হেসে ম্যাডামের দিজে তাকিয়ে আছি....
তিনি আগের মতই মাথানিচু করে আছেন....!!

চুমুটা যে এখনই খেতে হবে, তা কিন্তু না...
অনেকে বাসর রাত নিয়ে নোংরা রসিকতা করে....!!

 আমার এটা একেবারেই পছন্দ না।সবকিছু বাসর রাতেই হতে হবে, এমন তো না.....
বৌ তো আর বাপের বাড়ি পালিয়ে যাচ্ছে না.....!!

তাছাড়া কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, "তিনি ধৈর্যশীল বান্দাদের পছন্দ করেন।"আমি ধৈর্যশীল হওয়ার চেষ্টা করছি.....!!

চ্যালেন্জ আমি জিতে গেছি....
আর ম্যাডাম হেরে গেছে.....!!
চুক্তি অনুযারী ম্যাডাম আর সাথে কক্সবাজারে ডেট করবে তিন দিন....!!
..........

একটু পর বাস ছাড়বে কক্সবাজারের উদ্দেশ্য..... ম্যাডাম বেশ সেজে-গুজে এসেছেন......!!
দেখে  হচ্ছে,প্রেমিকের সাথে আনন্দ ভ্রমণে বেরিয়েছেন....!!

আমি হাসিমুখে ম্যাডামের পাশে বসলাম....
 তিনি জানালার সাইডে বসেছেন.....!!

আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি,ব্যাপারটা তিনি ধরতে পেরে মহা বিরক্ত হলেন.....
তাতে আমি মোটেও রাগলাম না,বরং মিষ্টি করে একটু হাসলাম.....!!

কবি গুরু বলেছেন,-- বৎস....
তোমার মন যদি কোনও সুন্দরী জয় করিয়া ফেলে তবে তাহার পেছনে ঘুরিবে।সুন্দরী অনেক ডাঁট দেখাইবে,তোমাকে প্রহার করিবে,যাতনা সইতে না পারিয়া জানালা দ্বয় বন্ধ করিয়া দিবে......!!
কিন্তুু......
তুমি তাহাতে বিরক্ত প্রকাশ করিবে না,বরং তাহার পেছনে দৌঁড়ানো কখনওই বন্ধ করিবে না.....!
দেখিবে,একদিন সে-ই তোমারি প্রেমে হাবুডুবু খাইতে থাকিবে....!!

আমার উৎসাহ আরও বেড়ে গেল....
ম্যাডাম বিরক্ত চোখে প্রকৃতি দেখছেন......!!

বাস খুব দ্রুত চলছে কক্সবাজার পৌঁছাতে বেশী সময় লাগার কথা না....!!
৭ ঘন্টা অতিবাহিত হবার পর আমি আর ম্যাডাম অবশেষে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে এসে পৌছলাম...!!

আমি ডাবল একরুম ভাড়া করলাম ম্যাডাম তুমুল আপত্তি জানালো,আমি তাতে সায় দিই নি.....
মেয়েদের কে ভয় দেখাতে আমার ভাল লাগে.....!!

 টাকা সব ম্যাডামের কাছ থেকেই নিচ্ছি.....
চ্যালেঞ্জে হেরে গিয়ে তাকে খুব অসহায় লাগছে....!!

তার অসহায়ত্বের সুযোগ নিচ্ছি বলে নিজেকে পিশাচ শ্রেণির প্রাণি মনে হচ্ছে....!!

জার্নি করে ক্লান্ত হয়ে বিছানায় শুয়েছি....!!

 ঝাঁজালো কন্ঠে  বললেন....
-- রুম চেঞ্জ করো...?( ম্যাডাম)

--  কেন....? ( আমি)

-- পাশের রুমে এরা কারা.? এত চিল্লাচিল্লি করে।পুরা মাথা ধরাই ফেলছে।একে তো ডাবল রুমে পাঁচজন তোমার মতো জানোয়ার টাইপ ছেলে থাকছে,তার উপর একটু পরপর হাততালি,সিটি, গান, নাচ -সবই করছে...( ম্যাডাম)

আমি রহস্যের ভঙ্গীতে হাসলাম।পাশের রুম থেকে 'কালা চশমা' গানটা ভেসে আসছে.......!!

ম্যাডামের হাত ধরে সাগর পাড়ে হাঁটছি....
একটুপর সূর্য অস্ত যাবে.....!!

আজ আমাদের প্রথম রাত হতে যাচ্ছে....
আচ্ছা ঢাকায় ফেরার পর কি ম্যাডামের চাকরি চলে যাবে...?
যেতেই পারে।মানুষ রসিয়ে রসিয়ে আলাপ জমাতে পছন্দ করে.....!!
হয়তো গুজুব উঠবে, ম্যাডাম তো কক্সবাজার থেকে প্রেগন্যান্ট হয়ে এসেছেন.....হা হা হা.....

গেল ম্যাডাম আর ছাত্র, এখন ফিরে এসেছে তিনজন....
আমার কি হবে..? আমাকে কি বহিষ্কার করা হবে..?

 বহিষ্কার করা হলে অন্যকোথাও গিয়ে ভর্তি হয়ে গেলেই হলো......
অসম্ভব ভাবে কোথাও ভর্তি হওয়ার সুযোগ না ফেলে চাকরী-বাকরী করব,ইডিয়ট রা সব পারে.....!!

ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বললাম--
--  আপনার প্রেমিক আছে..?( আমি)

-- না...( ম্যাডাম)

-- ছিল কখনও...?( আমি)

-- ছিল..( ম্যাডাম)

-- এখন কি ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে, নাকি পটল তুলেছে..?( আমি)

ম্যাডাম বিরক্তবোধ করলেন....
কোনও জবাব তো দিলেনই না, উল্টো আমার হাত ছেড়ে দিলেন......!!

 আগের মতই হেসে বললাম--
-- বাসায় কে কে আছে আপনার..?( আমি)

-- আমি আর মা...( ম্যাডাম)

-- বাবা কি মারা গেছেন...?( আমি)

-- না,তাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে...( ম্যাডাম)

-- ও আচ্ছা। বিয়ে করছেন না কেন....?( আমি)

-- ছেলে দের কে আজকাল বিশ্বাস হয় না..( ম্যাডাম)

আমি এ কথায় সামান্য অপমানবোধ করলাম....
ইডিয়ট হলেও অপমান বলে একটা ব্যাপার আমাকে ছেড়ে যায় নি কখনও.....!!

কিছুক্ষণ চুপচাপ হাঁটলাম।একটুপর ম্যাডাম নিজেই বললেন--
--  তোমার ব্যাগের এককোণে একটা ময়লা কাগজ ছিল।খুব সম্ভব অনেক আগের দিনের কাগজ।ওখানে লেখা আছে 'এ কেমন কান্না তোমার, আমায় যখন আদর করো' লাইনটা আমার অনেক পছন্দ হয়েছে।কে লিখেছে..?( ম্যাডাম)

-- জানি না। অনেক আগের দিনের কাগজ তো, লেখাটাও পুরান...( আমি)

-- ও আচ্ছা...( ম্যাডাম)

-- আপনার কি কোনও বান্ধবী নেই..?( আমি)

-- না।আমি একা..( ম্যাডাম)

-- আমি ব্যাপারটা কিভাবে ধরলাম,বলবো ..?( আমি)

-- লাগবে না....( ম্যাডাম)

-- আচ্ছা..( আমি)

সূর্য অস্ত যাচ্ছে। কক্সবাজার আমাকে মুগ্ধ করতে পারছে না.....
আমাকে মুগ্ধ করে বড় বড় পাহাড়.....!!

আজ একটা দিন চলে যাচ্ছে।আর বাকি দু'দিন...!!

 আমি ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বললাম--
-- ম্যাডাম,আজ রাতে কিভাবে কি করবেন, সব ঠিকঠাক ভাবে ভেবে রেখেছেন তো....?

ম্যাডাম আমার দিকে তাকালেন।রাগার চেষ্টা করলেন....
কিন্তুু রাগতে পারলেন না.......!!

তার চোখমুখে রাজ্যের ভয় ভীড় করছে.....!!

রাগার চেষ্টা করতে করতে বললেন---
 -- আজ রাতে কিছুই হবে না ইডিয়ট....( ম্যাডাম)

 -- আজ রাতে সবই হবে ম্যাডাম।আমি যা বলবো আপনাকে তাই করতে হবে...( আমি)

ম্যাডামের রাগ সপ্ত আসমানে উঠল....!!

 দাঁতে দাঁত চেপে চাপা গলায় বললেন--
-- আমি কিছুই করব না।তোমার এত সাহস হয় কিভাবে..?( ম্যাডাম)

-- আমাদের পাশের রুমে কয়েকটা ছেলে উঠেছে না..?( আমি)

-- সরু চোখে  তাকিয়ে তো...?( ম্যাডাম)

-- ওরা আসলে আমারই বন্ধু।আমিই তাদের ফোন দিয়ে আনিয়েছিলাম। আমি জানি তো আপনি এভাবে রাজি হবেন না।তাই অন্য পন্থা অবলম্বন করা।এই আরকি, হি হি......( আমি)

#ম্যাডাম....

#৪র্থ_পর্ব.....

ম্যাডাম হতভম্ব হয়ে আমার দিকে তাকালেন....
তার চোখে মেঘ জমছে.....!!

 প্রকৃতিতে সন্ধ্যা নামছে।সন্ধ্যা বিষণ্ণতার প্রতীক....
অকারণেই মনটা খারাপ করে দেয়......!!

পরের দিন বিকালে সমুদ্র সৈকতে গেলাম আমি আর ম্যাডাম.....!!
ম্যাডামের চোখে মুখে সন্ধ্যা নামছে....
আশে পাশের মানুষগুলো ম্যাডামের দিকে বাজে ভাবে তাকাচ্ছে, মনে হচ্ছে,গিলে খাচ্ছে......!!

 আমি ম্যাডামের হাত ধরলাম....
তিনি সেই হাত ছাড়ানোর কোনও চেষ্টা করলেন না....!

তিনিও খুব সম্ভব আমার কাছে নিরাপত্তাই চাচ্ছেন.... আশেপাশের মানুষগুলো থেকে হয়তো আমাকে তিনি 'মন্দের ভাল' ভাবছেন....!!

হঠাৎই আবার হাতটা ছাড়িয়ে নিলেন,আমি কিছু বললাম না....!!

একবার আমি বসে বসে আমার দু'বছরের ভাগিনীর খেলা দেখছিলাম.....
ঠিক তখনি লোডশেডিং হলো.....!!
পিচ্চিটা ভয় পেয়ে দৌঁড়ে এসে আমার কোলে উঠে গেল....
খুব শক্তকরে আমাকে জড়িয়ে ধরল.....!!

বুঝলাম, বেচারি ভীষণ ভয় পেয়ে গেছে....
ভাগনী টাকে আমি তাকে আদর করতে করতে হঠাৎ ভাবলাম....
একে একটা ভয় দেখালে কেমন হয়....?
 নিজেই উত্তর দিলাম, ভীষণ ভাল হয়.....!!

আমি ভয়ংকর গলা করে বললাম, তাওসী,আমি ভূত.....!!
আমি তোমাকে খাব।তোমার মাংস ভেজে খাব, আর হাড়গুলো চিবিয়ে চিবিয়ে খাব।হি হি হি.....!!

তাওসী ভীষণ ভয় পেয়ে আমার দিকে তাকালো....
ওর চোখে পানি জমে টলটল করছে,চোখের পাতা বন্ধ করা মাত্রই তা গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়বে.....!!

তাওসী চোখের পাতা বন্ধ করছে না,চোখের জলে গালও ভিজছে না।সে আমার কোল থেকে নেমে দৌঁড়ে পালিয়ে গেল......!!

ভূতের ভয় পেয়ে যে মামার কোলে সে আশ্রয় নিয়েছিল,সে মামাই এখন তাকে ভূতের ভয় দেখাচ্ছে...!!
এই মামার কোল এখন নিরাপদ নয়......!!

ম্যাডাম খুব সম্ভব আমাকে বিশ্বাস করেই এসেছেন....!

 তিনিও এখন তাওসীর মতোই ভয় পাচ্ছেন....
তার বয়স তাওসীর মতো ৪ বছর না......!!

হয়তো কিছু কিছু ভয়ের কোনও বয়স থাকে না.....!!

রাতে ম্যাডাম বিছানায় শুয়ে আছেন.....
আমি সিগারেট টানছি......!!

তিনি তাতে বাঁধা দিচ্ছেন না....
এর দুটা কারণ হতে পারে......!!
এক: তিনি আমাকে ভয় পাচ্ছেন....!!
দুই: এই তিনদিন আমাদের অনেক কিছুই ছাড় দিয়ে চলতে হবে।এবং তিনি ধূমপায়ীকে অন্য সবার মতো কুলাঙ্গার ভাবেন না......!!

আমি ম্যাডামের পাশে এসে বসলাম.....
হাসার চেষ্টা করতে করতে বললাম----
-- আপনার কোনও ছোটবোন নাই...?( আমি)

ভেবেছিলাম, তিনি তিক্ত গলায় বলবেন,কুলাঙ্গারের বাচ্চা! তোকে বলছিলাম না,বাসায় শুধু আমি আর আমার মা থাকি.....!!

কিন্তু, নরম গলায় বললেন--
--  না।আমার কোনও ভাইবোন নেই.....( ম্যাডাম)

-- আপনার বাবা-মায়ের ডিভোর্স হয়েছে কখন...?( আমি)

-- আমি যখন ক্লাস নাইনে ছিলাম...( ম্যাডাম)

-- আপনার বাবা তো আরেকটা শাদি করেছেন,তাই না..?( আমি)

-- হুমম।হাজার হোক পুরুষ মানুষ....( ম্যাডাম)

-- আপনার মা করেন নি...?( আমি)

-- না।তিনি বাবার মতো না....( ম্যাডাম)

-- বাবার শাদিতে দাওয়াত পেয়েছিলেন...?( আমি)

ম্যাডাম বিরক্ত গলায় বললেন--
-- অন্যকিছু বল.....!!

আমি কিছুক্ষণ চুপ থাকলাম....
ম্যাডামের দিকে তাকালাম.....!!

তিনি তার কোলের দিকে তাকিয়ে আছেন.....!!

তাকে দেখে মনে হচ্ছে,বাবা-মা জোড় করে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে, আর তার অপদার্থ প্রেমিক কিছুই করতে পারছে না......!!

আবারো বললাম --
--  আপনার একটা ছোটবোন ছিল।ক্লাস থ্রি-তে পড়তো।একটা এক্সিডেন্টে সে মারা যায়।আমি কি ঠিক বলছি...?( আমি)

ম্যাডাম হতভম্ব হয়ে আমার দিকে তাকালেন.....
আমার কথা তার বিশ্বাস হচ্ছে না......!!

তার চোখে অবিশ্বাসের ছাপ....
অথচ তিনি অবিশ্বাসের কিছু দেখছেন না,অবিশ্বাসের কথা শুনছেন.....!!

সৃষ্টিকর্তা আমাদের কানকে চমকে উঠা বা অবিশ্বাসে.. বিশ্বাসীত হওয়ার কোনও ছাপ প্রদর্শনের সুযোগ দেন.. নি......!!
এই সুযোগ চোখ পেয়েছে.....!!

সৃষ্টিকর্তা যেহেতু সবাইকে সমান অধিকার দিয়েছেন.....
সেহেতু....
 মেডিকেল সায়েন্স বলছে.....
একজন মৃত্যু পথযাত্রীর সর্বপ্রথম যে অঙ্গের মৃত্যু ঘটে তা হল, চক্ষু......!!
এবং সর্বশেষ যে অঙ্গের মৃত্যু ঘটে তা হল, কান...!!(এখানে অনেকে 'মস্তিষ্ক' বলে থাকেন।অনেকে বলেন 'কান'। তাই হালকা মতবিরোধ আছে।)

অবাক গলায় বললেন---
-- তুমি কার কাছ থেকে শুনেছো...?( ম্যাডাম)

আমার খুব ঘুম পাচ্ছে, আমি ঘুমুবার আয়োজন করতে করতে বললাম.....
ঘুমান, রাত প্রায় দুটা বাজতে চলল.....!!

আমি শুয়ে আছি.....
ম্যাডাম নিশ্চয়ই এখনও আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছেন......!!

উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছেন,এ পৃথিবীর সবাই কিছু না কিছু খোঁজার চেষ্টায় ব্যস্ত......
পাঁচ মিনিট পর যাঁর ফাঁসি হবে,সেও অসম্ভব ভাবে বেঁচে যাওয়ার পথ খুঁজবে.....!!

পাশের রুমে হৈ চৈ হচ্ছে....
একটু আগে একটা পার্টি গান চলছিল.....!!

এখন একটা বিদঘুটে গান চলছে 'তুমি দিও নাকো বাসর ঘরের বাত্তি নিভাইয়া,আমি অন্ধকারের বদ্ধ ঘরে যাব মরিয়া..."'
কোনও মানে হয় এসব গানের.....?

একজন চিৎকার দিয়ে বলছে,বাতি নিভাই দে....
দেখি কি শুরু হয়,বাকিগুলো অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল......!!
যেন এর থেকে হাসির কথা মায়ের পেট থেকে বের হওয়ার পর আর শুনে নি.....!!

আমার খুব রাগ হচ্ছে.....
ঠাসিয়ে চড় লাগিয়ে আসতে ইচ্ছে করছে......!!

আসলে সত্যটা হচ্ছে,আমি যদি ওখানে থাকতাম, তবে আমিও তেমনটি করতাম.....
আমার ওদের উপর রাগ হচ্ছে না।আমি এই আনন্দপুরে নেই বলে আমার রাগ হচ্ছে; আমারই উপর......!!

পরদিন সকাল,আমি ইডিয়টের মতো ঘুমাচ্ছি....
ম্যাডাম রুমের বাইরে এলেন....!!

ঠিক তখনি পাশের রুম থেকেও একটা ছেলে বের হলো....
ম্যাডাম তারদিকে হাসিমুখে তাকিয়ে বললেন--
-- তোমার নাম...?

ছেলেটা হতভম্ব হয়ে গেল।তার মতো একটা ছেলেকে কোনও সুন্দরী নাম জিজ্ঞেস করবে -তা হয় না...
নিশ্চয় এখানে কোনও স্বার্থ আছে....!!
ছেলেটা বলল--
-- আবির...!!

-- তোমরা কি বেড়াতে এসেছো..?( ম্যাডাম)

-- জ্বী..( আবির)

-- আসলে তুমি তো জানই তাও আবার বলছি।আমি একজন প্রফেসর। আর রবি আমার ছাত্র। আমি নাহয় একটা ভুলভাল চ্যালেঞ্জ নিয়েই ফেলেছি।তাতে ওর এত সিরিয়াস হয়ে যেতে হবে...?
একা তো আসে নি,বন্ধু বান্ধব নিয়ে এসেছে।তবে ও এখন পর্যন্ত আমার সাথে কিছু করে নি।কিন্তু, পুরুষ মানুষকে বিশ্বাস করতে নেই...( ম্যাডাম)

আবীর অবাকচোখে ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে আছে।কি বলবে বুঝতে পারছে না.....!!
সে তার কণ্ঠস্বর যথেষ্ট স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বললো--
-- আচ্ছা ম্যাম, আপনি বোধহয় কোথাও ভুল করছেন।রবি নামের কাওকেই আমি বা আমার বন্ধুরা চিনে না।আমরা বরগুনা থেকে এসেছি।আমাদের কেও নিয়ে আসে নি.....!!

#ম্যাডাম....

#৫ম_পর্ব....

ম্যাডাম কড়া চোখে আমার দিকে তাকালেন....
তার চোখেমুখে রাজ্যের রাগ.....!!

আমি ইডিয়টের মতো ঘুমাচ্ছি.....!!
ম্যাডাম আমার দিকে তাকিয়ে আছেন....!!

একটা কষে চড় দেবার বাসনা জেগেছে....
চড়টা কোথায় দিবেন তা নিয়ে অবস্থান সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত হীনতায় ভুগছেন......!!

 আমি চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছি.....
ঘুম অনেক আগেই কেটে গেছে.....!!

চোখ বন্ধ মানে ঘুম না....
ঘুমের সাথে চোখের তেমন কোনও সম্পর্ক নেই.....!!

ঘুম হচ্ছের মস্তিষ্কের বিশ্রাম,চোখ একটা উপলক্ষ মাত্র...

 প্রচন্ড জোরে একটা চড়ের আওয়াজ এলো...
আমি ভয় পেয়ে উঠে বসলাম.....!!

গালে হাত দিয়ে বুঝলাম, চড়টা আমার গালেই পড়েছে....!!

ম্যাডাম রাগে রীতিমতো গজ গজ গজ করছেন....
একটা চড় মেরে মিথ্যে বলার প্রতিশোধ নেয়া.. স্বয়ংসম্পূর্ণ হয় নি,আরেকটার প্রয়োজন ছিল.....!!

সকালে হালকা নাস্তা হল......
গতকাল ভাল খাওয়া হয়েছিল......
আজ হচ্ছে হালকা খাওয়া.....!!
এটাই মধ্যবিত্ত পরিবারের নিয়ম......!!

ম্যাডাম মধ্যবিত্ত, আমিও মধ্যবিও......
দু মধ্যবিত্ত এক হলে হয় 'নিম্ন মধ্যবিত্ত'.....!!

আমার খেতে কোনও সমস্যা হয় নি.....
আমার কোনও পছন্দের খাবার নেই.......!!

ফার্মের মুরগীর  মাংস ছাড়া সবই খাই....
ভালো খাওয়া হলে শোকর আলহামদুলিল্লাহ বলে একটা বিড়ি ধরাই.......!!

ম্যাডাম আমার পাশে বসে আছেন......
সামনে সমুদ্র সৈকত.....
সেখানে বাবা-মা হাত ধরাধরি করে হাঁটছে।মাঝখানে তাদের পিচ্চি মেয়ে......!!
খুবই সুন্দর দৃশ্য.....
মাঝামাঝি ব্যাপারগুলো সবমসময় সুন্দর হয়.....!!

আজও আমাদের দ্বিতীয় দিন,মানে- মাঝের দিন....!!

 একটু ভয় ভয় গলায় বললেন--
-- গতকাল তুমি এত তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গিয়েছিলে কেন...?( ম্যাডাম)

-- হা হা হা! আপনার কি খুব ইচ্ছে করছিল।সমস্যা নেই, আজ রাতে হবে ইনশাল্লাহ। একটা দোয়া আছে।দোয়াটা ভুলে গেছি।ওই দোয়া পড়ে পবিত্র কাজ শুরু করতে হয়।হি হি...( আমি)

 বিরক্ত হয়ে বললেন--
--  গতরাতে একটা বাজে জিনিস দেখেছি..( ম্যাডাম)

-- ওহ আচ্ছা.... ( আমি)

-- কি দেখেছি জানো....?( ম্যাডাম)

-- অনুমান করতে পারি....( আমি)

-- বলো তো কি....?( ম্যাডাম)

 একটু লজ্জিত গলায় বললাম--
-- আমাকে দেখেছেন নিশ্চয়। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছেন.
ঘুমালে আমার কোনও হুঁশ থাকে না,আপনি এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে আমার ------ আবিষ্কার করেছেন,হো হো হো! এত ব্যস্ত হবার কি ছিল...? আল্লা ধৈর্যশীল বান্দাদের সঙ্গে আছেন।আপনার তো দেখছি কোনও ধৈর্যই নেই!আল্লা আপনার সঙ্গে নেই।তাহলে আর শুভরাত্রির আগে দোয়া পড়েও কি লাভ।পার্টনার যখন আপনি। আচ্ছা ভাল কথা,আমি যতটুকু জানি আমারটা খারাপ না।এভাবে কাওকে শারীরিক ব্যাপারে লজ্জা দেয়া ভাল না।ব্যক্তি লজ্জা বলে একটা ব্যাপার আছে.....( আমি)

ম্যাডাম চোখমুখ পাকিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন.....
চোখ দিয়ে যদি মানুষ খুন করা যেত,তবে এতক্ষণে আমি হাসপাতালের মর্গে থাকতাম.....!!

প্রচন্ড জোরে আরেকটা চড়ের আওয়াজ এলো....
সকালের অপ্রাপ্তিটা মিটে গেল......!!

ম্যাডাম স্বাভাবিক হওয়ার জন্য কিছুক্ষণ সময় নিয়ে বললেন---
-- গতরাতে তোমার ব্যাগে একটা বক্স দেখেছি।সেটা আপনা আপনি বড় হচ্ছে,আবার ছোট হচ্ছে।আমি খুব ভয় পেয়েছি...( ম্যাডাম)

--  সাধারণ ব্যাপার...( আমি)

--  এটাকে তুমি সাধারণ বলছো..?( ম্যাডাম)

-- আপনি চাইলে অসাধারণও বলতে পারেন।ওটা আমি পানাম সিটিতে পেয়েছি।১৮ নং বিল্ডিং -এর দোতলায়...
নিচের তলায় একটা না দুটা পোস্টারে লেখা ছিল "ঝুঁকিপূর্ণ ভবন।উপরে উঠা নিষেধ "। আমি নিষেধ অমান্য করে দোতলায় উঠে ছিলাম।ভয়ংকর বাড়ি।জঙ্গল বাড়ি যাকে বলে।ঢুকে ভয় পেয়ে বের হতে গিয়েই হোঁচট খেয়ে পড়ে যাই।এরপর আর কিছু মনে নেই।জ্ঞান ফেরার পর দেখি,আমার বুকের উপর এই বক্স। ভুতুড়ে বক্স। প্রতি শুক্রবার মধ্যরাতে এই বক্স বড় ছোট হয়।অল্প সময়ের জন্যই হয়।যে এই বড় ছোট হওয়া প্রথমে দেখবে তাকে একটা নিয়ম মানতে হয়.....( আমি)

--  ঢোক গিলে ,কি নিয়ম...?( ম্যাডাম)

-- তাকে পরের শুক্রবার সাগর পাড়ে আসতেই হবে।সে না চাইলেও এই বক্স তাকে সাগর পাড়ে নিয়ে আসবেই।সময়টা থাকবে মধ্যরাত।আপনি তখন আপনার মৃত আত্মীয়ের সাথে কথা বলতে পারবেন।সময়- তেরো মিনিট বাইশ সেকেন্ড। আমার সাথেও হয়েছিল।আমি কথা বলেছিলাম। একজন মানুষের সাথে এটা একবারই হয়।তারমানে আপনি মাত্র একজীবনে একবারই মৃত কোনও ব্যক্তির সাক্ষাৎ পাবেন....( আমি)

ম্যাডাম অবিশ্বাসের চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে.....
মৃত ব্যক্তির সাক্ষাৎ কি কখনও সম্ভব কি না, তাই ভাবছেন......!!

সামনে একটা মেয়ে মাইক হাতে মানুষের সাথে কথা বলছে.....
পেছনে একটা চৌদ্দ বছরের ছেলে ভিডিও করছে....!!

এত কম বয়সে কাজ শিখে গেছে...! বাহ!
 মেয়েটার নাম জানা গেল,আইনা......!!

মানুষকে অদ্ভুত সব প্রশ্ন করছে....
যেমন: মেয়েদেরকে বলছে,কত বছরের মধ্যে ছেলেদের বিয়ে করা উচিত....?
বাসর রাতে ছেলেরা কি করে....?
যদি দেখো তোমার স্বামী পরকীয়া করে, তখন কি করবে....?

ছেলেদেরকেও ঘুরে-ফিরে একই প্রশ্ন করছে....
কোনও মানে হয় এসব প্রশ্নের....?
 লোক জড়ো হচ্ছো।তারা খুব সম্ভব এটাই চাচ্ছে....!!

 এখন জনে জনে যে প্রশ্নটা করা হচ্ছে সেটা হচ্ছে,সুযোগ পেলে প্রিয় মানুষটার সাথে কোথায় যেতেন.....?
কেও বলছেন,সুইটজারল্যান্ড,কেও গ্রিস, কেও মালদ্বীপ, কেও আমেরিকা, কেও পুরো ইউরোপ চষে বেড়াতে চান......!!

একজন প্রেমিক প্রেমিকাকে এই প্রশ্ন করা মাত্রই প্রেমিক টা বলল---
-- আমরা কক্সবাজারেই আসতে চেয়েছিলাম....!!কথাটা শুনে প্রেমিকা হাসতে হাসতে প্রেমিকের বুকের উপর এসে পড়ল।যেন প্রমাণ করে দিল,কথা সত্য....

আমরা দারুণ আনন্দে আছি......!!

আমি চুপচাপ এসব দেখছি,আর বিরক্ত হচ্ছি....
ঘুরে ফিরে আইনা আমার কাছ এলো.....!!

টেনে টেনে হাসিমুখে প্রশ্ন করল--
-- সুযোগ পেলে প্রিয় মানুষটাকে নিয়ে কোথায় যেতে চান....?( আইনা)

বিরক্তি সপ্ত আসমানে উঠল যত্তসব আজাইরা প্রশ্ন....!!

-- দুটা জায়গায়...( আমি)

-- কোন দুটা জায়গায় ভাইয়া...( আইনা)

--  ১.বিছানায় ২.চিপা-চাপায়.....( আমি)

রাতে আমার খাওয়া হয় নি....
ম্যাডাম রেস্টুরেন্ট থেকে কাচ্চি খেয়ে এসেছেন.....!!

 আমার জন্য তিনি নাকি আর টাকা খরচ করবেন না....
তাহলে কেমনে হবে....?
আরও একটাদিন আছে.....!!
তাহলে কি আরও একদিন আমি না খেয়ে থাকব....?

ম্যাডাম বিছানায় বসে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছেন....
আমি চোখেমুখে অসহায়ত্বের ছাপ এনে বললাম--  -- ---- ক্ষিধা লাগছে...? ( আমি)

--  নিষ্ঠুর হাসি হেসে  তা আমি কি করব...? তোমার টাকায় তুমি খাও।গতকাল খাইয়েছি।আজ সকালেও খাইয়েছি।আর পারব না।এখন ঘুমিয়ে পড়ো..( ম্যাডাম)

ম্যাডাম শুয়ে পড়লেন।একজন ক্ষুধার্ত মানুষের সাথে এমন আচরণ না করলেও চলতো....
আমি আস্তে আস্তে ম্যাডামের কোমরে হাত রাখলাম....

ম্যাডাম অবাকচোখে আমার দিকে তাকালেন--
 -- কি করছো তুমি..?( ম্যাডাম)

--  বিশ্রী হাসি হেসে আমার ক্ষিধা ছিল।আপনি খেতে দিলেন না,এখন অন্যভাবে ক্ষিধা দূর করব...( আমি)

--  সরো বলছি, ভাল হচ্ছে না।আমি চিৎকার দিলে তুমি পালাতে পারবে না...(ম্যাডাম)

-- হাসিরমাত্রা আরও বেড়ে গেল।আমি হো হো করে হাসতে হাসতে, ম্যাডাম প্রথম দিন চুপচাপ থাকায় সাহস পেয়ে গেছেন।যদিও মিথ্যে সাহস।আর আপনার চিৎকার কেওই শুনবে না।আপনি গতকাল আমার বক্সটা প্রথম দেখেছিলেন না...?( আমি)

-- কাঁপা কাঁপা গলায় ,তো...?( ম্যাডাম)

-- ওই বক্সটা আপনি দেখেছেন,তাই আগামী শুক্রবার পর্যন্ত আপনার সাথে অনেক কিছুই হবে।আপনার চিৎকার কেওই শুনবে না।আজ সকালে আইনা মেয়েটাকে মনে আছে..? সে প্রায় সবার কাছেই এসেছিল।আমার পাশে আপনি ছিলেন,কিন্তু আপনার কাছে আসে নি,কেন বলেন তো, হা হা হা...?( আমি)

আমি ম্যাডামের ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছি...
তার ঠোঁটটা কাঁপছে.....!!

মেয়েদের ঠোঁট দুই কারণে কাঁপে....
প্রবল উত্তেজনায় অার ভয়ে....!!

ম্যাডামের ঠোঁট কোন কারণে কাঁপছে তা বলতে পারছি না.....
ম্যাডামের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে....!!

আমি তার মুখের উপর...
তিনি একবার পাশে তাকালেন....!!

তার চোখ জোড়া বড় বড় হয়ে গেল.....!!

তাকিয়ে দেখলাম--
বক্সটা আবার বড় হতে শুরু করেছে।তাজ্জব লাগল....!

শুক্রবার ছাড়া তো বক্স বড় হবার কথা না.....
ম্যাডাম আমাকে খুব শক্তভাবে জড়িয়ে ধরলেন.....!!

#ম্যাডাম....

#৬ষ্ঠ_পর্ব....

ম্যাডাম খুব শক্তকরে আমাকে জড়িয়ে ধরে আছেন....!!

এই হাত ছাড়ানোর শক্তি আমার থাকলেও, ক্ষমতা নেই.....!!

ম্যাডামের গাল চোখের জলে ভিজে যাচ্ছে....
 তার গাল আমার গালের সাথে মিশে যাচ্ছে....!!

 তিনি ব্যাকুল হয়ে আমার কাছে ভালবাসা চাচ্ছেন...!!

 চারপাশে অলৌকিক কিছু ঘটলে একজন মানুষ আরেকজন মানুষের কাছে ভালবাসাই চায়.....
মানুষটা 'অমানুষ' হলেও....!!
কারণ,অমানুষকে জন্ম তো একজন মানুষই দিয়েছেন....!!

আমি আলতো করে তার গালে একটা চুমু খেলাম....!!

ম্যাডাম শিহরে উঠলেন....
এই শিহরণ দুটা কারণে হতে পারে....
অলৌকিকতার ভয়ে বা গোপণ ভালবাসায়.....!!

আমি ভালবাসার কাঙাল, যৌনতার না....
খুব সম্ভব ম্যাডামও তাই....!!

যে সেক্সে ভালবাসা নেই সেটা সেক্স না,সেটা রেইপ (Rape)...
এই পৃথিবীতে দু'ধরণের প্রেমিক আছে....
একধরণের প্রেমিক প্রেম করার জন্য সেক্স করে,এরা সত্য প্রেমিক....!!

আর রাইফেলের নলে গোলাপ নিয়ে আসা মিছেমিছি প্রেমিকরা সেক্স করার জন্য প্রেম করে...!!

সকাল সকাল ঘুম ভাঙলো...
সকালের সমুদ্র দেখার  এক অন্যরকম মজা আছে....!!

এই মজা জীবনে একবার হলেও দেখা উচিত....
আমি এই মজা থেকে মায়ার বাঁধনের কারণে বা অকারণে বঞ্চিত.....!!

ম্যাডাম এখনও ঘুমিয়ে আছেন....
বেচারি সারারাত ভয়ে ভয়ে ঘুমিয়েছে.....!!

একটা মানুষের সবচেয়ে আনন্দের ঘুম খুব সম্ভব কান্না করার পর আর ভয়ের পর হয়ে থাকে....!!

সকালে ভালো নাস্তা হলো....
ম্যাডাম আমাকে জোর করে খাসীর পায়া দিয়ে নান খাইয়েছেন.....!!

গতরাতের জড়িয়ে ধরা নিয়ে কোনও প্রশ্ন তুললেন না..
খুব সম্ভব ব্যাপারটা তার ভাল লেগেছে....!!

ম্যাডাম অবিবাহিতা.....
ভালবাসার সাথে তার যোগাযোগ কম.....
সেই ভালবাসার কতটুকু আমি গতরাতের চুমুতে দিতে পেরেছি -জানি না....
তবে একটা ব্যাপার ধরতে পেরেছি.....
আমার মায়া হয়েছিল বলেই আমি তার গালে চুমু খেয়েছি.....!!

আমাদের ভাল লাগে বলেই আমরা বাচ্চাকে কোলে নিই,আমাদের ভাল লাগে বলেই আমরা প্রেম করি....
সবকিছুতে মিশে আছে এক 'মায়াময় স্বার্থপরতা'....!!

আমি তোমাকে ভালবাসি; আমারই জন্য....!!

প্রকৃতিতে সন্ধ্যা নামছে....
সব সন্ধ্যা মন বিষণ্ণ করে না.....!!
এই সন্ধ্যা আমার মনটা ভাল করে দিচ্ছে....
ম্যাডাম আমার হাতে হাত রেখে সমুদ্র তীরে হাঁটছেন....!!

 হাসিমুখে বললেন--
-- কাল তো চলে যাব..( ম্যাডাম)

-- হুমম...( আমি)

-- তোমার কেমন লাগল..?( ম্যাডাম)

-- ভালই..( আমি)

-- এত সংক্ষিপ্ত অ্যানসার দিবে না।সংক্ষিপ্ত অ্যানসার মানুষ ব্যস্ত থাকলে দেয়।নাহয়, কারও সাথে কথা বলতে ভাল না লাগলে দেয়।তোমার কি আমার সাথে কথা বলতে ভাল্লাচ্ছেনা..?( ম্যাডাম)

-- লাগছে...( আমি)

ম্যাডাম চুপ হয়ে গেল...
আমি আবার সংক্ষিপ্ত অ্যানসার দিলাম....!!
আজ সকাল থেকেই কোনও কারণে চুপ হয়ে আছি....!!

আয়নার ওপাশের মানুষটাকে চিনতে পারছি না,আবার পারছিও....
মনে হচ্ছে,এই অবস্থা বেশীক্ষণ থাকবে না.....!!
একটু পরেই আমি ফটফট করে কথা বলতে শুরু করব...!!
আর ম্যাডাম হাত ছাড়িয়ে বিরক্ত মুখে বলবেন, চুপ থাকলে ভাল লাগে....
আমি হো হো করে হেসে বলব,এটা জাহাঙ্গীরনগর ভার্সিটি না ম্যাডাম,এটা কক্সবাজার.....!!

রাতে পাশের রুম থেকে গান আসছে।আপত্তিকর গান,তোকে রডে বসিয়ে বেল বাজাবো......
তালে তালে বরগুনার ছেলেগুলাও বলছে,জোরে বাজাইও মামু,যেন আমরা কক্সবাজার থেকেই শুনতে পাই.....!!
আবার সেই আগের গান,তুমি দিও নাকো বাসর ঘরের বাত্তি নিভাইয়া,আমি বদ্ধ ঘরের অন্ধকারে যাব মরিয়া... ' একটা ছেলে বলে উঠল,লাইট সব নিভাইয়া দে,আজ লোডশেডিং হোক।অন্ধকারে যে মেয়ে মরে,তার বাঁচারওবা কি দরকার?....  তো অন্ধকার... অন্য ছেলেগুলো হো হো করে হেসে উঠল.....!!
একের পর এক অদ্ভুত গান ভেসে আসছে,আস্তে আস্তে চুমু দিও,কামড় দিও না.....!!
 আবার সংগীত বিশ্লেষক একজন বরগুনার ভদ্রলোক বলে উঠলেন,চুমুর সময় কামড় দিতেই পারে,এটা নিয়েও গান বানাতে হবে..?
আর আস্তে আস্তে দিবে এটা কেমনতর কথা হলো? উত্তেজনার সাথে হার্টবিটের গভীর সম্পর্ক আছে...
হার্টবিট বাড়লে উত্তেজনাও বাড়বে।উত্তেজনা বাড়লে একটু জোরে জোরে চুমু খাবে,তখন আলতো করে একটা কামড় দিলে কি মহাভারত সমস্যা...?
তোকে কামড় দিলে তুইও একটা কামড় বসিয়ে দেয়।মামলা ডিসমিস! এটা নিয়েও গান বানাতে হবে.....?আরেকটা ছাড়....
আরেকটা ছাড়া হল,তুমি মিসকল দিও,আমি কলব্যাক করব,তুমি এসএমএস পাঠালে আমি রিপ্লাই পাঠাব,ও ও ও...আরেকজন সংগীত বিশ্লেষক গম্ভীর গলায় বললেন---মিসকল দিলে কলব্যাক করবে,তারমানে ফোন করলে রিসিভ করবে না -এই তো..?
এটা সরাসরি বলে দিলেই হলো!আজব!প্রেমিকার ফোনে টাকা না থাকলে বিকাশ থেকে রিচার্জ করে দিলেই হয়।কলব্যাকই কেন করতে হবে...?
 'ম্যাজিক মা-মণি আমি ম্যাজিক মা-মণি...'একজন চরম ক্ষেপে উঠে বলল,এটা আবার কেমন তর গান...? মা-মণি মানে মা,তাঁর সাথে ম্যাজিকের কি রিলেশন ঠিক বুঝলাম না....
মা হচ্ছে মা,আমার জন্ম দুঃখিনী না,তাঁর নামের
আগে 'ম্যাজিক' শব্দটা যোগ করে কি মাতৃত্বকে হেয় করা হচ্ছে না..?
দশমাস দশদিন যাঁর পেটে ছিলাম,তাঁর পেটটাকে কি নিছক ম্যাজিক বলে গুরুত্বহীন করার একটা অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে...? প্রশাসন কোথায়, তারা আজ চুপ কেন..? কেন কেও কিছু বলছে না...?
তাহলে কয়দিন পর যদি আকাশ থেকে একটা সন্তান জন্ম গ্রহণ করে এসে চোখে কালো চশমা লাগিয়ে বলে,আমি ম্যাজিক বাবু.....
তখন কি জবাব দেব আমরা, কি জবাব দেবে প্রশাসন..? কিইবা জবাব দেবে তখন এই ম্যাজিক মা-মণি...? অবক্ষয়....!!

গান বন্ধ হয়ে গেল....
বুঝলাম, তারা পাঁচজনই হাসি-খুশি ছেলে না।কিছু সিরিয়াস মাইন্ডের ছেলেও আছে.....!!

ম্যাডাম আমার পাশে বসে আছেন।এতক্ষণ চরম বিরক্ত ছিলেন,গান বন্ধ হওয়ার পর তার মনে হল, জীবন তার কাছে আবার ফিরে এসেছে.....!!
হাসিমুখে বললেন--
-- আজরাতে কোনও সিগারেট ধরাবে না..( ম্যাডাম)

-- কেন...?( আমি)

-- রাতে এই উৎকট গন্ধটা রুমের পরিবেশ নষ্ট করে..( ম্যাডাম)

-- আচ্ছা..( আমি)

-- আচ্ছা না,বলো,মাদার প্রমিস ধরাবো না..( ম্যাডাম)

-- মাদার প্রমিস বলতে পারবো না,ঝামেলা আছে..( আমি)

-- আচ্ছা তাহলে বলবে,তিন সত্যি ধরাবো না..( ম্যাডাম)

-- তিন সত্যি ধরাবো না...( আমি)

একগাল হেসে ম্যাডাম বললেন,এসে পাশে বস...
আমি এসে তার পাশে বসলাম.....!!
-- কাল আমরা কক্সবাজার ছেড়ে চলে যাব..( ম্যাডাম)

-- ইচ্ছে করলে আজ রাত বারোটা এক মিনিটেও চলে যেতে পারেন..( আমি)

সুন্দরীদের এই একটা সমস্যা। তারা শেষ মুহূর্তে আবেগ নিয়ে আনে।মিথ্যা আবেগ....!!

ঘুমানোর প্রস্তুতি নিতে নিতে বললাম--
--  কাল সকাল সকাল চলে যাব,এখন ঘুমান...( আমি)

--  আজ সারারাত গল্প করি..?( ম্যাডাম)

-- না...( আমি)

খুব কষ্ট হয়েছিল এই একশব্দের অক্ষরটা উচ্চারণ করতে....
মনে হয়েছিল,সারাটা জীবন যদি এই মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকা যেত,তবে পাশের রুমের বরগুনার ভদ্র ছেলেগুলোকে সহ্য করে হলেও ম্যাডামের সাথে সারারাত গল্প করতাম....!!

-- তুমি কি আমার উপর রাগ করেছো..?( ম্যাডাম)

-- না তো..( আমি)

-- কালকে কিন্তু আমি যাচ্ছি না...( ম্যাডাম)

--  অবাক হয়ে কেন..?( আমি)

-- একগাল হেসে , আগামী শুক্রবার পর্যন্ত এখানেই থাকব।দেখি তোমার বক্সের কেরামতি কতটুকু সত্য...!এখানে বসে মৃত ব্যক্তির সাথে কি কথা বলব তা ঠিক করে রাখব। ঢাকায় গেলে তো আবার কাজের চাপে গোছানোই হবে না, কি কথা বলব।...তুমি কি আমার সাথে থাকবে...?(ম্যাডাম)

-- হতাশ গলায় বললাম, না...( আমি)

#ম্যাডাম....

#৭ম_পর্ব....

ম্যাডাম আমার দিকে অবাক চোখে তাকালেন.....!!

আমিই তো সেদিন তার সাথে কক্সবাজার আসার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিলাম.....
আজ আমার এমন পরিবর্তনের কারণটা তিনি ধরতে পারছেন না.....!!
তার চোখে জল চলে আসছে....
আমি ঘুমানোর ব্যবস্থা করছি.....!!

 ছলছল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন...
-- শেষ একটা রিকুয়েস্ট রাখবে...?( ম্যাডাম)

-- বলেন...( আমি)

-- আমি তোমাকে দশটা প্রশ্ন করেছিলাম। তুমি পেরেছ, তাই তোমার দুটা ইচ্ছে পূরণ হয়েছে...( ম্যাডাম)

-- বিরক্ত গলায়,চুমুটা তো দেয়া হয় নি...( আমি)

-- গালে তো দিয়েছো,আর কি! তাছাড়া তুমি জোর করলে আমি কি বারণ করতে পারতাম...? যে ভুতুড়ে বক্সটা দেখালে,কেও তো আমার চিৎকার শুনবে না,নাকি...?( ম্যাডাম)

-- হুমম...( আমি)

ম্যাডাম একটু সময় নিয়ে বললেন--
-- এবার তুমি আমাকে দশটা প্রশ্ন করো।আমি যদি একটাও ভুল উত্তর দিই,তাহলে কাল সকালেই তুমি চলে যাবে।আর যদি সবগুলোর উত্তর দিতে পারি,তাহলে তোমাকে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত আমার সাথে থাকতে হবে।আমি সেই মধ্যরাতে খুব প্রিয় একজন মৃত মানুষের সাথে কথা বলব। তুমি আমার এই দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জে রাজি...?

অবহেলা থেকেই ভালবাসা আসে।আমি ম্যাডামকে অবহেলা করা শুরু করার পর থেকেই তিনি আমার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছেন......!!
আমার দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ নেয়ার কোনও ইচ্ছেই নেই.....

অসম বয়সের প্রেম ভাল না....
ছাত্র ম্যাডামকে বিয়ে করেছে....
আর সমাজ সেটাকে ভালভাবে দেখবে -এমনটা কখনওই ঘটে না.....!!

কিন্তু স্যার ছাত্রীকে বিয়ে করে আনলে সমাজ বাহবা জানিয়ে বলে,ওমুক স্যার তার ছাত্রীকে বিয়ে করেছেন,বড়ই ভাল কাজ করেছেন....!!

অতি সজ্জন ব্যক্তি...
 শুনেছি ছাত্রীও নাকি মেধাবী।এটাই ভাল।মেধাবীরা পাশাপাশি থাকলেই দেশ এগুবে.....!!

আমি হতাশ গলায় বললাম-- রাজি....!!

ম্যাডামের দু'চোখ ঝিলিক দিয়ে উঠল....
বৃষ্টি হওয়ার পর ভেজা পাতায় সূর্যের কিরণ পড়লে যেমন ঝিলিক দেয়,ঠিক তেমনি....!!
ম্যাডাম এতক্ষণ কাঁদছিলেন।আমার জন্য কেও কখনও কাঁদে না।ম্যাডামও আমাকে ভেবে নিজের জন্যই কেঁদেছেন.....!!

ম্যাডাম বত্রিশটা দাঁত বের করে বললেন--প্রশ্ন শুরু কর...!!

আমি নিরাস গলায় বললাম...
প্রথম প্রশ্ন,
পৃথিবীতে যত পিঁপড়া আছে, তাদের সবাইকে পাল্লায় নিয়ে মাপলে তাদের যে ওজন হবে, তার পরিমাণ কত...?
ম্যাডাম হাসিমুখে বললেন,তার পরিমাণ, পৃথিবীতে একটা পূর্ণ বয়স্ক মানুষের ওজনের সমান...!!

আমি থতমত খেয়ে গেলাম....
এত দ্রুত অ্যানসার তিনি দিতে পারবেন,তা জানা ছিল না....!!
কঠিন প্রশ্ন করতে হবে.....!!

আর আমার এক সপ্তাহ এখানে থাকার কোনও মানেই হয় না..'কারেক্ট!....!!

দ্বিতীয় প্রশ্ন,
কোথায় একটা রেস্টুরেন্ট আছে, যেখানে খাবারের কোনও নির্দিষ্ট মূল্য তালিকা নেই...?

ম্যাডাম একটু ধাঁধায় পড়ে গেলেন।ছাত্র ম্যাডামের ভাইভা নিচ্ছে....
 এমতাবস্থায় ম্যাডামের কি ব্যাকবেঞ্চারদের মতো মাথা চুলকানো সাজে...?
কিন্তু ম্যাডাম মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললেন,কোরিয়ার সিউলে....!!

কারেক্ট....!!

তৃতীয় প্রশ্ন..
মানুষ এবং হাঁসের মধ্যে একটি ভালবাসাময় পার্থক্য বল...?
ম্যাডাম অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালেন...
এই প্রথম আমি তাকে 'তুমি' বলেছি...!!
ব্যাপারটাতে তিনি খুশিও হননি, কষ্টও পান নি....।।

কারণ,তিনি খুব সম্ভব ধরে ফেলেছেন,আমি শুধুমাত্র দশটা প্রশ্নের জন্যই তাকে ছাত্রী বানিয়ে 'তুমি' বলছি....!!
এই ডাকের সাথে ভালবাসার কোন যোগসূত্র নেই....।।

ম্যাডাম শান্ত গলায় বললেন,,
হাঁস বা রাজহাঁসের শুধুমাত্র একটাই 'জীবন সাথী' থাকে সারা জীবনে। যদি সেই জীবন সাথী মারা যায়, তবে তারা ব্রোকেন হার্ট নিয়ে মারা যায়। আর অন্য কোনও হাঁসকে জীবন সাথী করেনা।কিন্তু স্ত্রী মারা যাওয়ার কিছুদিনের ভিতরেই একজন স্বামী আনন্দঘন পরিবেশে "পাত্রী চাই" বিজ্ঞাপন দেন....!!

কারেক্ট....!!
চতুর্থ প্রশ্ন..
পৃথিবীর প্রথম নভোচারী কে...?

ম্যাডাম হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ে যাবে এমন ভান করে বললেন,একটা কুত্তা....!!

আমি সরুচোখে তার দিকে তাকিয়ে বিরক্ত গলায় বললাম,সুন্দরকরে বল....!!
কুকুর তিনশব্দের,একে দু'শব্দের মধ্যে নিয়ে আসার কোনও মানে হয়...?

তিনি আবার তার ফকফকা বত্রিশটা দাঁত বের করে বললেন,কুত্তাও তিন শব্দের।ত+ত=ত্ত।হা হা হা!সময়ের পুনরাবৃত্তি...!!
আমি আড়চোখে তার দিকে তাকিয়ে বললাম,হয়েছে...।।
পঞ্চম প্রশ্ন...
মেয়েরা বছরে প্রায় ৩০ থেকে ৬৪ বার কান্না-কাটি করে আর সেখানে ছেলেরা কতবার কান্না-কাটি করে...?

ম্যাডাম ভ্রু কুঁচকে বললেন,এ আবার কেমন প্রশ্ন... আচ্ছা দাঁড়াও ভাবছি...!!
অনেক পরিসংখ্যান আছে এ নিয়ে....
তবে সবচে' সঠিকটা হচ্ছে, বছরে ছেলেরা প্রায় ০৬ থেকে ১৭ বার কান্না করে....
ফালতু সমীকরণ ছেলেরাই বানিয়েছে এটা,নিজেদেরকে বড় প্রমাণ করতে.....!!

আমি সামান্য অপমানবোধ করে বললাম,উত্তর সঠিক...।।
ষষ্ঠ প্রশ্ন...
কোনও নারী যদি কখনও বলে যে তার হার্ট নেই, তাহলে বিশ্বাস করবে না।কেন...?

ম্যাডাম হাসতে হাসতে বললেন,কারণ মহিলাদের মৃত্যুর প্রধান কারণ হচ্ছে,হৃদরোগ.....!!

আমি মাথা নেড়ে বললাম,রাইট...!!

ম্যাডাম হাসিমুখে বিরক্ত হয়ে বললেন,নারী সংক্রান্ত অদ্ভুত প্রশ্নগুলো কি না করলেই নয়...?

আমি বিরক্ত চোখে তার দিকে তাকালাম।গরম গলায় বললাম, প্রশ্নকর্তা যেখান থেকে খুশি প্রশ্ন করবে,এতে উত্তরদাতার অভিযোগ তোলার কোনও এখতিয়ার নেই.....!!

ম্যাডাম আমার দিকে তাকিয়ে তাজ্জব হয়ে গেলেন.... আমাকে চিনতে তার খুব কষ্ট হচ্ছে.....!!

আমি রাগী রাগী গলায় বললাম--
সপ্তম প্রশ্ন --
মোনালিসা’র কোন ভ্রু ছিল না। কেন....?

ম্যাডাম কিছুক্ষণ ভেবে আমতা আমতা করে বললেন,কারণ রেঁনেসার যুগে ভ্রু শেভ করে ফেলাটাই ছিল তখনকার ফ্যাশন...!!
আচ্ছা আমার চেহারা কি মোনালিসার চেয়ে' খারাপ..?

আমি তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললাম, অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করে বিরক্ত করবে না।এতে প্রশ্নকর্তার Concentration নষ্ট হয়।মনে থাকবে...?

ম্যাডাম চুপসে গিয়ে ক্ষীণকণ্ঠে বললেন, থাকবে....!!

সপ্তম প্রশ্নের উত্তর কারেক্ট হয়েছে....!!

 অষ্টম প্রশ্ন --
ফেসবুকে একটা আইডি কখনওই ব্লক করা সম্ভব না।সেটা কার আইডি...?

ম্যাডাম দ্রুত উত্তর দিলেন,মার্ক জাকারবার্গের আইডি.....!!
আচ্ছা আমাদের নিজের আইডিও তো আমরা কখনও ব্লক করতে পারি না....!!

আমি গম্ভীরকণ্ঠে বললাম, নিজের আইডি চাইলে অফ করে দেয়া যায়......!!

নবম প্রশ্ন...
আমরা প্রায়ই বলে থাকি যে গর্ভবতী মায়েদের দেখতে বেশ উজ্জ্বল লাগছে, বা খুশীতে জ্বলজ্বল করছে। এর কারণ কি....?

ম্যাডাম হেসে উঠলেন।পরিচিত হাসি।এই হাসি দেখলে মনে হয়.....
তার খুব পরিচিত একটা প্রশ্ন করা হয়েছে....
যেন তিনি একবার প্রেগন্যান্ট হয়েছিলেন......!!

ম্যাডাম ভাষণের মতো করে বললেন--
এর কারণ হচ্ছে, এই সময়ে শরীরে রক্তের পরিমাণ প্রায় ৫০% বেড়ে যায়, এই বাড়তি রক্ত ত্বকে প্রবাহিত হওয়ার সময় ত্বককে টানটান করে এবং আভাময় করে। এছাড়াও হরমোন নিঃস্বরণের কারণে ত্বকের তেল গ্রন্থিগুলো বেশী কাজ করে এবং ত্বককে মসৃণ এবং উজ্জ্বল করে। তাই এই দুইয়ের সমন্বয়ে এই সময়ে মায়েদের মনে হয়, তারা উজ্বলতায় ঝলমল করছেন।এবং আমাদেরও তাই মনে হয়.....!!

এ কি বিপদ! ম্যাডাম দেখি সবগুলো প্রশ্নের উত্তর পেরে গেলেন...
খুব কড়া একটা প্রশ্ন করে শেষ করতে হবে...!!

 এখানে আরও এক সপ্তাহ থাকার কোনও ইচ্ছেই আমার নেই....
সমাজ খুব খারাপ জিনিস....!!

আমি অনেকক্ষণ ধরে ভাবলাম, ম্যাডাম শুধু চুপ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন,কিছুই বলছেন না.....।।

তার বোধহয় আমার দিকে তাকিয়ে থাকেতেই বেশ লাগছে.....
এমন করে আর কতক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারবেন,তা নির্ভর করছে শেষ প্রশ্নের উপর.....!!

আমি সময় নিয়ে বললাম--
শেষ প্রশ্ন... গাঁজাবাবা...

ম্যাডাম শুধরে দিয়ে বললেন,ওর নাম তো তুহিন...!!

আমি কড়া গলায় বললাম, তোমাকে নাম শুধরাতে বলেছি...?
-- না...( ম্যাডাম)

-- তো শুধরিয়ে বিরক্ত করলে কেন...?( আমি)

ম্যাডামের মন খারাপ হয়ে গেল....
তিনি মাথানিচু করে বললেন--
ভুল হয়ে গেছে ক্ষমাপ্রার্থনা করছি...( ম্যাডাম)

-- ক্ষমা করা হলো.....( আমি)

শেষ প্রশ্ন...
গাঁজাবাবা আমার এক বার্থডে-তে আমাকে একটা কবিতা গিফট করেছিল।কবিতাটা কি....?

ম্যাডাম ভয়ংকর রকমের অবাক হয়ে গেলেন....
-- 'তোমার বন্ধু তোমাকে কি গিফট করেছিল,তা আমি কি করে জানব!আজব!আমাকে গিফট করেছিল নাকি...?'( ম্যাডাম)

আমিও খুব ভয়ংকর রকমের বিরক্ত হয় বললাম--প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন করবে না।প্রশ্ন করা হয়েছে,উত্তর দাও....।।
ম্যাডাম অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন... তাকে খুব জটিল একটা প্রশ্ন করা হয়েছে....!!
খুব সম্ভব, এই প্রশ্নের উত্তর তার জানা নেই.....

#ম্যাডাম.....

#৮ম_পর্ব.....

ম্যাডাম হতাশ চোখে জানালার দিকে তাকালেন.....
যেন জানালাতেই গাঁজাবাবার কবিতাটা ঝুলানো আছে......!!

আমি ঘুমানোর আয়োজন করছি....
এখনই ঘুমিয়ে পড়বো কি না, তা নিয়ে দায়িত্ব সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত হীনতায় ভুগছি.....!!

একজন প্রশ্নকর্তা উত্তর শুনবে তারপর তার কার্যসিদ্ধি হবে,এর আগে না.......!!

ম্যাডাম এখনও উত্তর দেন নি....!!

 আমার হাত ধরে করুণ গলায় বললেন--
--  তুমি কক্সবাজার থাকতে চাচ্ছো না -এই তো.. ?তুমি উত্তর দাও। তুমি কঠিন প্রশ্ন করলে এক কথা ছিল, তমি করেছো অবান্তর প্রশ্ন।এই প্রশ্নের উত্তর খুব সম্ভব তুমি ছাড়া আর কেওই জানে না....( ম্যাডাম)

আমি বালিশে মাথা রাখলাম....
নিজের করা প্রশ্ন নিয়ে বহাস করার কোনও ইচ্ছেই আমার নেই.....!!

ম্যাডাম আমার দিকে চেয়ে আছেন.....
তাকে জটিল প্রশ্ন করা হয় নি,কড়া প্রশ্ন করা হয়েছে....
জটিল প্রশ্নের উত্তরগুলো সবসময় সহজ হয়....!!

কড়া প্রশ্নের উত্তরগুলোর এ্যাকশনও কড়া....
কড়াকরে এককাপ চা খেলে যেমন অনেকের ঘুম দূর হয়ে যায়,তেমনি কড়াকরে এককাপ চা খাওয়ার পর তা কারও ক্ষেত্রে স্লিপিং ট্যাবলেটের মতো কাজ করে....!!

আমি ঘুমিয়ে পড়ব কি না, ভাবছি....
খুব ঘুম আসছে.....!!
উত্তরদাতার মুখ থেকে সকালে উত্তরটা শুনে নিলেই হলো.....!!
না হলো না,এতে দায়িত্বের চরম অবহেলা হয়...
রাবারের ছেঁড়া স্যান্ডেল দিয়ে দুই গালে আটটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়ার চাইতেও কঠিন অপমান হয়....!!

আমি ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে বিরক্ত মুখে বললাম, উত্তর....?

ম্যাডামের চোখে জল চলে আসছে....
 মনে হচ্ছে এখন তাকে জড়িয়ে ধরে 'আমি আছি তো' না বললে তিনি ঝরঝর করে বৃষ্টির মতো কেঁদে ফেলবেন.....!!

চোখে জল নিয়ে বললেন--
-- আমি জানি না...( ম্যাডাম)

আমি স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম...
একগাল হেসে বললাম, উত্তরটা আপনি জানতেনই....!!

-- ভেজা চোখে অবাক হয়ে ,তাই...? ( ম্যাডাম)

--  হুমম....( আমি)

-- কবিতাটা কি....?( ম্যাডাম)

-- এ কেমন কান্না তোমার আমায় যখন আদর করো...( আমি)

আমি শুয়ে পড়লাম.....
ম্যাডাম এখনও আমার দিকে তাকিয়ে আছেন,তার খুব সম্ভব নিজের জন্য খুব রাগ হচ্ছে, সাথে মায়াও হচ্ছে....!!
এত সহজ প্রশ্ন ছিল,অথচ তার মাথাতেই আসল না....!

আসলে আমাদের জীবনটাও ঠিক এমনই....
এতই সহজ যে আমরা তা দেখতে পাই না.....!!
আমরা শুধু দেখি জটিল জিনিসগুলো,আর ভাবতে থাকি,জীবন কি কঠিন.....!!

আলোক বিজ্ঞান বলছে,মানুষের চোখের ০.২৫ সেন্টিমিটারের ভিতরের কোনও বস্ত মানুষ দেখতে পায় না......!!
মানুষ দেখে ০.২৫ সে. এর দূরের বস্তুকে.....!!

তবে কি আমাদের ০.২৫ সে. এর ভেতরের বস্তুগুলো সারাজীবন অদেখাই থেকে যাবে......?
খুব সম্ভব, না.......
কারণ মানুষের চোখ দুটা না....
তাদের আরও চোখ আছে.....
সেগুলো কল্পনার চোখ........!!

দেখা আর তাকানো এক নয়.....
মাছির চোখে থাকে প্রায় ২৮ হাজার ক্ষুদ্রাকৃতির চোখ বা ওমাটিডিয়া...
 কিন্তু মাছির কোনও কল্পনার চোখ নেই.....!!

কল্পনার চোখ থাকলে সে ডাস্টবিনে ভিড় জমাতো না,রাজপ্রসাদ বানানোর চেষ্টা করতো.....!!

ঘুম থেকে উঠে দেখি  ম্যাডাম বসে আছেন....
তার চোখ ফোলা.....!!
খুব সম্ভব তিনি সারারাত কেঁদেছেন,আর নাহয় তো,অনেক রাত পর্যন্ত কেঁদে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন.....!!

এ দু'অবস্থায়ই চোখ একইরকম ফোলা থাকে,পার্থক্য-টা ঠিক ধরা যায় না....!!

আমি কাপড় গুছিয়ে ব্যাগে ভরছি....
আমার উদ্দেশ্য হাসিল হয়েছে,ইচ্ছেও পূরণ হয়েছে....!!

আর এখানে থাকার কোনও প্রয়োজন দেখি না....
পাশের রুমের বরগুনার ছেলেগুলো জোরে জোরে গান ছেড়েছে.....!!
ম্যাডাম তাতে মোটেও বিরক্ত হচ্ছেন না।তার সব বিরক্তি এখন শুধু আমারই উপর......!!

ভালো নাস্তা হলো।আমারই হলো শুধু,ম্যাডাম কিছু খান নি.....
এটা ঠিক না।মানুষের উপর রাগ করা যায়,খাদ্য-বস্তুর সাথে আবার কিসের রাগ -এই কথা কেও বুঝতে চায় না......!!
বুঝতে না চাওয়ার পেছনেও যৌক্তিক কারণ আছে....!!

আমাদের যখন মন খারাপ থাকে,আমরা তখন খাওয়া দাওয়া কম করি...
ডিপ্রেশনের বাংলা হলো 'মন খারাপ'.....!!

ডিপ্রেশন শরীরের কিছু হরমোন বিনষ্ট করে, যেসব হরমোন আমাদের প্রফুল্ল রাখতে সহায়তা করে....!!

ঠিক এই কারণেই অনেক টেনশনে থাকলে খাওয়া দাওয়া কমে যাওয়া বড় কোনও ব্যাপার নয়.....!!

ম্যাডাম এখনও আমার সাথে একটি কথাও বলেন নি...
আমাদের পাশের টেবিলে বরগুনার ভদ্র ছেলেগুলো খেতে বসেছে....!!

 আমাদের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হেসে বললো-- -- ---- গুড মর্নিং।রাতে ভাল ঘুম হয়েছে....?( ছেলে গুলো)

আমি কিছু বলার আগেই ম্যাডাম বললেন--
-- হয়েছে...!!

ছেলে গুলেকে কষে একটা চড় লাগানোর বাসনা অতিকষ্টে দমন করলাম....
নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করতে করতে বললাম, আজ শেষদিন,প্লিজ ঝামেলা করো না....!!

ছেলে গুলো উৎসবমুখর পরিবেশে খাওয়া দাওয়া করছে....
আর আমাদের টেবিলে বিরাজ করছে গোর  নির্জনতা....!!
 অথচ আমি কোলাহল প্রিয় ছেলে.....!!

ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করতে করতে বললাম--
-- ভাল থাকবেন...( আমি)

তিনি অন্যদিকে তাকিয়ে আছেন....
আমার প্রশ্নটা তার অন্তরে কোনও ভাবান্তর সৃষ্টি করতে পেরেছে কি না, জানি না......!!
তবে তার মুখ এখনও ভাবলেশহীন....!!

 দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তিনি ছেড়ে ---
-- জোর করে কি আর ভাল থাকা যায়...?( ম্যাডাম)

আমি চলে যাচ্ছি ম্যাডামকে একা ফেলে....
কিন্তু কি আশ্চর্য...
আমি তো তাকে একা রেখে নিজেও একা হয়ে যাচ্ছি...!!

ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে--
-- আপনাকে,তুমি করে বললে কিছু মনে করব না.?
তোমাকে আমি নিয়মিত ফোন দিবো...( আমি)

-- তার কোনও প্রয়োজন নেই...( ম্যাডাম)

-- অবশ্যই আছে।এ পৃথিবীতে সবকিছুরই প্রয়োজন আছে।ছেঁড়া জুতাটাও মুচির কাছে গিয়ে সম্পূর্ণ হয়ে আসে।তাতে আমাদের যেমন নূতন জুতা কেনার টাকা বাঁচে,তেমনি মুচিও সে টাকা দিয়ে তার ছোট ছেলেকে একটা লাল শার্ট কিনে দেন...( আমি)

-- উপদেশ দেওয়া  বন্ধ করো.. ..( ম্যাডাম)

-- আচ্ছা বন্ধ। তবে আমি তোমাকে ফোন দিবো...( আমি)

-- আমি তোমার ফোন ধরব না..( ম্যাডাম)

-- কেন, জানতে পারি...?( আমি)

-- এ গুলোকে আমি বলি, আলগা পিরীত!তুমি থাকলে ভাল হতো।তুমি থাকলে না।আমাকে এই কক্সবাজারে একা এক সপ্তাহের জন্য ফেলে যাচ্ছো।পাশের রুমে তোমার মতো ছেলেপেলে আছে।আর আমি একা।সমস্যাটা ধরতে পারছো...?( ম্যাডাম)

-- পারছি, তবে মানুষের সবচেয়ে  বড় সমস্য হচ্ছে,মানুষ সমস্যা ক্রিয়েট করে..তুমি রুম চ্যাঞ্জ করে ফেল।আর প্রবলেম হলে সিকিউরিটিকে ফোন দিবে।মামলা ডিসমিস!মানুষ ভয় পায়, কারণ সে ভীতু -এজন্য না।মানুষ ভয় পায় কারণ সে ভাবতে শুরু করে, সাহসী হওয়ার মতো পর্যাপ্ত সাহস তার ভেতরে নেই। কিন্তু সে জানে না,ভয় না পাওয়া সাহসিকতার পরিচয় না।কাজটা ভয়ংকর জেনেও তা শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়ার নামই, সাহসিকতা।আর হ্যাঁ,বক্সটা আমি রেখে গেলাম...( আমি)

-- চোখ কপালে তুলে ,না,ওটা তুমি নিয়ে যাও...(ম্যাডাম)

-- ভয় পাবে না।বক্সটা তোমাকে কিছু করবে না।বরং উপকারই করবে।দেখে নিয়ো....( আমি)

আমি বক্স রেখে চলে আসছি.....
ম্যাডাম ভীতু চোখে বক্সটার দিকে তাকিয়ে আছেন.....!!

এই বিদায়বেলায় ম্যাডাম আমাকে অনেকক্ষণ ধরে জড়িয়ে ধরে রাখবেন ভেবেছিলাম....
কিন্তু তিনি বক্সটার দিকে বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছেন.....!!
ভয় পেলে ভালবাসা বেড়ে যাবার কথা....
সেক্ষেত্রে তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলার কথা......!!

কিন্তু এসবের কিছুই ঘটলো না।আমি খুব অবহেলিত হয়ে বিদায় নিলাম.....!!

ম্যাডাম পেছন থেকে ডেকে বললেন...
-- এই রবি......?
আমি হাসিমুখে পেছনের দিকে তাকালাম....!!
শেষ সময়ে হলেও একটু ভালবাসার খুব দরকার...!!

 তিনি বক্সের দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন--
-- তুমি কি সত্যিই চলে যাচ্ছো...?

#ম্যাডাম.....

#৯ম_পর্ব....

আমি ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে মিষ্টিকরে হাসার চেষ্টা করলাম.....
সম্পূর্ণ পারলাম না,নিজের ভেতরে সামান্য অপরাধবোধ কাজ করছে.....!!
নিজের ভেতরে অপরাধ বোধ কাজ করলে মিষ্টিকরে হাসা যায় না....!!

আমি ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে বললাম--
 জি সত্যি সত্যিই চলে যাচ্ছি...খোদা হাফেজ....!!
....

ম্যাডাম বিছানায় শুয়ে আছেন,ঘুম আসছে না....
ভয় নিয়ে ঘুমানো যায় না....!!
আজ প্রথম রাত,ম্যাডাম একা ঘুমাবেন....
তার মনে হচ্ছে, ভুল হয়ে গেছে,বড় সড় ভুল হয়ে গেছে....!!
আমার সাথে ঢাকায় চলে গেলেই হতো....!!

আবার মনে হচ্ছে, না,মোটেও ভুল হয় নি....
ভুল হয়েছে আমারই....
আমি তো থেকে গেলেই পারতাম....!!

পাশের রুমে বরগুনার ছেলেগুলো জোরো জোরে আপত্তিকর গান ছাড়ছে....
এই প্রথম ম্যাডামের কাছে এই গানগুলো বেশ ভাল লাগছে....!!
মনে হচ্ছে,ভয় কমছে...
গান সঙ্গীর মতো কাজ করে। গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়লেই ভালো হবে....
যদি গান বন্ধ হয়ে যায় তো মহাবিপদ......!!

দরজায় কড়া নড়ছে।ম্যাডাম ভয়ে দলা হয়ে গেলেন,এ অসময়ে তার রুমে কে আসবে.....
ম্যাডাম টেবিলের উপর রাখা বক্সের দিকে তাকালেন...!!
আশ্চর্য! বক্সটা উদাও হয়ে গেল! একটু আগেও তো ছিল.....
ম্যাডাম ভয়ে কাঁপছেন.....!!

তার মনে হচ্ছে, তিনি এক্ষুণি মাথা ঘুরে পড়ে যাবেন, দরজাটা আর খোলা হবে না....
দুদিন পর তার লাশ দরজা ভেঙে উদ্ধার করা হবে....!!

দরজায় অনবরত কড়া নড়ছে,ম্যাডামও অনবরত কাঁপছেন....
দরজার ওপাশে কে হতে পারে তা জানতে খুব ইচ্ছে করছে.....!!
কিন্তু মুখ হতে কোনও আওয়াজ বের হচ্ছে না.....
ভয় পেলে আমাদের কণ্ঠনালি ভারী হয়ে যায়,যার কারণে খুব সহজে আওয়াজ বের হয় না....!!

ম্যাডাম বিছানা থেকে নামলেন,টেবিলটা খালি পড়ে আছে....
অথচ আমি চলে যাওয়ার পর তিনি নিজ হাতে বক্সটা চাদর দিয়ে মুড়ে রেখেছিলেন.....!!
এই অভিশপ্ত বক্সটা যেন তার চোখের সামনে না পড়ে সেজন্য....!!

চাদরটা ঠিকঠাকই আছে,কিন্তু বক্সটা হাওয়া হয়ে গেছে...এ কি করে সম্ভব..?
 দরজায় কড়া নড়ছে.....!!
ম্যাডাম হাঁটি হাঁটি পা পা করে দরজার দিকে এগুচ্ছেন। আস্তে আস্তে ছিটকানিটা খোলার সময় তার মনে হলো,যদি দরজার ওপাশে বক্সটাকে খুঁজে পান...?
ম্যাম---
দরজার ওপাশে একটা ছেলের গলা শোনা গেল.....!!

ম্যাডাম আস্তে আস্তে দরজা খুললেন।হোটেলবয় বিস্তৃত হাসি হেসে বললেন,ম্যাম, আপনার ডিনার.....!!

ম্যাডাম ভুলেই গিয়েছিলেন,তিনি হোটেলবয়কে বলে রেখেছিলেন যেন তিনবেলা খাবার দিয়ে যায়....!!

প্রচন্ড ক্ষিধে পেয়েছে। তিনি খেতে বসে অবাক হয়ে দেখলেন,বক্সটা আগের মতই টেবিলে চাদর মোড়া অবস্থায় আছে.....
তারমানে,যখন কেও আসবে, তখন তা অটোমেটিকলি উদাও হয়ে যাবে...?

সকালে নাস্তা খাওয়ার জন্য ম্যাডাম নিচে নামলেন...
 যদিও তার দরকার ছিল না.....!!
হোটেলবয় এসেই দিয়ে যেতে পারত। কিন্তু ম্যাডামের সব ভয় বক্সটাকে নিয়ে.....
যেন যতক্ষণ বাহিরে থাকা যায় ততক্ষণ মুক্তি....!!

 নাস্তা করতে গিয়েই বরগুনার ভদ্র ছেলেগুলোর সাথে দেখা....
তারাও নাস্তা করতে এসেছে.....!!

তারা এসে ম্যাডামের পাশে বসল....
এদের মধ্যে একটা ছেলে খুব আস্তে আস্তে চেয়ার টেনে বসল....
যেন জোরে জোরে চেয়ার টানলে চেয়ারটা ব্যথা পাবে....!!
ম্যাডাম সরুচোখে তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন....
পরে জানতে পারলেন,ছেলেটা গান্ধীবাদ করে.....!!ম্যাডাম হতভম্ব হয়ে বললেন,কি করে...?
বরগুনার একটা ছেলে হাসতে হাসতে বলল, গান্ধীবাদ....!!
অহিংসাই পরম ধর্ম....
বুঝলেন ম্যাডাম,তার সবকিছুতেই বাড়াবাড়ি...!!
কথা বলবে খুব আস্তে আস্তে।অজড় বস্তুগুলোর (যেসব জিনিসের প্রাণ নেই) সাথেও মানুষের ন্যায় আচরণ করবে।বিছানায় লাফিয়ে উঠে শুবে না।বরং আস্তে আস্তে এসে বিছানার এককোণায় পিঠ লাগিয়ে খুব আস্তে করে গড়াগড়ি দিয়ে শুবে।তবে এখন পরিস্থিতি ভিন্ন।এখন বিছানায় আমরা তিনজন শুই,আর গান্ধীবাদী নিচে শোয়।কারও সাথে খুব মিষ্টি ভাষায় তর্ক করবে।তাকে কড়া ভাষায় গালাগালি, যেমন-
ম্যাডাম দ্রুত বললেন,উদাহরণ দেয়া লাগবে না।
ছেলেটা আকর্ণ হেসে বলল,আচ্ছা। তার মাকে নিয়ে গালাগালি করলেও সে হেসে খুব মিষ্টি করে বলবে,অশালীন কথা না বললে মনটা বড় তৃপ্ত হতো। তখন ওই লোকটা বলত,রাখ তোর অশালীন কথা।অশালীন কথার মারে ****।আমার টাকা কখন ফেরত দিবি, এটা আগে বল।গান্ধীবাদী তখন লজ্জায় আটখানা হয়ে বলত,অতিসত্বর অর্থ ফেরতের ব্যবস্থা হবে।আপনি একটু মিষ্টি করে কথা বললে দিলটা খুব পুলকিত হতো।আমি তো আপনার অর্থ ফেরত দিবই।গান্ধীবাদীরা কখনও কারও অর্থ আত্মসাৎ করে না।এতে ধর্মের অবমাননা করা হয়।ওই লোকটা তখন চোখমুখ পাকিয়ে বলত,গান্ধীবাদী আমার সামনে দেখাবি না।সব তোর ভন্ডামী।তোর গান্ধীবাদীরে গোয়া***.....!!

ম্যাডাম সরুচোখে গান্ধীবাদী ছেলেটার দিকে তাকালেন....
সে ভাবলেশহীন ভাবে রুটি দিয়ে ভাজি খাচ্ছে....!!
খুব আস্তে আস্তে চাবাচ্ছে।যেন জোরে জোরে চাবালে রুটিটা ব্যথা পাবে....!!

বরগুনার একটা ছেলে, নাম আবীর ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে বলল,ও সবসময় সবার হাতে মার খায়....!!

ম্যাডাম অবাক হয়ে বললেন--
এত অহিংস, তবুও মার খায়...?আশ্চর্য...!!

আবীর হাসতে হাসতে বলল, অহিংস ধর্মের কারণে মার খায় না,মার খায় মানুষের থেকে টাকা নিয়ে তা গরীব দুঃখীদের মাঝে বণ্টন করে.....
কিন্তু পরে আর ধার শোধ করতে পারে না।মানুষ দেয় ছেঁচা।আবার ছেঁচা খাওয়ার সময়ও সম্রাট (গান্ধীবাদী ভদ্র ছেলেটার নাম) কিছু বলে না।এটা নাকি গান্ধীবাদী ধর্মে নেই! বড়ই অহিংস। খুব মিষ্টি ভাষায় ঝগড়া করে।গালাগালি কখনওই করে নি,কারও গায়ে হাত তোলা তো দূরের ব্যাপার....!!

ম্যাডামের মনে হচ্ছে,সম্রাট  ভাল ছেলে, বিনয়ী। কিন্তু এতবেশী বিনয়ী, যতবেশী বিনয়ী হলে তাকে আর বিনয়ী বলা খাটে না.....
খাবারের বিলটা গান্ধীবাদীই দিল.....!!

ম্যাডাম অনেক জোরাজুরি করেছিলেন। কিন্তু গান্ধীবাদী ডায়াবেটিস হয়ে যাবে এমন মিষ্টি হাসি হেসে বলল,মেহমান অন্দরমহলের (ঘরের) লক্ষ্মী.....!!

 মেহমানকে খেদমত করলে স্বয়ং নারায়ণ পুলকিত হয়ে বর দিবেন।আপনি কি আমাকে বরদান হতে বঞ্চিত করতে চান হে অন্দরমহলের লক্ষ্মী...?

ম্যাডাম অতিকষ্টে হাসি চাপা দিয়ে বললেন,না।আচ্ছা তুমিই দাও....!!

রাতে ম্যাডামের মনে হল, আজ একটা ভাল ঘুম হবে।বিছানায় শোয়ামাত্রই ঘুম হবে....
কিন্তু হলো না....!!
ভয় তাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।বক্সটা আস্তে আস্তে বড় হতে শুরু করেছে.....!!
ম্যাডামের মুখ ভয়ে নীল হয়ে গেছে.....!!

ফোন আসছে...
ম্যাডাম কাঁপা কাঁপা হাতে ফোন রিসিভ করেই বললেন--
-- রবি , তুমি খুব খারাপ একটা ছেলে...( ম্যাডাম)

--  হাসিমুখে, আপনি তো বলেছিলেন, আমার ফোন রিসিভ করবেন না...( আমি)

-- কথা রাখি নি।কোনও সমস্যা হয়েছে তাতে..?( ম্যাডাম)

-- জি না...( আমি)

-- শোন, বক্সটা যে আবার বড় হচ্ছে...( ম্যাডাম)

-- হি হি হো  হো হো  হেসে.. ( আমি)

-- প্রচুর বিরক্ত হয়ে, প্লিজ হেসো না, বক্সটা সত্যিই আবার বড় হচ্ছে...( ম্যাডাম)

আমার হাসির মাত্রা আরও বেড়ে গেল।আমি হো হো করে হাসতে হাসতে বললাম---
-- ম্যাডাম, আমি আসার সময় বক্সটা সঙ্গে করে ঢাকাতেই নিয়ে এসেছি...
আপনি তখন ব্যাপারটা খেয়াল করেন নি....!!
বক্সটা তো এখন আমার হাতে...
আর আমি এখন টিকাটুলি  গাঁজাবাবার  সাথে সিগারেট টানছি....( আমি)

#ম্যাডাম....

#১০ম_পর্ব....

ম্যাডামের মনে হল,তিনি চিৎকার করে কেঁদে ফেলবেন।পাশের রুম থেকে বরগুনার ছেলেগুলো তার চিৎকারের আওয়াজে ছুটে আসবে.....!!

গান্ধীবাদী এসে খুব বিনীতভাবে বলবে,হে অন্দরমহলের লক্ষ্মী,কি সমস্যা হয়েছে আপনার...?

 ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বললেন--
-- বক্স কি তোমার কাছে....? ( ম্যাডাম)

-- হ্যা.... ( আমি)

-- তুমি ঢাকাতে না....?( ম্যাডাম)

-- হ্যা, টটিকাটুলি তে গাঁজাবাবার সাথে বিড়ি টানি...
ব্র্যান্ডের নাম,হলিউড...!!
সস্তা বিড়ি।মূল্য, তিন টাকা...
তিন টাকায় সবসময় দুই ব্র্যান্ডের বিড়ি পাবেন।ডার্বি আর হলিউড।হলিউডটাই খাওয়ার চেষ্টা করবেন।ডার্বি ভাল না,কেমন যেন পানসা পানসা।তরকারিতে লবণ না হলে যেমন পানসা হয়,তেমন পানসা।গাঁজাবাবার সাথে বসলে বিড়ি নিয়ে বসতে হয়, নইলে বাবার প্রতি অশ্রদ্ধা করা হয়।বাবার কথায় আর পিনিক পাওয়া যায় না......( আমি)

ম্যাডাম হয়তো ভাবছেন,আমি সস্তা বিড়ি টানি কেন,তাই তো....?

ম্যাডাম চাপা গলায় বললেন,আমি সিগারেট নিয়ে কিছুই ভাবছি না......!!

আমি হো হো করে হাসতে হাসতে বললাম,তাই ভালো....!!
শোনেন,তিন শ্রেণির মানুষ দামি বিড়ি খায়....
১.) যারা নতুন বিড়ি খাওয়া স্টার্ট করে।এদের হাতেখড়ি হয় সাধারণত "ব্ল্যাক" দিয়ে।এটাকে আমরা বলি মেয়েদের সিগারেট। ভেতরে মাল মসলা কিছুই নাই,তার উপর খাওয়ার পর ঠোঁট হয়ে যায় মিষ্টি। মনে হয় যেন ললিপপ চুষে এসেছি.....!!
২.) এই শ্রেণির মানুষরা উচ্চবিত্ত শ্রেণির মানুষ।বাবার অনেক টাকা বা নিজের অনেক টাকা আছে, তা প্রমাণ করতে টঙ দোকানে দামি বিড়ি খায়।ভাব দেখানোর জন্য.....!!
৩.) এই শ্রেণির মানুষের অভ্যাসই হয়ে গেছে দামি বিড়ি খেতে খেতে।বা,সস্তা বিড়ির গন্ধ সহ্য না, অন্যের সমস্যা হবে ভেবে স্মেইল ভাল দেখে দামী বিড়ি চুজ করা,ব্যক্তিগত কারণ ইত্যাদি ইত্যাদি সমস্যা থাকেই....!!

 প্রচন্ড বিরক্তি প্রকাশ করে বললেন--
--  আমি কি তোমার কাছে ধূমপায়ীর শ্রেণীবিভাগ জানার জন্য ফোন দিয়েছি...?( ম্যাডাম)

-- না তো।কেন দিয়েছেন...?(আমি)

-- বক্সের ব্যাপারে..(ম্যাডাম)

হাসতে হাসতে বললাম--
-- আসছে আসছে।এত অধৈর্য হবেন না।আল্লাহ ধৈর্যশীল বান্দাদের সাথে আছেন।আপনি বক্সটা কোথায় রেখেছিলেন? টেবিলের উপরে। এখন সেটা সেখানে নেই,এই তো...? ( আমি)
-- হুমম..( ম্যাডাম)

-- থাকবে কি করে! সেটা তো আমার হাতে।আসলে বক্স বলতে কিছুই কক্সবাজারে নেই।আমার হাতেই বক্সটা আছে। আপনি হ্যালুসিনেশনে ভুগছেন। আপনি আমাকে বক্সটা রেখে আসতে দেখেছিলেন,নিয়ে আসতে দেখেন নি।যার ফলে আপনার অবচেতন মন ভেবেছিল,বক্সটা হোটেল রুমেই আছে....( আমি)

-- আমি যে একটু আগে দেখলাম,তা বড়-ছোট হচ্ছে..( ম্যাডাম)

 হেসে বললাম--
--  বাস্তবে কিছুই বড়-ছোট হচ্ছে না।সব আপনার কল্পনায়েই হচ্ছে।এই পৃথিবীতে সবচে' বিরক্তিকর শব্দটার নাম 'বাস্তবতা'।আসলে বাস্তবতা বলতে কিছুই নেই।বাস্তবতা সেটা না, যেটা হচ্ছে।বাস্তবতা সেটাই, যেটা তুমি তৈরি করছো তোমারই সাথে, নিজেরই মতো করে।সবই মস্তিষ্কের খেল।যেমনটা দেখছেন,তেমনটাই হচ্ছে।বাস্তবতা বলতে কিছু নেই,কথাটাতে চমকে গেলেন না...?( আমি)

-- ধীর গলায় বললেন,সামান্য...( ম্যাডাম)

একটা ব্যাপার লক্ষ্য করুন।একটা বাচ্চা সাগর দে খলে ভয় পাবে না, মুগ্ধ হবে....
আবার গাড়ি দে খলেও মুগ্ধ হবে....!!
সবাই যাকে বেশ্যা বলে গালি দেয়, তার রূপ দ্যাখেও মুগ্ধ হবে....!!
কিন্তু একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষ সাগরে নামার আগে অনেক বার জোয়ার ভাটা নিয়ে ভাববে,হিংস্র প্রাণী নিয়ে ভাববে.....
চলন্ত গাড়ি দে খলে সরে পড়বে.....!!
বেশ্যার থেকে সকালে দূরে থাকবে চক্ষুলজ্জার ভয়ে...
রাতে আবার ঠিকই জৈবিক চাহিদা মেটানোর জন্য তার কাছে যাবে।তাহলে কে ভুল, কে সত্য.....?
মজার ব্যাপার হচ্ছে,আমরা সবাই ভুল,আবার একইসাথে সবাই সত্য.....!!
এই পৃথিবীতে কিছুই ঘটে না,সব ঘটে আমাদের মস্তিষ্কে....
আমাদের মস্তিষ্ক নিস্তেজ হয়ে পড়লে সূর্য চিনতেও আমাদের বেগ পোহাতে হবে......!!

ম্যাডাম,অনেক রাত হয়েছে,আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন...
কোনও সমস্যা হলে আমায় ফোন দিবেন....!!

আমি সারারাত গাঁজাবাবার সাথে আছি আজ হলো 'বিড়ি রজনী'....
মাসে একবার আমাদের বিড়ি রজনী হয়....!!
চা সিগারেটের সাথে সামান্য লাল পানির ক্ষুদ্র আয়োজন থাকে....!!
আজ এসবের কিছুই থাকছে না শুধু বিড়ি ছাড়া।তার কারণ, সংকট। অর্থ সংকটে ভুগছি।গাঁজাবাবা খুবই উদার শ্রেণির মানুষ।তিনি পকেটে সামান্য অর্থ থাকলেও তা বিড়ির পিছেন ব্যয় করতে কার্পণ্যবোধ করেন না...!!

ম্যাডাম ফোন কেটে দিল....
তিনি তার জবাব পেয়ে গেছেন,তাই অযথা আমার সাথে কথা বলে সময় নষ্ট করার কোনও মানে হয় না....!!
আবার মধ্যরাতে ভয় পেয়ে জেগে উঠে কাওকে জড়িয়ে ধরতে না পারলে আমাকে তার মস্তিষ্ক স্মরণ করবে...!

আমাকে ফোন দিবেন।আমি সে ফোন উপেক্ষা করতে পারব না...
আমার সেই শক্তি থাকলেও, ক্ষমতা নেই....!!

অনেকে শক্তি আর ক্ষমতাকে এক করে গুলিয়ে ফেলেন.....
এটা ঠিক না...শক্তি হচ্ছে শারীরিক, অর্থ,জনবল দিয়ে কাওকে মোকাবিলা করার ব্যবস্থা.....!!

আর ক্ষমতা হচ্ছে....
আমার সবধরণের শক্তিই আছে,কিন্তু কিসের কি এক মায়ায় তা প্রয়োগ করতে বিলম্ব হচ্ছে....!!

মধ্যরাতে আবার ম্যাডামের ফোন....
কাঁদতে কাঁদতে বললেন--
--  রবি  বক্সটা তো আবার বড় হচ্ছে।তুমি এক্ষুণি কক্সবাজার চলে আসো...( ম্যাডাম)

-- শান্ত গলায় বললাম,ম্যাডাম, আপনি ঘুমান।কোথাও কিছুই হচ্ছে না।আপনি দুঃস্বপ্ন দেখছেন।সকাল হলে সব ঠিক হয়ে যাবে...( আমি)

-- কচু ঠিক হবে তুমি এখনই কক্সবাজার চলে আসো প্লিজ আমার খুব ভয় করছে... ( ম্যাডাম)

-- এই মাঝ রাতে, তাছাড়া আমার কাছেও কোন টাকা নাই কি করে যাবো উড়ে নাকি..?  ( আমি)

-- তোমার বিকাশ নাম্বার আছে, থাকলে দেও আমি টাকা পাটাবো... ( ম্যাডাম)

-- আছে বাট, কত টাকা দিবেন.. ( আমি)

-- ২.০০০, এতো টাকা, আর নাম্বার দেও বিকাশের ( ম্যাডাম)

-- ০১৯....... ( আমি)

-- আমি এখনই টাকা পাটাচ্ছি তুমি সকালের গাড়িতে উঠবে.. ( ম্যাডাম)

-- আইচ্ছা..( আমি)

সে দিন ম্যাডাম কে কক্সবাজারে রেখে চলে আসার পর থেকে আমারও কিছু ভালো লাগতেছে ছিলো না...
শুধু ম্যাডাম কথা ভাবতাম,..!!
তাকে খুব মিস করতাম...!!
কাউকে খুব মিস করা, তার কথা ভেবে রাত জাগা, তাকে নিজের সাথে অনুভুতি মনে করা,
তাকে নিয়ে স্বপ্নের ভুবনে ডুকে থাকার নাম প্রেম..!!
তাহলে আমি কি ম্যাডামের প্রেমে পড়ে গেছি...
ছিঃ কি ভাবছি আমি...
আচ্ছা ম্যাডাম ও কি আমায় মিস করে..
দুর কি সব ভাবনা আসছে মনে...
যাই ঘুমাই অনেক রাত হলো,,,,
সকালে আবার কক্সবাজার যেতে হবে....!!
-------
আমি এখন কক্সবাজারে....
 আমাকে দেখে তিনি দারুণ খুশি....
এই খুশিতে জড়িয়ে ধরে দশটা চুমু খাওয়া যায়....ম্যাডাম তা করছেন না.....!!

তিনি অন্তরে ভালবাসা পুষে কল্পনায় আমাকে বিশটা চুমু খেয়ে নিয়েছেন....
এই এক 'কল্পনা শক্তি'র মাধ্যমে মানুষ পুরো পৃথিবী নিজেদের করে নিয়েছে....!!

তা না হলে তারা পাখনা নাচিয়ে মাছেদের সাথে পানিতে বসবাস করতো....!!

অনেকে "আবেগ বনাম বাস্তবতা" শিরোনামে অনেক কড়া কথা বলে থাকেন...
 এটা ঠিক না।বাস্তবতা থেকে কখনও আবেগ আসে না....
আবেগ থেকেই বাস্তবতা আসে....!!

যে সময়ে মানুষ দ্রুতগামী গাড়ি আবিষ্কারের কথাও খুব সাবধানে ভাবতো...
সেসময়ে  আবেগ ছিল বলেই উড়োজাহাজ আবিষ্কৃত হয়েছে....!!
আবেগ ছিল বলেই মোবাইল আবিষ্কৃত হয়েছে,চাঁদে মানুষ পা রেখেছে,কম্পিউটার হয়েছে,বুলেট ট্রেন হয়েছে,মঙ্গলে মানুষ পাঠানোর ব্যবস্থা হচ্ছে....
এসবের পেছন প্রথম যে বিষয়টা কাজ করেছে তা হল,আবেগ.....!!
এরপর এসেছে যুক্তি বা ফর্মুলা, তারপর পরিশ্রম... সবকিছুই স্টেপ বাই স্টেপ......!!

বিকালে ভালো নাস্তা হলো....
দুপুর বেলায় আমি ভাত খেতে পারি নি....
তার কারণ আমি তখন বাসে ছিলাম......!!

নান দিয়ে গরুর মাংস খেলাম...
ভালই লেগেছে....!!

আমার পাশে একটা বিস্ময়কর ছেলে বসেছে...
সবকাজ মাত্রাতিরিক্ত ধীরে ধীরে করে....!!
খাওয়ার সময় আমার কনুইয়ের সাথে হালকা আঘাত পেল....
পাশাপাশি বসলে পেতেই পারে.....!!
কিন্তু,
আমাকে অবাক করে দিয়ে সে এই অপরাধের জন্য আমার পায়ে ধরে ক্ষমা চাইল....
সমবয়সী একটা ছেলে জনসমক্ষে পায়ে ধরে ক্ষমা চাইলে কেমনটা লাগে...?
পরে জানতে পারলাম, সে গান্ধীবাদী।অহিংস! চরম অহিংস.....
 আমার মনে হলো, সে অসুস্থ! চরম অসুস্থ.....!!

মহাত্মা গান্ধী বলেছেন,অহিংসা পরম ধর্ম....
আর নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু বলেছেন, অহিংসা দুর্বলের ধর্ম....!!
মহাত্মা গান্ধী বলেছেন,বিশ্বাস হচ্ছে কাঁচের মতন....
একবার ভেঙে গেলে আর কখনও জোড়া লাগবে না.....!!
আর নেতাজী বলেছেন,বিশ্বাস কাঁচের মতন এত ঠুনকো নয় যে একবার ভেঙে গেলে আর কখনও জোড়া লাগবে না......
ভালবাসা থাকলে ভাঙা বিশ্বাসও জোড়া লাগতে বাধ্য....!!

আমি ম্যাডামের পাশে বসে আছি....
কাল সকালে আমরা চলে যাব.....
 একেবারের জন্যই যাব.......!!

আজ তিনি বক্সটা কে  আর  ভয় করছেন না....
ওটাকে কোলে নিয়েই তিনি বসে আছেন....!!
কারন,
আসলে ভুতুড়ে বক্স বলতে কিছুই না এই বক্স টা...
বক্স টা হলো চায়না, আই কস্টাক্ট বক্স.....!!
বক্সটা যে ভাবেই থাকুক, যে প্রথম দেখবে, তা অটোমেটিক ছোট বড় হবে...
এটার কারন নাকি চোখের সাথে বক্সটার মিল রেখে তৈরী করা... যার ফলে এমন হয়।
চায়না দের মাথা বলতে হয়, তারা সব কিছুই পারে তৈরী করতে...!!
আর বক্সটা আমাকে  মনির গিফট করেছিলো, সে চায়না থাকে।
বাংলাদেশে আসার সময় আমার জন্য বক্সটা নিয়ে এসে ছে...!!
আর তা আমি ম্যাডামের কাছে ভুতুড়ে বলে ভয় দেখাইছিলাম...!!!

আমি ম্যাডামের  দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসলাম....
তিনি বিরক্তবোধ করে মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে নিয়ে গেলেন......!!

খুব সম্ভব হাসিটা মিষ্টি হয় নি.....
ইডিয়টের মতন হয়ে গেছে.....!!

ইডিয়টের মতই হেসে বললাম--
--  ম্যাডাম,আপনি আজ কার সাথে কথা বলবেন...?( আমি)

#ম্যাডাম....

#১১তম_পর্ব....

ম্যাডাম আমার দিকে তাকিয়ে মায়াভরা একটা হাসি দিলেন.....!!

আমি এ হাসি দেখতে চাই নি....
প্রশ্নের উত্তর জানতে চেয়েছি.....!!

ম্যাডাম কোনও উত্তর না দিয়ে পানি খেতে চলে গেলেন.....!!

সমুদ্র তীরে দাঁড়িয়ে আছি.....
আমি ম্যাডামের থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছি.....!!

 ম্যাডাম মুগ্ধতা নিয়ে সাগর দেখছেন.....
যতটা মুগ্ধতা নিয়ে ছোট্ট মেয়েরা শোঁ শোঁ করে একটা বিমান উড়ে গেলে সব কাজ ফেলে বিমান দেখতে চলে আসে.....!!

নিরবতা ভেংঙ্গে...
-- আচ্ছা আপনার ছোট বোনের নাম তুলি না...? ( আমি)

-- অবাক হয়ে হ্যা তুমি জানলে কি করে...? ( ম্যাডাম)

-- সে দিন যখন আপনি বাসে কক্সবাজার আসতেছিলেন বাসে ঘুমিয়ে পড়ছিলেন মনে আছে...? ( আমি)

-- হুমম, কেন..? ( ম্যাডাম)

-- তখন আপনার পার্স টা হাত থেকে পড়ে গেছিলো চেইন খোলা থাকার কারনে ব্যাগের ভেতর থেকে একটা ডায়েরীও পড়ে গেছে, আর আমি ডাইরেরীটা রাখতে গিয়ে কৌতুহল বসত পড়ে নিয়ে সব জানতে পেরেছি.... ( আমি)

-- চোখ জ্জল জল করে অন্যের জিনিস দেখা ভালো না.. ( ম্যাডাম)

-- সরি, তখন না বলে দেখার জন্য.. ( আমি)

-- ঠিক আছে.. ( ম্যাডাম)
.....

 বাবা-মায়ের ডিভোর্সের তিনমাসের মাথায় তুলি  ছাদ থেকে পড়ে মারা যায়...
সবাই বলে জিনের আছর.....!!

আসলে এটা  আত্মহত্যা। স্রেফ আত্মহত্যা....
আজহার নামে  এক বড়ভাই ছিলেন তিনি তুলিকে প্রাইভেট পড়াতেন.....!!
তুলি সবসময় মলিন ড্রেসে পড়তে আসতো...
চুলটাও ঠিকঠাক মতো আঁচড়াতো না.....!!
কোনও পড়া পারত না,পারতে চেষ্টাও করতো না...
সবসময় মাথানিচু করে মুখটা ভার করে বসে থাকত...!!

পরে আজহার জানতে পারেন,বাসায় নাকি বাবা-মা সসবসময় ঝগড়া করে,আর তুলি সেসব দেখে দেখে মুখ লুকিয়ে কাঁদে.....!!

আজহার  একসময় জানতে পারলেন,তার বাবা মায়ের ডিভোর্স হয়ে গেছে.....
তুলির বড়বোনের নাম ছিল প্রিয়া......!!

এই ম্যাডামই প্রিয়া.....
প্রিয়া তখন আজহারের  প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিল....!!

আজহারের  অনেক টা স্মার্ট ছিলো...
আর এই স্মার্ট নেসের কারনে যে কোন মেয়েই তার প্রেমে হাবুডুবু খায়....
প্রিয়া ম্যাডামও তেমনি হাবুডুবু খাচ্ছিলো....!!

আজহার বাইরে ভালো থাকলেও মনে ছিলো মেয়েদের দেহ ভোগ করার ধান্দা....
প্রথমে প্রেমের অভিনয় করে তারপর তার স্বার্থ হাসিল করে ছেড়ে দেয়......!!

তবে প্রিয়ার ব্যাপারে একটু ব্যতিক্রম হয়েছিলো..
সে দিন বৃষ্টি হচ্ছিলো...
তুলিদের বাসায় কেউ ছিলো না....!!
তার বাবা এমন কি প্রিয়াও.....!!

আজহার তুলিকে প্রাইভেট পড়াতে আসে...
তুলি দরজা খুলতেই আজহারের চোখে আগুন জ্বলে উঠে...
তুলি কে দেখে তার ভিতরের পশুত্ব জেগে উঠে....!!
সে তুলিকে জোর করে ধর্ষন করে...
তারপর তুলিকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে মুখ বন্ধ রাখতে বলে....!!

তুলি আস্তে আস্তে আরো নিরব হয়ে যায়...
এক সময় সে আর সইতে না পেরে ছাদ থেকে পড়ে আত্নহত্যা করে.....!!

এই সব আমি ডায়েরী পড়েই জেনেছি...
তুলি তার আদরের বোন প্রিয়ার কাছে চিঠি লিখি তার ডায়েরীর ভিতরে রেখে ছিলো...
আর তুলি তখন ক্লাস সেভেনের ছাএী ছিলো.....!!

 আর ম্যাডাম তখন ক্লাস নাইনের ছাত্রী....!!

পৃথিবী রহস্যময় বলেই হয়তো আমাদের সাথে ঘটে যাওয়া অনেক ব্যাপার এবং আমাদের ভেতরে জমে থাকা অদ্ভুত শক্তির কথা আমরা জানি না.....!!

ম্যাডামের চোখে জল চলে আসছে....
তিনি কাঁদছেন  কাঁদছেন....!!
আর আবোল তাবোল বকছেন তুলির সাথে কথা বলছেন --
 তুলি,আমি তোর দুটা ছবি এঁকেছি।সেগুলা কি তোকে দেয়া যাবে...?
 কি, তুই নিবি না? রাগ করেছিস আপুর উপর...?
আচ্ছা তুলি,একটু সত্য করে বলবি,তোকে ছাদ থেকে কে ফেলে দিয়েছিল...?
প্রতিরাতে তোকে ভেবে আমার ঘুম যাওয়া,ঘুম থেকে উঠা, তুই কি তা জানিস...?

আমাদের যখন কোন প্রিয়জন হারিয়ে যায়, তখন আমাদের সেন্স প্রায় ঠিক থাকে না...
আবোল তাবোল বলে থাকি সে মানুষ কে নিয়ে ম্যাডামও এখন ঠিক তেমন বকছেন....!!

তুলির কথা মনে করে ম্যাডাম কাঁদতে কাঁদতে বসে পড়েছেন.....
আমি তাকে সান্তনা দিলাম....!!

সন্ধ্যা হয়ে এলো সমুদ্র সৈকতে...
আমরা হোটেল রুমে ফিরে এলাম...!!

আমি দাঁড়িয়ে আছি বারান্দায় আকাশপটে অর্ধ চাঁদ....
অর্ধ সব জিনিসই আমার ভাল লাগে....!!
পূর্ণতা বিরক্ত লাগে....
এজন্যই জ্যোৎস্না রাত আমার সহ্যের বাহিরে....!!

এই রাতে আমি দরজা জানালা বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে বিরহের গান শুনি...
আমি গুনগুন করে এই মধ্যরাতে গাচ্ছি,গাঁজাবাবার গিফট দেয়া সে গানটি,এ কেমন কান্না তোমার, আমায় যখন আদর করো......!!

রেস্টুরেন্ট এ ম্যাডামের পাশে বসে আছি আমি...
রাতের খাবারের জন্য...
হঠাৎ দেখি ম্যাডাম রাগে ফুস ফুস করে ফুলতেছেন...
আমি কিছু বুজে উঠার আগেই ঠাস ঠাস ঠাস.....

#ম্যাডাম....

#১২তম_পর্ব....

আমি তো পুরো অবাক, থ মেরে দাড়িয়ে আছি
গালে হাত দিয়ে.....
কিছু বলতে যাবো তার আগেই...
আবারও ঠাস ঠাস......!!

আমি কি বলবো বুজতেছি না...
পুরো রেস্টুরেন্ট এর লোকজন ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে আছে....
সাথে আমার দিকেও.....!!

মনে হয় আমরা যেন ড্রাগন প্রজাতির কোন প্রানী..
যা আর কখনো কেউ দেখেনি...!!

 রেস্টুরেন্ট থেকে ম্যাডাম কে নিয়ে সোজা
রুমে চলে আসলাম....
রাতের খাবার আর হলো না......!!

এ দিকে পেটের ভিতরে গাড়ি চালাচ্ছে পেটের হজম পোকা গুলো....!!

আমরা যখন অতিরিক্ত রেগে যাই...
তখন আমাদের মস্তিষ্ক অন্য ভাবে কাজ করে...!!
পুরো শরীল ধর ধর করে কাপতে থাকে...
নিজের রাগ কন্টোল করা কষ্টসাধ্য হয়ে...!!

ম্যাডামের এখন তেমন হচ্ছে....
রাগে ফস ফস করছেন....
যেনো আমাকে এই মুহুতে খেয়ে ফেলবেন বা খুন করে ফেলবেন...!!

আমি আর কোন কথা না বলে চুপচাপ বসে আছি..
এই দিকে পেট আমার ছো ছো করছে...!!

 নিরবতা ভেংঙ্গে.....
-- আপনি ঐ ভদ্র লোকের উপর হাত তুলছেন কেন..? ( আমি)

-- কে ভদ্র লোক, তুমি ঐ লোকের কি জানো..? ( ম্যাডাম)

-- আরে আমি ঐ লোকের সম্পর্কে কি করে জানবো...?
ওনি কি আমার আত্নীয় লাগে নি, যে জানবো..? ( আমি)

আমার দিকে এমন ভাবে তাকালো এবার তো মনে হয় আমার গালেই মারবে...!!
বুকে থু থু দিলাম...
মনে মনে দোয়া পড়ে নিলাম.....!!

-- ঐ লোক একটা লুইচ্ছা, ধর্ষক, প্রতারক, ধোকাবাজ... ( ম্যাডাম)

-- দেখে তো মনে হয় না..  ভদ্র লোকই মনে হলো. ( আমি)

-- কাকে তুমি ভদ্র বলছো,,ঐ ধর্ষক কে.. ( ম্যাডাম)

-- মানে... ( আমি)

-- তুমি যে আজহার কথা ডায়েরীতে পড়ছো, ঐ লোকই সে... ( ম্যাডাম)

আমার আর বুজতে বাকি রইলো না, কি কারনে ঠাস ঠাস হলো রেস্টুরেন্ট...
তাহলে এই সে আজহার যে কিনা তুলিকে ধর্ষন করছে...!!
পাঠক আপনারা আবার কি ভাবছেন..
রেস্টুরেন্ট এ ম্যাডাম আমার গালে ঠাস ঠাস দিলো নাকি...?
আরে না...
সে ঐ আজহারকে মেরেছে....
আপনাদের এসব চিন্তাভাবনা কোন মানে হয়...??

ম্যাডাম এখনো রেগে আছেন...
দাতে দাত চেপে রাখছেন...
তার চেহারায় প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে...!!

আসলে যার যে জিনিস হারায় সে বুজে তার কতোটা মুল্য....
তুলি ম্যাডামের প্রিয় ছোট বোন ছিলো...
সে জানে পেয়ে জিনিস হারানো....
কতটা বেদনা দায়ক কতোটা কষ্ট কর....!!

এখন আমার নিজের ও ইচ্ছে করছে....
ঐ সময়ে হালারে আরো কয়েকটা দেওয়া উঠিত ছিলো....!!
ম্যাডাম কেন যে ঐ সময় বললো না ঐ আজহার...
তাহলে আমি সহকারে কয়টা দিতাম....!!

অনেক রাত হয়ে গেছে...
ম্যাডাম কান্না করছেন....!!
হয়তো আজ আবারও তুলির কথা মনে পড়ে গেছে..
তুলির মুখ টা তার চোখের সামনে ভেসে উঠছে..!!

আমি ম্যাডাম কে সান্তনা দেওয়ার চেষ্ঠা করলাম...
কি বা সান্তনাই আর দিতে পারি....!!

এখন যদি পাশের বাসার বরগুনার ছেলে গুলো থাকতো....
তাহলে সে গান্ধীবাদী এসে বলতো......
হে অন্ধরমহলের লক্ষি কান্না করে না..
লক্ষিদের কান্না করতে নেই সব। সময় হাসি খুশি থাকতে হয়...
লক্ষির চোখে জল শুভা পায় না...
চোখের কোনায় কালো কাজলের কালি লক্ষির চোখের বাহক...!!
তাও গান্ধীবাদী এমন এমন আস্তে করে বলতো যে কথা গুলো ব্যাথা পাবে....!!

আর তার এই কথা গুলো শুনে ম্যাডামও হয়তো না হেসে পারতো না....!!

আসসোস এখন বরগুনার ছেলে গুলো নেই..
তারা আজ সকালেই চলে গেছে...!!

 বিছানা রেডি করতে করতে বললাম.....
-- অনেক রাত হয়েছে এবার শুয়ে পড়েন.. ( আমি)

-- তুমি ঘুমাও আমার ঘুম আসছে না.... ( ম্যাডাম)

-- আচ্ছা যা হবার তা তো হয়ে গেছে এখন ঘুমিয়ে পড়েন সকালে আবার বাস ধরতে হবে...?( আমি)

-- বললাম না, তুমি ঘুমাও, আমার ঘুম আসছে না.. (ম্যাডাম)

আমি আর কিছু বললাম না....
বিছানায় শুয়ে পড়লাম....!!
এ পাশ ওপাশ করতে থাকলাম...
চোখে ঘুম আসছে না.....!!

ঘুমই বা আসবে কি করে পেটে  যে শান্তি নাই...
ক্ষিধায় ছো ছো করছে...!!

ম্যাডাম বিছানার এক কোনে বসে কেদে যাচ্ছেন...
আমি কি বলবো এই মুহুতে বুজতে ছিনা....!!

হঠাৎ বলে উঠলেন....
-- রবি, আমার না খুব ভয় করছে...( ম্যাডাম)

-- কেন..? ( আমি)

-- আজহার যদি আমার ক্ষতি করতে এখন এখানে আসে...? ( ম্যাডাম)

-- আরে পাগল হইছেন নাকি... সে এখানের ঠিকানা কি করে পাবে...? ( আমি)

-- ওর মত লোক সব করতে পারে.. ( ম্যাডাম)

-- হুমম, আর রেস্টুরেন্ট ও দেখলাম ওনার সাথে একটা মেয়ে, মেবি বউ হবে.. ( আমি)

-- খোজ নিয়ে দেখো,এই মেয়েকেও সে নষ্টা করবে, তার ইজ্জত লুটে নিবে, তারপর ছেড়ে দিবে... ( ম্যাডাম)

-- হতে পারে, বাদ দেন সে আমাদের ঠিকানা পাবে না, আর পেলেই বা কি আমরা তো সকালেই চলে যাবো...( আমি)

-- হুমম.( ম্যাডাম)

ঘড়ির দিকে তাকালাম...
দেখি ১.৪৫ মিনিট....!!

ম্যাডাম কে বললাম আপনি শুয়ে পড়েন....
আমি একটু বাইরে যাবো.....!!

-- কেন বাইরে যাবে...? ( ম্যাডাম)

-- অনেক িক্ষদে লাগছে..দেখি এখন কিছু পাওয়া কিনা খাবার.. ( আমি)

-- হুমম, তাড়াতাড়ি এসো আমার ভয় করছে...?( ম্যাডাম)

-- হুমম,..!!

গেটের সামনে এসে পড়লাম বিপদে দারোয়ান রাত ১টার পরে আর বের হতে দিবে না....!!
তাকে অনেক বুজালাম কোন কাজ হলো না....
শেষ মেষ কোন উপায় না দেখে হাতে ৫০ টাকা ধরিয়ে দিলাম....!!
এবার একবারে কাজ হয়েগেছে...!!

বর্তমানে টাকা এমন এক পদার্থ...
যার কাছে দুনিয়ার সব কাজ হার মানে...!!
হোক সেটা ভালো বা খারাপ....!!

আপনি হাজার টা খুন করেন না কেন...
হাজার টা ধর্ষন করেন না কেন...
আপনি তানপরেও সমাজে বুক বের করে চলতে পারবেন...
কারন আপনার টাকা আছে...
আর টাকা আছে তো সব মাপ....!!

যার জ্বলন্ত প্রমান ঐ দারোয়ানই দিলো কিছুষ্খন আগে...
প্রথমে কতকরে বুজালাম, গেট খুললো না,, কিন্তুু যখনই টাকা হাতে ধরিয়ে দিলাম গেট খুলে গেল
বাহ্ টাকার কত গুন কত মহিমা...!!

বাইরে এসে কোন দোকান পাট খোলা পেলাম না...
অনেক দুর হাটার পর...
একটা দোকান খোলা পেলাম তাও অর্ধেক খোলা...
ওনি বন্ধ করে ফেলছেন প্রায় দোকান....!!

নেবার মত তেমন কিছু পেলাম নাহ্...
কি আর করার...!!

৬ টা কলা, আর ২ টা পাউরুটি নিয়ে রুমে এলাম....!!

রুমে ডুকে লাইট ওন করলাম...
ম্যাডাম দেখি ঘুমিয়ে পড়ছেন....!!

লাইটের আলোয় তার কান্না মাখা মুখটা জ্বল জ্বল করছে....
খুব মায়াবি লাগছে দেখতে.....
আমার মনে তার জন্য কেমন মায়া হলো....!!

তাকে আদর করতে খুব ইচ্ছে হলো...
ভালোবাসতে ইচ্ছে করতেছে....!!

যে ভালোবাসায় থাকবে না কোন যৌন চাহিদা...
থাকবে শুধু পবিএ স্পর্শ...!!

ম্যাডামের গালে....
আলতো করেই চুমো খেলাম......!!

খাওয়ার সাথে সাথে ম্যাডাম চোখে মেলে দেখে
আমি তার উপরে ঝুকে আছি.....!!

আমাকে ধাক্কা দিয়েই, উঠেই ......
ঠাস ঠাস ঠাস.......

#ম্যাডাম....

#১৩তম_পর্ব....

আমি আর কিছু না বলে...
কলা আর পাউরুটি গুলো টেবিলের উপর রেখে বললাম....
--  খেয়ে নেন...? ( আমি)

-- রবি তোমার কি বুদ্ধি লোভ পাইছে..( ম্যাডাম)

-- না, কেন বলেন তো...? ( আমি)

-- তাহলে এভাবে দরজা খোলা রেখেই চলে আসছো কেন..?( ম্যাডাম)

-- খেয়াল ছিলো না.. ( আমি)

-- আবার আমার উপরের ও তোমাকে ঝুকতে দেখেছি..
কোন খারাপ মতলব ছিলো নাতো..? ( ম্যাডাম)

খাইছেরে ম্যাডাম কি বলে...

-- লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে আরে নাহ্ একটা মশা দেখলাম আপনার নরম গালে বসে রক্ত শোষন করছে তাই ঐ শক্র কে দমন করতে গেছিলাম কিন্তুু বেচারা মশা টের পেয়ে আগেই পলায়ন করছে.. ( আমি)

-- ইডিয়ট, দেও কলা পাউরুটি টা দেও খেয়ে নিই খুব খিদে পেয়েছে...( ম্যাডাম)

-- টেবিলে রাখা আছে নিজ হাতে খেয়ে নেন.. ( আমি)

-- তোমাকে কি বলছি আমাকে খাইয়ে দেও ইডিয়ট..
কলা রুটি ছাড়া আর কিছু পেলে না..? আমি একদম খেতে পারি না কলা রুটি..?( ম্যাডাম)

-- অনেক রাত হয়ে গেছে তো তাই কোন দোকান আর খোলা পেলাম না, একটা প্রায় বন্ধ অবস্থায় পাইছি সেটাতে এই কলা পাউরুটি ছাড়া আর কিছু পেলাম না.. ( আমি)

-- আচ্ছা দেও খেয়ে নিই, কোনমতে বাকি রাত টা পার করি.. ( ম্যাডাম)

ম্যাডাম কলা রুটি খাচ্ছে...
আমি বসে ভাবছি....!!
হঠাৎ আমার কি হয়ে গেলো...
আমি দরজা না লাগিয়েই ম্যাডামের গালে চুমু গেলাম..!!

আপনার কি ভাবছেন পাঠক বন্ধুগন...
ম্যাডাম আমার গালে ঠাস ঠাস দিলো নাকি চুমু খাওয়ার কারনে...??
বা আমাকে তার উপরে ঝুককে থাকার কারনে..?
আরে না...
ম্যাডাম আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেখে দরজা খোলা..
তাই উঠে গিয়ে ঠাস ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিলো...!!
আর আপনারা হয়তো ভাবছেন আমার গালেই মারছে..
কেন যে আপনাদের মাথায় এসব উল্টাপাল্টা চিন্তা ভাবনা আসে আমি বুজি না...
পাঠক আপনাদের এসব ভুল চিন্তা ভাবনার কোন মানে হয়...??

আচ্ছা আমি যখন ম্যাডাম কে চুমু গেলাম..
তখন কি সত্যি তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন..?
নাকি সজাগ ছিলেন..?
না সজাগ থেকেও কিছু বলেন নি..??
আর যদি ঘুমিয়েই পড়তেন তাহলে চুমু খাওয়ার সাথে সাথেই কিভাবে সজাগ হলেন...?
নাকি ম্যাডাম ও চেয়েছে এমন কিছু হোক তার সাথে বা আমি তাকে চুমু দেই..
যে স্পর্শ তার হৃদয় পর্যন্ত শিহরিত করে...!!
তাহলে কি ম্যাডাম আমার প্রেমে পড়ে গেলেন নাকি..?
যদি প্রেমে নাই পড়েন তাহলে চুমু খাওয়ার পরে কেন কিছু বললেন না...!!
এখন তো আর চুক্তি ছিলো না তার সাথে যে আমি তাকে চুমু খাবো..!!
তাহলে কি ম্যাডাম আমার প্রেমে......

দুর আমি এসব কি ভাবছি.....
এটা কি করে হবে....
হয়তো তিনি বুজেন নাই আমি তাকে চুমু খেয়েছি....!!

এসব উল্টা পাল্টা ভাবতে ভাবতে নিজেই আনমনে হেসে উঠলাম....!!

আর হো হো শব্দে হাসি দিলাম
তাকিয়ে দেখি ম্যাডাম রাগি লুক নিয়ে আমার দিকে চেয়ে আছেন....!!
যেন হাসি দিয়ে আমি মহাভারত অসুন্ধ করে ফেলছি....!!
ম্যাডামের কলা পাউরুটি খাওয়া শেষ....!!

আমি ও ইডিয়টের মতো হেসে বললাম --
-- এভাবে রাগি লুক নিয়ে তাকিয়ে আছেন কেন..? ( আমি)

-- আগে বলো তুমি হো হো করে হাসলা কেন..?( ম্যাডাম)

-- আজব তো,হাসি আসলে হাসতে পারবো না নাকি.?( আমি)

-- হুম পারবে, তাই বলে আমার দিকে তাকিয়ে এভাবে হো হো করে হাসবে কেন..? ( ম্যাডাম)

-- আমি আপনার দিকে কোথায় তাকালাম..?( আমি)

-- আমি দেখেছি, তুমি আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো...?( ম্যাডাম)

-- আমি না হয় তাকিয়ে ছিলাম, কিন্তুু আপনি দেখলেন কি করে..? ( আমি)

-- ইয়ে মানে,আমার মনে হলো তাই... ( ম্যাডাম)

-- তাহলে আপনিও আমার দিকে তাকিয়েছিলেন তাই না..?( আমি)

-- ইডিয়ট. ( ম্যাডাম)

আচ্ছা আমি না হয় ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে ছিলাম, বাট ওনি কেন তাকলেন, আর ম্যাডাম তো আমার সামনে ছিলেন..!!
আমি না হয় সামনে থাকার কারনে তাকিয়ে ছিলাম...
ম্যাডাম সেটা কিভাবে বুজলেন..?
তার মানে ম্যাডামও আমার দিকে তাকিয়েছেন....
তবে আমার মত সরাসরি না....
আড় চোখে.......
তাহলেও ম্যাডামও কি আমায় পছন্দ করেন...?
আমায় ভালোবাসেন....??
দুর আমি আবার এসব কি ভাবছি এটা.....!!

আসলে প্রেম ভালোবাসা হলো...
খোদার দেওয়া রহমত বা পবিএ সম্পর্ক....!!
যা মনের অঘৌচরেই হৃদয়ে চলে আসে...!!
কারো প্রতি হঠাৎ মায়া হওয়া, কারো দিকে এক নজরে তাকিয়ে থাকা, কাউকে নিয়ে সারাদিন চিন্তাভাবনা করা .
কাউকে মিস করা, তাকে নিজের প্রত্যেকটা কাজে, প্রত্যেক টা সময়ে নিজের মধ্যে অনুধাবন করা..!!
প্রেম ভালোবাসা কোন বয়স বা কোন রুপ দেখে হয় না, প্রেম হয় দুটি মনের মিল, দুটি মনের একই মানুষ।
বা দুই মানুষের একই মন....
যার নাম পবিএ ভালোবাসার বন্দন....!!

বর্তমানে যে প্রেম ভালোবাসা হয় বা দেখা যায় সেটা হলো...  মুলত তো যৌন প্রেম বা ভালোবাসা...!!
কারন এসব প্রেম হয়ই যৌনতার জন্য, নিজের শারিরীক চাহিদা মিটানোর জন্য...
যৌন তা শেষ, ভালোবাসাও শেষ....!!

মাঝখানে ধ্বংশ হয় একটা নিষ্পাপ জীবন....
যা আপনার আমার অবৈব যৌনতার ফল...!!

এই  নিষ্পাপ জীবন  টা আপনার আমার শারিরীক চাহিদার কারনে....
একটা সুক্ষ্ম বীজ হিসাবে বুনতে পারলো না....!!

যার স্থান এই সমাজে হয় না....
হয় কোন ডাস্টবিন, বা ডোবা নালা....!!

আমি ইডিয়টের মত আবারো হাসি দিয়ে বললাম---
-- আপনার বংশ ধর কি রাক্ষসী দের বংশধর...?( আমি)

-- না..  তোমার এমন কেন মনে হলো..?( ম্যাডাম)

-- সব গুলা খাবার একাই খেলেন..আমার জন্য একটুও রাখেন নি..?  ( আমি)

-- আসলে সে দুপুর থেকে না খেয়ে ছিলাম তো তাই আর লোভ সামলাতে পারি নি। আচ্ছা তুমি তো দোকান থেকে খেয়ে আসছো তাই না...?( ম্যাডাম)

-- আমি মনে হয় খেয়েছি, আমিও তো খাইনি.. আর দোকান থেকে খেয়ে আসলে কি আর বলতাম... (আমি)

-- এখন তো আর কিছু নাই, এখন কি হবে..! আগে বলো নি কেন..? ( ম্যাডাম)

-- কচু হবে, এখন আমি কলার বাকল গুলো খাই, আর আপনি আমাকে ইডিয়টের বদলে, গরু ছাগল বলেন আর কি... ( আমি)

-- হিহিহি, তা করতে পারো আর নতুন করে আকিকা দিয়ে তোমার নাম গরু ছাগলে রেখে দিবো...( ম্যাডাম)

-- হয়েছে আর ৩২ খানা হলুদে দাত বের করে হাসতে হবে না..  অনেক রাত হয়েছে এবার ঘুমিয়ে পড়েন..( আমি)

-- কি আমার দাত হলদে, তোমার চোখে সমস্যা যাও ডাক্তারের কাছে যাও... ( ম্যাডাম)

-- আমার চোখ ঠিকই আছে, কারন আমি কচু খাই বেশি বেশি, আর কচু চোখের জ্যোতি বাড়াতে প্রচুর অবদান রাখে, আর আপনার দাত হলদে না একবারে সোনার কালার... ( আমি)

-- কিহ্ এই দেখো দাত, ( মুখের সামনে হাসি দিয়ে)
ভালো করে দেখো, একবারে রুপার মত চকচক করছে.. ( ম্যাডাম)

-- ওয়াক থু,কি বাজে গন্ধ কয়দিন দাত ব্রাশ করেন না...
( আমি)

ম্যাডাম রাগে ফস ফস করছেন.....
আর আমি বিছানায় শুয়ে পড়ছি....!!

ম্যাডাম আসছে না দেখে বললাম---
--  হলদে দাত ওয়ালি রাগ কুমারি কে তো রাগলে খুব সুন্দর লাগে...( আমি)

-- ঐ আর একবার একথা বললে তোমার খবর আছে.. ( ম্যাডাম)

-- কয়টার খবর গো, হলদে দাতওয়ালি ম্যাডাম..( আমি)

-- আমার দিকে বালিশ ছুড়ে মেরে একদম কথা বলবে না ইডিয়ট..( ম্যাডাম)

-- হিহিহি ওকে হলদে দাত ওযালি, থুক্কু রাগ কুমারি..( আমি)

-- হালকা মুচকি হাসি দিয়ে.. তুমি আসল ই একটা ইডিয়ট..( ম্যাডাম)

-- হুমম আমি ইডিয়ট না সাথে, আরো একটা নামও আছে গরু ছাগল.. এবার ঘুমান, সকালে বাস ধরতে হবে... ( আমি)

-- হিহিহি, ওকে বাই শুভ রাত... ( ম্যাডাম)

বলে ম্যাডাম অন্য দিকে মুখ করে শুয়ে পড়ছেন...
হয়তো এখন শুয়ে শুয়ে ভাবছেন তিনি আমাকে না দিয়েই সব কলা রুটি খেয়ে নিলেন....!!
ভাবতেই পারেন....
ম্যাডাম তো আর জানেন না...
আমি দোকান থেকেই একবারে খেয়ে তার জন্য নিয়ে এসেছি....
প্রবাদ বাক্য আছে....
নিজে বাঁচলে বাপের নাম.....!!

তাই আগে আমি নিজের পেট শান্তি করে...
ম্যাডামের জন্য নিয়ে এসেছি.....!!

ম্যাডামের হাসিটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো....
এমনিতেই ম্যাডাম অনেক রুপবতী...
তার উপর হাসলে টোল পরে....
যার কারনে আরো রুপবতী হয়ে যায় ম্যাডাম হাসির সময়....!!

ম্যাডাম কে নিয়ে মনে অনেক চিন্তা ভাবনা করতে থাকলাম...
আচ্ছা ম্যাডাম কি আমায় ভালোবাসেন...?
ঢাকা গেলে তো ম্যাডাম আর আমার সাথে এমন আচরন বা এমন মিশবে না....??
আমি তখন তার ছাএ থাকবো...!!
আচ্ছা ম্যাডামও কি এখন আমায় নিয়ে ভাবছেন...?
ভাববেনই বা কেন..
ম্যাডাম তো আর আমাকে ভালোবাসেন না....!!
আচ্ছা যদিও ভালোবাসেন তাহলে কি আমি সে ভালোবাসায় সাড়া দিবো...?
আরে না তা কি হয় সমাজ কি বলবে....??
সমাজ যাই বলুক আমি সাড়া দিবো...!!
দুর এসব কি ভাবছি আমি....
আমি ম্যাডামের প্রেমে পড়ে গেলাম....!!

না আর ভাবলে হবে না আমি ঘুমিয়ে যাই সেটাই ভালো..
সকালে আবার বাস ধরতে হবে.....!!
বুজি না এসব চিন্তা ভাবনার কোন মানে হয় আমার...??
তারপরও চিন্তা ভাবনা করছি...!!

এসব উল্টা পাল্টা চিন্তা ভাবনা করতে করতে ঘুমিয়ে গেলাম........

#ম্যাডাম.....

#১৪তম_পর্ব.....

-- রবি, এই রবি আর কত ঘুমাইবা ....? ( প্রিয়া)

-- আর একটু ঘুমাই সোনা.... ( রবি)

-- কত বেলা হয়েছে এখন উঠো তো... ( প্রিয়া)

-- তাতে কি আজ তো আর অফিসে যেতে হবে না, প্লিজ জ্বালাইবা নাতো আরেকটু ঘুমাতে দেও.. ( রবি)

-- কি আমি তোমাকে জ্বালাই...? ( প্রিয়া)

-- আরে না, তুমি আর কত চুইট বউ, কত আদর করো.. ( রবি)

-- এখন রোমান্টিকতা ছেড়ে উঠবা নাকি সেটা বলো...? ( প্রিয়া)

-- আরে বাবা উঠবো তো আরেকটু ঘুমাই সারারাত একটুও ঘুমাতে পারি নাই.. ( রবি)

-- কেন ঘুমাইতে পারবা, অন্য মেয়েদের নিয়ে স্বপ্নে মেতে থাকলে...? ( প্রিয়া)

-- নাউজুবিল্লাহ্ তুমি এসব কি বলো, তোমার কথা ছাড়া আমি অন্য কোন মেয়ে নিয়ে ভাবতেই পারি না... ছিঃ তুমি এ কথা বলতে পারলা..?( রবি)

-- হয়েছে হয়েছে সেটা আমি জানি আর ন্যাকামো করতে হবে না,এখন ন্যাকামো বাদ বিছানা থেকে দিয়ে উঠে আমাকে উদ্ধ্যার করো প্লিজ.... ( প্রিয়া)

-- এই শুনো না, তুমিও আমার সাথে আরেক টু ঘুমাও.. ( রবি)

-- আমার বয়েই গেছে এখন তোমার সাথে ঘুমানোর জন্য, আমার হাতে অনেক কাজ এখন উঠবা নাকি...  না অন্য ব্যবস্থা করবো...? ( প্রিয়া)

-- আচ্ছা উঠছি তবে একটা শর্ত আছে আমাকে এখন দুইটা পাপ্পি দিতে হবে... ( রবি)

-- কি, আমি এখন পারবো না, রাতে না দিয়েছি.. ( প্রিয়া)

-- সেটা তো রাতের টা দিছো..  এখন বিছানা থেকে উঠার জন্য দিবা... আর না দিলে আমিও উঠবো না.. ( রবি)

-- আমার শরম করে..  যাও পারবো না.. ( প্রিয়া)

-- নিজের বর রে পাপ্পি দিবে সেখানে আবার বলে শরম করে, দিবা,.?  না আবার কাথা মুড়ো দিবো গায়ে..( রবি)

-- আচ্ছা দিচ্ছি তবে একটা... ( প্রিয়া)

-- তাতেই চলবে সকাল সকাল তোমার পাপ্পি ইসসস্ ভাবতেই নাছতে মন চাইছে....( রবি)

-- আ্যা আ্যা আ্যা........

-- এটা কি হলো প্রিয়া..?( রবি)

-- সকাল সকাল পাপ্পির বদলে কামড় হলো তোমার কানে .. ( প্রিয়া)

দাড়াও মজা দেখাচ্ছি.....
বলেই যখন প্রিয়ার পিছে ছুটলো ধরার জন্য....

ওরে বাবারে, মরে গেলাম রে, আ্যা আ্যা মাজা টা আমার গেলো....!!

রবি খাট থেকে পড়ে গেলো...
আর রবি দু চোখে কুয়াশা দেখছে...!!

রবির বুজে গেল সে এতোক্খন স্বপ্ন দেখছিলো...!!
উল্টা পাল্টা পাপ্পির স্বপ্ন.....!!

খাটের নিচ থেকে উঠে দেখে রবি..
ম্যাডাম এখনো ঘুমাচ্ছে....!!
কত মায়াবি লাগছে দেখতে ম্যাডাম কে...
ঘুমালে মেয়েদের অদ্ভুত এক সুন্দর লাগে...
মনে হয় যেন বিদাতা সব রুপ তখন মেয়েদের মাঝে তখন দিয়ে দেয়...!!

যেন এই মুহুর্তে রবির সামনে কোন অপন্সরী ঘুমাচ্ছে..
রবি সে অপ্সরী র দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে...!!

রবির ইচ্ছে এভাবে তাকিয়ে থেকে সারাদিন পার করে দিতে..
ইচ্ছে করছে ম্যাডামের কপালে আলতো করে একটা চুমু খাই....!!

সেটা আর দেওয়া হলো না যদি ম্যাডাম জেগে যাই...
আর বড় কথা হলো এখন তো আর চুক্তিও নাই...
যে পাপ্পি দিবে...!!

সারারাত ম্যাডাম মনে হয় ঘুমাইনি...
তার এখনকার ঘুম দেখে বুজা যায়...!!

তাই ম্যাডাম কে ঘুমানো দেওয়া উঠিত তাই আর জাগালাম না...!!

কিন্তুু পরের ক্ষনে মনে পড়লো...
বাস তো সকাল ৭ টায়......!!

ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি...
৬:২৫ বাজে.....!!

কি করবো বুজতেছি না...
কিছু না ভেবেই ম্যাডাম কে ডাকা শুরু করলাম....
-- ম্যাডাম ম্যাডাম এই ম্যাডাম....( রবি)

-- কি হয়েছে রবি এতো ডাকছো কেন...?( ম্যাডাম)

-- আরে কি হয় নি সেটা বলেন উঠেন তাড়াতাড়ি..? ( রবি)

-- আরেক টু ঘুমাই প্লিজ ডেকো না... সারারাত ঘুমাই নি..(ম্যাডাম)

হায় হায় ম্যাডাম দেখি আমার স্বপ্নের কথা আমারে বলতাছে....
তবে উল্টা হয়ে গেছে, স্বপ্নে ম্যাডামরে আমি বলছি...
এখন ম্যাডাম আমারে বলছে.....!!

-- রাখেন আপনার ঘুম কয়টা বাজে খেয়াল আছে..? ( রবি)

-- কয়টা বাজে রবি...ঘুম জড়ানো চোখে..( ম্যাডাম)

-- সাড়ে ৬ টা বাজে... ( রবি)

-- তো কি হইছে এতো ভোরে ডাকছো কেন...( ম্যাডাম)

-- ডাকবো না তো কি করবো বাস কয়টায় মনে আছে..( রবি)

-- কয়টায়..?(ম্যাডাম)

-- ৭ টায়। আল্লাহ্ জানে আবার মিস করি কিনা বাস..? ( রবি)

--- কিহ্.... (ম্যাডাম)

তাড়াতাড়ি উঠেই ম্যাডাম ওয়াশ রুমের দিকে চলে গেলো....!!

কিছু পর ওয়াশ রুম থেকে চিল্লানি দিয়ে....
-- রবি এই রবি... ( ম্যাডাম)

-- জ্বি এতো চিল্লাছেন কেন..?( রবি)

-- আরে আমার জামা কাপড় টা দিয়ে যাও.... সাথে না এনেই ডুকে পরছি ওয়াশ রুমে... ( ম্যাডাম)

ওমা কি বলে এসব ম্যাডাম....
এখন দেখি তার জামা কাপড় দেওয়ার দায়িত্ব ও আমার...!!
আল্লাহ্ বাচাও আমারে....!!

-- আচ্ছা দিচ্ছি ওয়েট করেন.....( রবি)

-- তাড়াতাড়ি দেও.... ( ম্যাডাম)

-- এই নেন.... ( রবি)

-- এই গুলো কি ইডিয়ট....? (ম্যাডাম)

-- কেন আমার লুঙ্গি আর টিশার্ট...পছন্দ হয় নি..?
না হলে দিয়ে দেন আর খালি গায়ে ওয়াশ রুম থেকে বের হন... ( রবি)

-- রবি তুমি আসলেই একটা ইডিয়ট,  আমি গুলো এখন পড়বো বুজি..?( ম্যাডাম)

-- পড়ে নেন, নাই মামার চেয়ে কানা মামা অনেক ভালো...আর আপনার ব্যাগ লক করা তাই আর আপনার জামা কাপড় দিতে পারছি না.. ( রবি)

ম্যাডাম লুঙ্গী আর টিশার্ট টা পরে ওয়াশ রুম থেকে বের হলো....
আমি অবাক হালকা ভেজা চুল...
তার উপর হালকা গায়ের গড়ন...
কোমড়ের কি দুলোনি...
সব মিলে পরীর মত লাগছে...
পরী বললেও হবে না এই যেন কোন অপ্সরী...!!

আমি তো ক্রাশের উপর ক্রাশ খেলাম....!!

-- এমন হ্যা করে তাকিয়ে আছো কেন ইডিয়ট... ( ম্যাডাম)

ম্যাডামের ডাকে বাস্তবে ফিরলাম....
একটু লজ্জাও পেলাম...
নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে বললাম....
--- না কিছু না এমনিই... ( রবি)

-- তাহলে এভাবে তাকিয়ে ছিলে কেন ইডিয়ট.. ( ম্যাডাম)

-- সুন্দর জিনিসের প্রতি সবাই এভাবে তাকিয়ে থাকে. আপনি  না খুব সুন্দর, এখন আরো সুন্দর লাগবে যদি একটু লুঙ্গী ডান্স দেন...? ( রবি)

-- ঐ ফাজিল ইডিয়ট তুমি কি ভালো হবে না..
তুমি আসলেই একটা বডের হাড্ডি.. ( ম্যাডাম)

-- আমি ভালো ছেলে ফাজিলও না, ইডিয়টও না...হিহি( রবি)

এই বলে আমি ওয়াশ রুমে ডুকে ফ্রেস হয়ে বের হলাম...!!
ম্যাডামও রেডি....!!
সাতটা বাজতে আর ১০ মিনিট....!!
তাড়াকাড়ি বাস স্টান্ডে পৌছে গেলাম....!!

ভাগ্সি হোটেল থেকে ইন্টান টা কাছে ছিলো....
না হলে বাস ধরার টা মিস হতো....!!

আমি আর ম্যাডাম বাসে বসে আছি....
আমি আমার আপন গতি তে চলতে শুরু করছি....!!
না না আমি না বাস তার আপন গতি তে চলতে শুরু করছে.....!!

ম্যাডাম জানালার পাশের সিটে বসে ছেন..
বাতাসে তার চুল গুলো আমার মুখে উপরে বেড়াচ্ছে...
আহা কি মিষ্টি গান ইচ্ছে করে  প্রান ভরে সারাক্ষণ চুল ঘ্রান নেই....!!

ম্যাডাম বাইরের দিকে তাকিয়ে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখছেন....
আর আমি ম্যাডাম কে দেখছি....!!

বাস তার গতিতেই চলছে....
ঘন্টা ঘানেক পরে দেখি আমার কাধে কারো মাথার স্পর্শ....
দেখি ম্যাডামের মাথা আমার কাথে.....!!

ঘুমিয়ে পড়ছেন বাসের দুলোনিতে....!!

আমিও আর ডিস্টাব করলাম না ম্যাডাম কে আমার কাধ টা তার জন্য বালিশ করে দিলাম..
তাকে আমার কাথে ঘুমিয়ে রাখলাম সারাটা পথ...!!

ম্যাডামও ঘুমের ঘোরে আছেন এখনো....
হয় তো সারারাত ঘুমাই নি বলে এখন ঘুমে আচন্ন আছেন এখন....!!

প্রায় সাত ঘন্টা বাস ছলার পর আমরা ঢাকায় এসে পৌছলাম.....
ম্যাডাম এখনো ঘুমিয়ে আছেন তাই বললাম...
-- ঘুম মহারানী ম্যাডাম. ঝাকুনি দিয়ে , আমরা এসে পড়ছি..( আমি)

-- ঘুম চোখে আচ্ছা নামছি.. ( ম্যাডাম)

-- জ্বি মহারানী ম্যাডাম..( আমি)

রাগি লুক নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে গাড়ি থেকে নামলেন....!!
এদিকে পেটেরর গাড়ি চালানো শুরু করছে হজম পোকা গুলো....
গাড়ি নাস্তার জন্য কুমিল্লাতে সময় দিচ্ছিলো..
ম্যাডাম তখন ঘুমিয়ে থাকার। কারনে সেটাও খাওয়া হয়নি....!!

ম্যাডামই বলে উঠলো...
চলো রবি কিছু খেয়ে নিই.....!!

হুম চলেন.......
রেস্টুরেন্ট এ আমি আর ম্যাডাম খাওয়া দাওয়া শেষ করে......
একটু বিশ্রাম নিলাম....!!

এখন উদ্দেশ্য যে যার বাসায় যাবে....
ম্যাডাম কে বিদায় দিয়ে আমিও বাসায় চলে আসলাম....!!

বাসায় এসে খুব কান্ত লাগছে....
তাই গোসল করে ই....
দিলাম ঘুম.....!!

ঘুম থেকে রাত দশটায় উঠলাম....!!

ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে রুমে চলে আসলাম...
মোবাইল টা হাতে নিয়ে দেখলাম...
ম্যাডাম কোন কল করেছেন কিনা....!!

না ম্যাডডাম তো কোন কল করেন নাই....
তাই ভাবলাম আমিই কল দিবো...
কেন আমি কল দিবো...
ম্যাডাম যখন করেন নাই...
আমিও করবো না.....!!

ফোন টা রেখে দিলাম.....
শুয়ে আছি কিন্তুু ঘুম আসছে না....!!
এই কয়দিনের ম্যাডামের সব কথা, গুলো মনে পড়ছে....
তার দেওয়া ইডিয়ট নামটা, হয়তো এই নামে আমায় আর ডাকবেন না...!!

আচ্ছা ম্যাডামও কি এখন আমাকে নিয়ে ভাবছেন...??
না আমিই শুধু ভাবছি....!!

দুর ম্যাডাম কেন ভাববে সে কি আমায় ভালোবাসে নাকি..?
আমি তার কাছে কেবল ছাএ...
তার কোন হবু পাএ না...!!

কিছু ভালো লাগছে না...
ম্যাডাম কে খুব মিস করতেছি....
আমি কি তাহলে ম্যাডামের প্রেমে পড়ে গেলাম.....!!

এসব ভাবতে ভাবতে হঠাই ফোনের ক্রিঃ ক্রিঃ শব্দ ভেসে আসলো কানে.......
ফোনের স্কিনে তাকিয়েই আমার চোখ কপালে উঠে গেল.....!!
এই কি দেখতেছি আমি....!!

সুলতানার কল.......
শেষ পর্ব:

 সুলতানার কাল দেখে আমি অভাগ হয়ে গেলাম। সুলতানা হলো আমার খুব কাছের একজন ভালো বলতে অতি ভালো একজন বন্ধু। সব সময় আমার খোজ খবর নেয়।কিন্তু মেডামের সাথে  Cox's bazar যাওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি। সে জন্য আমার উপর অভিমান করে আসে।

 কলটা তাড়াতাড়ি রিসিভ করলাম। কেটে গেলে হয়তো আরো বেশি অভিমান করে বসে থাকবে।

আমি    : হ্যালো

সুলতানা : জ্বি বিশ্ব প্রেমিক সাহেব। কেমন আসেন..? আর কেমন কাটলো আপনার হানিমুন টিপ..?

আমি : জ্বি মহারানী, অতি উত্তম,  যা আপনাকে বলে বুঝাতে পারব না..!

সুলতানা অনেক রেগে গিয়ে বল্লো,উত্তম না ছাই।
নবাব সাহেব মনে হয় নিজের বেকিং নিউজ শুনেন নাই...(সুলতানা)

আমি : কি বেকিং নিউজ প্লীজ একটু বল না।(মনে মনে ভয় পেয়ে গেলাম)

সুলতানা : আর কি আমি মানা করছিলাম না। মেডামের সাথে না যাওয়ার জন্য।এখন মান সম্মান সামলাও।

আমি : প্লীজ ক্লিয়ার ভাবে বল না...  প্লীজ,প্লীজ

সুলতানা : আপনার আর আপনার প্রিয় মেডামের প্রেম কাহানী এখন সারা ভার্সিটিতে গল্পের প্রধান  সাবজেক্ট। হেপি তো...!

আমি : কি বলিছ...!

সুলতানা : জ্বি জনাব।যা সত্যি তাই।

আমি :  কিন্তু মেডামের সাথে আমার এমন কিছুতো হয় নাই।

সুলতানা : আমি কিছু জানি না বাবা!  এবার তুমি ঠেলা সামলাও। রাখি প্রেমিক সাহেব।

সুলতানার কথা শুনে আসলে একটু বয় পেয়ে গেলাম।আর মনে হলো সুলতানাও আমার উপরে অনেক রেগে আছে। কারণ কথায় কথায় আপনি করে কথা বলেছিলো।
এরই মধ্যে গাঁজাবাবাও কল করে
সব বল্লো যে, ভার্সিটিতে শুধু আমার আর মেডাম কে নিয়ে নাকি আলোচনা করা হচ্ছে।

যাই হোক, অনেক চিন্তা-ভাবনা করে মেডাম-কে
কল দিলাম। রিং হচ্ছে কিন্তু মেডাম রিসিভ করলেন না।আবার কল দিলাম।এবার কল রিসিভ করা হল। ঔ পাশ থেকে কান্না জড়িত কন্ঠে ভেসে আসল।
" তুমি আর কি চাও! তোমার কারণে আমি এখন লোকের কাছে বদনামী। তোমার শর্ত পূরণ করতে গিয়ে আমি এখন সমাজে মুখ দেখাতে পারতেছি না।আমি আসলে পাগল তা না হলে কি তোমার শর্ত মানতাম। প্লীজ আমাকে আর নিচে নামাবে না।আমার সাথে আর যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে না "-(মেডাম)

একসাথে কথা গুলো বলে কল কেটে দিলেন।আমাকে কিছু বলার সুযোগ দিলেন না।আর এখানে আমি কি আর বলার ছিলো। তবে আজ নিজেকে সত্যি অপরাধী মনে হচ্ছে।আমার কারণে মেডাম আজ লোকের কাছে অনেক ছোট হয়ে গেলেন।আমার সামান্য ভূলের কারণে আজ এত কিছু।

পূজার ছুটির জন্য ভার্সটি বন্ধ। তাই
কিছু দিন আর ভার্সিটিতে যাই নাই। তবে মেডামের কথা অনেক মনে পড়ছে।মেডামের সাথে কাটানো সময় গুলো অনেক মনে পড়ছে।তবে যখনই মনে পড়ে মেডামের ঔ দিনের কান্না জড়িত কন্ঠের ফোনলাপ তখনই মনটা খারাপ হয়ে যায়।

ভার্সিটি খোলবে আগামীকাল। যাবো কি যাবে না চিন্তা করতেছি।একদিকে মেডাম আর আমার বিষয় নিয়ে যা হলো।আর অন্য দিকে মেডামকে দেখার জন্য। মনটা অস্তির হয়ে আছে।যাই হোক
কালকে কি হয় দেখা যাবে।

কালে রাত্রে ভালো ঘুম হয় নাই। তাই সকাল সকাল রেডি হয়ে ভার্সিটির দিকে রওয়ানা হলাম।গেইটের কাছে যেতে না যেতে ছাত্র গান গাইতেছে আমাকে দেখে...
" সে যে কেন এলো না কিছু ভালো লাগে না এবার আসুক তারে আমি মজা দেখাবো "
সুলতানা ও গাঁজাবাবার সাথে দেখা হলো।তাদের কাছ থেকে যা শুনলাম। তা শুনে নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছি না।নিজের অজান্তে কখন যে দুচোখ দিয়ে অবিরত  অস্রু ঝরছে।মেডামকে নাকি অনেক অপবাদ আর লাঞ্চনা করে কলেজ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।মেডাম নাকি অনেক কান্নাকাটি করে চলে গেছেন।কোথায় গেছেন কেউ জানে না।
ঐ দিন ক্লাস করি নাই। বাসায় এসে নিজে অনেক কেঁদেছিলাম।মেডামের কাছে মাফ চাওয়ার জন্য কল দিলাম মোবাইল বন্ধ।
ঐ দিন প্রতিজ্ঞা করে ছিলাম যে জীবনে আমার কারণে আর কোন মানুষ যেন না কাঁদে।

তবে মনের অজান্তে মেডামের জন্য যে ভালোবাসা লুকিয়ে আছে তা মেডামকেকে মিস করার মাধ্যমে বুঝি। জানি না এ জীবনে আর মেডামের দেখা পাবো কি না। যদি পায়ে থাকি তাহলে  অাপনাদের শুনাবো আমার...

" অসমাপ্ত ভালোবাসার সমাপ্ত গল্প..."

গল্পটি কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ড করে জানাবেন....:!!!


ভালোবাসা বিষয়ক টিপস -১০

love-tips ♥ তুমি পাশে নেই তবুও তোমায় অনুভব করি। তুমি আমার হবে না জানি তবুও তোমার পথ চেয়ে আছি। সপ্ন সত্যি হবে না জানি তবু তোমায় নি...