ভালবাসা মানে বিশ্বাস, ভালোবাসা মানে সাহস। ভালোবাসা মানে ভয় ভেঙে বাধা পেরিয়ে কাছে আসার। আর সেই সব কাছে আসার গল্প নিয়ে সাজানো হয়েছে " কাছে আসার গল্প " ব্লগ সাইটি।☞হাজারো 'কাছে আসার গল্প' শুনতে আমাদের সাথেই থাকুন সব সময়।

Search

Latest update

Banner

16/11/2018

বাস্তব জীবনের গল্প : পূরুষ পতিতা

কাছে আসার গল্প : পূরুষ পতিতা

কাছে আসার গল্প : পূরুষ পতিতা


লেখক তারিক হক

 ( প্রথম পর্ব )    



আমি জার্মানিতে রেগুলার  Gym  এ যাই । অনেকদিনের অভ্যাস । বিশ্বাস করি, " Sound mind in a sound body"।  সেখানেই আমার পরিচয় হাইন্স এর সাথে  । 

আমার ট্রেইনার ।  ওর উদরের পরিধি দেখে প্রথমদিন খুব হেসেছিলাম ।  ওর বপুর কাছে আমার দেহ তনু মনে হয় । যাহোক হাইন্স খুব করিৎকর্মা ।  আমি ওকে মোটিভেশন শেখাই,  বিনিময়ে ও আমাকে বক্সিং শেখায় ।

হাইন্স সারাক্ষণ হাসে আর মজার মজার জোক করে । এতো সুন্দর করে কথা বলে যে  মেয়েরা খুব সহজেই পটে যায় । 

হঠাৎ একদিন আমাকে জিজ্ঞেস করলো :
-ফিলিপাইনে কখনো গিয়েছো ? 

আমি বললাম :
-না  ।

ও বললো : 
-আমি কালকে  ওখানে যাচ্ছি বিয়ে করতে । ফিলিপিনি মেয়ে , ফেইসবুকে  ভালোবেসে ফেলেছি  ।   

আমি সবসময় এই ভার্চুয়াল প্রেমের  বিরোধী । তবুও বললাম,  "All the best".

হাইন্স মুচকি হেসে চলে গেলো । সাতদিন পরে আবার দেখা । মলিন মুখ ।
 জিজ্ঞেস করলাম :
-কি খবর হাইন্স ?

- আর বলো না , একদম বাজে মেয়ে ।  টাকার লোভে জার্মানিতে  আসতে   চেয়েছিলো, আমার জন্যে নয় ।

আমার মনটি একটু খারাপ হয়ে গেলো । আমি জানি না কার দোষ ! 
বেশ কয়েক মাস হয়ে গেছে । হঠাৎ হাইন্সের খুব উৎফুল্ল মুখ । 

বললো :
-জানো, আমি তোমাকে এতদিন বলিনি  , আমি আবারো ভালোবেসে ফেলেছি ফেইসবুকে । পরশু যাচ্ছি  ।

আমি বললাম : 
-আবারো ফিলিপাইনে ?

-হুম , তবে এই মেয়েটি খুব ইয়ং । বয়স মাত্র কুড়ি ।

তাহলে তো চমৎকার । তোমার বয়স পঞ্চাশ । মাত্র ত্রিশ বছরের পার্থক্য !

হাইন্স মুচকি হেসে চলে গেলো । পাঁচ দিন   পর   আবার দেখা  । এবার অত্যন্ত ক্রুদ্ধ  বদন  ।

আমাকে বললো : 
-এই এশিয়ান মেয়েরা মেয়ে তো নয় , সবাই দেহ ব্যবসায়ী  । 

আমি এক মিনিট রাগ চেপে রেখে জিজ্ঞেস করলাম, "আবার কি হলো "? 
ও উত্তর দিলো, "প্রথম দুদিন একসাথে ঘুরলাম , সবরকমেই  এনজয় করলাম ।   তৃতীয় দিন  মদ খেয়ে  যখন বেডে নিতে চাইলাম , কি তার আপত্তি ।  
একটু জোর খাটাতেই বলে কিনা আমি ইডিয়ট  ।  

আমি বললাম : 
-তোমাকে ইডিয়ট বলেছে,  সেজন্যে সম্পর্ক কাট করেছো ? 

-হ্যাঁ , ফিলিপাইনের কোথাকার এক মেয়ে আমাকে ইডিয়ট বলবে  ?

( জার্মানদের এই উন্নাসিকতা আমি চিনি ।  এরা নিজেকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাত মনে করে ।  "ইডিয়ট" বলে গালি দিলে ১৫০০ ইউরো জরিমানা দেয়ারও ইতিহাস আছে ।) 

আমি রেগে না গিয়ে বললাম : তুমি তো একজন পুরুষ পতিতা ।  

তোমাদের জার্মানদের দেখি , সত্তর বছরের কদাকার জার্মান থাইল্যান্ড আর ফিলিপাইনে গিয়ে  মেয়েদের টাকা দিয়ে কিনতে চাও । ট্রাভেল এজেন্সীর "সেক্স ট্যুরিজম " এ সাড়া দিয়ে  গরিব দেশগুলিতে গিয়ে নিজেদের বিকৃত যৌন কামনা চরিতার্থ করো  ।  

বৃদ্ধ আরব শেখদের পর্যন্ত হার মানিয়ে দাও যারা নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে অর্থের বিনিময়ে নাবালিকা মেয়েদের উপভোগ করার জন্যে বিয়ে করে  । 

তোমাকে ইডিয়ট বলাতে মাইন্ড করেছো ,  "Playboy" বললে নিশ্চয় ঠিক হতো তাই না ? !!

হাইন্সের  চোখ ছানাবড়া । আস্তে আস্তে চলে গেলো । আমিও কেন জানি ওকে এড়িয়ে চলতাম । যদিও আমি জানি ,"পাপকে ঘৃণা করো, পাপীকে নয় " ।

এর পর দু বছর কেটে গেছে । ফিটনেস সেন্টারে ট্রেনিং শেষে  গাড়ির দিকে যাচ্ছি  । 

 হঠাৎ দেখলাম একটি সুন্দরী এশিয়ান মেয়ে কোলে একটি ফুটফুটে বাচ্চা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে   । পাশে একটি সুটকেস  ।

 ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজিতে আমাকে জিজ্ঞেস করলো, "এটা কি ফিটনেস সেন্টার "? 
- হ্যাঁ , আমি কি আপনাকে হেল্প করতে পারি ?

আমি মেয়েটির চোখের দিকে তাকালাম ।  শ্রাবণের  সব মেঘ জড়ো হয়ে চোখের তারায় ঠাঁই নিয়েছে ।  কবিগুরু একে দেখেই বলেছিলেন :
জীবনশেষের শেষজাগরণসম ঝলসিছে মহাবেদনা------- নিমেষে দহিয়া যাহা -কিছু আছে মম তীব্র ভীষণ চেতনা I  

কানে  বাজলো :
-  আমার ছেলে ওর বাবাকে দেখতে চায়  । ওর বাবার নাম হাইন্স   । সে  নাকি এখানে  ট্রেইনার  ।




পুরুষ পতিতা -২ ( শেষ পর্ব ) 


দুবছর পরে সেই মেয়ে তার বাচ্চাকে নিয়ে হাজির হয় জার্মানিতে । আমার ধারণা ছিল হাইন্স ওর পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য ফিলিপাইনি মেয়েটিকে আর নিজের সন্তানকে গ্রহণ করবে । কিন্তু তা হয়নি ।

ধূর্ত শেয়াল হাইন্স চেষ্টায় থাকলো মেয়েটির নামে দুর্নাম ছড়াতে , তাই রাগে-দুঃখে নিজের সম্মান বাঁচাতে মেয়েটি ফিরে গেলো স্বদেশে । 

এই ঘটনার পরে হাইন্সের প্রতি আমার মন বিগড়ে গিয়েছিলো । জিমে দেখা হলে যখন আমার সাথে হ্যান্ডশেক করতো , নিজেকে আমার অপবিত্র মনে হতো । 
মনে হতো ও একটি পুরুষ পতিতার চেয়েও নিকৃষ্ট । চেষ্টা করতাম ওকে এড়িয়ে চলার জন্য । 

হাইন্স ব্যাপারটি বুঝতে পেরে আরো বেশি চেষ্টা করতো আমার কাছে ঘেঁষতে । 
আজকে দুপুরে ওর সাথে আবার দেখা হলো। মুখে আবার সেই পৈশাচিক হাসি । 

বললো, জানো কালকে যাচ্ছি আবার ফিলিপাইনে । 

আমি খুশি হয়ে বললাম , 
-খুব ভালো খবর । তোমার বাচ্চাকে দেখতে যাবে ? 

-না , নতুন একটি মেয়ের সাথে পরিচয় হয়েছে ফেইসবুকে , ওর বয়স আঠারো । 

আমি কিছুটা ব্যঙ্গ করে বললাম : -তোমার বয়স পঞ্চাশ , আগের মেয়েটির বয়স ছিল কুড়ি , এখনকার মেয়েটির বয়স আঠারো । 

তুমি কি আস্তে আস্তে টিনএজারদের পছন্দ করা শুরু করেছো ? 

ও তাচ্ছিল্যের স্বরে বললো , "হুম , এই সব এশিয়ান মেয়েদের আট কি আর আঠারো কি ? টাকার লোভে এরা সবই করে । 

আমি রাগ চেপে রেখে বললাম : 
-তোমরা জার্মানরা দুই গ্রামের মগজ নিয়ে বিশ কিলোগ্রামের মন্তব্য করো ! 

ও একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে চলে গেলো । মনে মনে ভাবলাম , এই বর্বর জার্মানরা আর মানুষ হলো না । এদের এক গর্দভ হিটলার দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে সারা পৃথিবীতে আগুন জ্বালিয়ে ছিলো, লক্ষ লক্ষ লোকের মৃত্যুর কারণ হয়েছিল । 
নাৎসি সবসময় নাৎসিই থেকে যায় । 

আমি জিম থেকে বেরুলাম । গাড়ি চালাচ্ছি । এশিয়ানদের এই অপমানে গা জ্বলে যাচ্ছে । গাড়ির এক্সিলেটারে চাপ দিচ্ছি আর মনে মনে জার্মানদের ধোলাই দিচ্ছি । 

সমস্ত জার্মান জাতটিই কি খারাপ ? 

কখন যে গাড়ির স্পিড পঞ্চাশের জায়গায় একশ তে চলে এসেছে খেয়ালই করিনি । ভুলেও গিয়েছিলাম রাস্তার পাশে ট্রাফিক পুলিশ ক্যামেরা নিয়ে ওত পেতে বসে আছে । 

হঠাৎ উলটো দিকের গাড়িতে বসা এক জার্মান ভদ্রলোক আমাকে দু দুবার লাইট সিগন্যাল দিলেন । জার্মানিতে রাস্তায় কেউ হর্ণ বাজায় না। লাইটের মানে কি বুঝতে বাকি রইলো না । সামনেই ক্যামেরা । প্রচণ্ড শব্দে ব্রেক কষলাম । বড়ো বাঁচা বেঁচে গেছি ওই জার্মান ভদ্রলোকের কল্যাণে । 

আরেকটু হলেই ড্রাইভিং লাইসেন্সটি যেত , সাথে একশো ইউরো জরিমানা । কি দরকার ছিল উনার আমাকে সাহায্য করার ? 

মনে মনে বললাম, “খোদা আমার মনটি বিশাল করে দাও”। সব জার্মানই হাইন্সের মতো নিকৃষ্ট না । 

দশদিন পর আবার হাইন্সের সাথে দেখা জিমে। 

মুখের সবগুলো দাঁত বের করে আবারও সেই লম্পটের হাসি দিয়ে আমাকে বলল :- 

-কোরিয়ানদের সাথে ফুটবলে হারলে কি হবে এবার ফিলিপাইনে গিয়ে জিতে এসেছি। 

-কেন , কি হয়েছে ? 

-ঐ অষ্টাদশীর কথা বলেছিলাম না , মেয়েতো নয় , যেন একটুকরো আগুন। এয়ারপোর্ট থেকে আমাকে আর হোটেলে যেতে দিলো না। নিজের বাসায় টেনে নিয়ে গেল আর সাথে সাথেই বিছানা । 
রুমে মিনি বারও ছিল। বিয়ার থেকে আরম্ভ করে শ্যাম্পেন আর ওয়াইনে ভর্তি। বেশ কিছু টাকা খরচ হয়েছে কিন্তু আনন্দ তো পেয়েছি । 

ওর এসব কথাবার্তা খুব ভালো লাগলো না আমার। চলে এলাম ওর কাছ থেকে । এরপর অনেকদিন ওর সাথে দেখা হয় নি। শুনলাম ও নাকি অসুস্থ । এক মাস পরে জানলাম ও নাকি কাজ ছেড়ে দিয়েছে । 

হঠাৎ একদিন দেখা হলো আমার হাইন্সের সাথে রাস্তায়। হাইন্স বেরিয়ে এলো এইমাত্র এক ডাক্তারের চেম্বার থেকে ।

ডাক্তারের সাইনবোর্ড, “ডাক্তার মুলার--- চর্ম ও যৌন বিশেষজ্ঞ“ । ও আমার চোখ দেখেই বুঝতে পারল আমি কি বলতে চাইছি। 

ফিসফিসিয়ে বলল , হ্যাঁ, আমি এখানেই এসেছিলাম।

 জিজ্ঞেস করলাম: 
-কি হয়েছে তোমার ? 

- ফিলিপাইনের ঐ অষ্টাদশীর কথা মনে আছে ? ও জানো কে ছিল ? রেড এরিয়ার মেয়ে, পতিতা আর কি ! 

আমি বললাম , তোমার কি তাহলে ?!!! 

সেই লাগামহীন যৌন পিপাসু মাথা নিচু করে বলল, হ্যাঁ , এইডস (AIDS) ।  




                              সমাপ্ত

ভালোবাসা বিষয়ক টিপস -১০

love-tips ♥ তুমি পাশে নেই তবুও তোমায় অনুভব করি। তুমি আমার হবে না জানি তবুও তোমার পথ চেয়ে আছি। সপ্ন সত্যি হবে না জানি তবু তোমায় নি...