কাছে আসার গল্প : পূরুষ পতিতা
![]() |
কাছে আসার গল্প : পূরুষ পতিতা |
লেখক তারিক হক
( প্রথম পর্ব )
আমি জার্মানিতে রেগুলার Gym এ যাই । অনেকদিনের অভ্যাস । বিশ্বাস করি, " Sound mind in a sound body"। সেখানেই আমার পরিচয় হাইন্স এর সাথে ।
আমার ট্রেইনার । ওর উদরের পরিধি দেখে প্রথমদিন খুব হেসেছিলাম । ওর বপুর কাছে আমার দেহ তনু মনে হয় । যাহোক হাইন্স খুব করিৎকর্মা । আমি ওকে মোটিভেশন শেখাই, বিনিময়ে ও আমাকে বক্সিং শেখায় ।
হাইন্স সারাক্ষণ হাসে আর মজার মজার জোক করে । এতো সুন্দর করে কথা বলে যে মেয়েরা খুব সহজেই পটে যায় ।
হঠাৎ একদিন আমাকে জিজ্ঞেস করলো :
-ফিলিপাইনে কখনো গিয়েছো ?
আমি বললাম :
-না ।
ও বললো :
-আমি কালকে ওখানে যাচ্ছি বিয়ে করতে । ফিলিপিনি মেয়ে , ফেইসবুকে ভালোবেসে ফেলেছি ।
আমি সবসময় এই ভার্চুয়াল প্রেমের বিরোধী । তবুও বললাম, "All the best".
হাইন্স মুচকি হেসে চলে গেলো । সাতদিন পরে আবার দেখা । মলিন মুখ ।
জিজ্ঞেস করলাম :
-কি খবর হাইন্স ?
- আর বলো না , একদম বাজে মেয়ে । টাকার লোভে জার্মানিতে আসতে চেয়েছিলো, আমার জন্যে নয় ।
আমার মনটি একটু খারাপ হয়ে গেলো । আমি জানি না কার দোষ !
বেশ কয়েক মাস হয়ে গেছে । হঠাৎ হাইন্সের খুব উৎফুল্ল মুখ ।
বললো :
-জানো, আমি তোমাকে এতদিন বলিনি , আমি আবারো ভালোবেসে ফেলেছি ফেইসবুকে । পরশু যাচ্ছি ।
আমি বললাম :
-আবারো ফিলিপাইনে ?
-হুম , তবে এই মেয়েটি খুব ইয়ং । বয়স মাত্র কুড়ি ।
তাহলে তো চমৎকার । তোমার বয়স পঞ্চাশ । মাত্র ত্রিশ বছরের পার্থক্য !
হাইন্স মুচকি হেসে চলে গেলো । পাঁচ দিন পর আবার দেখা । এবার অত্যন্ত ক্রুদ্ধ বদন ।
আমাকে বললো :
-এই এশিয়ান মেয়েরা মেয়ে তো নয় , সবাই দেহ ব্যবসায়ী ।
আমি এক মিনিট রাগ চেপে রেখে জিজ্ঞেস করলাম, "আবার কি হলো "?
ও উত্তর দিলো, "প্রথম দুদিন একসাথে ঘুরলাম , সবরকমেই এনজয় করলাম । তৃতীয় দিন মদ খেয়ে যখন বেডে নিতে চাইলাম , কি তার আপত্তি ।
একটু জোর খাটাতেই বলে কিনা আমি ইডিয়ট ।
আমি বললাম :
-তোমাকে ইডিয়ট বলেছে, সেজন্যে সম্পর্ক কাট করেছো ?
-হ্যাঁ , ফিলিপাইনের কোথাকার এক মেয়ে আমাকে ইডিয়ট বলবে ?
( জার্মানদের এই উন্নাসিকতা আমি চিনি । এরা নিজেকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাত মনে করে । "ইডিয়ট" বলে গালি দিলে ১৫০০ ইউরো জরিমানা দেয়ারও ইতিহাস আছে ।)
আমি রেগে না গিয়ে বললাম : তুমি তো একজন পুরুষ পতিতা ।
তোমাদের জার্মানদের দেখি , সত্তর বছরের কদাকার জার্মান থাইল্যান্ড আর ফিলিপাইনে গিয়ে মেয়েদের টাকা দিয়ে কিনতে চাও । ট্রাভেল এজেন্সীর "সেক্স ট্যুরিজম " এ সাড়া দিয়ে গরিব দেশগুলিতে গিয়ে নিজেদের বিকৃত যৌন কামনা চরিতার্থ করো ।
বৃদ্ধ আরব শেখদের পর্যন্ত হার মানিয়ে দাও যারা নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে অর্থের বিনিময়ে নাবালিকা মেয়েদের উপভোগ করার জন্যে বিয়ে করে ।
তোমাকে ইডিয়ট বলাতে মাইন্ড করেছো , "Playboy" বললে নিশ্চয় ঠিক হতো তাই না ? !!
হাইন্সের চোখ ছানাবড়া । আস্তে আস্তে চলে গেলো । আমিও কেন জানি ওকে এড়িয়ে চলতাম । যদিও আমি জানি ,"পাপকে ঘৃণা করো, পাপীকে নয় " ।
এর পর দু বছর কেটে গেছে । ফিটনেস সেন্টারে ট্রেনিং শেষে গাড়ির দিকে যাচ্ছি ।
হঠাৎ দেখলাম একটি সুন্দরী এশিয়ান মেয়ে কোলে একটি ফুটফুটে বাচ্চা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । পাশে একটি সুটকেস ।
ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজিতে আমাকে জিজ্ঞেস করলো, "এটা কি ফিটনেস সেন্টার "?
- হ্যাঁ , আমি কি আপনাকে হেল্প করতে পারি ?
আমি মেয়েটির চোখের দিকে তাকালাম । শ্রাবণের সব মেঘ জড়ো হয়ে চোখের তারায় ঠাঁই নিয়েছে । কবিগুরু একে দেখেই বলেছিলেন :
জীবনশেষের শেষজাগরণসম ঝলসিছে মহাবেদনা------- নিমেষে দহিয়া যাহা -কিছু আছে মম তীব্র ভীষণ চেতনা I
কানে বাজলো :
- আমার ছেলে ওর বাবাকে দেখতে চায় । ওর বাবার নাম হাইন্স । সে নাকি এখানে ট্রেইনার ।
পুরুষ পতিতা -২ ( শেষ পর্ব )
দুবছর পরে সেই মেয়ে তার বাচ্চাকে নিয়ে হাজির হয় জার্মানিতে । আমার ধারণা ছিল হাইন্স ওর পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য ফিলিপাইনি মেয়েটিকে আর নিজের সন্তানকে গ্রহণ করবে । কিন্তু তা হয়নি ।
ধূর্ত শেয়াল হাইন্স চেষ্টায় থাকলো মেয়েটির নামে দুর্নাম ছড়াতে , তাই রাগে-দুঃখে নিজের সম্মান বাঁচাতে মেয়েটি ফিরে গেলো স্বদেশে ।
এই ঘটনার পরে হাইন্সের প্রতি আমার মন বিগড়ে গিয়েছিলো । জিমে দেখা হলে যখন আমার সাথে হ্যান্ডশেক করতো , নিজেকে আমার অপবিত্র মনে হতো ।
মনে হতো ও একটি পুরুষ পতিতার চেয়েও নিকৃষ্ট । চেষ্টা করতাম ওকে এড়িয়ে চলার জন্য ।
হাইন্স ব্যাপারটি বুঝতে পেরে আরো বেশি চেষ্টা করতো আমার কাছে ঘেঁষতে ।
আজকে দুপুরে ওর সাথে আবার দেখা হলো। মুখে আবার সেই পৈশাচিক হাসি ।
বললো, জানো কালকে যাচ্ছি আবার ফিলিপাইনে ।
আমি খুশি হয়ে বললাম ,
-খুব ভালো খবর । তোমার বাচ্চাকে দেখতে যাবে ?
-না , নতুন একটি মেয়ের সাথে পরিচয় হয়েছে ফেইসবুকে , ওর বয়স আঠারো ।
আমি কিছুটা ব্যঙ্গ করে বললাম : -তোমার বয়স পঞ্চাশ , আগের মেয়েটির বয়স ছিল কুড়ি , এখনকার মেয়েটির বয়স আঠারো ।
তুমি কি আস্তে আস্তে টিনএজারদের পছন্দ করা শুরু করেছো ?
ও তাচ্ছিল্যের স্বরে বললো , "হুম , এই সব এশিয়ান মেয়েদের আট কি আর আঠারো কি ? টাকার লোভে এরা সবই করে ।
আমি রাগ চেপে রেখে বললাম :
-তোমরা জার্মানরা দুই গ্রামের মগজ নিয়ে বিশ কিলোগ্রামের মন্তব্য করো !
ও একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে চলে গেলো । মনে মনে ভাবলাম , এই বর্বর জার্মানরা আর মানুষ হলো না । এদের এক গর্দভ হিটলার দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে সারা পৃথিবীতে আগুন জ্বালিয়ে ছিলো, লক্ষ লক্ষ লোকের মৃত্যুর কারণ হয়েছিল ।
নাৎসি সবসময় নাৎসিই থেকে যায় ।
আমি জিম থেকে বেরুলাম । গাড়ি চালাচ্ছি । এশিয়ানদের এই অপমানে গা জ্বলে যাচ্ছে । গাড়ির এক্সিলেটারে চাপ দিচ্ছি আর মনে মনে জার্মানদের ধোলাই দিচ্ছি ।
সমস্ত জার্মান জাতটিই কি খারাপ ?
কখন যে গাড়ির স্পিড পঞ্চাশের জায়গায় একশ তে চলে এসেছে খেয়ালই করিনি । ভুলেও গিয়েছিলাম রাস্তার পাশে ট্রাফিক পুলিশ ক্যামেরা নিয়ে ওত পেতে বসে আছে ।
হঠাৎ উলটো দিকের গাড়িতে বসা এক জার্মান ভদ্রলোক আমাকে দু দুবার লাইট সিগন্যাল দিলেন । জার্মানিতে রাস্তায় কেউ হর্ণ বাজায় না। লাইটের মানে কি বুঝতে বাকি রইলো না । সামনেই ক্যামেরা । প্রচণ্ড শব্দে ব্রেক কষলাম । বড়ো বাঁচা বেঁচে গেছি ওই জার্মান ভদ্রলোকের কল্যাণে ।
আরেকটু হলেই ড্রাইভিং লাইসেন্সটি যেত , সাথে একশো ইউরো জরিমানা । কি দরকার ছিল উনার আমাকে সাহায্য করার ?
মনে মনে বললাম, “খোদা আমার মনটি বিশাল করে দাও”। সব জার্মানই হাইন্সের মতো নিকৃষ্ট না ।
দশদিন পর আবার হাইন্সের সাথে দেখা জিমে।
মুখের সবগুলো দাঁত বের করে আবারও সেই লম্পটের হাসি দিয়ে আমাকে বলল :-
-কোরিয়ানদের সাথে ফুটবলে হারলে কি হবে এবার ফিলিপাইনে গিয়ে জিতে এসেছি।
-কেন , কি হয়েছে ?
-ঐ অষ্টাদশীর কথা বলেছিলাম না , মেয়েতো নয় , যেন একটুকরো আগুন। এয়ারপোর্ট থেকে আমাকে আর হোটেলে যেতে দিলো না। নিজের বাসায় টেনে নিয়ে গেল আর সাথে সাথেই বিছানা ।
রুমে মিনি বারও ছিল। বিয়ার থেকে আরম্ভ করে শ্যাম্পেন আর ওয়াইনে ভর্তি। বেশ কিছু টাকা খরচ হয়েছে কিন্তু আনন্দ তো পেয়েছি ।
ওর এসব কথাবার্তা খুব ভালো লাগলো না আমার। চলে এলাম ওর কাছ থেকে । এরপর অনেকদিন ওর সাথে দেখা হয় নি। শুনলাম ও নাকি অসুস্থ । এক মাস পরে জানলাম ও নাকি কাজ ছেড়ে দিয়েছে ।
হঠাৎ একদিন দেখা হলো আমার হাইন্সের সাথে রাস্তায়। হাইন্স বেরিয়ে এলো এইমাত্র এক ডাক্তারের চেম্বার থেকে ।
ডাক্তারের সাইনবোর্ড, “ডাক্তার মুলার--- চর্ম ও যৌন বিশেষজ্ঞ“ । ও আমার চোখ দেখেই বুঝতে পারল আমি কি বলতে চাইছি।
ফিসফিসিয়ে বলল , হ্যাঁ, আমি এখানেই এসেছিলাম।
জিজ্ঞেস করলাম:
-কি হয়েছে তোমার ?
- ফিলিপাইনের ঐ অষ্টাদশীর কথা মনে আছে ? ও জানো কে ছিল ? রেড এরিয়ার মেয়ে, পতিতা আর কি !
আমি বললাম , তোমার কি তাহলে ?!!!
সেই লাগামহীন যৌন পিপাসু মাথা নিচু করে বলল, হ্যাঁ , এইডস (AIDS) ।
সমাপ্ত