ভালবাসা মানে বিশ্বাস, ভালোবাসা মানে সাহস। ভালোবাসা মানে ভয় ভেঙে বাধা পেরিয়ে কাছে আসার। আর সেই সব কাছে আসার গল্প নিয়ে সাজানো হয়েছে " কাছে আসার গল্প " ব্লগ সাইটি।☞হাজারো 'কাছে আসার গল্প' শুনতে আমাদের সাথেই থাকুন সব সময়।

Search

Latest update

Banner

28/10/2018

কাছে আসার গল্প : আনরোমান্টিক অবুঝ বর


কাছে আসার গল্প : আনরোমান্টিক অবুঝ বর #লেখাঃ_মৃনাল___

সারাদিন  সারারাত স্বপ্ন দেখতাম আমার একটা রোমান্টিক বর হবে যে আমাকে বুঝবে আমি তাকে বুঝবো আর দেখতেও যেনো খুব হ্যান্ডসাম হয় রাতে ছাদে বসে একসাথে চাঁদ দেখব।  কিন্তু আমার পোড়া কপাল আমার বাবা মা এমন একটা ছেলের সাথে আমার বিয়ে দিয়েছে,  তা বলার কোন ভাষাই আমার নেই। বিয়ের সময় নাক ডেকে ডেকে ঘুমাচ্ছিলো আমার বর আর তার এমন আচরন দেখে বিয়ে বাড়ির লোকেরা তো হাসাহাসি করছে।  তারপর আমি একটা চিমটি কাটলাম আমার বর কে আর তখনই হলো এক অদ্ভুত কান্ড। 
ছোট বাচ্চাদের মতো কান্না শুরু করে দিলো আর বলল সবার সামনে আমি চিমটি কেটেছি তার গায়ে। তখন আমার লজ্জায় মাথা কাটা যাবার মত অবস্থা। কোনোরকমে বিয়ের আয়োজন শেষ হলো।
বাসর ঘরে বসে বসে ভাবছি আর কাঁদছি কার সাথে বিয়ে হলো আমার যে কিনা এখন ও বাচ্চা ছেলের মতো কাঁদে তাই আমি ডিজিশন নিলাম আমার বর কে ডিভোর্স দিবো তাছাড়া আমি আর কোন উপায় দেখতে পাচ্ছি না চোখের সামনে।  এই অবুঝ শিশুর সাথে আমার  পক্ষে সংসার করা পসিবল না।
.... এসব কথা ভাবতে লাগলাম আর ঠিক তখনই আমার বর নাম টা হলো মৃনাল সে এসে হাজির আর আমাকে দেখে বলল....
- কে আপনি?  এখানে কি আপনার? আমার মা কোথায়?  (মৃনাল)
.... আমি মৃনালের মুখে এমন কথা শুনে প্রচন্ড অবাক হয়েছি।  কারন সব ছেলেই জানে যে বিয়ের পর বউ থাকে বাসর রাতে আর এই ছেলে আমাকে বলছে কে আপনি।
- আমি তোমার বিয়ে করা বউ। আর আমিতো তোমার ঘরেই থাকব তাই না বলো?  আর তোমার মা তো তার ঘরে এখন থেকে আমি তোমার সাথেই থাকব!  (আমি।  আর হ্যা আমার নাম হলো তিতির)
..... আমি কথা গুলো বলার পর দেখলাম মৃনাল কান্না করবে এমন অবস্থা আর হ্যা কান্নাটা করেই দিলো এবার।
- এ্যাাাাাাাহহহহহহহহহ হু হু হু।  আমি মায়ের কাছে যাবো এ্যাাাাাা্্ আমি মায়ের কাছে যাবো....?  (মৃনাল)
....মৃনালের কান্না দেখে আমার প্রচন্ড রকম রাগ হচ্ছে  আর কেনই বা হবেনা রাগ বাসর রাতে কেউ বলে আমি মায়ের কাছে যাবো!  আমি রাগ টা সংবরং করে বললাম...
- এই মৃনাল তুমি না অনেক ভালো একটা ছেলে আর ভালো ছেলেরা এভাবে কান্না করেনা বুঝছো?
- না আমি মায়ের কাছে যাবো?  মায়ের কোলে আমি প্রতিদিন ঘুমাই মায়ের কোল ছাড়া আমার ঘুম আসবে না আর মা আমাকে প্রতিদিন গল্প শোনায়।  এ্যাাাাাহহহহহহহহহ।
- আমার বরের মুখে এমন কথা শুনে আমি থ.. ।  এত্তবড় একটা ছেলে যে কিনা এখন ও মায়ের কোলে ঘুমায় আর ছোট বেলায় যেমন ভাবে ছেলেরা  কান্না করে ঠিক তেমন ভাবে কান্না করছে।  ভাবতেই পারছি না এ কার সাথে আমার বিয়ে হলো এর থেকে আমার মৃত্যু ও ভালো ছিলো।
- আচ্ছা শুনো প্লিজ আর কান্না কাটি করোনা আমি তো আছিইই তুমি আসো আমার কোলে মাথা রেখে ঘুমাও আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি আর গল্প শোনাচ্ছি?
- আপনি কে?  আমি কেনো আপনার কোলে ঘুমাবো আমি মায়ের কোলে ঘুমাবো।
.... মৃনালের কথা শুনে আমি আর আমার রাগ আটকে রাখতে পারলাম না একটা ধমক দিয়ে বললাম.....
- চুপ একদম চুপ?  আর একটা কথা বললে সোজা খুন করে ফেলবো তোমায়?  আমি যা বলবো ঠিক তাই করবে নাহলে একদম ভালো হবেনা?
... ও আমার কথা শুনে কান্নার গতি আরো বাড়িয়ে দিলো আর বলতে লাগলো...
- আমি মা কে বলে দিবো আপনি আমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছেন?
- আচ্ছা দিও তোমার মা কে বলে এখন ঘুমাতে আসবে নাকি অন্য কিছু করব?
..... মৃনাল আর কোন কথা না বলে ওর মাথাটা আমার কোলে রেখে আমাকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে গেলো। কি আজব তাই না?
এতবড় একটা ছেলে যে কিনা একটা চাকরি ও করে তার এমন বাচ্চাদের মত  আচরন।  অনেক স্বপ্ন ছিলো আমার বরের সাথে বাসর রাতে গল্প করব কিন্তু তা না আমার কপালে জুটলো বাচ্চা সামলানোর দায়িত্ব।

সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠলাম আর আমার শাশুড়ির সাথে নাস্তা বানালাম।
নাস্তার টেবিলে বসে সবাই একসাথে নাস্তা খাচ্ছি এমন সময় মৃনাল......
- এ্যাাাাাাাাাাাাহহহহহহহহহহ আমার ডিম এ্যাাাা্্্হহহহহহহহ?
- ঐ কি হয়েছে এমন করছিস কেনো?  (মৃনালের মা)
- মা আমার ডিম খেয়েছে এই মেয়েটা এ্যা্াাাাাাাাাহহহহহহ।
- চুপ?  ও তোর বউ হয় আর তোর বউ ই তো খেয়েছে তাতে এমন করার কি আছে।  এখন চুপচাপ খা বলছি?  (মৃনালের মা)
....... আমি ভাবছি এ কি ভুল করলাম রে বাবা সামান্য ডিম টা খেয়েছি তাতেই এমন করছে।  এ বাড়িতে যে আর কি কি হবে তা উপরে  যিনি আছে তিনিই জানেন? তারপর আমি বললাম...
- এই আর কেঁদোনা আমি এখুনি ডিম ভেজে এনে দিচ্ছি?
.... কথাটা বলেই আমি রান্না ঘরে গিয়ে দুইটা ডিম ভেজে নিলাম আর এনে আমার পিচ্ছি বর মৃনাল কে দিলাম।  বেচারা ডিম পেয়ে তো মহা খুশি বলতে গেলে নাচতে নাচতে খেয়ে নিলো সব।
আমার শাশুড়ি বিষয় টা আন্দাজ করতে পেরে আমাকে বললেন....
- মা তিতির তুমি কিছু মনে করোনা ওর ব্যাবহারে ছেলেটা এমনই ই একদম বাচ্চাদের মতো আচরন করে প্লিজ মা কিছু মনে করো না?
- আরে না না মা কি বলছেন এসব আমি কিচ্ছুটি মনে করিনি আর তাছাড়া ও তো আমার স্বামী।
.. আমার মা বাবার উপর খুব রাগ হচ্ছে কারন তারা এই ছেলের এমন কি গুন দেখেছে যে আমার সাথে বিয়ে দিলো।  ভাবতেই পারিনি এমন ছেলের সাথে বিয়ে হবে আমার।

বিকেল বেলা রুমে শুয়ে আছি এমন হঠাৎ আবার ও কান্নার শব্দ আমার কানে আসলো তাই আর ঘরে শুয়ে না থেকে ঘর থেকে বের হয়ে দেখি কান্না টা সে আর কেউ ই করছে না আমার বর মৃনাল ই কান্না করছে আর তার গায়ে কাঁদায় ভর্তি।
- কিরে বাবা তোর এমন অবস্থা হলো কি করে?  (মৃনালের মা)
- মা ঐ যে  মেয়ে গুলা আছে না ওরা আমাকে কাঁদায় ফেলে দিছে হু হু হু এ্যাাাা্াা্হহহহহহহ।  (মৃনাল)
- আচ্ছা হইছে এখন ওয়াশরুম থেকে ফ্রেস হয়ে আয়?
..... তারপর মৃনাল ওয়াশরুম এ গেলো ফ্রেস হতে।  আমার শাশুড়ী বললেন...
- মা তিতির আমার ছেলেটা বড্ড অবুঝ। কারো সাথে তেমন রেগে কথা বলতে পারে না।  আর ওর গায়ে যে কাঁদা গুলো দেখলে সেগুলো কয়েকটা মেয়ের কাজ।  মৃনাল কে মাঝে মাঝে একা পেয়ে এমন করে বাসায় পাঠিয়ে দেয়।  (মৃনালের মা)
.... আমার শাশুড়ির মুখের কথা শুনে আমি থ ।  ভাবছিলাম আমার বর হবে অনেক শক্তিশালি যে একাই অনেক গুলো ছেলেকে ঘায়েল করতে পারবে কিন্তু তা না কয়েকটা মেয়ের হাতে.......  ছি ছি ছি ভাবতে পারছি না এসব।   বড্ড জোর গলায় বলেছিলাম আমার বন্ধু মহলে আমার বর হেব্বি রোমান্টিক হবে আর এই কথা গুলো যদি ওরা শুনতে পারে না জানি কি কি বলবে আমাকে।

এভাবে প্রায় বেশ কিছুদিন কেটে গেলো। আমার বরের চরিত্র ঠিক আগের মতই থেকে গেলো একটু ও বদলায়নি।  আমি খুব বকা বকি করতাম মৃনাল কে কিন্তু আমার উপর ও কিচ্ছু বলতো না।  মাঝে মাঝে অনেক রেগে যেতাম আমি মৃনালের উপর আর তখন ছোট বাচ্চাদের মতো কান্না করতো তখন আমার রাগ আরো বেড়ে যেতো।

তারপরের দিন  মৃনাল অফিস থেকে খুব তারাতারি আসলো আর খুব খুশি খুশি লাগছে দেখে ওকে। তারপর আমাকে একটা খাম দিলো মৃনাল।
- এটা কি?  (আমি)
- খুলে দেখো?
... আমি খাম টা খুলে দেখলাম বেশ কিছু টাকা।  কিছুটা অবাক হলাম আর বলললাম....
- এগুলো তো টাকা আর আমাকে দিচ্ছো কেনো? কোথায় পেলে তুমি টাকা গুলো?
....  মৃনাল আমার কথা শুনে কিছুটা থমকে গেলো কারন এমনিতেই আমাকে খুব ভয় করে।  তারপর ও বলল...
- আসলে এগুলা আমার চাকরীর বেতনের টাকা। আজ কে বেতন দিয়েছে তো তাই।
মা বলেছে এখন থেকে আমার বেতনের সব টাকা তোমার হাতে দিতে প্রথমে মাকে দিয়েছিলাম কিন্তু মা বলল তোমার হাতে দিতে তাই তো দিলাম। আচ্ছা আমি কি কিছু ভুল করলাম?
..... আমি আমার বরের মুখের কথা শুনে কিছুটা অবাক হয়েছি। ছেলেটা বড্ড সহজ সরল মন টা মনে হয় আরো সরল।  আর আমার এই সহজ সরল মনের মানুষের দরকার নেই।  আমি অনিচ্ছা সত্বেও মৃনালের বাসায় আছি  আর আমি মৃনাল কে কিছুদিনের ভিতরেই ডিভোর্স দিবো।  এমন অবুঝ শিশুর দরকার নাই আমার আমি একাই ভালো থাকতে পারব।  আমার তো মাঝে মাঝে ডাউট হয় এই ছেলে চাকরি পেলো কিভাবে।
...আমার শশুর আর শাশুড়ী খুব ভালো মনের মানুষ আমাকে তারা নিজের মেয়ের মতো দেখে।  এমন শাশুড়ী পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার আর এমন স্বামী ও।
আমি টাকা গুলো ড্রয়ারে রেখে দিলাম।
আমি মৃনালকে প্রতিনিয়ত খুব বাজে ধরনের কথা বলতাম। আর সব সময় রেগে থাকতাম ওর উপরে।  একদিন রাতে আমি আমার কোলে ওর মাথা রেখে ঘুমাতে দেইনি তাই  ও অনেক কান্না করেছে আর বলছে
-  আমার তোমার কোল ছাড়া ঘুম আসবে না ঘুমাতে দাও না তোমার কোলে?
.... সেদিন আমি আমার কোলে মাথা রাখতে তো দেই ই নি পরে বিছানা থেকেই নামিয়ে দিয়েছি। তারপর মেঝোতে পরে ছিলো সারারাত।  সেদিনের পর থেকে মৃনাল আর আমার কোলে মাথা রাখতে চায়নি হয়তো ও বুঝে গেছিলো যে আমি রাখতে ও দিবো না।

মৃনাল যখন বাসায় থাকতো তখন আমি ওর কাছ থেকে এরিয়ে থাকার চেস্টা করতাম আর ও আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতো।  একদিন আমাকে ও লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতে লাগছিলো আর তারপর আমি বাথেরুমে যাই কিন্তু ও সেখানেও আমাকে দেখতে গিয়েছিলো তখন আমার গায়ে শুধু মাত্র একটা টাওয়েল ছিলো আর আমি তখন বাথেরুমের ভিতর থেকে বের হয়ে এসে সোজা একটা থাপ্পর মেরে দেই মৃনাল কে। সেদিন খুব বকা বকি করি ওকে আর সেদিন ও খুব কেঁদেছিলো কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো বিয়ের প্রথম প্রথম কিছু হলেই মাকে বলে দিতো কিন্তু এখন আর মা কে বলে না তাই আমিও ইচ্ছে করে এমন করি।

মৃনাল অফিসের কাজে ৭ দিনের জন্য বাইরে গেলো আর তার যাওয়ার আগেই আমি ডিভোর্স পেপার রেডি করে রাখি ও ফিরে আসলেই আমি সাইন করিয়ে মুক্তি নিবো ওর কাছ থেকে।
ও যেদিন চলে গেছিলো তখন আমি খুব মিস করতে লাগলাম আমার অবুঝ বর টাকে। আমার বর বাসায় থাকলে লুকিয়ে লুকিয়ে আমাকে দেখতো,  প্রতিদিন খাবার আনতো আমার জন্য আরো অনেককিছু করতো কিন্তু এরিয়ে যেতাম সব সময়।

....২ দিন পর..

আমি আমার বর টাকে খুব মিস করছি। মিস করছি ওর অবুঝ মুখটাকে।  আমি ওর উপর যখন রেগে কথা বলতাম তখন ও কেমন জানি মুখটা গোমরা করে থাকতো আর তখন আমার খুব মজা লাগতো।  আমি দিনরাত সব সময় মৃনাল কে নিয়ে ভাবতে লাগলাম ওকে ভাবতে ভাবতে আমি ক্লান্ত।  আচ্ছা আমি এতো ভাবছি কেনো ওকে নিয়ে না আমি ওকে ভালোবেসে ফেললাম আবার।  এসব ভাবতে ভাবতে দুইদিন কেটে গেলো।
তারপরের দিন মাঝরাতে কে যেনো আমার ঘরের দরজায় নক করলো আমি দরজা খুলতেই দেখতে পেলাম মৃনাল কে।  আর আমাকে দেখা মাত্রই মৃনাল বলে উঠলো
- শুভ জন্মদিন তিতির।
.. আমি অবাক হলাম ওর কথায়।
-   কি মজা কি মজা আজ আমার বউয়ের জন্মদিন।  (হাত তালি দিয়ে বলতে লাগলো মৃনাল)
..... আমি মৃনালের দিকে তাকিয়ে থাকলাম কিছুক্ষন দেখতে পেলাম ওর মুখটা খুশিতে জলজল করছে আর বলছে আমার বউয়ের জন্মদিন।  আজ যে আমার জন্মদিন সেটা আমিও জানতাম না আর আমি খুব অবাক ই হয়েছি।
তারপর দেখলাম মৃনাল একটা বাক্স বের করলো আমার সামনে আর আমাকে বলল...
- চোখ বন্ধ করো তো?  (মৃনাল)
... আমি কিছু না বলে চোখ টা বন্ধ করলাম। কিচুক্ষন পর বলল...
- নাও এবার চোখ খুলো?  (মৃনাল)
... আমি যেই চোখ খুললাম আর খুব অবাক হলাম।  কারন আমার ঘর টা জোনাকি পোকাতে ভর্তি। আর জোনাকি পোকার আলোতে ঘরটা অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে। আমি আজ অব্দি এমন সারপ্রাইজ কখনো পাইনি আজকে পেলাম।  আমার চোখ থেকে কয়েক ফোটা পানি পড়লো খুশিতে আর এমন করে কেউ ও কোন দিন আমার জন্মদিন উইশ করেনি।
তারপর মৃনাল একটা কেক বের করলো আমি কেক টা দেখে একটু বেশিইই অবাক হয়েছি কারন কেকের উপর একটা আমার মেয়ের ছবি।  আর কেকটা বাজে দেখতে একটু ও সুন্দর না   আমি জিজ্ঞেস করলাম
- এটা কি?
- এটা তোমার জন্মদিনের কেক।
- হ্যা বুঝলাম কিন্তু কেক টা এমন কেনো?
- আসলে আমি নিজে হাতে কেক টা বানিয়েছি তো তাই। আর কেকের উপরে যে মেয়েটাকে দেখতে পাচ্ছো সেটা আমার বউ তিতির। আচ্ছা খুব বাজে হয়েছে কেক টা তাই না।  জানো অনেক কস্ট করে বানিয়েছি?

... মৃনালের কথা শুনে আমি কেঁদেই দিলাম আর কান্না আটকে রাখতে পারলাম না।  কারন আজ আমার জন্মদিনে মৃনাল যে উপহার টা আমাকে দিয়েছে সেটা আমি কখনও ভুলতে পারবো না।  আমি জানি মৃনাল আমাকে ভালোবাসে আর তাই কেক টা নিজে হাতে বানিয়েছে যেনো আমি খুশি হই।  আমার চোখ থেকে খুব পানি পরছে ঘোলাটে দেখতে পাচ্ছি আমি।
আমার কান্না দেখে মৃনাল বলল....
- ও বউ তুমি কাঁদছো কেনো?  ও বউ আমি জানতাম না তোমার জোনাকি পোকা পছন্দ না।  আর আমার  বানানো কেক টাও না। প্লিজ কেঁদোনা?

... আমি কেঁদেই চলেছি ওর কথা শুনে।  ও আবার বলে উঠলো...
- ও বউ তুমি প্লিজ কেঁদোনা। আমি জানতাম না তো এমন করলে তোমার মন খারাপ হবে।  আমি ভাবছিলাম তুমি এসব দেখলে খুশি হবে কিন্তু তুমি তো পছন্দ ই করলা না। ও বউ আমাকে মা যে খুব বকা দিবে জানতে পারলে।

.... আমি কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললাম...
- কেনো বকা দিবে?
- মা বলেছে বউ কে খুব ভালোবাসতে।  কখন ও যেনো বউকে কস্ট না দেইই আর বলেছে ভুল করেও যেনো কখনও না কাঁদাই।
..... আমি এসব কথা শুনে আরো কাঁদতে লাগলাম।  মৃনাল ভাবছে আমি কস্ট পেয়ে কান্না করছি  জোনাকি পোকা কেক এগুলো আমার পছন্দ হয়নি।  কিন্তু আমি জানি এগুলো আমার কতটা পছন্দ হয়েছে আমার যে জোনাকি পোকা খুব পছন্দ। আমি খুশিতে কান্না করছি আর মৃনালের দিকে তাকিয়ে আছি।
হঠাৎ লক্ষ্য করলাম মৃনালের হাতে রক্ত লেগে আছে আর একটু জায়গা কেটে ও গেছে আমি বললাম...
- তোমার হাত কাটলো কিভাবে?
.... আমার কথা শুনে উওর দিলো...
- আসোলে রাতের আধারে জোনাকি পোকা গুলো ধরতে গিয়ে একটু পরে গিয়েছিলাম তাই হাত টা কেটেছে।

আমার নিজের উপর নিজে খুব ঘৃনা হচ্ছে।  নিজেকে খুব বড় অপরাধী মনে হচ্ছে কারন এতোদিন ধরে  আমি যে অপমান থাপ্পর অত্যাচার চালিয়েছি  মৃনালের উপর তা কখনো ক্ষমার না।  আমি ভেবেছি আমার বর আনরোমান্টিক তাই অনেক বকা দিয়েছি।  কিন্তু আজ বুঝতে পারছি আমার বর আনরোমান্টিক না অনেক বেশি রোমান্টিক কারন রোমান্টিক না হলে কেউ গায়ের রক্ত ঝরিয়ে জোনাকি পোকা আনতো না।  আমাকে আমার জন্মদিনে এভাবে উইশ করতো না নিজে হাতে কেক বানাতো না আর কেকের উপর আমার ছবি আঁকতো না কখনও না কোনদিনই না।

আমি আর একটু ও দেড়ি না করে মৃনালের বুকের উপর আছড়ে পরলাম।  আর কান্না শুরু করে দিলাম।  খুব শক্ত করে জরিয়ে ধরেছি মৃনালকে।
- ও বউ তুমি কাঁদছো কেনো?  (মৃনাল)
- I love you ( আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম)
- কান্না থামাও বউ?
.... আমি ওর মুখে বউ ডাক শুনে আরো কাঁদতে লাগলাম। এতো সুন্দর করে কেউ বউ ডাকতে পারে জানা ছিলো না।
আমি মনে মনে বললাম এ আমি কাকে ডিভোর্স দিতে চেয়েছিলাম। যে আমাকে এত্ত ভালোবাসে তাকে। লাগবে না আমার রোমান্টিক বর আমার মৃনাল হলেই হবে।
কখন ও আর মৃনাল কে কস্ট দিবো না।

মৃনাল আমাকে ওর বুক থেকে সরিয়ে আমার চোখের পানি ওর হাত দিয়ে মুছে দিয়ে বলল
- কেক কাটবে না?
.. আমি মাথাটা নারিয়ে হ্যা সূচক জবাব দিলাম।
তারপর কেক কেটে দুজনে মিলে খেলাম। কিন্তু আমার কান্না বন্ধ হচ্ছে না আমি কেঁদেই চলেছি মৃনাল কে জরিয়ে ধরে।
মৃনাল ও আমাকে জরিয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বলল...
- আমাকে আর বকা দিবে না কিন্তু?
আমি ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে গালে, কপালে,  অনেক গুলো চুমু খেলাম আর তারপর জরিয়ে ধরে বললাম
- কখনই আর বকা দিবো না সোনা।
i love you অবুঝ বর....



..... সমাপ্ত.....



ভালোবাসা বিষয়ক টিপস -১০

love-tips ♥ তুমি পাশে নেই তবুও তোমায় অনুভব করি। তুমি আমার হবে না জানি তবুও তোমার পথ চেয়ে আছি। সপ্ন সত্যি হবে না জানি তবু তোমায় নি...