ভালবাসা মানে বিশ্বাস, ভালোবাসা মানে সাহস। ভালোবাসা মানে ভয় ভেঙে বাধা পেরিয়ে কাছে আসার। আর সেই সব কাছে আসার গল্প নিয়ে সাজানো হয়েছে " কাছে আসার গল্প " ব্লগ সাইটি।☞হাজারো 'কাছে আসার গল্প' শুনতে আমাদের সাথেই থাকুন সব সময়।

Search

Latest update

Banner

28/10/2018

October 28, 2018

কাছে আসার গল্প : আনরোমান্টিক অবুঝ বর


কাছে আসার গল্প : আনরোমান্টিক অবুঝ বর #লেখাঃ_মৃনাল___

সারাদিন  সারারাত স্বপ্ন দেখতাম আমার একটা রোমান্টিক বর হবে যে আমাকে বুঝবে আমি তাকে বুঝবো আর দেখতেও যেনো খুব হ্যান্ডসাম হয় রাতে ছাদে বসে একসাথে চাঁদ দেখব।  কিন্তু আমার পোড়া কপাল আমার বাবা মা এমন একটা ছেলের সাথে আমার বিয়ে দিয়েছে,  তা বলার কোন ভাষাই আমার নেই। বিয়ের সময় নাক ডেকে ডেকে ঘুমাচ্ছিলো আমার বর আর তার এমন আচরন দেখে বিয়ে বাড়ির লোকেরা তো হাসাহাসি করছে।  তারপর আমি একটা চিমটি কাটলাম আমার বর কে আর তখনই হলো এক অদ্ভুত কান্ড। 
ছোট বাচ্চাদের মতো কান্না শুরু করে দিলো আর বলল সবার সামনে আমি চিমটি কেটেছি তার গায়ে। তখন আমার লজ্জায় মাথা কাটা যাবার মত অবস্থা। কোনোরকমে বিয়ের আয়োজন শেষ হলো।
বাসর ঘরে বসে বসে ভাবছি আর কাঁদছি কার সাথে বিয়ে হলো আমার যে কিনা এখন ও বাচ্চা ছেলের মতো কাঁদে তাই আমি ডিজিশন নিলাম আমার বর কে ডিভোর্স দিবো তাছাড়া আমি আর কোন উপায় দেখতে পাচ্ছি না চোখের সামনে।  এই অবুঝ শিশুর সাথে আমার  পক্ষে সংসার করা পসিবল না।
.... এসব কথা ভাবতে লাগলাম আর ঠিক তখনই আমার বর নাম টা হলো মৃনাল সে এসে হাজির আর আমাকে দেখে বলল....
- কে আপনি?  এখানে কি আপনার? আমার মা কোথায়?  (মৃনাল)
.... আমি মৃনালের মুখে এমন কথা শুনে প্রচন্ড অবাক হয়েছি।  কারন সব ছেলেই জানে যে বিয়ের পর বউ থাকে বাসর রাতে আর এই ছেলে আমাকে বলছে কে আপনি।
- আমি তোমার বিয়ে করা বউ। আর আমিতো তোমার ঘরেই থাকব তাই না বলো?  আর তোমার মা তো তার ঘরে এখন থেকে আমি তোমার সাথেই থাকব!  (আমি।  আর হ্যা আমার নাম হলো তিতির)
..... আমি কথা গুলো বলার পর দেখলাম মৃনাল কান্না করবে এমন অবস্থা আর হ্যা কান্নাটা করেই দিলো এবার।
- এ্যাাাাাাাহহহহহহহহহ হু হু হু।  আমি মায়ের কাছে যাবো এ্যাাাাাা্্ আমি মায়ের কাছে যাবো....?  (মৃনাল)
....মৃনালের কান্না দেখে আমার প্রচন্ড রকম রাগ হচ্ছে  আর কেনই বা হবেনা রাগ বাসর রাতে কেউ বলে আমি মায়ের কাছে যাবো!  আমি রাগ টা সংবরং করে বললাম...
- এই মৃনাল তুমি না অনেক ভালো একটা ছেলে আর ভালো ছেলেরা এভাবে কান্না করেনা বুঝছো?
- না আমি মায়ের কাছে যাবো?  মায়ের কোলে আমি প্রতিদিন ঘুমাই মায়ের কোল ছাড়া আমার ঘুম আসবে না আর মা আমাকে প্রতিদিন গল্প শোনায়।  এ্যাাাাাহহহহহহহহহ।
- আমার বরের মুখে এমন কথা শুনে আমি থ.. ।  এত্তবড় একটা ছেলে যে কিনা এখন ও মায়ের কোলে ঘুমায় আর ছোট বেলায় যেমন ভাবে ছেলেরা  কান্না করে ঠিক তেমন ভাবে কান্না করছে।  ভাবতেই পারছি না এ কার সাথে আমার বিয়ে হলো এর থেকে আমার মৃত্যু ও ভালো ছিলো।
- আচ্ছা শুনো প্লিজ আর কান্না কাটি করোনা আমি তো আছিইই তুমি আসো আমার কোলে মাথা রেখে ঘুমাও আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি আর গল্প শোনাচ্ছি?
- আপনি কে?  আমি কেনো আপনার কোলে ঘুমাবো আমি মায়ের কোলে ঘুমাবো।
.... মৃনালের কথা শুনে আমি আর আমার রাগ আটকে রাখতে পারলাম না একটা ধমক দিয়ে বললাম.....
- চুপ একদম চুপ?  আর একটা কথা বললে সোজা খুন করে ফেলবো তোমায়?  আমি যা বলবো ঠিক তাই করবে নাহলে একদম ভালো হবেনা?
... ও আমার কথা শুনে কান্নার গতি আরো বাড়িয়ে দিলো আর বলতে লাগলো...
- আমি মা কে বলে দিবো আপনি আমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছেন?
- আচ্ছা দিও তোমার মা কে বলে এখন ঘুমাতে আসবে নাকি অন্য কিছু করব?
..... মৃনাল আর কোন কথা না বলে ওর মাথাটা আমার কোলে রেখে আমাকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে গেলো। কি আজব তাই না?
এতবড় একটা ছেলে যে কিনা একটা চাকরি ও করে তার এমন বাচ্চাদের মত  আচরন।  অনেক স্বপ্ন ছিলো আমার বরের সাথে বাসর রাতে গল্প করব কিন্তু তা না আমার কপালে জুটলো বাচ্চা সামলানোর দায়িত্ব।

সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠলাম আর আমার শাশুড়ির সাথে নাস্তা বানালাম।
নাস্তার টেবিলে বসে সবাই একসাথে নাস্তা খাচ্ছি এমন সময় মৃনাল......
- এ্যাাাাাাাাাাাাহহহহহহহহহহ আমার ডিম এ্যাাাা্্্হহহহহহহহ?
- ঐ কি হয়েছে এমন করছিস কেনো?  (মৃনালের মা)
- মা আমার ডিম খেয়েছে এই মেয়েটা এ্যা্াাাাাাাাাহহহহহহ।
- চুপ?  ও তোর বউ হয় আর তোর বউ ই তো খেয়েছে তাতে এমন করার কি আছে।  এখন চুপচাপ খা বলছি?  (মৃনালের মা)
....... আমি ভাবছি এ কি ভুল করলাম রে বাবা সামান্য ডিম টা খেয়েছি তাতেই এমন করছে।  এ বাড়িতে যে আর কি কি হবে তা উপরে  যিনি আছে তিনিই জানেন? তারপর আমি বললাম...
- এই আর কেঁদোনা আমি এখুনি ডিম ভেজে এনে দিচ্ছি?
.... কথাটা বলেই আমি রান্না ঘরে গিয়ে দুইটা ডিম ভেজে নিলাম আর এনে আমার পিচ্ছি বর মৃনাল কে দিলাম।  বেচারা ডিম পেয়ে তো মহা খুশি বলতে গেলে নাচতে নাচতে খেয়ে নিলো সব।
আমার শাশুড়ি বিষয় টা আন্দাজ করতে পেরে আমাকে বললেন....
- মা তিতির তুমি কিছু মনে করোনা ওর ব্যাবহারে ছেলেটা এমনই ই একদম বাচ্চাদের মতো আচরন করে প্লিজ মা কিছু মনে করো না?
- আরে না না মা কি বলছেন এসব আমি কিচ্ছুটি মনে করিনি আর তাছাড়া ও তো আমার স্বামী।
.. আমার মা বাবার উপর খুব রাগ হচ্ছে কারন তারা এই ছেলের এমন কি গুন দেখেছে যে আমার সাথে বিয়ে দিলো।  ভাবতেই পারিনি এমন ছেলের সাথে বিয়ে হবে আমার।

বিকেল বেলা রুমে শুয়ে আছি এমন হঠাৎ আবার ও কান্নার শব্দ আমার কানে আসলো তাই আর ঘরে শুয়ে না থেকে ঘর থেকে বের হয়ে দেখি কান্না টা সে আর কেউ ই করছে না আমার বর মৃনাল ই কান্না করছে আর তার গায়ে কাঁদায় ভর্তি।
- কিরে বাবা তোর এমন অবস্থা হলো কি করে?  (মৃনালের মা)
- মা ঐ যে  মেয়ে গুলা আছে না ওরা আমাকে কাঁদায় ফেলে দিছে হু হু হু এ্যাাাা্াা্হহহহহহহ।  (মৃনাল)
- আচ্ছা হইছে এখন ওয়াশরুম থেকে ফ্রেস হয়ে আয়?
..... তারপর মৃনাল ওয়াশরুম এ গেলো ফ্রেস হতে।  আমার শাশুড়ী বললেন...
- মা তিতির আমার ছেলেটা বড্ড অবুঝ। কারো সাথে তেমন রেগে কথা বলতে পারে না।  আর ওর গায়ে যে কাঁদা গুলো দেখলে সেগুলো কয়েকটা মেয়ের কাজ।  মৃনাল কে মাঝে মাঝে একা পেয়ে এমন করে বাসায় পাঠিয়ে দেয়।  (মৃনালের মা)
.... আমার শাশুড়ির মুখের কথা শুনে আমি থ ।  ভাবছিলাম আমার বর হবে অনেক শক্তিশালি যে একাই অনেক গুলো ছেলেকে ঘায়েল করতে পারবে কিন্তু তা না কয়েকটা মেয়ের হাতে.......  ছি ছি ছি ভাবতে পারছি না এসব।   বড্ড জোর গলায় বলেছিলাম আমার বন্ধু মহলে আমার বর হেব্বি রোমান্টিক হবে আর এই কথা গুলো যদি ওরা শুনতে পারে না জানি কি কি বলবে আমাকে।

এভাবে প্রায় বেশ কিছুদিন কেটে গেলো। আমার বরের চরিত্র ঠিক আগের মতই থেকে গেলো একটু ও বদলায়নি।  আমি খুব বকা বকি করতাম মৃনাল কে কিন্তু আমার উপর ও কিচ্ছু বলতো না।  মাঝে মাঝে অনেক রেগে যেতাম আমি মৃনালের উপর আর তখন ছোট বাচ্চাদের মতো কান্না করতো তখন আমার রাগ আরো বেড়ে যেতো।

তারপরের দিন  মৃনাল অফিস থেকে খুব তারাতারি আসলো আর খুব খুশি খুশি লাগছে দেখে ওকে। তারপর আমাকে একটা খাম দিলো মৃনাল।
- এটা কি?  (আমি)
- খুলে দেখো?
... আমি খাম টা খুলে দেখলাম বেশ কিছু টাকা।  কিছুটা অবাক হলাম আর বলললাম....
- এগুলো তো টাকা আর আমাকে দিচ্ছো কেনো? কোথায় পেলে তুমি টাকা গুলো?
....  মৃনাল আমার কথা শুনে কিছুটা থমকে গেলো কারন এমনিতেই আমাকে খুব ভয় করে।  তারপর ও বলল...
- আসলে এগুলা আমার চাকরীর বেতনের টাকা। আজ কে বেতন দিয়েছে তো তাই।
মা বলেছে এখন থেকে আমার বেতনের সব টাকা তোমার হাতে দিতে প্রথমে মাকে দিয়েছিলাম কিন্তু মা বলল তোমার হাতে দিতে তাই তো দিলাম। আচ্ছা আমি কি কিছু ভুল করলাম?
..... আমি আমার বরের মুখের কথা শুনে কিছুটা অবাক হয়েছি। ছেলেটা বড্ড সহজ সরল মন টা মনে হয় আরো সরল।  আর আমার এই সহজ সরল মনের মানুষের দরকার নেই।  আমি অনিচ্ছা সত্বেও মৃনালের বাসায় আছি  আর আমি মৃনাল কে কিছুদিনের ভিতরেই ডিভোর্স দিবো।  এমন অবুঝ শিশুর দরকার নাই আমার আমি একাই ভালো থাকতে পারব।  আমার তো মাঝে মাঝে ডাউট হয় এই ছেলে চাকরি পেলো কিভাবে।
...আমার শশুর আর শাশুড়ী খুব ভালো মনের মানুষ আমাকে তারা নিজের মেয়ের মতো দেখে।  এমন শাশুড়ী পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার আর এমন স্বামী ও।
আমি টাকা গুলো ড্রয়ারে রেখে দিলাম।
আমি মৃনালকে প্রতিনিয়ত খুব বাজে ধরনের কথা বলতাম। আর সব সময় রেগে থাকতাম ওর উপরে।  একদিন রাতে আমি আমার কোলে ওর মাথা রেখে ঘুমাতে দেইনি তাই  ও অনেক কান্না করেছে আর বলছে
-  আমার তোমার কোল ছাড়া ঘুম আসবে না ঘুমাতে দাও না তোমার কোলে?
.... সেদিন আমি আমার কোলে মাথা রাখতে তো দেই ই নি পরে বিছানা থেকেই নামিয়ে দিয়েছি। তারপর মেঝোতে পরে ছিলো সারারাত।  সেদিনের পর থেকে মৃনাল আর আমার কোলে মাথা রাখতে চায়নি হয়তো ও বুঝে গেছিলো যে আমি রাখতে ও দিবো না।

মৃনাল যখন বাসায় থাকতো তখন আমি ওর কাছ থেকে এরিয়ে থাকার চেস্টা করতাম আর ও আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতো।  একদিন আমাকে ও লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতে লাগছিলো আর তারপর আমি বাথেরুমে যাই কিন্তু ও সেখানেও আমাকে দেখতে গিয়েছিলো তখন আমার গায়ে শুধু মাত্র একটা টাওয়েল ছিলো আর আমি তখন বাথেরুমের ভিতর থেকে বের হয়ে এসে সোজা একটা থাপ্পর মেরে দেই মৃনাল কে। সেদিন খুব বকা বকি করি ওকে আর সেদিন ও খুব কেঁদেছিলো কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো বিয়ের প্রথম প্রথম কিছু হলেই মাকে বলে দিতো কিন্তু এখন আর মা কে বলে না তাই আমিও ইচ্ছে করে এমন করি।

মৃনাল অফিসের কাজে ৭ দিনের জন্য বাইরে গেলো আর তার যাওয়ার আগেই আমি ডিভোর্স পেপার রেডি করে রাখি ও ফিরে আসলেই আমি সাইন করিয়ে মুক্তি নিবো ওর কাছ থেকে।
ও যেদিন চলে গেছিলো তখন আমি খুব মিস করতে লাগলাম আমার অবুঝ বর টাকে। আমার বর বাসায় থাকলে লুকিয়ে লুকিয়ে আমাকে দেখতো,  প্রতিদিন খাবার আনতো আমার জন্য আরো অনেককিছু করতো কিন্তু এরিয়ে যেতাম সব সময়।

....২ দিন পর..

আমি আমার বর টাকে খুব মিস করছি। মিস করছি ওর অবুঝ মুখটাকে।  আমি ওর উপর যখন রেগে কথা বলতাম তখন ও কেমন জানি মুখটা গোমরা করে থাকতো আর তখন আমার খুব মজা লাগতো।  আমি দিনরাত সব সময় মৃনাল কে নিয়ে ভাবতে লাগলাম ওকে ভাবতে ভাবতে আমি ক্লান্ত।  আচ্ছা আমি এতো ভাবছি কেনো ওকে নিয়ে না আমি ওকে ভালোবেসে ফেললাম আবার।  এসব ভাবতে ভাবতে দুইদিন কেটে গেলো।
তারপরের দিন মাঝরাতে কে যেনো আমার ঘরের দরজায় নক করলো আমি দরজা খুলতেই দেখতে পেলাম মৃনাল কে।  আর আমাকে দেখা মাত্রই মৃনাল বলে উঠলো
- শুভ জন্মদিন তিতির।
.. আমি অবাক হলাম ওর কথায়।
-   কি মজা কি মজা আজ আমার বউয়ের জন্মদিন।  (হাত তালি দিয়ে বলতে লাগলো মৃনাল)
..... আমি মৃনালের দিকে তাকিয়ে থাকলাম কিছুক্ষন দেখতে পেলাম ওর মুখটা খুশিতে জলজল করছে আর বলছে আমার বউয়ের জন্মদিন।  আজ যে আমার জন্মদিন সেটা আমিও জানতাম না আর আমি খুব অবাক ই হয়েছি।
তারপর দেখলাম মৃনাল একটা বাক্স বের করলো আমার সামনে আর আমাকে বলল...
- চোখ বন্ধ করো তো?  (মৃনাল)
... আমি কিছু না বলে চোখ টা বন্ধ করলাম। কিচুক্ষন পর বলল...
- নাও এবার চোখ খুলো?  (মৃনাল)
... আমি যেই চোখ খুললাম আর খুব অবাক হলাম।  কারন আমার ঘর টা জোনাকি পোকাতে ভর্তি। আর জোনাকি পোকার আলোতে ঘরটা অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে। আমি আজ অব্দি এমন সারপ্রাইজ কখনো পাইনি আজকে পেলাম।  আমার চোখ থেকে কয়েক ফোটা পানি পড়লো খুশিতে আর এমন করে কেউ ও কোন দিন আমার জন্মদিন উইশ করেনি।
তারপর মৃনাল একটা কেক বের করলো আমি কেক টা দেখে একটু বেশিইই অবাক হয়েছি কারন কেকের উপর একটা আমার মেয়ের ছবি।  আর কেকটা বাজে দেখতে একটু ও সুন্দর না   আমি জিজ্ঞেস করলাম
- এটা কি?
- এটা তোমার জন্মদিনের কেক।
- হ্যা বুঝলাম কিন্তু কেক টা এমন কেনো?
- আসলে আমি নিজে হাতে কেক টা বানিয়েছি তো তাই। আর কেকের উপরে যে মেয়েটাকে দেখতে পাচ্ছো সেটা আমার বউ তিতির। আচ্ছা খুব বাজে হয়েছে কেক টা তাই না।  জানো অনেক কস্ট করে বানিয়েছি?

... মৃনালের কথা শুনে আমি কেঁদেই দিলাম আর কান্না আটকে রাখতে পারলাম না।  কারন আজ আমার জন্মদিনে মৃনাল যে উপহার টা আমাকে দিয়েছে সেটা আমি কখনও ভুলতে পারবো না।  আমি জানি মৃনাল আমাকে ভালোবাসে আর তাই কেক টা নিজে হাতে বানিয়েছে যেনো আমি খুশি হই।  আমার চোখ থেকে খুব পানি পরছে ঘোলাটে দেখতে পাচ্ছি আমি।
আমার কান্না দেখে মৃনাল বলল....
- ও বউ তুমি কাঁদছো কেনো?  ও বউ আমি জানতাম না তোমার জোনাকি পোকা পছন্দ না।  আর আমার  বানানো কেক টাও না। প্লিজ কেঁদোনা?

... আমি কেঁদেই চলেছি ওর কথা শুনে।  ও আবার বলে উঠলো...
- ও বউ তুমি প্লিজ কেঁদোনা। আমি জানতাম না তো এমন করলে তোমার মন খারাপ হবে।  আমি ভাবছিলাম তুমি এসব দেখলে খুশি হবে কিন্তু তুমি তো পছন্দ ই করলা না। ও বউ আমাকে মা যে খুব বকা দিবে জানতে পারলে।

.... আমি কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললাম...
- কেনো বকা দিবে?
- মা বলেছে বউ কে খুব ভালোবাসতে।  কখন ও যেনো বউকে কস্ট না দেইই আর বলেছে ভুল করেও যেনো কখনও না কাঁদাই।
..... আমি এসব কথা শুনে আরো কাঁদতে লাগলাম।  মৃনাল ভাবছে আমি কস্ট পেয়ে কান্না করছি  জোনাকি পোকা কেক এগুলো আমার পছন্দ হয়নি।  কিন্তু আমি জানি এগুলো আমার কতটা পছন্দ হয়েছে আমার যে জোনাকি পোকা খুব পছন্দ। আমি খুশিতে কান্না করছি আর মৃনালের দিকে তাকিয়ে আছি।
হঠাৎ লক্ষ্য করলাম মৃনালের হাতে রক্ত লেগে আছে আর একটু জায়গা কেটে ও গেছে আমি বললাম...
- তোমার হাত কাটলো কিভাবে?
.... আমার কথা শুনে উওর দিলো...
- আসোলে রাতের আধারে জোনাকি পোকা গুলো ধরতে গিয়ে একটু পরে গিয়েছিলাম তাই হাত টা কেটেছে।

আমার নিজের উপর নিজে খুব ঘৃনা হচ্ছে।  নিজেকে খুব বড় অপরাধী মনে হচ্ছে কারন এতোদিন ধরে  আমি যে অপমান থাপ্পর অত্যাচার চালিয়েছি  মৃনালের উপর তা কখনো ক্ষমার না।  আমি ভেবেছি আমার বর আনরোমান্টিক তাই অনেক বকা দিয়েছি।  কিন্তু আজ বুঝতে পারছি আমার বর আনরোমান্টিক না অনেক বেশি রোমান্টিক কারন রোমান্টিক না হলে কেউ গায়ের রক্ত ঝরিয়ে জোনাকি পোকা আনতো না।  আমাকে আমার জন্মদিনে এভাবে উইশ করতো না নিজে হাতে কেক বানাতো না আর কেকের উপর আমার ছবি আঁকতো না কখনও না কোনদিনই না।

আমি আর একটু ও দেড়ি না করে মৃনালের বুকের উপর আছড়ে পরলাম।  আর কান্না শুরু করে দিলাম।  খুব শক্ত করে জরিয়ে ধরেছি মৃনালকে।
- ও বউ তুমি কাঁদছো কেনো?  (মৃনাল)
- I love you ( আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম)
- কান্না থামাও বউ?
.... আমি ওর মুখে বউ ডাক শুনে আরো কাঁদতে লাগলাম। এতো সুন্দর করে কেউ বউ ডাকতে পারে জানা ছিলো না।
আমি মনে মনে বললাম এ আমি কাকে ডিভোর্স দিতে চেয়েছিলাম। যে আমাকে এত্ত ভালোবাসে তাকে। লাগবে না আমার রোমান্টিক বর আমার মৃনাল হলেই হবে।
কখন ও আর মৃনাল কে কস্ট দিবো না।

মৃনাল আমাকে ওর বুক থেকে সরিয়ে আমার চোখের পানি ওর হাত দিয়ে মুছে দিয়ে বলল
- কেক কাটবে না?
.. আমি মাথাটা নারিয়ে হ্যা সূচক জবাব দিলাম।
তারপর কেক কেটে দুজনে মিলে খেলাম। কিন্তু আমার কান্না বন্ধ হচ্ছে না আমি কেঁদেই চলেছি মৃনাল কে জরিয়ে ধরে।
মৃনাল ও আমাকে জরিয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বলল...
- আমাকে আর বকা দিবে না কিন্তু?
আমি ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে গালে, কপালে,  অনেক গুলো চুমু খেলাম আর তারপর জরিয়ে ধরে বললাম
- কখনই আর বকা দিবো না সোনা।
i love you অবুঝ বর....



..... সমাপ্ত.....



22/10/2018

October 22, 2018

বাস্তব জীবনের গল্প : মোবাইলে প্রেম



কাছে আসার গল্প (আসামের বাস্তব ঘটনা)
মোবাইলে কথা বলে 'কোকিল কণ্ঠী' প্রেমিকার প্রেমে হাবুডুবু খেয়েছিল এই কিশোর, তারপর...
কিশোরের কপালে জুটল মায়ের থেকেও বয়সে বড় বউ।

ফোনটা লেগে গিয়েছিল ভুল নম্বরে। অপর প্রান্তে যিনি ফোনটা ধরেছিলেন, তাঁর গলার স্বরটা ভালো লেগে গিয়েছিল বছর পনেরোর কিশোরের। এরপর কথা হতে থাকে দুদিন পর পর, ধীরে বাড়তে থাকে কথা বলার সময়। ফেসবুক থেকে ম্যাসেঞ্জার, ধীরে ধীরে হোয়াটসঅ্যাপে গান, অন্যান্য তথ্য আদানপ্রদান শুরু হয়। ফোনে অপরপ্রান্তে মিষ্টভাষী মহিলা কন্ঠের প্রেমে পড়ে যায় কিশোর। মহিলাও তাতে রাজি। তবে প্রেমের প্রস্তাব নয়, বাড়িতে এসে সরাসরি অভিভাবককে দিতে হবে বিয়ের প্রস্তাব- দেখা করার একটাই শর্ত দিয়েছিলেন ওই সুকন্ঠী। প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া কিশোর তখন তাতেই রাজি হয়ে যায়।

মোবাইলে মাস খানেক চুটিয়ে প্রেমের পর ‘তাঁর’ সঙ্গে দেখা করতে যায় সে। আর দেখা করতে গিয়েই বিপত্তি ! যেন মাথায় বাজ ভেঙে পড়ল অসমের গোয়ালপাড়ার শিমলিতোলার হেপচাপাড়া গ্রামের ১৫ বছরের কিশোরের।

বরপেটা জেলার সুখারচর গ্রামে প্রেমিকার বাড়িতে পৌঁছতেই সে পায় উষ্ণ অভ্যর্থনা। জমিয়ে হয় পেটপুজোও। কিন্তু ততক্ষণেও প্রেমিকার দেখা পায়নি সে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথার বলার ফাঁকে দুরুদুরু কিশোরের চোখ খুঁজছিল ‘তাঁকেই’। অতঃপর এক হাত ঘোমটা টেনে প্রেমিকা দেখা দিলেন। কিন্তু তবুও মুখ দেখতে পায়নি কিশোর। ঘোমটা সরাতেই চক্ষু চড়কগাছ! প্রথমে তো বুঝতেই পারেনি, ‘ইনি প্রেমিকা না প্রেমিকার মা!’ ভুল শুধরে যায় কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই। আরে এ তো ৬০ বছরের এক বৃদ্ধা! এরই সঙ্গে এতদিন কথা বলেছে সে, বিশ্বাসই করতে পারছিল না ওই কিশোর। পালিয়ে আসার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু পারেনি।

প্রেমিকার পরিবার ধরেবেঁধে বিয়ে দিয়ে দেয় তাদের। মায়ের থেকেও বয়সে বড় মহিলাকে বউ করে বাড়িতে আনে এই কিশোর। কিন্তু পরিবার তো মানতে নারাজ। আর সেটাই তো স্বাভাবিক। জানা যায়, ওই মহিলার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে কয়েক বছর আগেই। তারপরই পরিবারের তরফে দ্বিতীয়বার বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছিল।

সুখারচর গ্রামের টালির চালের ওই বাড়িতে এখন তিল ধারণের জায়গা নেই। আশেপাশের গ্রাম থেকেও মানুষ আসছেন নতুন বউকে দেখতে। লজ্জায় মুখ লুকোচ্ছে কিশোর। এই বিয়ে কোনওভাবেই মেনে নেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে কিশোরের পরিবার। স্থানীয় থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তদন্তে পুলিস। কিশোরের বয়স পনেরো বছর হওয়ায় আইনত সুবিধা পাবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

মিস্ত্রির কাজ করা ওই কিশোর আসতে কাজের স্বার্থেই বঙ্গাইগাঁওতে এক বন্ধুকে ফোন করতে গিয়েছিল, আর তাতেই জীবনে নেমে এল ঘোর অন্ধকার। ‘কোকিল কণ্ঠী’ –র যে আসলে তার দিদার বয়সী হবে, তা দুঃস্বপ্নেও ভাবতেও পারেনি সে।😛😛😛😛

21/10/2018

October 21, 2018

কাছে আসার গল্প : ভদ্র বউ দুষ্ট বর


♥ ১ম_পর্ব ♥

-আচ্ছা, আমাকে তোমার কাছে কেমন লাগে?

(কথাটা শুনে কেমন আনমনা লাগছে,তবুও মেয়েটাকে খেপানোর জন্য ফাজলামু করলাম)

-হুমমম তুমি সুন্দর..
কিন্তু ক্রাশ খাওয়ার মত না..😜

-তাই?😒
তাহলে আমার পিছনে লাইন মারতা কেন..?😜

-আমি লাইন মারতাম..? কই না তো...?
উল্টা তুমিই তো বাসায় এসে আমার রুমে উকিঝুকি মারতা...😜

-সেটাই আমার ভুল ছিল..?😫
(কান্না কান্না কন্ঠে বললো)

-শুধু ভুল না মহা ভুল..😜

-আমি বলেই তোমার মত ইয়ে ছেলেকে বিয়ে করছি..😍

-ইয়েটা কি য়ে..?

-জানি না যাও তো..?

-উহু বলোই না...!

-ঝগাড়াটে পোলা...😜

-আমিই শুধু ঝগড়া করি..?
আর আপনি রবীন্দ্রসঙ্গীত চর্চা করেন...?😜

-জ্বি না..
আমি কিউট লক্ষ্মী একটা মেয়ে....😍

-একহাতে যে তালি বাজে না..
নিশ্চই জানো...?

-মানে কি..?
তুমি বলতে চাও আমি ঝগড়া করি...?😒

-চোরের মায়ের বড় গলা..😜

-এই শুনেন আপনার সাথে আর কথা নাই..😫
আর কথাই বলবো না...😒

-দেখাই যাবে..?

-কি..?

-মার্কেট করতে গেলে ঠিকই আমার কথা মনে পরবে.😜
তখন কই যাবে কথা না বলে...?

-পকেট কাটবো..😜

-আয় হায়..😲
বলে কি আমি পকেট মার বউ বিয়ে করছি...😫
আর পকেট মারের জায়গা নাই আমার বিছানায়...😜

-কি বললা...
তোমার বিছানা...?
সারাদিন কে এত সুন্দর পরিপাটি করে গুছিয়ে রাখে..?
আমার বিছানা আমি শুইবো বলে দিলাম..😜

-এএহ...!
এ বাড়ির সবই আমার...!
বিছানাও আমার...!
শুধু পকেট মার বউ বাদে....😜

কথাটা শুনে ইরাবতী অভিমানী মুখ করে ভারী গলায় বললো....
-হ্যা তাইতো...
সবই তো আপনার,আমি এই বাড়ির কে..?
আপনারই বা কি হই..?
আমার তো কোন অধিকার নেই কারো উপর..?
আমি আসলে ভুলেই গিয়েছিলাম আমি কে...?
মাফ করবেন...
(ধপাস কররে বসে পড়লো ড্রেসিং টেবিলে)

রাব্বী বুঝলো ইরাবতী বেশ অভিমান করেছে...
ইরাবতী হয়তো জানেই না যে অভিমানী মুখেটায় তাকে কতটা সুন্দর লাগে...

 ইরার চোখ দিয়ে টুপ করে এক ফোটা বৃষ্টি পরলো... বুঝলাম ইরা কষ্টও পেয়েছে...
নিষ্পাপ বাচ্চাদের মতো করে রেখেছে মুখটা...

কি করবো এমন অভিমানী মেয়ে কে খেপাতে ভাল লাগে, একটু বেশী করেছি মনে হয়...
এখনি অভিমান ভাঙ্গাতে হবে ইরাবতীর...

-এই শুনো..

-কারো সাথে কোন কথা নেই...
চোখ দিয়ে পানি পরেই চলছে...

>ইরাবতী....

-....(চুপ)

-আমার লক্ষী বাবুই পাখিটা...?

-....(চুপ করেই রইলো)

-এই যে সোনা পাখিটা আমার...

>>....(চুপ)
বুঝলাম এভাবে কাজ হবে না...

-জান আমার ময়না পাখি শুনো না...
তোমাকে না কাঁদলে কেমন বাচ্চা বাচ্চা লাগে...
নিষ্পাপ শিশু মনে হয়...

-.......(চুপ)
(কিছুতেই কাজ হচ্ছে না)

-বাবুই কথা বলো...
সরি আর এমন বলবো না...
শুনো,একটু কথা তো বলো...

ইরাবতীর হাত ধরতেই,পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণ করলো ইরা...
এক ঝটকা দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো...

-কাঁদাতে ভাল লাগে না তোমার....
কাঁদাও যত খুশি, আমিও কাঁদতে রাজি আছি....
কারো সাথে কথা নেই...
(আরো বেশী অভিমান ঢেলে দিয়ে বললো)

-এই শুনো না,আর কান্না করো না....
কাঁদলে না তোমার চোখের কাজল লেপ্টে পেত্নীর মত লাগবে তোমায়...
আমি আবার পেত্নী অনেক ভয় পাই....

-তাই বা পেত্নীই লাগবে...
পুরাতন হয়ে গেছি না...
আর পেত্নী হলেও তোর ঘাড় মটকাবো...

-ছি...কি বলো....
তুমি তো আমার একমাত্র মহারাণী...
তোমাকে অনেক ভালবাসি...
সারা জীবন এ ভাবেই ভালবাসতে চাই...
স্বামীর কেউ ঘাড় মটকায়..?

-হু কচু,সবই ঢং...
কিছুক্ষণ পরই এসবের কিছুই খুজে পাওয়া যাবে না...

-উহু সত্যি খুব ভালবাসি..
এসো তোমার কাজল মুছে গেছে লাগিয়ে দেই...

হাতের তালুর মধ্যে শার্টের হাতা গুটিয়ে ওর লেপ্টে যাওয়া কাজল মুছে দিয়ে, নিজ হাতে কাজল লাগিয়ে দিলাম ইরাবতীর চোখে..
যদিও খুব ভাল ভাবে দিতে পারি না..
তবুও ইরার কাছে এটাই সবচেয়ে আনন্দের...
বড় পাওয়া ইরা আনন্দ মনে চেপে রেখেই রাব্বি কে বললো...

-কাজল লাগিয়ে দিয়েছো বলেই ভেবো না আমি গলে গেছি...😜

-আবার কি হলো..?
(হয়তো, এই কারণ এ নারীকে রহস্যময়ী বলা হয়েছে,
একটু বুঝা যায় না)

-কিছু না...
তবে, আমাকে কাঁদানোর জন্য শাস্তি পেতে হবে আপনাকে..?

-যথা আজ্ঞা ইরাবতী...

-আজ কে রাতের খাবার নেই আপনার...😜

-কি বলো তুমি..?😫
জানো না আমি সব সহ্য করতে পারি  ক্ষুধা না,আর সময় মত না খেলে বুক পেট ব্যাথা করে..😫

-তা তো আর আমি জানিনা..
 জানতেও চাই না...
(ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসি)

-হু, জানো না আর কি বা জানবে..?
কাজ কাজ তো একটাও পারো..?
রান্নাটা ছাড়া,আর এটা যেনই এত তালুকদারি...!

-বেশ তো কে মানা করছে তোমায় তালুকদারি করতে.. একটা ডিম ও তো ভাজতে পারো না..!
অকর্মার ঢেঁকী একটা..😜

-কি আমি অর্কমা...?
এখনি দেখাবো কে অকর্মার ঢেঁকী..?

-পারলে না, দেখাবেন. 😜
আমি জানি তো আপনি কি পারেনন...?😜

-আচ্ছা, তাহলে কিছু একটা তো করতে হয়...
পারি কি না দেখাচ্ছি....
বলেই রান্না ঘরের এলাম ভাব দেখিয়ে,হাজার হোক সম্মান এর ব্যাপার...

রান্না ঘরে গিয়ে কিছু বুঝতেছি না, কোনটা চিনি,কোনটা লবণ.....

-ডিমটা কোথায় গো..?

-ফ্রিজে..

-পিয়াজ..?

-কুচি করা আছে ফ্রিজে...?
(যাক, কাটে রেখেছে, নয় তো কাটতে গিয়ে আমি কাঁদতাম)

-কড়াই..?

-চুলার নিচে দেখ..

-দিয়াশলাই...?

-চুলার সাইডে দেখ..

ইরাবতী,আমার সব প্রশ্নের জবাব দিচ্ছে..
আর মিটিমিটি হাসছে...😊

হঠাৎ মৃদু আতর্নাদ মত এলো রান্না ঘর থেকে..ইরার কানে...
ইরা দ্রোড়ে গিয়ে দেখলো,
ডান হাত আঙ্গুল এলোমেলো ঝাঁকাচ্ছি,আগুনের ছেকা লাগছে..

ইরাবতী আঙ্গুলটা ধরেই মুখে নিয়ে নিল..
চোখে শাসন মুখে অভিমান নিয়ে তাকালো....
 ভয় ভয় চোখে তাকিয়ে দেখলাম...

একটু ভয় কাটিয়ে ভুবন জয় করা একটা হাসি দিলাম..
 সাথে সাথে আঙ্গুল ছেড়ে দিল ইরাবতী...
আর অভমানি সুরে বললো...

-শয়তানটা আবার হাসে...?

-কি করবো বলো..?

-যদি বেশি কিছু হতো তবে কি হতো ভেবেছো..?

-কিছু হয়নি তো চিন্তা করো না..
(মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে)

-আমি কিন্তু এক দিক থেকে খুশি হইছি....

-কিহ..?
 আমার কষ্টে তুমি খুশি..?

-হুম..কারন এখন আর অফিস থেকে ফেরার সময় কেরাম খেলতে পারবে না...
আর তারাতারি বাসায় চলে আসবা...
আমার বাসায় একা একা থাকতে বুঝি ভয় করে না রাত করে আসো কেন..?


♥ ২য় এবং শেষ পর্ব ♥


-হুম..কারন এখন আর অফিস থেকে ফেরার সময় কেরাম খেলতে পারবে না...
আর তারাতারি বাসায় চলে আসবা...
আমার বাসায় একা একা থাকতে বুঝি ভয় করে না রাত করে আসো কেন..?

-আমার কষ্ট দেখে তোমার খুশি লাগছে, ভাল খুশি হও..
আরও লেট করে বাসায় আসবো...

-আহারে বাবুটা রাগ করছে মনে হয়...
চলো ভাত খাবে চলো..

-খাবো না..
ক্ষুধা নেই..

-আমি বলছি না আসতে..
(রাগি চোখে তাকিয়ে)

-হাতে ব্যাথা আছে তো..

-সম্যাসা নেই তার জন্য..
চামিচ আছে চামিচ দিয়ে খাবেন..
টানতে টানতে নিয়ে গেলো ইরাবতী..

আমিও মনে মনে শয়তানি বুদ্ধি আটছিলাম..
নিজ হাতে খাবো না তার জন্য, যা করতে হয় তাই করবো আর কি..

খাবার টেবিল এ বসে না খেয়ে বারবার ইরার দিকে তাঁকাচ্ছি..
বুঝতে পারলো মেয়েটা...

-কি সম্যাসা খাচ্ছো না,কেন..?

-ব্যাথা তো..

-চামিচ ও ব্যাথা..?

-চামিচ এ না হাতে ব্যাথা..
উফ, কি ব্যাথা..
(একটু অভিনয় করে)

-হয়েছে হয়েছে আর অভিনয় করতে হবে না..
অনেক করেছেন..?
এদিকে আসেন, হা করেনন খাইয়ে দিচ্ছি...
(হুর, মিয়া আপনারা হা করছেন কেরে..
বিয়ে করে খান...)

-আমার থেকে একটু বেশি আদর নিতেই এসব করো...
বুঝি তোমার সব ফন্দি (ইরা)
(আল্লাহ এই মাইয়া এত বুঝে কেম্তে..)

-ক্ষতি আছে কি তাতে..?

-তাই বলে, আমাকে কষ্ট দিয়ে তুমি এসব করবা..?

-উহু..
আর কখনও কষ্ট দিবো না আমার ইরাবতী কে...
নাও এবার তুমি একটু খেয়ে নাও..
ইরা মুখে খাবার তুলে দিতে দিতে..

-এই কি করো..?
হাত জ্বলবে তো..?

-কিছু হবে না..
তুমি মিষ্টি দিয়ে দিবা..

-যাহ..
পাজি, বদ, দুষ্ট কোথাকার..!
(লজ্জায় মুখ লাল করে..)

-শুধুই তোমার..

-ঢং..

-ঢং করে হলেও ভালবাসি তো..

-কচু বাসো..
শুধু আমিই বাসি..

-আমি বাসি না...

-দেখি নি তো কখনো কিছু করতে..?

-কি করতে হবে..?

-কিছু পারলে তো করবা...

-তাই..?

-হুম..

-আলতো করে ইরার ঠোঁট এ আমার ঠোঁট ডুবিয়ে দিলাম..
মেয়েটা আগের থেকেও বেশী লজ্জায় রাঙ্গিয়ে গেলো..

মনে হচ্ছে লজ্জাবতী নেয় নুয়ে পরছে..
লজ্জা কাটানোর জন্য বললাম..

-একটা গল্প শুনবা..?

-হুম বলো..

-একটা মেয়ে ছিল অনেক সুন্দর..

-কি...?
(অনেক রাগি চোখ করে)

-না, শুধু মেয়ে না ছেলেও ছিলো..

-হুম..তারপর..?

-মেয়েটা ছিল ছেলেটার বোনের স্বামীর মামাতো বোনের....
বাসাটাও ছিলো পাশাপাশি..

-চেনা মনে হচ্ছে গল্পটা..?

-একটু একটু..

-ছেলেটা মাঝে মাঝে তার বোনের বাসা যেত, আর মেয়েটা তার ভাবি কে দেখার ছলে ছেলেটা কে দেখতে আসতো..

-মেয়েটা কি করবে বলো..?
ছেলেটা তো গাধা ছিল, শুধু গাধা না মস্ত বড় গাধা..
তাই তো মেয়েটা নিজ থেকেই লাইন মারতো..

-হুমম...
প্রতিদিনই দেখা হতো না তাদের..
শুক্রবার ছেলেটা তার বোনের বাসায় যেত..
মেয়েটা তাই আগে ভাগেই এসে বসে থাকতো ছেলেটাকে দেখার জন্য..

-ঠ্যাকা পরছে আমার..
কাউকে দেখার জন্য আগেই গিয়ে বসে থাকতে...

-আহা..
শুনোই না..

-কি শুনবো..?
কখনো ভালই তো বাসো নি..
ভীতুর ডিম কোথাকার..

-এইযে..
আমি মোটেও ভীতু না..

-দেখতাম ই তো ভাইয়ার সামনে চুপসে যাইতে..

-জানতাম এটাই বলবা..

-নয় তো কি..?
ভাগ্যিস,ভাইয়া কে কখনও বুঝতে দিতাম না, না হলে তো কল্পনার বাহিরে পিটনা খাই তো..
(বলেই হা হা হা করে হেসে উঠলো)

কি মায়াময় সেই হাসি, এই হাসির প্রেমে পড়েছিলাম...

একদিন বিকালে আপার বাসায় আসছিলাম..
দেখলাম, কলেজ এর ড্রেস পড়া একটা মেয়ে হেঁটে আসছে..

দুষ্টুমির ছলে বলেছিলাম..

-আপনাদের বাসা কোথায় গো..?

-ইরা রাগ্বানিত চোখ নিয়ে বলেছিলো..
চাঁদের দেশে..

তখন চিনতাম না, ইরা আমার বোনের নন্দন..

-এমন করে কথা বলেন..কেন?
আর চাঁদের দেশে যেতে কত টাকা ভাড়া লাগে..?

আবার ইরা..

ডানে বামে তাকিয়ে..
ভাইয়া বলে ডাক দিলো...
আমিও ভ্রো দ্রোড় দিলাম...

-কি হলো, যে পরিমাণ হা করে আছেন, মশা মাছি সব ডুকে পরবে তো..(ইরা)

-ভাবছিলাম...

-কি?

-তোমার আমার দেখা হওয়ার কথা..

-তা তো জানি...
তার বুকের সাহসটা...

-অনেক সাহসী ছিলো..
সাথে ভালবাসাটাও...

-ঢং করতে হবে না...
সে তো ভালই বাসে নি..
আর ভালবাসা প্রকাশ করতে..
বা, হিরোগিরী দেখাতে হয় ভাল ভাবে তাই না..?

-নাহহ..
অনেক ভালবাসে তো...
আর কপালে তার ওই পেত্নীটার নজর পরেছিলো,তাই  তার আজ এই দশা..

-এক্সকিউজ মি...
আমি মোটেও নজর দেইনি, উল্টো একটা ফাজিল নজর দিয়েছিলো...

-হুম হুম দেখেছি কে নজর দিয়ে ছিলো..
তাই তো আর কপালে একটা মেয়েও পটাতে পারলাম না...

-লজ্জা করে না...?
বউয়ের সামনে আরেক মেয়ের নাম নিতে...
লুচু কোথাকার..

-আমি লুচু..?
প্রকৃত লুচু তো সেই যে আশেপাশের সবাইকে লুচু ভাবে..

-কে লুচু জানাই আছে...
অফিসের প্রত্যেকটা মেয়ে কলিগ কে লাইন মারতে না..

-একদম না..

-কথা লুকাবে না...?
গাছের ও খাবে আবার তলায় ও কুড়োবে লুচু লুচু...

-একটুও না..
আমি শুধু তোমারই ...

-কচু...

-সত্যি..
তুমিই আমার পৃথিবী....

(কথাগুলি ক্রমশ সিরিয়াস হচ্ছে দুজনেই জানে..
মাত্র এক মাস হলো বিয়ের দুজনই দুজনকে খুব ভালবাসে..
সারাদিনই দুষ্টুমি, ঝগড়া, মান অভিমান লেগে থাকবে দুজনার মাঝে...
কিন্তু দিন শেষে দুজনেই হয়ে ওঠে দুজনার পৃথিবী...
তবে এই ঝগড়া, রাগ, মান অভিমানটা যেন চিনি ছাড়া চায়ের মতো..)

-আর আমি..
তোমার মাঝেই যে পৃথিবীটা খুজে পেয়েছি জানো না..?
(বুকের মাঝে বুক লুকাতে লুকাতে)

-হুম,জানি তো...
তবু ঝগড়া করা লাগবেই..?

-শুধু তো তোমার সাথেই..
অন্য কারো সাথে তো না..

-চল রুমে চল..
ঠান্ডা খুব আজ...

-আমার না পায়ে ব্যাথা...

-সে কি..!
নিজেই তো হেটে এলেন আবার  আমাকেও টেনে নিয়ে এলেন..?

-কেন যে এই ফাজিলটার নজরে পরলাম..
ফাজিলটা  কিছু  বুঝে না..
 (অভিমানী সুরে)

-ইশারা ইঙ্গিত বুঝতে আর বাকি রইলো না..
ইরা কে কোলে তুলে নিয়ে বললাম..
ফাজিলটা নজর দেইনি, বরং মিষ্টি একটা মেয়ের নজর পরছে বলেই আজ আটার বস্তা তুলতে হচ্ছে"

-তাই না..
বুকে আলতো করে দুটো ঘুসি দিয়ে..
ঠোটে ভালবাসার পরম আনন্দের মিষ্টি দিতে লাগলো।
ভালবাসাটা যেন এভাবেই আজীবন চলতে থাকে সবাই দোয়া করবেন....

সমাপ্ত

08/10/2018

October 08, 2018

কাছে আসার গল্প : চুক্তির প্রেম



সরি দোস্ত আসতে একটু দেড়ি হয়ে গেল আসলে কোন রিক্সা পায়নি তাই দেড়ি হয়ে গেল ৷

শালা তোর জন্য সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি আমরা দুজন ৷ আর তুই এসে বলছিস ছরি ৷

আরে বললাম তো সরি এবারে মত মাফ করে দে দোস্ত ৷

আচ্ছা ঠিক আছে মাফ করে দিলাম ৷

তো দাড়িয়ে থাকবি নাকি তাড়াতাড়ি চল ৷

হুম দ্বাড়া রিয়া আসুক তারপর সবাই মিলে একসাথে যাব ৷

ওহহহ আপনাদের তো পরিচয় দিতে ভুলে গেছি ৷ আমি মেহেদী হাসান ৷ অনার্স ১ ম বর্ষে পড়ি ৷ আমার বাড়ি ঝিনাইদহ জেলায় কোটচাদপুর থানায় ছোট একটা গ্রামে বাড়ি ৷ আর আমি এখানেই একটা কলেজে পড়শুনা করি ৷

আর যার সাথে কথা বললাম সে হল আমার জানের জিগার বন্ধু রাজু ৷ আর যে রিয়ার কথা বলল সে হল রাজুর গার্লফ্রেন্ড ৷ আমরা সবাই মিলে একজায়গায় বেড়াতে যাব ৷

তারপর কিছুক্ষন সময় অপেক্ষা করার পর রিয়া আসল কিন্তু রিয়া একা নয় ৷ তার সাথে একজন মেয়ে আসছে ৷

রিয়া বলল ও হচ্ছে আমার মামাত বোন অনিকা ৷ তবে আমার থেকে বড় ৷ ও এবার অনার্স ৩ য় বর্ষে পড়ে ৷ বাড়ি একা থাকতে বোরিং হয়ে যাবে তাই সাথে নিয়ে আসলাম ৷

অনিকার চেহারটা খুব সুন্দর অনেক মায়াবী ৷ চোখ দুটোই অনেক মায়া আছে ৷ তবে আমার থেকে সিনিয়র ৷ আমার সব আশা ভেঙে চুরমার হয়েগেল ৷

আমিঃ খুব ভাল করছ একসাথে সবাই ঘুরতে যাওয়া যাবে ৷

তারপর সবাই মিলে হাটতে লাগলাম ৷ হাঠতে হাটতে একটা  স্থানীয় পার্কে চলে আসলাম সেখানে অনেক গুলো ছোট বড় পুকুর আছে ৷ তার পাশে হাটতে লাগলাম ৷

অনিকা কে আমার খুব ভাল লাগল খুব পছন্দ হয়েছে ৷ একটা মেয়ে হয়ে যে যে সব গুনাবলি থাকার কথা সব ওই মেয়ের মধ্যে আছে ৷

তখন দেখি রিয়া আর অনিকা  একটু দুরে গিয়ে আলাদা ভাবে কথা বলছে ৷ আর আমি আর রাজু  তাদের আলাপ আলোচনা দেখছি ৷

কিছুক্ষন পর রিয়া আমার সামনে আসল এসে যা বলল তা শুনে আমি আর রাজু অনেক অবাক হলাম ৷

রিয়াঃ মেহেদী ভাইয়া আপনার সাথে একটু কথা আছে একটু শুনবেন ৷

আমিঃ হুম বল কি বলবে ৷

রিয়াঃ অনিকা আপু আপনাকে অনেক পছন্দ করছে ৷ তবে আপনাকে ভালবাসার অভিনয় করতে হবে ৷

আমিঃ মানে আমি কিছু বুঝলাম না অভিনয় করতে হবে কেন ৷

রিয়াঃ কারন অনিকা আপু আপনার থেকে বড় সেজন্য ৷ আপনার সাথে ৬ মাসের প্রেম করবে ৷ তারপর যে যার মত আলাদা হয়ে যাবে ৷

আমি রিয়ার কথা শুনে খুব খারাফ লাগল ৷ তবে আমি কিছুতেই রাজি হয়নি ৷

তারপর অনিকা আমাদের কাছে এসে আমার হাত ধরে একটু সাইডে নিয়ে গেল ৷ তারপর বলল দেখ মেহেদী তুমি অনেক ভাল  ছেলে তোমার মত ছেলেদের মেয়েরা অনেক পছন্দ করে ৷

আমিও তোমাকে পছন্দ করি তবে আমি তোমার সিনিয়র হওয়াই সেটা সম্ভাব না ৷ তাই আমরা মিথ্যা  ভালবাসা  করব ৷

আমরা সত্যি কারের প্রেমিক প্রেমিকার মত ব্যাবহার করব ৷  যেন কেউ বুঝতে না পারে ৷

অমিঃ কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব আপনি আমার সিনিয়র দুই বছরের পর ৷

অনিকাঃ আরে আমরা তো সত্যি কারের প্রেম করবনা ৷ আমরা তো শুধু অভিনয় করব ৷

আমিঃ ঠিক আছে ৷

তারপর অনিকা  আমার ফোম নাম্বার নিল ৷ তার ফোন নাম্বার দিল ৷

অনিকাঃ তাহলে এখন থেকেই আমরা প্রেমিক প্রেমিকা এখন থেকেই আমাদের অভিনয় শুরু ৷

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে ৷

তারপর রাজু আর রিয়া অন্যদিকে চলে গেল কথা বলতে ৷

আর আমি আর অনিকা  অন্যদিকে চলে আসলাম ৷ কিছুদূর আসার পর অনিকা আমার হাত ধরল ৷

আমি অনেক অবাক হলাম আর অনিকার দিকে তাকালাম আর ৷ অনিকা বলল কি দেখছ এমন করে আরে এটা অভিনয় সত্যি নয় ৷

তারপর আমি অনিকার হাত ধরলাম  ৷ তারপর একসাথে অনেক ঘুরাঘুরি করলাম ৷ সন্ধ্যার সময় যে যার বাড়িতে চলে আসলাম ৷

রাতে খাওয়া দাওয়া করে যেই ঘুমাতে যাব সেই অনিকা ফোন দিল ৷

আমি রিসিভ করলাম ৷  আর সাথে সাথে অনিকা বলল হাই জানু কি করছ ৷

আমিতো অবাক অনিকার কথা শুনে  তারপর স্বাভাবিক হয়ে তার সাথে কথা বললাম ৷ তারপর অনিকার সাথে অনেক্ষন কথা বললাম ৷

তারপর অনিকা বলল যে কাল বিকালে দেখা করতে ৷


আজ বিকালে অনিকার সাথে দেখা করার কথা ৷ আমি সময়মত নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে অনিকার জন্য অপেক্ষা করছি ৷

কিছুক্ষন পর অনিকা আসল হলুদ একটা চুরিদার পড়ে আসছে ৷ দুর থেকে যত সুন্দর লাগছিল কাছে আসার পর তার সৌন্দর্য আরও দ্বিগুন বেড়ে গেল ৷

আমি হা করে তাকিয়ে থাকা দেখে অনিকা বলল ওই কি দেখ এভাবে ৷

আমিঃ তোমাকে  দেখি কি সুন্দর তোমার চোখ ৷ সেই চোখের চাহনি ৷ তোমার মায়া ভরা মুখখানা ৷ আমিতো তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে সারাজিবন পার করে দিতে পারব ৷

অনিকাঃ এই মেহেদী এবার কিন্তুু বেশি বেশি হচ্ছে ৷

আমিঃ আরে না আমি সত্যি বলছি তোমাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে ৷

অনিকাঃ থাক আর পাম দিতে হবেনা ৷ চল ওই দিক টাতে দুজন হাটি ৷

চল যাই তারপর অনিকা আমার হাতটা নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে আঙুল নিয়ে খেলা করছে ৷ খুব ভাল লাগছে আমায় ৷ সুন্দর একটা অনুভুতি কাজ করছে আমার ভিতরে ৷

এই প্রথম কোন মেয়ের সাথে হাত ধরে হাটছি ৷ তারপর আমি আর অনিকা একজায়গায় দুজনে বসলাম ৷ আর অনিকার মাথাটা আমার কাধের উপর রেখে আমার হাত জড়িয়ে ধরে রাখছে ৷ আমি বেশ অবাক হলাম কারন সেত অভিনয় করছে কিন্তু এটা মনে হচ্ছে বাস্তব প্রেম করছি ৷

আমিঃ অনিকা একটা কথা বলব ৷

অনিকাঃ হুম বল একটা কেন হাজার টা কর ৷

আমিঃ আচ্ছা তুমি আমার সাথে কি কারনে এমন অভিনয় করছ ৷

অনিকাঃ এত তাড়া কেন তোমার সময় হলে সব জানতে পারবে ৷

তারপর কিছুক্ষন কথা বলে অনিকা কে বাড়ি পৌছায়ে  দিলাম ৷ তারপর আমি নিজেও বাড়ি চলে আসলাম ৷ রাতের খাবার খেয়ে যেই ঘুমাতে যাব ওমনি মোবাইলের বিরক্তি কর রিংটোন টা বেজে উঠল ৷ মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি অনিকা ফোন দিছে ৷ ফোন রিসিভ করলাম করে কিছুক্ষন কথা বলে ঘুমিয়ে পড়লাম ৷

সকালে আমি আর রাজু দুজনে কলেজ যাচ্ছি ৷ কলেজের গেট দিয়ে ডুকতে গিয়ে দেখি অনিকা দাড়িয়ে ৷

তবে কি অনিকা এই কলেজে ভর্তি হয়েছে ৷ তখন রিয়া 【 রাজুর গফ】বলল কি ভাইয়া অবাক হলেন তাইনা ৷ অনিকা আপু এই কলেজে ভর্তি হয়েছে ৷

আমি মনে বললাম যাক ভালই হল আমার ক্রাশের সাথে সবসময় কথা বলা যাবে ৷

অনিকা বলল কি ভাবছ এত ৷ না কিছুনা এমনি ৷ চল ক্লাসে যায় তাই বলে যে যার ক্লাসে চলে আসলাম ৷

কলেজ শেষে দেখি রিয়া একা দাড়িয়ে আছে ৷ আমি গেলাম তার কাছে গিয়ে প্রশ্ন করলাম ৷ আচ্ছা রিয়া অনিকা আমার সাথে কেন এমন প্রেমের অভিনয় করতে বলছে তুমি কি কিছু যান ৷

রিয়াঃ না ভাইয়া আমি কিছু যানিনা ৷

আচ্ছা ঠিক আছে তুমি যাও ৷ তবে আমাকে যানতেই হবে অনিকা কেন এমন করছে আমার সাথে ৷

তারপর আমি আর রাজু বাসায় চলে আসলাম ৷ এসে সাথে সাথে দেখি অনিকার ফোন মানে  ৷ অনিকা ফোন দিছে ৷

আমি ফোন রিসিভ করলাম আর সাথে সাথে ঝাড়ি শুরু হয়ে গেল ৷ আমি কিছু বুঝলাম না তবে এটুকু বুঝলাম ৷ আমি রিয়ার কাছ থেকে ওই প্রশ্ন করেছিলাম তাই ঝাড়ি দিছে ৷

তারপর অনিকা বলল আমি বলেছি সময় হলে তুমি সব জানতে পারবে ৷【রাগি কন্ঠে】 আর কিছু না বলে ফোন রেখে দিল ৷

পরের দিন সকালে ফ্রেশ হয়ে  কলেজে গেলাম ৷ তবে এখনও অনিকা আসেনি ৷ তাই আমি আর রাজু  ক্লাসের কিছু বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছি  ৷ সাথে কিছু মেয়ে বন্ধু ছিল  তারা আবার আমার সাথে কথা বলার সময় শরিরে স্পর্শ করে কথা বলছে ৷ আর তখনি অনিকা চলে আসল ৷

আমি মনে করেছি যেহেতু প্রেমটা অভিনয় তাই অনিকা রাগ করবেনা ৷ কিন্তু আমার ধারনা ভুল প্রমানিত করে ৷ অনিকা কাছে এসে আমার হাত ধরে একটু ফাকা জায়গায় টেনে নিয়ে গেল ৷

আর বলল তুই ওদের সাথে এমন হেসে হেসে কথা বলছিস কেন ৷【আমি অনিকার মুখ থেকে তুই তুকারি শুনে বেশ অবাক হলাম】 ৷ আর ওই ছেমরি টা তোকে স্পর্শ করল কেন ৷

আমিঃ আমারা তো ক্লাস ফ্রেন্ড তো এভাবে কথা বলবনা তো কি বলব ৷

তুই কোন মেয়ের সাথে কথা বলবিনে ৷ আমাদের প্রেমর চুক্তি ৬ মাসের তাই আমি তোর গার্লফ্রেন্ড ৷ এই ৬ মাসের মধ্যে যদি কোন মেয়ের সাথে কথা বলতে দেখি ৷ তাহলে আমার থেকে খারাফ কেউ হবেনা বুঝছ ৷

হুম বুঝছি কিন্তু অভিনয় টা কি কারনে করছ সেটা তো বলবে নাকি ৷

ওই তোকে এক কথা কয়বার বলব যে সময় হলে সব জানতে পারবি ৷

 আমাদের প্রেমর চুক্তি ৬ মাসের তাই আমি তোর গার্লফ্রেন্ড ৷ এই ৬ মাসের মধ্যে যদি কোন মেয়ের সাথে কথা বলতে দেখি ৷ তাহলে আমার থেকে খারাফ কেউ হবেনা বুঝছ ৷
হুম বুঝছি কিন্তু অভিনয় টা কি কারনে করছ সেটা তো বলবে নাকি ৷
ওই তোকে এক কথা কয়বার বলব যে সময় হলে সব জানতে পারবি ৷ আমি মন খারাফ করে বসে রইলাম  ৷

পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে  ফ্রেশ হয়ে কলেজে চলে আসলাম ৷ কিন্তুু অনিকা কে দেখলাম না ৷ তাই অনিকার নাম্বারে ফোন দিলাম কিন্তু ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে ৷

তাই আমি রিয়ার কাছে গিয়ে অনিকার কথা শুনার জন্য গেলাম ৷ দেখি রাজু আর রিয়া একসাথে বসে গল্প করছে ৷ আমি তাদের পাশে বসলাম ৷ আমি বললাম অনিকা আজ কলেজে আসিনি কেন আর মোবাইল ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে ৷  তারপর রিয়া বলল যে অনিকা নিজের বাড়ি গিয়েছে তার আম্মুর শরীর খারাফ সেইজন্য ৷

তারপর আমি ওখান থেকে চলে এসে সোজা ক্লাসে গেলাম ক্লাস শেষে ভাল লাগছেনা তাই বাসাই চলে আসলাম ৷ এসে একটা ঘুম দিলাম ৷ এক ঘুমে বিকাল হয়ে গেল তারপর বন্ধুদের সাথে দিচ্ছি তখন অনিকা ফোন দিল ৷

আর বলল যে আমি ১০ দিন পড়ে ওখানে আসব ৷ আমি ওকে বলে ফোন রেখে দিলাম ৷ তবে মনটা খারাফ হয়ে গেল যে অনিকার সাথে দশ দিন দেখা হবেনা ৷

আজ দুুৃইদিন অনিকার সাথে দেখা তবে দুএকবার ফোনে কথা হয়েছে ৷ আমি ভীষন মিস করছি অনিকা কে ৷ তার সাথে হাতে হাত রেখে ঘুরে বেড়ানো ৷ যখন একজায়গায় বসতাম তখন আমার কাধে মাথা রাখা সব মিস করছি ৷

আমিতো অনিকা কে সেই প্রথমে দেখায় ভালবেসে ফেলি ৷ আর অনিকা যখন বলল যে আমার সাথে ভালবাসার অভিনয় করতে হবে তখন বেশ অবাক হয়ে ছিলাম ৷

সারাটা দিন খুব খারাফ কাটে  ৷ ঠিকমত কলেজ যাওয়া হয়না ৷ মনে হয় কত যনম দেখিনি ৷ আমি যে অনিকা কে প্রচন্ড ভালবেসে ফেলেছি ৷ কিন্তুু অনিকা কি বুঝবে আমার ভালবাস ৷ নাকি আর দুই মাস পড়ে চুক্তি শেষ হয়ে হয়েগেলে আমাকে ছেড়ে চলে যাবে ৷

এই কয়দিন খুব কষ্টে পাড় করছি দিন গুলো ৷  কলেজে গেলে এক কোনায় মনমরা হয়ে বসে থাকি ৷ তখন রিয়া এসে বলল যে অনিকার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে ও আর পড়বেনা আর তোদের চুক্তির প্রেম এখানেই শেষ ৷ আমি রিয়ার কথা শুনে যে আকাশ সোজা মাটিতে আচরে পড়লাম ৷ আমি কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলি ৷ তখন আমি অনিকা কে ফোম দিলাম দেখি ফোন রিসিভ হচ্ছে দুই বার রিং হওয়ার পর অনিকা ফোন রিসিভ  করল ৷ অনিকা আমি এ কি শুনছি ৷ তোমার নাকি বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে ৷

অনিকা চুপ করে আছে কোন কথা বলছেনা ৷ কি হল তুমি চুপ করে আছ কেন কথা বল আমার সাথে ৷

অনিকা বলল দেখ আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে আর তোমার সাথে যা করছি তার জন্য মাফ করে দিও ৷ ঠিক আছে মাফ করে দেব ৷ কিন্ত আমি তো তোমাকে ভালবাসি ৷ আমিতো তোমার সাথে কোন রকম অভিনয় করিনি ৷ আমি যেদিন তোমাকে প্রথম পার্কে দেখি তখন তোমাকে আমার খুব ভাললেগেছিল ৷ এককথায় বলতে গেলে প্রথম দেখায় আমি তোমাকে ভালবেসে ফেলি【 কান্না করে বলছি】

শোন মেহেদী যা হবার তা হয়ে গেছে এখন আমি আর অতিত দেখতে চায়না ৷ সামনে আমার বিয়ে যদি সময় হয় তাহলে আস মানা করবনা ৷ আর আমার সাথে কোন রকম যোগাযোগ করবে না ৷

ঠিক আছে  তুমি যখন বলছ আর যোগাযোগ করবনা ৷ তবে একটা কথা বলতে হবে৷

কি কথা তাড়াতাড়ি বল ৷

 তুমি আমার সাথে কে এমন প্রেমের অভিনয় করলে ৷ তোমাকে বলতেই হবে ৷

আমি তোমার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবনা ৷ আমাকে মাফ করে দিবে ৷ আর পারলে আমাকে ভুলে যাও ৷

তারপর ফোন রেখে দিল ৷ আমি ওখানে বসে বসে কান্না করছি আর চোখ দিয়ে দু ফোটা করে পানি গড়িয়ে পরল ৷

আমি আস্তে আস্তে উঠে বাড়ি চলে আসলাম ৷ এসে ঘরের দড়জা বন্ধ করে চিৎকার দিয়ে কান্না করলাম ৷ আর তখন ভাবলাম যে আমাকে কোনদিন ভালইবাসিনি কেন তাকে ভেবে কান্না করছি ৷

আর তখনি আম্মু ডাক শুনেতে পেলাম ৷ আমি ছোখ মুছে স্বাভাবীক হয়ে দড়জা খুলে দিলাম ৷ আম্মু ভিতরে এসে বলল কি করছিস বাবা ৷

না আম্মু কিছু করছিনা কলেজ থেকে এসে ভাল লাগছিল না তাই এসে শুয়ে ছিলাম ৷

আম্মু বলল আমি সব বুঝিরে বাবা তুই এই কয়দিন কেমন যেন হয়ে গেছিস ৷ ঠিকমত কথা বলিস না ৷ খাওয়া দাওয়া করিস না ৷ বন্ধদের সাথে ঘুরতে যাসনা ৷ কি হয়েছে বল বাবা আমি সব ঠিক করে দেব ৷

আমিঃ না আম্মু আমার কিছু হয়নি ৷ তুমি কি কিছু বলবা আম্মু ৷

আম্মুঃ হ্যারে বাবা তুই তো যানিস আমি সারাদিন বাড়িতে একলা একলা বসে থাকি খুব খারাফ লাগেল ৷ তোরাও ঠিক মত বাড়ি থাকিস নে ৷ তাই কারও সাথে কথা বলতে পারিনা ৷

আমিঃ তো আমি কি করতে পারি ৷

আম্মুঃ আমি বলি কি তুই একটা বিয়ে করে ফেল তাহলে আর এক একা লাগবেনা ৷

আমিঃ তুমি কি বলছ মা আমি এখনও পড়াশুনা করি আর পড়াশুনা শেষ হতে অনেক দেড়ি ৷ আর আমি বিয়ে করে বউকে কি খাওয়া বো ৷

মাঃ সে নিয়ে তোর চিন্তা করা লাগবেনা আমাদের যা সম্পত্বি আছে তোর বউ কেন তোর ছেলে মেয়ে বসে বসে খাবে তো সারাজীবন ও শেষ হবেনা ৷

আমিঃ তা ঠিক আছে কিন্তু আমি এখন বিয়ে করবনা ৷ আর আমার  এখনও বিয়ের বয়স হয়নি ৷

মাঃ আমি এত কিছু যানিনা তুই বিয়ে করব ব্যাস আমার আর একা থাকতে ভাল লাগেনা ৷

আমি বেশ কিছুক্ষন ভেবে দেখলাম  অনিকা যদি বিয়ে করতে পারে তাহলে আমি পারবনা কেন ৷ আমিও দেখিয়ে দেব যে আমিও বিয়ে করতে পারি ৷

তারপর আমি আম্মুর রুমে গিয়ে বললাম আমি রাদি মেয়ে দেখতে পার ৷

তখন মা বলল মেয়ে আমার দেখা আছে আমি কালকে গিয়ে বিয়ের  পাকা কথা বলে আসব ৷

আমি ভাবলাম আমার মা দেখছি আমার দ্রুত  বলার সাথে সাথে বিয়ে ঠিক ৷ আমি আর কিছু না বলে রুমে চলে আসলাম,৷ তারপর ডিনার করে ঘুমিয়ে পড়লাম ৷

আজ আর কলেজে যায়নি ভাল লাগছেনা তাই ঘরে বসে টিভিতে F a sumon এর গান শুনছিলাম ৷ তবে অনিকার কথা খুব মনে পরছিল খুব ভালবেসেছিলাম ওকে ৷ আমি আর পুরোনা কথা মনে করতে চায়না ৷ বিকালে নিজের রুমে মোবাইল টিপতে ছিলাম ৷

তখন আম্মু আসল  আর বলল এই মাসে ২৭ তারিখে তোর বিয়ে ৷ তোর যে কয়টা বন্ধু আছে বলতে পারিস ৷

আমি শুধু রাজু  আর শাকিল নামে এক বন্ধু কে দাওয়াত দিয়েছি ৷ তবে রিয়াকেউ দিয়েছিলাম কিন্তু রিয়া বলল ২৭ তারিখে অনিকার বিয়ে আর ও হচ্ছে আমার মামাত বোন তো সেখানে আমাকে যেতেই হবে ৷ আমি আর জোর করলাম না ৷

দেখতে দেখতে বিয়ের দিন চলে আসল  ৷ বিয়ের দিন আমি একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছিনা ৷

কাজি সাহেব যখন মেয়ের নাম ইভা আক্তার অনিকা বলল তখন আমি ভাবলাম এ কোন অনিকা হতে পারে ৷ 【আমি শুধু জানতাম ওর নাম অনিকা】 আমার ভাবান্তর চেহারা দেখে বন্ধুরা মিটমিটে হাসছে ৷ আমি ভাবলাম দুনিয়াই এক নাম অনেক জনের হতে পারে৷

বিয়ের কাজ শেষ হলে আমরা বউ নিয়ে বাড়ি চলে আসলাম ৷ তারপর আমি একটু বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে চলে আসলাম ৷ আড্ডা দিতে দিতে ১১:৪৬ বেজে গেছে তখন বন্ধুরা জোর করে বাসর ঘরে ডুকলাম ৷ আর বন্ধুদের কাছে কিছু টিপস নিয়ে নিলাম ৷

বাসর ঘরে ডুকে দেখি বউ আমার লম্বা ঘুমটা দিয়ে বসে আছে ৷ তারপর বউ এসে আমার পায়ে ছালাম করে আবার বিছানায় গিয়ে বসল ৷

আমি তখন বললাম আপনিতো আমাকে না দেখে বিয়ে করেছেন ৷ আপনি এই বিয়ে নিজের ইচ্ছায় করছেন না জোর পূর্বক ৷

আগে আমাকে তুমি করে বলবেন কারন আমি এখন আপনার বিয়ে করা বউ ৷ আর আমি এই বিয়ে নিদের ইচ্ছায় হয়েছে ৷

আমার মনে হল কন্ঠটা একটু চেনা চেনা লাগছে ৷ কিছুটা অনিকার মত ৷ ওকে ঠিক আছে তুমি করে বলব ৷ তারপর আমি বললাম তোমার ঘুমটাটা একটু সরাবে তোমার চেহারা একটু দেখি ৷

আপনি নিজে সরিয়ে নেন কারন আমি আপনার এখন বিয়ে করা বউ ৷

তারপর আমি ঘুমটা সরিয়ে দেখি এতো আমার অনিকা ৷ আমি যাকে ভালবাসতাম ৷ তুমি এখানে কেন আমার বিয়ে করা বউ কই গেল ৷

আরে গাধা আমিই তোমার বিয়ে করা বউ আমার নামই ইভা আক্তার অনিকা ৷

তাহলে তুমি সেদিন ইচ্ছা করে মোবাইলে এত কথা বলেছে ৷

হুম এটা আমার ও তোমার আম্মু মানে আমার শাশুরি আম্মার প্লান ৷

তাইতো বলি আমাকে কেন এত বিয়ে দেয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগছে ৷ আচ্ছা একটা কথা বলব ৷

হুম বল ৷

তুমি কেন আমার সাথে চুক্তির প্রেম করলা কেন অভিনয় করলা ৷

আচ্ছা শোন তোমার সাথে একটা মেয়ে ফেবুতে চ্যাট করত মনে আছে আইডির নাম অবুজ বালিকা ৷ আমি তোমাকে প্রতিদিন মেসেজ করতাম ৷ কিন্তু তুমি রিপ্লায় দিতেনা ৷ অনেক অনুরোধ করার পর তুমি আমার ম্যাসেজের রিপ্লায় করতে  ৷

হুম মনে আছে তো আমার গল্প গুলো নিয়মিত পড়ত ৷ আর আমাকে মনে ভালবাসত এটা আমি বুঝতাম কিন্তু কখনও বুঝতে দেয়নি ৷

হুম আমিই সে অবুজ বালিকা ৷ একদিন আমি রিয়ার বলছিলাম এক লেখকের গল্প খুব ভাল লাগে ৷ তখন রিয়া বলে কোন লেখক আর লেখকের নাম কি ৷ আমি তখন তোমার নাম বললাম মেহেদী হাসান ৷ তখন রিয়া বলল এতো আমাগের কলেজে পড়ে আর আমাদের ভাল বন্ধু আর রাজুর 【 আমার বয়ফ্রেন্ড】এর বেস্ট ফ্রেন্ড ৷

তখন আমি বলি মেহেদীর সাথে দেখা করব ৷ তাই সেদিন রিয়ার সাথে গিয়েছিলাম তোমার সাথে ঘুরতে ৷

হুম বুঝলাম কিন্তু চুক্তি করার কি দরকার ৷

আমি জানতাম যে তোমাকে সরাসরি বললে তুমি রাজি হবে না  তাই এই বুদ্ধি করা হয়েছে ৷

এবারও বুঝলাম কিন্তু বিয়ের ব্যাপার কিভাবে হল ৷

প্রেম চলা কালিন【মানে চুক্তির প্রেম】তখন আমি আর রিয়া গোপনে তোমার আম্মুর সাথে দেখা করে সব খুলে বলি প্রথম থেকে শেষ প্রর্যন্ত ৷ তোমার আম্মুও রাজি হয়ে গেল ৷  তাই ভাবলাম তুমি যেমন প্রথমে আমাকে কষ্ট দিছ ৷তাই তোমাকে একটু কষ্ট দিই ৷ তাই এই প্লান ৷

আমিঃ এখন কি আমাকে ভালবাসা যবে ৷

অমিকাঃ না যাবেনা কারন তুমিতো এখনো আমাকে প্রোপজ করনি ৷

আমি অনিকার সামনে হাটু গেড়ে অনিকার হাত দুটি ধরে বললাম ৷হবে কি আমার গিনের সূর্য যে আমার জিবনকে আলোকিত করবে ৷ হবে কি আমারঐ পূর্ণিমার চাদ যে আলোকিত করবো আমার রাত ৷ হবে কি তুমি আমার না দেখা সপ্ন যা আমি তোমাকে নিয়ে দেখতে চায় ৷ হবে কি আমার সন্তানে আদর্শ আম্মু ৷ হবে কি আমার আম্মুর লক্ষি বউমা ৷

এবার অনিকা মেহেদীর বসা থেকে উঠায়ে জরিয়ে ধরল ৷ আর বলল আমি তোমার সবকিছু হতে চাই ৷ সব কিছুর ভাগিদার হতে চায়  ৷

আমিঃ love you.

অনিকাঃ love you too.



                         সমাপ্ত



05/10/2018

October 05, 2018

কাছে আসার গল্প : ভাই- বোনের ভালোবাসা



-ভাইয়া, এই ভাইয়া। আর কতো ঘুমাবি?
উঠ তাড়াতাড়ি।
--কিরে ইডিয়ট, সকাল সকাল এতো
চিল্লাচিল্লি করছিস কেনো?
--আমার টাকা দে।
--কিসের টাকা?
--ব্যাগ থেকে টাকা চুরি করছস যে
সেই
টাকা।
--কার ব্যাগ থেকে কে চুরি করলো?
--আমার ব্যাগ থেকে তুই চুরি করছস।
--মাইর না খাইতে সর এখান থেকে.
--সকাল সকাল মেজাজটা দিলি তো
খারাপ করে।
--রাখ তোর মেজাজ, আমার টাকা দে।
--তাড়াতাড়ি.আমার ক্লাসের দেরি
হয়ে যাচ্ছে।
--তোর টাকা কে নিয়েছে?
উল্টাপাল্টা কথা বললে মাইর খাবি।
--এর আগেও অনেকবার টাকা নিয়ে
ধরা খেয়েছিস তোর মনে নেই?
--তুইও তো আমার পকেট থেকে টাকা
নিয়েছিলি।
--সেটা তো তোর জামা ধুতে গিয়ে
পাইছি।
--ও, তাই তো বলি তুই শুধু আমার প্যান্ট
ধুতে রাজি হস কিসের জন্য।
--এখন আমার টাকা দে জলদি, নয়তো
আজকে ক্লাসে যেতে পারবোনা।
--হইসে হইসে, পকেটে দেখ পঞ্চাশ
টাকা আছে। এখন সেটা নিয়েই
ক্লাসে যা.পরে দিয়ে দিস।
--আমার লক্ষী ভাইয়া।
.
আসিফ তার ছোট বোন আয়েশার
চেয়ে
দুই বছরের বড় হলেও বন্ধুর মতোই আচরণ
করে
দুজন।আয়েশা hsc প্রথম বর্ষে আর আসিফ
এইবার hsc শেষ করলো। প্রতিদিন ঝগড়া
করেই সকালটা কে বরণ করে। আসিফের
হাতে টাকা না থাকলে সে
আয়েশার ব্যাগ থেকে টাকা নেয়।
তবে আয়েশা কখনো ব্যাগে টাকা না
রাখলেও আসিফের হাতে টাকা না
থাকার সময় ঠিকই রাখে যেনো ভাই
টা টাকার জন্য অন্য কিছু না করে বসে।
যদিও আয়েশা জানে যে আসিফের
মতো ভাই পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।
কারণ আসিফের কোনো ধরনের বাজে
অভ্যেস নেই। আয়েশার হাতে টাকা
না থাকলেও আসিফ বুঝতে পারে এবং
প্যান্ট ধোয়ার জন্য দিয়ে বলে পকেট
ভালোভাবে চেক করিস। অতঃপর কিছু
না কিছু থাকেই। যখন যাই থাকে,
সেটা শুধু বোনের জন্যই। একবার তো
পছন্দের কানের দুল কিনতে না পারায়
খুব মন খারাপ করেছিলো আয়েশা।
আসিফ সেটা কিনে এনে
দিয়েছিলো। তবে কখনো সরাসরি
দিতোনা। লুকিয়ে লুকিয়ে দেয়ার
আনন্দটা ই বেশি। তাই হয়তো দুজনই
লুকিয়ে দিতেই পছন্দ করে। যদি কখনো
আয়েশা ক্লাস শেষ করে বাসায়
ফিরতে একটু দেরি করে, তাহলে
পাগলের মতো হয়ে যায় আসিফ। আবার
আসিফ রাতে বাসায় ফিরতে দেরি
করলেও চটপট শুরু হয়ে যায় আয়েশার।
.
সেদিন আয়েশা ক্লাসে গিয়ে
বিকেল পর্যন্তও বাসায় ফিরছিলোনা,
তাই আসিফ পাগলের মতো হয়ে
গেছিলো। ফোনটাও সুইচ অফ করা। একটু
পরে বাসায় ফিরতেই অনেক টা
রেগেমেগে আসিফের
জিজ্ঞাসা.......
--কোথায় ছিলি এতক্ষণ? ক্লাস শেষ
করে কোথায় গেছস?
--কোথায় গেছি সেটা তুই জেনে কি
করবি?
--তোকে ছাড়া কখনো আমি খাই?
--তার মানে তুই এখনো খাসনি?
--না, কিন্তু তুই কই গেছস বলবিনা?
--আগে খাইতে আয়, পরে বলছি।
.
--এখন বল কোথায় ছিলি?
--তোর ইরার বাসায়।
--আমার ইরা মানে?
--মানে দুই বছর ধরে তোকে যে লাইন
মারতেছে।
--মাইর খাইছস?
--না, ভাত খাচ্ছি। তাছাড়া আমার
কি দোষ, আমার সব ফ্রেন্ডই ইরাকে
আসিফের বউ বলে আর আমাকে বলে ও
নাকি আমার ভাবী।
--হইছে হইছে, এখন ভাত খা।
--ভাইয়া একটা কথা বলি?
--হ্যাঁ বল
--ইরা তোকে সত্যি অনেক লাভ করে।
তবুও কেনো মেয়েটা কে বুঝিস না?
সে তো ক্লাস নাইন থেকেই তোর
ভালবাসায় মগ্ন, অন্য কারো
প্রোপোজও গ্রহণ করেনা।
--তোকে বারন করছি না এই ব্যাপারে
আমাকে কিছু না বলতে?
--তাইতো চুপ করে আছি। তোর জায়গায়
অন্য কেউ হলে শার্টের কলার ধরে
ইরার
সামনে গিয়ে হাজির করতাম।
--চুপ ইডিয়ট। আজকাল ছেলে-
মেয়েদের
কাছে বেশিরভাগই প্রেম ভালবাসা
মানে অন্য চাহিদা। মনের তৃপ্তি না
খুঁজে অন্য তৃপ্তিতে মগ্ন হয়। আমি চাইনা
আমার কলিজার টুকরা বোনটা এইরকম
কারো প্রেমে পড়ুক।
--আমার প্রেমে পড়া আর ইরার সাথে
তোর প্রেম হওয়ার মাঝে সম্পর্কটা
কোথায়?
--আমি জানিনা ইরা তোর কতটুকু বেষ্ট
ফ্রেন্ড। কিন্তু এটাতো জানি আমি
তোর সবচেয়ে কাছের বন্ধু। আমি ইরার
সাথে প্রেম করলে হয়তো তোরও অন্য
কারো সাথে প্রেম করতে ইচ্ছে
করবে।
আর আজকাল এই প্রেমের বেশিরভাগই
অন্য সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। এছাড়াও
প্রতারনা তো আছেই। আর একটা
প্রতারণা যেকারো জীবন নষ্ট করে
দিতে পারে। তাই আমি চাইনা আমার
কলিজার টুকরা বোন টা এইসব কিছুর
মুখোমুখি হোক।
--খুব তো বোনের উপর দরদ, তাহলে
সবসময়
একটু ভালো ব্যবহার করলে কি হয়?
--ইহ, তুই কখনো ভালো ব্যবহার করিস?
--তুই ভালো ব্যবহার পাওয়ার যোগ্য?
--নাহ, তুই খুব যোগ্য।
--যাহ, আর খাবোই না।
--খাওয়া শেষ তো, তাই উঠে যাচ্ছিস।
.
অতঃপর আরো একটা ঝগড়াময় বিকেল
কাটলো আসিফ আয়েশার। দুজন প্রায়
সারাক্ষণই ঝগড়ায় মত্ত থাকে। কিন্তু
একে অন্যকে কিছুক্ষণ না দেখলে কেমন
চটপট শুরু হয়ে যায়। রাতে আসিফ বাসায়
ফেরার পর আগে আয়েশার রুমে উঁকি
দিয়ে যায়। একে অন্যকে ছাড়া কখনো
খেতেও বসেনা। অথচ ঝগড়াটা
সারাদিন থাকে। কেউ দেখলে
ভাবতেও পারবেনা তাদের ভাই
বোনের সম্পর্ক টা এমন। প্রতিদিন ঝগড়া
করলেও ভাই-বোনের মধুর সম্পর্কটা
বিচ্ছিন্ন হওয়ার মতো নয়। আসিফের hsc
রেজাল্ট দিলো। ভালো রেজাল্ট
করলো আসিফ। অতঃপর অনার্স করার
জন্য
শহরে একটা পাবলিক ভার্সিটিতে
এডমিশন টেস্ট দিয়ে চান্স পেয়ে যায়।
বাবা-মা আর বোনের স্বপ্ন পূরন হওয়ার
পথে। ঠিক এমন সময়েই পাগলামী শুরু
করে আসিফ.......
--আমি যাবোনা বাসা ছেড়ে, এই
গ্রাম ছেড়ে।
--কেনরে? কেনো যাবি না?
--বাবা-মা আর তোকে ছেড়ে আমি
কিভাবে থাকবো?
--ভাল কিছু করতে হলে এইসব কিছু
ছাড়তে হবেই।
--দরকার নেই আমার ভালো কিছু। তোর
সাথে ঝগড়া করতে না পারলে আমি
কোথাও থাকতে পারবোনা।
--প্লিজ ভাইয়া, এমন করিস না। তুই তো
সবসময় আমাকে বলতি ভালো কিছু
করতে হলে অনেক কিছু ত্যাগ করতে হয়।
--সেটা অনেক কিছু, কিন্তু তোকে
তো
নয়। তাছাড়া আমি গ্রামের একটা
কলেজে অনার্স করলে কি ভালো কিছু
করতে পারবোনা?
--এতো কিছু বুঝি না, তুই যাবি। তুই না
গেলে বাবা-মা কষ্ট পাবে।
--আমি কিভাবে থাকবো আমার
কলিজার টুকরা টা কে ছেড়ে?
থাকতে
না পারলে কিন্তু দৌড়ে চলে আসবো,
তখন কিছু বললে মাইর খাবি।
.
আসিফের চোখের জল গড়িয়ে পড়ছে
অনেক্ষন ধরে। আয়েশার চোখও টলমল
করছে। বাবা-মাও কাঁদছে সন্তানকে
দূরে পাঠিয়ে দিচ্ছে বলে। আসিফ
চোখের জল লুকানোর জন্য বিছানায়
শুয়ে কাঁথা দিয়ে চোখ ঢেকে
রেখেছে। পাশেই বসে কাঁদছে
আয়েশাও। ঝগড়া করার সঙ্গীটা কে
ছেড়ে থাকতে যে হবেই৷ বাবা-মা
আসিফের জামা-কাপড় গুছিয়ে
রেখেছে। একটু পরেই বেরিয়ে পড়তে
হবে শহরের উদ্দেশ্যে। আয়েশা
নিজেকে কিছুটা শক্ত করে নিয়েছে।
আসিফের ব্যাগটা হাতে নিয়ে
বড়দের
মতো আসিফকে বুঝাতে বুঝাতে
হাঁটতে থাকলো.......
--শোন, তোর যখন ইচ্ছা হবে বাসায়
চলে
আসবি। পনেরো দিন পরপরই বাসায়
আসবি, বাবা-মা কিছু বললে আমিতো
আছি.
--ওকে কলিজার টুকরাটা।
--আর শুন, কোনো খারাপ কাজে
জড়াবিনা। এখন যেমন আছিস, ঠিক
তেমনই থাকবি।
--আইচ্ছা, ঠিক আছে।
--একটা কথা ছিলো, প্রমিজ কর
রাখবি?
--ওকে বল, তবে আমারো একটা কথা
রাখতে হবে।
--কি কথা? বল তো শুনি?
--না, আগে তুই বল?
--উঁহু, তুই বল আগে?
--Hsc শেষ করার আগে কখনো অন্য
কিছুতে মন দিবিনা, কারো সাথে
রিলেশনে জড়াবিনা।
--তোর কলিজার টুকরা বোনটা তোর
এই
সিম্পল কথাটা রাখবে।
--এইবার তোরটা কি বল?
--যদি কখনো কারো সাথে রিলেশন
করিস, তাহলে ইরার সাথেই করিস.ইরা
তোকে সত্যি অনেক ভালোবাসে।
--জানি, কিন্তু আমি ইরার সাথে
রিলেশনে জড়াইনি যাতে তুইও কখনো
রিলেশনে না যাস।
--সত্যি? আমি কথা দিচ্ছি hsc শেষ
করার আগে এইসব কিছু করবোনা,
বিনিময়ে শুধু ইরার কথা টা মনে
রাখিস।
--ওকে, ভালোভাবে পড়াশুনা করবি।
কেমন?
--হুম, তুইও করিস। যা ভাগ এখন, নাকি
ইরার জন্য ওয়েট করছিস?
--আমার তো খেয়েদেয়ে কাজ নেই
তোর ঐ মাথামোটা বান্ধবীর জন্য
ওয়েট করবো।
--ওই চুপ.আমার ভাবী কে মাথামোটা
বললে কিন্তু তোর সাথে কথাই
বলবোনা।
--ওরে বাবা, ভাইকে সমর্থন না করে
অসচ্ছ ভবিষ্যতের ভাবীকে সমর্থন
করছিস? যাহ আমি আর কখনো তোর
সাথে কথাও বলবো না, বাড়িতেও
আসবোনা।
--ওকে, তুই আমার সাথে কথা বলতে
হবেনা, বাড়িতেও আসতে হবেনা।
--ওকে, ভালো থাকিসরে.......
.
চোখের জল মুছতে মুছতেই অনিচ্ছা
সত্ত্বেও সবাইকে ছেড়ে যেতে হচ্ছে
আসিফের। গাড়িতে উঠেও পিছনে
ফিরে তাকিয়েছে বহুবার। বাবা
মায়ের সাথে আয়েশাও চোখের
পানি মুছতে মুছতেই ফিরছে ঘরে।
কেমন
যেনো নীরবতা ছেয়ে গেছে
বাড়িটাকে। ফাঁকা ফাঁকা লাগছে
ঘরটা। আয়েশা বিছানায় শুয়ে শুয়ে
কাঁদছে আর কার সাথে ঝগড়া করবে এই
ভেবে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে
গেলো, কিন্তু তখনও খায়নি। আসিফ কল
করে ধমকি দেয়ার পর সন্ধ্যা হওয়ার
ঠিক
আগ মুহূর্তে খাওয়া সম্পন্ন করে আয়েশা।
সন্ধ্যায় আসিফ কল করে বললো আর
কিছুক্ষণ পরেই পৌঁছাবে। আয়েশা মন
খারাপ করে বসে আছে পড়ার
টেবিলের সামনে। মন বসছেনা পড়ায়।
বাবা-মা ঘুমিয়ে পড়লো আর আয়েশা
তখনও জেগে। রাত খুব বেশি না হলেও
আসিফ না থাকায় বাবা-মা
তাড়াতাড়িই শুয়ে পড়লো। হঠাত করেই
ফোন টা বেজে উঠলো আয়েশার। কল
এসেছে আসিফের নাম্বার থেকে।
উত্কণ্ঠা হয়ে কল রিসিভ করার পরই
বুঝতে পারলো অন্য কেউ কথা বলছে
আসিফের বদলে। কি যেনো হল,
কথাটা
শুনার পরই একটা চিত্কার দিয়ে উঠলো
আয়েশা, ফোনটা হাত থেকে পড়ে
গেলো মাটিতে। এক মিনিটের মতো
নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে থাকার পর
আয়েশাও লুটিয়ে পড়লো মাটিতে।
বাবা-মা এসে এই অবস্থা দেখে
ভাবলো আয়েশার কিছু হয়েছে।
আয়েশা কে খাটে তুলে চোখে মুখে
পানি দিলো ওর মা। চোখ মেলে
তাকিয়ে আছে কিন্তু কিছু বলতে
পারছেনা আয়েশা। এভাবে প্রায়
দুঘন্টা আয়েশার সেবা যত্নে মগ্ন
ছিলো ওর মা। ডাক্তার এসে
চিকিত্সা করলো এবং জানালো বড়
কোনো ধাক্কা খেয়েছে সে, যা
সইতে না পেরে এই অবস্থা। ঠিক হয়ে
যাবে কিছুক্ষণের মধ্যে। অনেক রাত
হয়ে গেলো, বাবা-মা মেয়েটার
কাছেই বসে আছে নির্ঘুম। মেয়েটা
আস্তে আস্তে কথা বলতে শুরু করছে,
কিন্তু চেষ্টা করেও বুঝাতে
পারছেনা। অনেক্ষন চেষ্টা করার পর
বলতে সক্ষম হলো.......
--ভাইয়ার বাস নাকি এক্সিডেন্ট
করেছে, আর ভাইয়া......
কথাটা বলতে অনেক কষ্ট হয়েছিলো
আয়েশার। শেষ হওয়ার আগেই হাউমাউ
কান্না। ওর বাবা পরবর্তীতে
আসিফের
নাম্বারে কল করে এবং বুঝতে
পারলো
যে আসিফ পৃথিবীর বুকে তার কলিজার
টুকরাটাকে একা রেখেই চলে গেছে।
মধ্যরাতেই তিনজনের কান্নায় পুরো
এলাকা এসে দাড়ায় তাদের সামনে।
বাবা-মায়ের আদরের সন্তান আসিফ,
যাকে শহরে যেতে দিতেই চোখের
জলে ভাসতে হয়েছিলো তাদের।
তাহলে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে
এমন হাউমাউ কান্নাটা তো
স্বাভাবিক। পুরো এলাকার
উপস্থিতিতে পাগলের মতো কান্না
করছে আয়েশা। এমন ভাবে কান্না
করছে যেনো সে সত্যিই রাস্তার
কোনো পাগলির ভূমিকা ধারণ
করেছে। কারো শান্তনাই দমিয়ে
রাখতে পারছেনা আয়েশাকে।
আয়েশার হাউমাউ কান্না প্রায় সবার
চোখেই জল এনে দিলো। আয়েশা
কান্নার সুরে উচ্চশব্দে বলতে
লাগলো......
--খুব তো বলেছিলি আমাকে ছেড়ে
থাকতে পারবিনা, তাহলে আমাকে
একলা করে রেখে গেলি কেনো?
আমি নাকি তোর কলিজার টুকরা,
তাহলে কলিজার টুকরা টা কে
এভাবে
একা করে গেলি কেনো? স্বার্থপর, তুই
আর কোনো দিন আমার সাথে কথা
বলবিনা। ও হ্যাঁ, এখন তো আর কথা
বলবিই না। আমাকে তো পর করেই চলে
গেলি। সবসময় তো বলতি আমি তোর
কলিজার টুকরা, কিন্তু তুই কি জানিস
তুই
আমার পুরো কলিজা টাই ছিলি। ওই
আমি ঝগড়া করবো কার সাথে রে?
কাকে ইচ্ছামতো রাগাবো? আমার
ব্যাগে কার জন্য টাকা রাখবো?
আমার
ব্যাগ থেকে টাকা নিবে কে চুরি
করে? তোর প্যান্ট ধুয়ে দিয়ে দিতে
গিয়ে আর কখনো তোর সারপ্রাইজটা
পাবো? আমাকে একলা করে কেনো
চলে গেলি স্বার্থপরের মতো?
আমাকে দেয়া কথাটা রাখবি না?
ইরা তোকে সত্যিই অনেক
ভালোবাসে রে ভাইয়া
.
.
                           সমাপ্ত



ভালোবাসা বিষয়ক টিপস -১০

love-tips ♥ তুমি পাশে নেই তবুও তোমায় অনুভব করি। তুমি আমার হবে না জানি তবুও তোমার পথ চেয়ে আছি। সপ্ন সত্যি হবে না জানি তবু তোমায় নি...