ভালবাসা মানে বিশ্বাস, ভালোবাসা মানে সাহস। ভালোবাসা মানে ভয় ভেঙে বাধা পেরিয়ে কাছে আসার। আর সেই সব কাছে আসার গল্প নিয়ে সাজানো হয়েছে " কাছে আসার গল্প " ব্লগ সাইটি।☞হাজারো 'কাছে আসার গল্প' শুনতে আমাদের সাথেই থাকুন সব সময়।

Search

Latest update

Banner

23/09/2018

কাছে আসার গল্প : পিচ্চি মেয়ের ভালোবাসা


** পিচ্চি মেয়ের ভালোবাসা **
লেখক : মুহাইমিন আহমদ
        ____ ১ম পর্ব ____

# আমি বসে আছি মরিয়মের বাসায়। এসি চলছে ফুল স্পিডে, তা সত্ত্বেও দরদর করে ঘামছি। এমনটা কেন ঘটছে মাথায় আসছে না। মনে হচ্ছে কোনো প্রাইভেট কোম্পানির চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিতে এসেছি! . নার্ভাসনেস কাটানোর জন্য আমি ৩৬০ ডিগ্রী এঙ্গেলে ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পুরো বাসাটা দেখার চেষ্ঠা করছি। কেমন যেন অপরিচিত লাগছে।

 না... পাঁচ বছর আগে যখন মরিয়ম কে পড়াতাম তখন বাসাটা এমন ছিলো না। এখন অনেক পরিপাটি করে সাজানো গোছানো। এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার কারনে ওদের বাসায় আর আসা হয় নি। হয়ত আর আসাও হতো না কিন্তু ভাগ্য আমাকে টেনে এখানে নিয়ে এসেছে।

গতকাল ই আমি লোটা-কম্বল সহ মরিয়মদের বিল্ডিংয়ের তিন তলায় উঠেছি। গোটা ছয় তলা এপার্টমেন্টের একমাত্র গর্বিত ব্যাচেলর আমি। ওরা ব্যাচেলর ভাড়া দেয় না, কিন্তু আমি পূর্ব পরিচিত হওয়ায় সানন্দে ফ্ল্যাট ভাড়া দিতে রাজি হয়ে গেছে! কিছুক্ষন পর নাদুস-নুদুস কিউট চেহারার এক মেয়ে (অথবা মহিলা) আমার সামনে উদয় হলো। সোফার সাথে এলিয়ে পড়া দেহটা আমার শিরদাড়া টান করে সোজা হয়ে বসলো। মেয়ে টা দেখতে অনেক টা মরিয়ম মতই..........এক সেকেন্ড! মরিয়ম মতো না মেয়েটা মরিয়ম ই!! তার ঠোঁটের বাম পাশের তিল টা খেয়াল না করলে হয়তো চিনতাম ই না।

 এতো মোটা হয়ে গেলো কি করে মেয়েটা? আমার কাছে যখন পড়তো তখন তো পাট কাঠি ছিলো! মরিয়ম মিটি-মিটি হাসছে, রহস্যময় হাসি..... হয়তো আমার অবস্থা দেখে মজা পাচ্ছে! -কেমন আছেন স্যার? -এইতো আছি বাজার দর! আগে তোমার খবর বলো...কেমন চলছে? -এইতো ভালোই, স্যার এখনো বিয়ে- সাদি করেন নি তাই না? -ওসব আমার দ্বারা হবে না, আমি নিজেকে চির-কুমার সমিতির চেয়ারম্যান দাবি করি! তা তোমার কোলে বাচ্চা-কাচ্চা কই?

তুমি ও কি আমার দলে নাকি? -হ্যা স্যার, আমি ও বিয়ে করি নি, তবে ছেলে দেখা চলছে। আপনার মতো কাউকে পেলে শুভ কাজ টা সেরে ফেলবো ভাবছি...... আমিও কিছু বলতে যাচ্ছিলাম কিন্তু তার আগেই আন্টি খাবার হাতে উপস্থিত। আমি তার পায়ে ধরে সালাম করলাম, তিনজন মিলে শুরু করলাম পুরনো দিনের স্মৃতি চারন। আড্ডার ফাকে একটা অদ্ভুদ ব্যাপার আমার দৃষ্টি আকর্ষন করলো। পাশের রুমে পর্দার আড়াল থেকে এক জোড়া মেয়েলি চোখ আমার দিকে চেয়ে আছে। চেহারা দেখা যাচ্ছে না। আমি তার দিকে আড় চোখে তাকালেই সে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে!!! -কি হলো স্যার? -ন...না কই কিছু না তো! কিন্তু মরিয়ম ঠিকই ব্যাপার টা বুঝতে পেরেছে.... -পর্দার ফাক দিয়ে কেউ আপনার দিকে তাকিয়ে আছে এই তো!? আমি বোকা বোকা একটা হাসি দিয়ে

বললাম..... -হ্যা তাই -স্যার বলুন তো ও কে? চেনা যায়? আমি ফ্ল্যাশ ব্যাকে চলে গেলাম, মরিয়ম সুমি নামের ক্লাস ৮ এ পড়ুয়া পিচ্চি একটা বোন ছিলো। অসম্ভব পাঁকা! আমার দেখলে কেমন জানি হিন্দী ছবির নায়িকাদের মতো রোমান্টিক লুক দিতো, মুচকি মুচকি হাসতো, আবার মাঝে মাঝে লজ্জা পাওয়ার অভিনয় ও করতো। এতটুকুন বাচ্চা মেয়ে এতোকিছু শিখলো কোথা থেকে আমার মাথায় ঢুকতো না। একবার হলো কি ওই মেয়ে আমাকে লাভ লেটার লিখে বসলো! তাতে লেখা ছিলো আই লাভ ইউ। সে নাকি আমাকে না পেলে বাঁচবে না আরো কতো কি হ্যান ত্যান! কিন্তু এই মেয়ে কিছুতেই সুমি হতে পারে না।

তার চোখে দুষ্টুমি খেলা করতো সব সময়, কিন্তু পর্দার আড়ালে সেই নয়ন জোড়া অসম্ভব সুন্দর, একদম শান্ত দীঘির জলের মতো স্বচ্ছ, আটলান্টিকের মতো গভীর! যেন কয়েক হাজার টাইটানিক অবলীলায় হারিয়ে যাবে ওই গভীর অতলে....... তাছাড়া ওই চোখের মালিক নিশ্চই প্রাপ্ত বয়স্ক কোনো তরুনী হবে, আর সুমি তো পিচ্চি একটা মেয়ে! -কি ভাবছেন স্যার? চিনতে পারেন নি? অনেক ভেবেও কোনো কুল কিনারা করতে না পারায় আমি অসহায়ের মতো

আত্নসমর্পন করলাম.... -না পারি নি, আগে দেখলে হয়তো চিনতে পারতাম! আন্টি আর মরিয়ম হাসির তীব্রতা ক্রমেই বাড়ছে, সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আমার অস্বস্তি.... -স্যার এই সেই মেয়ে পাঁচ বছর আগে আপনি যার ক্রাশ ছিলেন, যে আপনাকে লাভ লেটার লিখেছিলো! আমাদের সুমি ..... : আমার মাথা টা বো করে একটা চক্কর মারলো। হিসেব কিছুতেই মিলছে না। কি করে সম্ভব? এটা অবশ্য অস্বাভাবিক কিছু ও না।

"মানুষ মরে গেলে পঁচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়, কারনে অকারনে বদলায়" আমি মরিয়ম কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমার ফ্ল্যাটে চলে এলাম। বিছানায় সঙ্গে গা এলিয়ে ঘুমোতে চেষ্ঠা করলাম, পারলাম না। মনে একঝাক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। নানা আজগুবি কথা চিন্তা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম টের ও পেলাম না। সুমি দেবী বিকেল পাঁচ টা পর্যন্ত আমার চোখে ভর করে ছিলো। ঘুম থেকে উঠে মন টা ফ্রেশ লাগছে। জানালার পাশে গিয়ে বাইরের দৃশ্য টা পর্যবেক্ষন করলাম। চমৎকার বিকেল! ফুরফুরে হাওয়া বইছে। ভাবলাম ছাদে যাওয়া যাক..... ছাদে গিয়ে হাফিয়ে উঠলাম, কিছুক্ষন বিশ্রাম ও নিলাম। ছাদ টা বেশ বড়। চারপাশে ফুল-ফলের গাছ লাগানো। পরিবেশ টা ও মনোরম। আমার বেশ পছন্দ হয়েছে।

মাঝে মাঝে অবসর সময়ের এখানে আসা যাবে মনে মনে ভাবলাম। হঠাৎ ছাদের এক কর্নারে আমার চোখ আটকে গেলো। না ভুল দেখছি না.....একটা মেয়ে বসে আছে! ছাদ টা বড় হওয়ায় এতক্ষন চোখে পড়ে নি। কানে হেডফোন লাগিয়ে সম্ভবত গান শুনছে মেয়ে টা। কিন্তু লম্বা চুলের কারনে তার চেহারা দেখা যাচ্ছে না..... আমি এক পা দু পা করে সামনে এগিয়ে গেলাম। আমার উপস্থিতি টের পেয়ে মেয়ে টা পিছনে ফিরে চাইলো..... আর সাথে সাথে খুন হয়ে গেলাম আমি! এ আমি কি দেখছি... এতো সুন্দর ও মানুষ হয় নাকি? যেনো কোনো রোমান্টিক উপন্যাসের পাতা থেকে উঠে আসা অপূর্ব সুন্দরী এক নায়িকা! কিন্তু কেনো জানি খুব চেনা চেনা মনে হচ্ছে। কোথায় যেনো দেখেছি..... বিস্ময় ভাব টা চাপা দিয়ে মুখে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে বললাম.... -পরিচিত হতে পারি? -নতুন করে কি পরিচিত হওয়ার কিছু আছে? আমি তার কথা টা বুঝতে পারলাম না। মেয়ে টা আমাকে তার পাশে বসতে বললো। -আপনার নাম টা জানতে পারি? মেয়েটার মুখে রহস্যময় হাসি ফুটে উঠলো..... -আমার নাম? সুমি...


** ২য় পর্ব **


# এবার আমার অবাক হওয়ার পালা। সত্যিই কি আমার সামনে বসে থাকা অপরুপ সুন্দরী মেয়েটা সেদিনের সেই নাক বোচা পিচ্চি সুমি? বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও জানি এটাই সত্যি। কারন পর্দার আড়ালের চোখ জোড়ার সাথে এই মেয়েটার চোখের শতভাগ মিল রয়েছে..... -আমি তাহলে আজ যাই সুমির কাছ থেকে বিদায় নেয়ার জন্য উঠে দাড়ালাম.... -না বসুন, কথা বলবো -না মানে কাজ ছিলো তো তাই যেতে চাচ্ছি.... -উফ বসতে বলেছি বসুন! আমি বাধ্য ছেলের মতো বসে পড়লাম। -কেমন আছেন? -এইতো ভালো আছি! তুমি? -ভালো তো থাকার ই কথা, এখন তো আপনাকে আর কেউ ডির্স্টাব করে না, লাভ লেটার লিখে না! ওর কথা শুনে আমি লজ্জা পেয়ে গেলাম। মেয়ে টা এখনো সব কিছু মনে রেখেছে..... -তা কি করছেন ইদানিং? -এই তো একটা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে জব করছি, তুমি কি পড়শোনা করছো? -হ্যা, বিবিএ ফার্স্ট ইয়ারে পড়ছি -ও আচ্ছা -কিছু মনে না করলে একটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করি? -অবশ্যই! -শুনলাম এখনো নাকি বিয়ে সাদি করেন নাই, তাহলে নিশ্চই জিএফ টিএফ আছে? -ধুর! এসব কখনো ছিলোও না আর এখনো নাই! -মিথ্যে বলবেন না! -আরে মিথ্যে বলবো কেনো? -সত্যি? -হ্যা সত্যি! কিন্তু তুমি এতো খুশি কেনো?

আমার কথা শুনে লজ্জায় মুখ লাল হয়ে গেলো মেয়েটার..... -ইস! আমি খুশি হতে যাবো কেন শুধু শুধু? - তা তুমি নিশ্চই প্রেম করো সুমি? এতো সুন্দরী মেয়ের তো সিংগেল থাকার কথা নয়! -সত্যি বলছেন আমি সুন্দরী? -নিঃসন্দেহে! সুমি কে একটু খুশি খুশি লাগছে -যাক আপনার চোখে আমি সুন্দরী হতে পেরেছি তাহলে! আপনি তো শুধু আমাকে পিচ্চী বলতেন। কখনো এরকম ভাবে আমাকে দেখেন ই নাই....

আরও টুকটাক কিছু কথা হলো তার সাথে। কিছুক্ষন পর মাগরিবের আজান দিলো। পশ্চিম আকাশে আগুন লাগিয়ে অস্ত যাচ্ছে সূর্যটা। অসাধারন একটা দৃশ্য। আমরা ছাদের রেলিং এর পাশে দাড়িয়ে উপভোগ করতে লাগলাম। মৃদু হাওয়ায় সুমির চুল গুলো উড়ছে। সে দৃশ্য টা আরো বেশি সুন্দর! সন্ধ্যা সাত টার দিকে বাসায় আসলাম। টিভিতে কিছুই হচ্ছে না, চ্যানেল ঘুরাচ্ছি একের পর এক। অবশেষে স্টার মুভিজে দেখলাম আমার পছন্দের সিনেমা টাইটানিক চলছে। একা একা বসে দেখতে লাগলাম। কিছুক্ষন পর কলিং বেলের আওয়াজ কানে আসলো। দরজা খুলে দেখি সুমি দাড়িয়ে আছে। হাতে একটা প্লেট।

-সুমি তুমি? -হ্যা আমি, ভেতরে আসতে বলবেন না?

 -হ্যা...হ্যা আসো! সুমি ভেতরে ঢুকলো। আমার কিছু টা অস্বস্তি হচ্ছে। যত যাই হোক একটা ব্যাচেলর ছেলের বাসায় রাতের বেলা একা একটা মেয়ের আসা টা ভালো দেখায় না! -সুমি তুমি যে এখানে এসেছো আন্টি জানলে মাইন্ড করবে না? -আপনার আন্টিই তো আমাকে পাঠিয়েছে! -ও আচ্ছা তাহলে সমস্যা নাই... তোমার হাতে ওটা কি? -বিরিয়ানী, আম্মু রেধেছিলো বললো আপনার জন্য নিয়ে যেতে। (পরবর্তীতে জানতে পারি বিরিয়ানী টা সে নিজের হাতে রান্না করেছে তাও আবার আমার জন্য! ) বিরিয়ানী টা বেশ হয়েছে। অনেকদিন এমন রান্না খাই না। সুমি বসে বসে আমার খাওয়া দেখছে। আর আমি দেখছি মুভি টা। একটু পর সেই রোমান্টিক দৃশ্য টা আসলো রোজ আর জ্যাক হাত ছড়িয়ে জাহাজের কিনারে দাড়িয়েছে তারপর কিস..... আমি তড়িঘড়ি করে চ্যানেল টা পাল্টে ফেললাম। তবে দৃশ্য টা কিন্তু আসলেই অনেক সুন্দর, আমার পছন্দের। একা হলে নাহয় দেখা যেতো। কিন্তু আমার পাশে এখন জলজ্যান্ত একটা মেয়ে বসে আছে। আমার কান্ড দেখে সুমি হাসতে লাগলো। -কি হলো পাল্টে ফেললেন যে? -ধুর! আমি ভালো ছেলে, এসব দেখি না!

-আহারে..... তাই বুঝি? -হ্যা তাই, অনেক রাত তো হয়ে গেলো। বাসায় যাবে না? -না, ভাবছি আজকে রাত টা এখানেই থেকে যাবো! -কিইইই??? -আরে আমি তো মজা করলাম, যাচ্ছি...যাচ্ছি একটু পর সুমি চলে গেলো। কেমন যেনো একা একা লাগছে। এতক্ষন বেশ ভালোই লাগছিলো। ঘুমানোর সময় ও সুমির কথা মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো। এই অনুভূতির নাম কি? আমার জানা নেই...... *****

সকালে ঘুম ভাঙলো বাবার ফোনে। উদ্বিগ্ন কন্ঠে বাবা জানালেন মায়ের নাকি শরীর খুব খারাপ, বুকে প্রচন্ড ব্যাথা। হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। আমি কোনো রকম হাত-মুখ ধুয়ে রওনা দিলাম বাসার উদ্দেশ্যে। এজন্যই বাবা-মা কে ছেড়ে দুরে থাকতে মন চায় না, কিন্তু চাকরির খাতিরে থাকতে হয়! শান্তিনগর থেকে মিরপুর ১০ এর রাস্তা মিনিট চল্লিশের বেশি লাগার কথা না। কিন্তু জ্যামের কারনে দেড় ঘন্টা লেগে গেল......

 বাসায় গিয়ে দেখি মা চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। আমি তার পাশে বসে মাথায় হাত রাখলাম। চোখ খুলে আমাকে দেখে মায়ের ঠোঁটে মৃদু হাসি ফুটে উঠলো। আমি তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইলাম। কিন্তু তিনি কিছুতেই যাবেন না আমি পাশে থাকলেই নাকি তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। টানা সাত দিন আমি মায়ের পাশে থেকে তার সেবা করলাম। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠলেন তিনি। আমার ও বিদায় নেয়ার সময় হয়ে এলো। আমি ফিরে এলাম আমার শান্তি নগরের বাসায়। বাড়ির প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকতেই দেখি এলাহি কারবার! লাল নীল বাতি দিয়ে মোড়ানো হয়েছে পুরো বিল্ডিং, বিশাল বড় বড় পাতিলে বসানো হয়েছে রান্না! রমনীরা রংবেরং এর শাড়ী পরে এদিক সেদিক হাটা-হাটি করছে। ঘটনা কি? ভাবতে গিয়ে আমার মাথা হ্যাং করলো..... আমি একটা মেয়েকে দাড় করিয়ে জানতে চাইলাম এখানে কি হচ্ছে? সে আপাদমস্তক আমাকে দেখলো। তারপর মুখ-চোখ গম্ভীর করে বললো-'এখানে চল্লিশা হচ্ছে' বলেই ফিক করে হেসে দৌড় দিলো! এজন্যই অল্প বয়সী মেয়েদের সাথে আমি কথা বলতে চাই না। তারা কথার গুরুত্ব স্থান, কাল,পাত্র না বুঝেই সব জায়গায় সস্তা রসিকতা করে আর নিজেকে বোকা প্রমান করে। স্যুট-প্যান্ট পরা একজন ভদ্রলোকের কাছে জানতে চাইলাম যে এখানে কি হচ্ছে? সে আমাকে উল্টো প্রশ্ন ছুড়ে দিলো...... -আপনি কে? -জ্বি...আমি এই বাসায় ই ভাড়া থাকি -আপনি কিছু জানেন না? -জ্বি না! -আজ তো সুমির...... আমি তার মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বললাম -সুমি মানে? আজ সুমির কী ?



↓ ______৩য় পর্ব ________


# আমি তার মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বললাম...... -সুমির মানে? আজ সুমির কি? -আজ সুমির জন্মদিন! আমি হাপ ছেড়ে বাচলাম। যাক! আমি তো ভেবেছিলাম বিয়ে টিয়ে হবে হয়তো.....

কিন্তু কোন হিসেবে বড় বোন কে রেখে ছোট বোনের বিয়ে হবে এই বিষয় টা প্রথমে আমার মাথায় আসে নি। মানব মস্তিষ্ক যখন উত্তেজিত হয়ে যায় তখন যুক্তির ধার ধারে না....

আর আমার হাপ ছেড়ে বাচার ও কোনো মানানসই কারন খুজে পেলাম না। সুমি তো আমার কেউ না? ওর বিয়ে হলেই বা কি আর না হলেই কি? এই তুচ্ছ বিষয় টা কেন আমার মনে এতো গভীর ভাবে প্রভাব ফেলবে? আমার সেইদিনের কথাটা মনে পড়ে গেলো। যখন আমি ছাদের মধ্যে সুমিকে বললাম আমার কোনো জিএফ নেই সে খুব খুশী হয়ে গিয়েছিলো! যখন শুনলাম অনুষ্ঠান টা ওর বিয়ের না তখন আমিও খুশি হয়েছি, অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। আমার আর ওর আচরনের মধ্যে যোগসূত্র আছে। আমি বুঝতে পারছি প্রকৃতি আমাদের নিয়ে একধরনের খেলায় মেতেছে.....
রহস্যময় খেলা! ঘরে ফিরে সোফায় হেলান দিয়ে চুপ-চাপ বসে রইলাম। অনুষ্ঠানের আনন্দ- উত্তেজনা মোটেও আমাকে স্পর্শ করতে পারে নি। হঠাৎ কেন জানি মন খারাপ লাগছে। অবশ্য এর যুক্তিসঙ্গত কোনো কারন খুজে পেলাম না। তবে মাঝে মাঝে মন খারাপের জন্য কোনো কারন লাগে না। অযথাই মুড অফ হয়ে যায়.....

 হঠাৎ লাফ দিয়ে উঠলাম! চোখ কচলে ডানে-বামে চেয়ে দেখি আমি সোফায় বসে আছি, তখন আকাশ-কুসুম চিন্তা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি নিজেও টের পাই নি! হঠাৎ ঘুম ভাঙার কারন হয়তো কোনো স্বপ্ন....দিবা স্বপ্ন! কোনরকম হাত-মুখে পানি দিয়ে কুচকানো শার্ট টা গায়ে দিয়েই ছাদে চললাম হাওয়া খেতে। ছাদে প্যান্ডেল টাঙানো হয়েছে, খাওয়া-দাওয়ার পর্ব টা বোধহয় এখানেই সম্পন্ন হবে আর কেক কাটা হবে সুমিদের বাসায়। আজ কে ছাদের চারপাশ লোকে-লোকারন্য! পুরুষের চাইতে সংখ্যায় কয়েকগুন বেশি মেয়েরা। একেকজনের মুখে কমপক্ষে দুই ইঞ্চি পুরু করে মেকআপ দেয়া। আমার কাছে মনে হচ্ছে স্কুলের যেমন খুশি তেমন সাজ প্রতিযোগিতায় এসেছি।

একেকজন কে উদ্ভট আর হাস্যকর দেখাচ্ছে। এদিকে মহিলাদের যার যার মেয়েকে ক্যামেরার সামনে আনতে ব্যস্ততা চোখে পড়ার মতো! এসব অনুষ্ঠানে আসলে আমার কোরবানী ইদের কথা মনে হয়ে যায়। ব্যাপারী রা তাদের গরু কে শিঙে, গলায়, কপালে মালা টালা দিয়ে সাজিয়ে হাটে আনে যেন ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষন হয়। এখনকার বাবা-মায়েরা ঠিক সেভাবে তাদের বিবাহযোগ্য কন্যাকে সাজিয়ে- গুজিয়ে বিয়ে কিংবা জন্মদিনের অনুষ্ঠানে নিয়ে আসে সবার দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য। তাহলে ব্যাপার টা দাড়ালো হাট হলো অনুষ্ঠান, ব্যাপারী হলো কন্যার বাবা-মা, কাস্টোমার হলো ছেলের বাবা-মা আর গরু হলো..... থাক! সেদিকে না যাই!! আমি চলে যাওয়ার জন্য উঠে দাড়ালাম, সিড়িতে এক পা দিতেই কোমল হাতের স্পর্শ অনুভব করলাম। পেছনে তাকাতেই দেখি স্বয়ং সুমি দাড়িয়ে আছে! মেয়েটা এমনিতেই সুন্দর কিন্তু আজ তাকে অন্যরকম সুন্দর লাগছে।
কেমন ঠিক বোঝানো যাবে না। মেয়েদের কে বিয়ের পরদিন সাধারনত এমন দেখায়। তখন তাদের চেহারায় এক ধরনের লাবন্যতা আসে। আজ সুমি কে সেরকম ই লাগছে দেখতে......

 সুমি অভিমানী কন্ঠে বললো.... -এতোদিন কোথায় ছিলেন? জানেন আমি আপনাকে কতো করে খুজেছি?
-তাই বুঝি? তা আমাকে 'কতো করে' খোজার কারন টা জানতে পারি? -আজ আমার জন্মদিন। রাত আটটায় কেক কাটা হবে, আপনি অবশ্যই থাকবেন নাহলে আমি কেক কাটবো না! -অবশ্যই থাকতে চেষ্ঠা করবো! এখন আমি যাই তাহলে। -শুনুন! -হ্যা বলো? -ছাদে এতক্ষন কি করছিলেন? -কই তেমন কিছুই না তো! কেন? -মিথ্যে বলবেন না! আমি খেয়াল করেছি আপনি মেয়েদের দিকে তাকিয়ে ছিলেন! -আরে নাহ! কি বলো এসব.... -আবার মিথ্যে! কই কখনো তো এভাবে আমাকে দেখেন নি! ওরা কি আমার চেয়েও সুন্দরী? আমি পড়ে গেলাম মহা বিপদে! এই ধরনের কথা-বার্তা একমাত্র প্রেমিকা তার প্রেমিক কে বলতে পারে। কিন্তু আমাদের মাঝে সেরকম কোনো সম্পর্ক ই নেই। সুমি হয়তো সেটা ভুলে গেছে। তরুনী মেয়েদের আবেগের পারদ খুব ঘনঘন ওঠা নামা করে। তাদের মন বোঝা বড়ই দায়। যুগে যুগে বড় বড় কবি-সাহিত্যিক রা যা পারে নি আমার দ্বারা সেটা হওয়া এক কথায় অসম্ভব। কোনো একজন মনীষি বলেছিলেন- 'মেয়েদের বুঝতে যেও না হয় প্রেমে পড়ে যাবে নয় পাগল হয়ে যাবে'। আমার অবস্থা ও হয়েছে তাই! আমি ওকে বোঝানোর বৃথা চেষ্ঠা করলাম..... -কে বলেছে ওরা তোমার চেয়ে সুন্দরী? তুমিই এখানে সবার সেরা। আর কি বললে? আমি কখনো তোমাকে ওই ভাবে দেখি নি মানে? আমি তো সব সময় ই তোমাকে দেখছি! -আচ্ছা তাহলে বলুন তো আমি এখন কি ড্রেস পড়ে আছি? হায় হায়! সত্যিই তো আমি খেয়াল করি নি! আমি চোখ টা একটু নিচে নামাতে চেষ্টা করতেই ওর ধমক খেতে হলো। কোনো এক ছবিতে এরকম পরিস্থিতিতে টলিউডের নায়ক জিৎ কে একবার পড়তে দেখেছিলাম। তার অবস্থা আর আমার অবস্থা সেম..... সুমির মন খারাপ করে আমার সামনে থেকে চলে গেলো। বাসায় এসে আমি মহা দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলাম, বড়লোকের মেয়ে দাওয়াত তো দিয়ে গেলো এখন গিফট পাবো কোথায়? মধ্যবিত্ত মানুষ আমি কোনোরকম চলা ফেরা করি। এতো বড় অনুষ্ঠান কমদামী গিফট দিলে তো আর চলে না! পকেটে যা টাকা ছিলো তা দিয়েই মন মতো একটা গিফট কিনে আনলাম। শাহরুক খানের ওম শান্তি ওম ছবিতে যে শো পিছ টা দেখা যায় আমার টা সেটাই। কিন্তু আমার টা সাইজে অনেক বড়, ফুটবলের মতো! পুতুল জোড়া কাঁচের ভেতরে কি সুন্দর করে হাত ধরে ঘুরছে, আর পেছনে মিউজিক বাজছে..... রাত ৭ টা বেজে ৫০ মিনিট। আমার কেমন জানি নার্ভাস লাগছে। মন বলছে একবার যাবো আরেকবার যাবো না। কিছুক্ষনপর মরিয়ম এসে উপস্থিত। আমাকে না নিয়ে সে যাবেই না! আমি না গেলে নাকি তার বোন কেক কাটবে না!! কি ভয়ংকর ব্যাপার স্যাপার। আমি কি এতই গুরুত্বপূর্ন কোনো ব্যক্তি? মলিন শার্ট আর রংচটা একটা জিন্স প্যান্ট পরে হাজির হলাম অনুষ্ঠানে। সুমি আমাকে দেখে মৃদু হাসলো। কিছুক্ষন পর কেক কাটার মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হলো। দাড়িয়ে দাড়িয়ে কেক কাটা দেখছি এমন সময় পেছন থেকে কে জানি গায়ের ওপর এসে পড়লো..... ঘুরে দাড়িয়ে দেখি সেই মেয়ে যে আমাকে সকালে বলেছিলো এটা নাকি চল্লিশার অনুষ্ঠান! অনেকটা অপ্রস্তুত.......!!




** ৪র্থ পর্ব **


: সুমি আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে, চোখে মুখে প্রচন্ড ক্ষোভ। হাতে কেক কাটার ছুড়ি টা শক্ত করে ধরা! সামনে দাড়িয়ে থাকা মেয়েটা আমার হাত না ছেড়েই কথা বলতে লাগলো..... -আমি মিম , সুমির কাজিন। আপনি? -আমি ....শিমুল খেয়াল করলাম আমার মুখ দিয়ে কোনো আওয়াজ বের হলো না, যা বের হলো শুধু বাতাস। গলা শুকিয়ে কাঠ। কোনো কারনে মানুষ ভয় পেয়ে গেলে এরকম অবস্থা হয়! আমি ও কি তাহলে ভয় পাচ্ছি? সুমি আমাদের সামনে এসে দাড়ালো। মিম হাত থেকে ঝটকা দিয়ে আমার হাত টা সরিয়ে নিলাম। মেয়েটা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। এমনটা কেন করলাম আমি নিজেও এ ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত নই। - মিম এখানে কি করছিস? তোকে তোর আম্মু ডাকছে, যা..... - তুই যা একটু পরে আমি আসছি - না এখনই আয় নাহলে খালা তোকে বকবে.... এই বলে সুমি প্রায় জোর করেই তাকে আমার সামনে থেকে নিয়ে গেলো। মিম পেছনে ফিরে অসহায় দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। আমি খুব ভালো করেই জানি এটা মিম কে আমার সামনে থেকে সরানোর একটা উছিলা মাত্র। সুমি মিথ্যে বলেছে যেন মেয়েটা আমার সাথে কথা বলতে না পারে। (উফ আমি সব কিছু বুঝে ফেলি কেন!? ) অনুষ্ঠান শেষে রাত বারোটার পর ঘরে ফিরলাম। ক্লান্তিতে চোখ বুজে আসছে। পোশাক টা খোলার অবশিষ্ট শক্তি (কিংবা ইচ্ছা) টুকু ও যেন নেই। এমন সময় একটা নাম্বার থেকে ফোনে কল আসলো। ভ্রু কুচকে মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকালাম। নাম্বার টা অপরিচিত! ফোন রিসিভ করতেই একটা পরিচিত মেয়েলি গলা ভেসে এলো...... -হ্যালো শিমুল ?
- হ্যা, কে বলছেন? -আজ যার জন্মদিন ছিলো..... -কে সুমি? তুমি আমার নাম্বার পেলে কোথায়? -সেটা আপনার জানার দরকার নাই। ছাদে আসতে পারবেন একটু? -মাথা খারাপ? রাত কয়টা বাজে হিসেব আছে? লোকে দেখলে কি বলবে? -আমার এতো কিছু জানার দরকার নাই! আসতে বলেছি আসবেন ব্যাস!! পরক্ষনেই লাইন টা কেটে গেলো। অনেকবার ফোনে ট্রাই করেও পেলাম না তাকে। কিছুতেই ফোন ধরছে না জেদি মেয়েটা! আমার ও রাগ উঠে গেলো। সিদ্ধান্ত নিলাম যাবো না ছাদে, দেখি কি করে ও! এসব ভাবতে ভাবতে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম। ঘুম ভাঙতেই মোবাইলে তাকিয়ে দেখি দুুই ঘন্টা পার হয়ে গেছে। সুমির কথা মনে পড়লো। ও কি এখনো ছাদে আছে? এতক্ষন তো কখনোই থাকার কথা নয়। ওর কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ঘুমোতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসতে চাইছে না। মনটা খচখচ করছে। শেষমেষ ছাদে যাবো বলে মনস্থির করলাম..... গুটিগুটি পায়ে নিঃশব্দে ছাদে গিয়ে উঠলাম। চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখি কেউ নেই। নেমে যাওয়ার আগে আরেকবার ভালো করে তাকাতেই দেখি আমার ধারনা ভুল। সুমি এখনো অপেক্ষা করছে আমার আসার জন্য। একটা কোনায় চুপচাপ বসে আছে! কিন্তু ওর বসার ভঙ্গি দেখে ভয় পেয়ে গেলাম। বিপজ্জনক ভাবে রেলিংয়ের সাইডে পা ঝুলিয়ে বসে আছে সে। যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে.... আমি ওর পেছনে গিয়ে কয়েকবার ডাক দিলাম সাইডে থেকে চলে আসতে। কিন্তু কিছুতেই সে আমার কথা শুনছে না। শেষমেষ বাধ্য হয়েই তাকে জাপটে ধরে কোলে তুলে নিয়ে আসতে হলো..... মেয়েটার চেহারায় এখনো পার্টি সাজ আছে। চেহারায় হাল্কা মেকআপ, ঠোটে লাল লিপ্সটিপ, পরনে কালো শাড়ী। সকল কবি-সাহিত্যিকদের গল্পের নায়িকা সুন্দরী হয় আর তারা সবসময় লাল নাহলে নীল শাড়ি পরিহিত থাকে। যা দেখে নায়ক প্রেমে পড়ে। কিন্তু সাহিত্যিকগণ কি কখনো দেখেছেন একজন সুন্দরী রমনী কালো শাড়ী পড়লে তাকে কি রকম দেখায়? আমার মন চাইছে তাদের ডেকে এনে দেখাই! স্বর্গের অপ্সরী ও সুমি কে দেখে তিনবার 'সুবাহানআল্লাহ' বলবে। সুমি এখনো আমার কোলেই আছে। সময় যেন থমকে গেছে। আইনস্টাইনের থিওরী অব রিলেটিভিটির ভাষায় একে টাইম ডিল্যুশন বলে। এর কার্যকারিতা যখন শুরু হয় তখন মনে হয় সময় স্থির হয়ে আছে। চাঁদের ম্লান আলো তার মুখে পড়ছে, দেখলাম মেয়েটার চোখের পাতা থিরথির করে কাপছে। নাহ! সময় থেমে যায় নি তাহলে.... চলতে শুরু করেছে। তবে স্বাভাবিক ভাবে নয়, সিনেমার স্লো মোশন এফেক্টের গতিতে.... মনে হচ্ছে অনন্তকাল ধরে তার চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকতে পারবো আমি। আমার ধারনা কোলে যে মেয়েটা শুয়ে আছে সে সুমি নয়, রুপকথার পাতা থেকে উঠে আসা স্লিপিং বিউটি..... এতক্ষন এক ধরনের ঘোরের মধ্যে ছিলাম আমি। হঠাৎ সংবিৎ ফিরে এলো। কোল থেকে নামিয়ে দিলাম তাকে। নামাতে না নামাতেই সে আমাকে জড়িয়ে ধরলো! জড়িয়ে ধরে সে কি কান্না..... সুমির মতো মেয়েদের যেমন প্রচন্ড জেদ থাকে তেমনি থাকে বুক ভরা ভালোবাসা। সেই ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ করতে গিয়ে তারা যখন তখন কেঁদে ফেলে। এদের চোখে সম্ভবত অশ্রু ভরাই থাকে। স্থান বুঝে তা বাধ ভেঙে বেরিয়ে আসে। হুমায়ূন আহমেদ তার সাহিত্যে এ ধরনের মেয়েদের 'অশ্রুকন্যা' হিসেবে অভিহিত করেছেন..... সুমি কাদছো কেন? -আপনি এতো দেরিতে আসলেন কেন? -ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, তুমি তো চলে গেলেই পারতে? -আমার মন বলছিলো আপনি আসবেন, ঠিকই এসেছেন.... -কেন ডেকেছিলে আমায়? -আপনার উপহার টা খুব খুব খুব পছন্দ হয়েছে আমার! অংখ্য ধন্যবাদ.... -আরে ধুর কি বলো! ওটা নিতান্তই একটা সস্তা জিনিস। দাম মাত্র.... সুমি মুখ চেপে ধরলো আমার। -উপহার কে কখনো মূল্য দিয়ে বিচার করতে নেই! দাম যতই হোক সেটা আমার কাছে কোটি টাকার চেয়ে দামী.... মেয়েটা খুব রহস্য করে কথা বলে। আমার কাছে হয়তো চাইনিজ কিংবা হিব্রু ভাষার মর্ম ভেদ করা সম্ভব। কিন্তু ওর কথার আগা-মাথা বোঝা কিছুতেই সম্ভব না। একটা সস্তা শো পিস কেন কোটি টাকার চেয়ে দামী হবে সেটা কিছুতেই আমার মাথায় ঢুকলো না..... -আরেকটা কথা! আপনি তখন মিম হাত ধরে কি কথা বলছিলেন? প্রপোজ টপোজ করে বসেন নি তো আবার? -নাউযুবিল্লাহ! সেই তো আমার কাছে এসে পরিচিত পরিচিত হতে চাইলো.... -একদম পাত্তা দেবেন না ওকে। ছেলে দেখলে ছোকছোক করা ওর স্বভাব। আমি ওর কথায় না হেসে পারলাম না। আমি জানি মিম তার কাজিন হলেও হলেও ওদের সম্পর্কটা বন্ধুর মতো। মেয়েদের বন্ধুত্ব যতই গভীর হোক না কেন তাতে কিছুটা হলেও হিংসা থাকবেই। সেটা হতে পারে গায়ের রং নিয়ে, কে কতোটা ভালো ছাত্রী তা নিয়ে কিংবা বয়ফ্রেন্ড নিয়ে! এসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে তাদের মাঝে দ্বন্দ থাকে। কিন্তু এদের মাঝে অনেকেই একে অপরের জন্য জান ও দিতে পারে। কি অদ্ভুদ! মেয়েদের সাইকোলজি বোঝা টা ফিজিক্সে পিএইচডি করার চেয়েও কঠিন.... মিম মেয়েটা অনেকদিন বাঁচবে বলতে হবে। কথা শেষ হতে না হতেই দেখি ও দরজার সামনে এসে দাড়িয়ে আছে! ওকে দেখে চমকে গেলেও দ্রুত সামলে নিলাম.... -এই তোকে না বললাম এখানে না আসতে? সুমির কন্ঠে স্পষ্ট বিরক্তি.... -কি করবো এতো রাত হয়ে গেলো অথচ তুই ঘরে ফিরছিলি না তাই দেখতে এলাম বেঁচে আছিস না মরে গেছিস! -দেখছিস ই তো বেঁচে আছি এখন যা! মিম মুখ টা কালো করে চলে গেলো.... এতক্ষনে সুমি আমার সাথে কথা বলার সুযোগ পেলো। -কাল কি আপনি ফ্রি আছেন? -কেন বলো তো? -আপনার সাথে একটু বের হতাম.... -কোথায় যাবে? -নিরিবিলি কোনো পরিবেশে, যেখানে ডিম মানে মিম নামের কোনো কাবাবের হাড্ডি নেই! -এক সপ্তাহ অফিসে যাই নি, মায়ের শরীর খারাপ ছিলো। অনেক কাজ জমে আছে। আগামীকাল সারাদিন বিজি থাকতে হবে। আমি দুঃখিত সুমি .... মেয়েটা মন খারাপ করে চলে গেলো। পেছন থেকে ডাকলেও কোনো কথা শুনলো না। সকালে অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি এমন সময় শুভ র কল আসলো। শুভ আমার অফিস কলিগ, খুব ভালো বন্ধু ও। -কিরে শিমুল? অফিসে আসছিস না কেন? -মায়ের শরীর খারাপ ছিলো রে! সমস্যা নেই আমি আজ অফিসে আসবো.... -দ্রুত আয়! তোর পাশের টেবিলে নতুন কলিগ এসেছে। তাকে কাজ বুঝিয়ে দিতে হবে। উপর তলা থেকে বারবার এসে কাজ বোঝানো আমার পক্ষে সম্ভব না। অফিসে ঢুকেই আমার টেবিলে ফাইল- পত্র নিয়ে বসে পড়লাম। একটু পর শুভ এসে উপস্থিত। -শিমুল পরিচিত হয়ে নে। উনি আমাদের অফিসে নতুন জয়েন করেছেন, তোর পাশের টেবিলেই ওনার ডেস্ক। দেখলাম ওর পাশে একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে। চোখে কালো ফ্রেমের চশমা, লম্বা ছিপছিপে গড়ন, গোলগাল চেহারা, গাত্রবর্ণ লালচে ফর্সা। দেখলে হাই স্কুলের টিচারদের কথা মনে আসে। -আসসালামুআলাইকুম, আমি রিয়া। বলেই হাতটা বাড়িয়ে দিলো। আমি হাতটা ধরার আগে ডানে বামে দেখে নিশ্চিত হয়ে নিলাম সুমি আছে কি না! না নেই, হাত টা তাহলে ধরা যায়.... -আমি শিমুল পরিচিত হয়ে ভালো লাগলো.... -রিয়া, অফিসের যা টুকটাক কাজ আছে শিমুল তোমাকে বুঝিয়ে দেবে। শুভ বললো... মেয়েটা বেশ তড়িৎকর্মা। একটু দেখিয়ে দিলেই সব বুঝে যায়। এমন কলিগের সাথে কাজ করেও মজা আছে। শুধু তাই না, রিয়া অনেক ফ্রেন্ডলি। কথা বলার সময় সারাক্ষন মুখে হাসি লেগেই থাকে! অফিস শেষে শুভ আমাকে আর রিয়াকে তার গাড়িতে উঠতে বললো। যেহেতু আমরা একই রাস্তা দিয়ে যাবো তাই আপত্তি করলাম না। মাঝপথে সে একটা রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি থামালো। কারন জানতে চাইলে বললো তার নাকি খুব ক্ষিদে পেয়েছে। অবশ্য এমন কোনো মূহুর্ত নেই যখন তার পেটে খিদে থাকে না। কখনো কম কখনো বেশি। তার সাথে বন্ধুত্বের সুবাদে এই বিষয় টা আমার অজানা নয়। রেস্টুরেন্ট টা বেশ বড়। কর্নারের একটা টেবিলে বসলাম আমরা তিনজন। ওয়েটার কে ডেকে একগাদা খাবার অর্ডার দিলো পেটুক শুভ। এত খাবার কে খাবে আমার মাথায় ধরছে না। কিছুক্ষন পর ওয়েটার এসে খাবার দিয়ে গেলো। খাবারের ওপর প্রায় ঝাপিয়ে পড়লো শুভ। কিন্তু বেচারা বেশিক্ষন চালিয়ে যেতে পারলো না। তার বউ ফোন দিলো। আসার সময় স্কুল থেকে বাচ্চাকে নিয়ে আসার দায়িত্ব পড়লো বেচারার উপর। সে আমাদের কে বসিয়ে রেখে চলে গেলো। আমি পড়ে গেলাম দারুন অস্বস্তি তে। আমি রিয়া কে ভালো ভাবে চিনি না সেও আমাকে চেনে না। আজই তো পরিচয় হলো..... পরিবেশ হাল্কা করার জন্য মেয়েটা আলাপ জমাতে চেষ্টা করলো। কিছুক্ষনের মধ্যেই কথা-বার্তা বেশ জমে উঠলো। এখন আর তাকে অপরিচিত মনে হচ্ছে না। যে কোনো পরিস্থিতি নিজের কন্ট্রোলে নিয়ে আসার এক ধরনের ক্ষমতা আছে তার। দুজনের মধ্যে কথা তো চলতে থাকলোই পাশাপাশি আমরা হাসি-ঠাট্রায় ও মেতে উঠলাম। কিন্তু আমার হাসি পরিনত হলো আতঙ্কে যখন রেস্টুরেন্টের দরজা দিয়ে মিম আর সুমি।কে ভেতরে প্রবেশ করতে দেখলাম। পরিস্থিতি হয়তো সামাল দিতে পারতাম কিন্তু সমস্যা হলো আমার চোখে চোখ পড়ে গেলো তার......


** ৫ম পর্ব **


: পরিস্থিতিটা হয়তো সামাল দিতে পারতাম কিন্তু আমার চোখে চোখ পড়ে গেলো তার। রিয়া আমার হাত ধরো বললো.... -এই শিমুল কি দেখছো? -কই নাতো! কিছু নাহ.... সুমি রেগেমেগে গটগট করে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গেলো। মিম তার পিছু সুমি আমি ও দৌড়ে তাদের পথ অনুসরন করলাম। পিছে না তাকিয়েও আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম রিয়া মেয়েটা আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে.... বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে (যদিও এখন বৃষ্টির মৌসুম নয়)। ঝড়ো বাতাসে সামনের কয়েক ফুটের কিছু দেখাও দায়। এরই মধ্যে আবছা ভাবে দেখতে পেলাম সুমি আর মিম কে। বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হয়ে গেছে। আমি তাদের সামনে গিয়ে পথরোধ করে দাড়ালাম। সুমি মিমকে বাসায় যেতে বললো। কিন্তু মিম তাকে একা ছেড়ে যেতে নারাজ। শেষমেষ ধমক খেয়ে অগত্যা বাড়ির পথ ধরলো..... এতক্ষনে খেয়াল করলাম সুমির শরীরে ওড়না নেই। রেস্টুরেন্ট থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার সময় কখন যে পড়ে গেছে হয়তো নিজেও খেয়াল করে নি! রাস্তার পাশে দোকানের ছাউনিতে দাড়িয়ে থাকা লোকগুলো বদ নজরে ওর দিকে তাকাচ্ছে। ব্যাপার টা আমার মোটেই ভালো লাগছে না। সুমির মতো মেয়েরা যদি বোরখা ও পড়ে তবুও তাদের সৌন্দর্য ঠিকড়ে বের হয়। আর মানুষ তাদের দিকে কু-নজরে তাকায়। আর এখন তো ভেজা শরীরে তাও আবার ওড়না ছাড়া! কি সাংঘাতিক ব্যাপার.... আমি আমার শার্ট টা খুলে ওর গায়ে জড়িয়ে দিলাম। আমি এখন শুধু একটা স্যান্ডো গেঞ্জী পড়া। মেয়েটা থরথর করে কাঁপছে। দেখে আমার ভীষন মায়া লাগলো। ইচ্ছে করছে ওকে জড়িয়ে ধরে আমার সমস্ত উষ্ঞতা ওকে দিয়ে দেই। কিন্তু সেটা সম্ভব নয়.... -সুমি চলো বাসায় চলো, বৃষ্টিতে ভিজলে তোমার ঠান্ডা লাগবে! -আমার ঠান্ডা লাগলেই কি আর আমি মারা গেলেই কি? আপনার কিছু এসে যায়? মেয়েটার চোখে চোখ রাখলাম আমি। সেখানে গভীর অভিমান লুকিয়ে আছে, আর সেই অভিমান অশ্রু হয়ে চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে। 'বৃষ্টির পানির রহস্যময়তা হচ্ছে ঝমঝম বৃষ্টির মধ্যেও তা আলাদা করা যায়।' হুমায়ূন আহমেদ যে এই উক্তি শুধু শুধু করে নি তা আজ নিজের চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি। অঝোর বৃষ্টির মধ্যে একটি ছেলে আর একটি মেয়ে রাস্তায় দাড়িয়ে আছে। মেয়েটা অভিমান করে আছে আর ছেলেটা রাগ ভাঙাচ্ছে। আমাদের সামনে একটা ক্যামেরা থাকলে কোনো রোমান্টিক নাটকের শ্যুটিং বলে চালিয়ে দেয়া যেতো..... -সুমি পাগলামি করো না, চলো বাসায় চলো.... -না যাবো না আমি!!! -আচ্ছা তুমি রাগ করে আছো কেন বলো তো? আমার সাথে কোনো মেয়ে কে দেখলে তুমি এমন করো কেন? আমি কে হই তোমার.... -একটা মেয়ের না বলা ভাষাটুকু বোঝার ক্ষমতা আপনার নেই। মেয়েদের বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না এই কথাটা আপনার জানা আছে? -এতো কিছু আমি কি করে বলবো? আমি কি মেয়ে নাকি? -তাহলে কোনো ছেলে কে বিয়ে কইরেন! মেয়েটার শরীরে প্রচন্ড রাগ। ওভারলোডের কারনে যেমন বৈদ্যুতিক সংযোগের শর্ট-সার্কিট হয়ে যায় তেমনি প্রচন্ড রাগের কারনে তার মাথার দুই- একটা তার সম্ভবত ছিড়ে গেছে। যাদের মাথার তার ছিড়া তাদের পাগলামি শুরু হয় চৈত্র-বৈশাখ মাসে। এই শ্রেনীর পাগলদের 'চৈতা পাগল' বলে। কিন্তু এখন তো ষোল আনা বসন্ত! ওর নাম কি তাহলে 'বাসন্তী পাগল' কিংবা 'বাসন্তী পাগলী' দেয়া যায়? খারাপ হয় না তাহলে.... একটা ছেলে হয়ে আরেকটা ছেলে কে কি করে বিয়ে করবো আমি? এসব উদ্ভট কথার কোনো মানে হয়? -আমি আপনাকে ভালোবাসি!!! আপনি বোঝেন না গাধা? তাই অন্য মেয়ের সাথে দেখলে জেলাস ফিল হয়... ও আমাকে ভালোবাসে আমি খুব ভালো করেই জানি। কিন্তু এখন যে আচমকা বলে ফেলবে তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না! এতোদিন আমি না বোঝার ভান করে থাকতাম কিন্তু এখন সমস্যা টা হচ্ছে সে তার মনের কথাটা বলে দিয়েছে। এখন আর সেটা করা সম্ভব নয়..... -শিমুল তুমি আমায় ভালোবাসো না?
আপনি থেকে সরাসরি তুমি তে চলে গেলো সুমি... -দেখো সুমি আজ এপ্রিল ফুল না। সো ফান করা বন্ধ করো.... -আমার কথা শুনে কি আপনার ফান মনে হচ্ছে? কি করলে আপনার আমার কথা সিরিয়াস মনে হবে শুনি? ওই যে চলন্ত বাসটার নিচে লাফ দিবো? ওয়েট! সুমি এক পা বাড়ালো.... আর ওমনি আমি টান দিয়ে বুকে জড়িয়ে নিলাম। আমি কোথায় আছি এই কথাটা তখন আর আমার মাথায় নেই। চেপে না রাখতে পেরে আমিও বলে দিলাম মনের কথা.... -পাগলী আমিও তোমাকে খুব ভালোবাসি! তুমি কি আমার বাবুর আম্মু হবে? -সত্যি বলছো তো? -হ্যা সত্যি বলছি.... পাগলীটা লজ্জায় আমার বুকে মুখ লুকালো। (ব্যাকগ্রাউন্ডে আশিকি টু ছবির গান হলে ভালো হতো) পেছনে শিষ আর কড়তালির আওয়াজ শুনলাম। লোকগুলো ছাউনির নিচ থেকে এতক্ষন আমাদের রোম্যান্স দেখছিলো! কি লজ্জার কথা...!! আমি আর সুমি সেখান থেকে দ্রুত কেটে পড়লাম। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শুতেই বৃষ্টিতে ভেজার মজা টের পেলাম। শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বাড়ছে। জ্বর টর আসতে পারে.... রিয়াকে ফোন দিয়ে কোথায় আছে জানতে চাইলাম। সে বললো আমাদের অফিসের আশে-পাশেই কোথাও এক জায়গায় আছে, কি এক কাজে এসেছে। রিয়াকে জরুরী একটা কথা বলা দরকার। কিন্তু ঠিক ভরসা পাচ্ছি না। তবে ওর আচার-আচরন, কথা-বার্তা আমার কাছে ভালোই লেগেছে.... -রিয়া তুমি তো অফিসের পাশেই আছো! একটা কাজ করে দিবে প্লিজ? যদি কিছু মনে না করো? -অবশ্যই, বলো কি কাজ? -অফিসে আমার ডেস্কের উপর কিছু ফাইল আর হিসাবের কাগজ-পত্র আছে, একটু কষ্ট করে আমার বাসায় নিয়ে আসতে পারবে? এক সপ্তাহের জমানো কাজগুলো শেষ করতে হবে। নাহলে চাকরি নিয়ে টানাটানি হয়ে যাবে..... -এ আর এমন কি কাজ? তোমার ঠিকানা বলো? আমি তাকে আমার ঠিকানা দিয়ে দিলাম। মেয়েরা তেমন একটা হেল্পফুল হয় না। হেল্প চাইলে নানা টালবাহানা করে। কিন্তু ও একেবারেই ব্যতিক্রম! সন্ধ্যার দিকে আমি বারান্দায় বসে বৃষ্টি দেখছিলাম। দরজায় টোকা পড়লো। ভাবলাম রিয়া এসেছে। কিন্তু না দরজার ওপাশে সুমির বড় বোন মরিয়ম দাড়িয়ে আছে। হঠাৎ আসার কারন জানতে চাইলে বললো, সে আর তার বাবা-মা নাকি ঢাকার বাইরে কোন এক বিয়ের অনুষ্ঠানে যাচ্ছে। আগামীকাল নাগাদ ফিরবে। বাসায় সুমি আর মিম কে রেখে যাচ্ছে। কারন বৃষ্টিতে ভিজে সুমি নাকি জ্বর বাধিয়ে বসেছে। ওদের কোনো সমস্যা হলে যেন আমি দেখি..... দুইটা মেয়েকে একটা ব্যাচেলর ছেলের পাহারায় বাসায় রেখে যাওয়া হচ্ছে। ব্যাপার টা ইন্টারেস্টিং! পৃথিবীর ইতিহাসে এমন নজির আছে কিনা আমার জানা নাই..... তবে একটা ব্যাপার বুঝলাম ওর ফ্যামিলির সবাই আমাকে বিশ্বাস করে! বিশাল কালো গাড়িটায় চড়ে মরিয়মদের চলে যেতে দেখলাম। আর ওদের যাওয়ার প্রায় সাথে সাথে রিয়া এসে উপস্থিত! হাতে একগাদা ফাইল-পত্র নিয়ে দরজার সামনে হাসি-মুখে দাড়িয়ে আছে মেয়েটা..... মেয়েরাই সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে বৈচিত্র্যপূর্ন প্রানী। পৃথিবীর সাতশ কোটি মানুষের মধ্যে সম্ভবত সাড়ে তিনশ কোটি মেয়ে। আর এদের একেকজনের স্বভাব একেকরকম। রিয়া আর সুমিকে দেখলেই সেটা বোঝা যায়.... আমি তাকে ভেতরে আসতে বললাম। লম্বা চুলগুলো ভিজে গেছে বৃষ্টিতে। তাকে একটা তোয়ালে এগিয়ে দিলাম চুল মোছার জন্য। তার দীঘল কেশ কোমড় ছাড়িয়ে পড়েছে। সে মুছতে শুরু করলো। আমার মমতাজের গানটার কথা মনে পড়ে গেলো-খায়রুন লো....তোর লম্বা মাথার কেশ..... আমি বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকতে পারলাম না। কোনো পুরুষ ই সম্ভবত পারবে না। চোখ ঝলসে যেতে পারে। পুরুষ জাতি তাদের স্ত্রীদের এমন দৃশ্য দেখলে পেছন দিয়ে জড়িয়ে ধরে। -এভাবে কি দেখছো? রিয়ার ঠোটে মুচকি হাসি! আমি লজ্জা পেয়ে গেলাম... -ক.....কই না তো! ক....কিছু নাহ!! -কিছু না দেখেই এই অবস্থা? আর দেখলে কি করবা? খাইছে! রিয়াও তো দেখছি কম দুষ্টু নাহ! জীবনের প্রথম কোনো মেয়ে পরিচয়ের প্রথম দিনে আমার সাথে এতোটা ঘনিষ্ঠ হয়েছে। এটাই ওর আশ্চর্য একটা গুন। খুব সহজেই মিশে যেতে পারে সবার সাথে..... ওর রসিকতায় আমরা দুজন অনেকক্ষন হাসলাম। হঠাৎ সুমির কথা মনে পড়লো। মেয়েটার শরীর খারাপ। ওর কাছে যেতে হবে..... -রিয়া তুমি একটু বসবে? আমি একটু নীচ তলায় যাবো। -ওকে যাও, আমি কি তোমার কাজ গুলো গুছিয়ে ফেলবো? -আরে বাহ! এতো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। তুমি এগিয়ে রাখো আমি আসছি.... আমি সুমিদের বাসায় গেলাম। দেখি সুমি ঘুমিয়ে আছে। আমি তার কপালে হাত রাখলাম। জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। কপালে হাতের স্পর্শ সে চোখ মেলে তাকালো। আমাকে দেখে সে খুব খুশী হয়ে গেলো। আমার হাত টা জড়িয়ে ধরে বললো..... -তুমি এসেছো? আমি খুব খুশী হয়েছি, ভেবেছি আসবে না..... -আসবো না কেনো? তোমার শরীর খারাপ আর আমি আসবো না? -এই তোমার মুখ টা একটু সামনে আনো তো কানে কানে একটা কথা বলবো.... আমি মুখ টা তার সামনে বাড়িয়ে দিলাম। আর ওমনি সে টুক করে চুমু খেয়ে বসলো! পাশে বসে থাকা মিম চেহারা দেখে মনে হচ্ছে এই মাত্র পৃথিবীর সবচেয়ে বিভৎস দৃশ্য টা সে দেখলো। -সুমিএটা তুমি কি করলে? -কেন? আমার ভালোবাসার মানুষটা কে চুমু খেলাম! আমাদের কথা-বার্তা শুনে মিম রাগে আমাদের সামনে থেকে উঠে চলে গেলো। ওর এমন প্রতিক্রিয়ার কারন কি আমার জানা নাই..... বাইরে তুমুল বৃষ্টি। আমি চলে যেতে চাইলাম। কিন্তু সুমি কিছুতেই আমাকে যেতে দিবে না! অগত্যা আমি তার পাশে বসে রইলাম। সে ঘুমালে আমি চুপি- চুপি বাসায় চলে গেলাম। গিয়ে দেখি রিয়া কাগজ-কলম নিয়ে ব্যস্ত.... -কাজ কতোটুকু হলো? -এই যে মাত্র শেষ হলো..... মেয়েটার ওপর মনে মনে কৃতজ্ঞ হয়ে গেলাম। এতোটা উপকার কেউ কাউকে করে না! - তো এখন বাসায় যাবে না? চলো তোমাকে এগিয়ে দিয়ে আসি..... -বাইরে তো বৃষ্টি হচ্ছে! কিভাবে যাবো? -তা ও তো কথা! ঠিকাছে বৃষ্টি থামার অপেক্ষা করো..... বৃষ্টি তো থামলোই না বরং কারেন্ট টাই চলে গেলো! বৃষ্টির তেজ যেন ধীরে ধীরে বাড়ছে। -আমি বরং আজ রাত টা থেকে যাই। তোমার কোনো সমস্যা হবে? আমি বেশ চিন্তায় পড়ে গেলাম। -আমার কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু তুমি বাসায় কি বলবে? -সেটা নিয়ে কোনো সমস্যা নাই। আমি মহিলা হোস্টেলে থাকি ফ্যামিলির সাথে না! -ঠিকাছে তুমি থাকো, আমি বরং ছাদে গিয়ে বসি, বৃষ্টি দেখি। -ঘুমাবে না? -তুমি ঘুমিয়ে থাকো। আজ রাতটা না ঘুমালে কিছু হবে না! -কিন্তু.... -তুমি থাকো তো, আমার কোনো সমস্যা হবে না। ভেতর থেকে গেট টা লাগিয়ে দাও। আমি ছাদে চলে গেলাম। ছাদের গেট টা খুলে সিড়িতে বসে বৃষ্টি দেখতে দেখতে একসময় ঘুমিয়ে পড়লাম। উঠে দেখি সকাল হয়ে গেছে। বাসার দরজা নক করতেই রিয়া দরজা খুলে দিলো। ভেতর থেকে খাবারের সুগন্ধ ভেসে আসছে। দেখলাম কয়েক পদের তরকারি টেবিলে সাজানো। ফ্রিজে যা ছিলো তাই দিয়ে ই রান্না করেছে। আমরা এক সাথে ব্রেকফাস্ট করলাম। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে ও বিদায় নিলো। তাকে দরজার সামনে এগিয়ে দিলাম। এবং আবারো সুসংবাদ!!!! দরজা খুলেই সুমির মুখটা দেখতে পেলাম...... আমি জানি ও এখন কি ভাববে! আমি রিয়ার সাথে রাত কাটিয়েছি!!


** ৬ষ্ঠ পর্ব **

: আমি জানি ও এখন কি ভাববে! আমি রিয়ার সাথে রাত কাটিয়েছি.... সুমি ভুত দেখার মতো চমকে উঠেছে! এমন কিছু দেখবে সে হয়তো কল্পনা ও করেনি। তার হাতে একটা খাবার প্লেট। শরীরে জ্বর নিয়েও আমার জন্য কি যেনো রান্না করে এনেছে মেয়েটা। আস্তে করে মাথা নিচু করে চলে গেলো সে। আমি জানি ও এখন বাসায় গিয়ে বালিশ জড়িয়ে কাঁদবে। -মেয়েটা কে? রিয়ার প্রশ্ন... -আমাদের বাড়িওয়ালার মেয়ে। -এভাবে চলে গেলো কেন? -বলতে পারবো না, আচ্ছা এখন কি তুমি সরাসরি অফিস যাবে? -হ্যা... -আচ্ছা তুমি যাও, আমি আসছি। -ঠিকাছে... রিয়া চলে গেলো। আমার এখন কি করা উচিৎ বুঝতে পারছি না। কি বলে সুমি কে বুঝ দিবো? অফিসে যাওয়ার পথে সুমির বাসার কলিংবেল অনেকবার টেপা সত্বেও কেউ দরজা খুললো না। আমি মন খারাপ করে চলে গেলাম..... অফিসে গিয়ে দেখি বাবা বসে আছেন। আমি অবাক হয়ে গেলাম.... -বাবা তুমি এখানে? -হ্যা, জরুরী একটা কাজে এসেছি। আমার হাজার দশেক টাকা লাগবে। তোর মায়ের শরীর আবার অসুস্থ হয়ে গেছে, হাসপাতালে নিয়ে কিছু টেস্ট করাতে হবে। অফিসে আমার কয়েকমাসের বেতন জমা আছে। একা মানুষ তেমন খরচ লাগে না বলে রেখে দিয়েছি। সেখান থেকে টাকা উঠিয়ে বাবার হাতে দিলাম। বাবা চলে যাবে এমন সময় রিয়া এসে উপস্থিত। বাবার সঙ্গে রিয়াকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে আমি আমার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। কিন্তু পুরোপুরি মন বসছে না। বারবার সুমির কথা মনে হচ্ছে! কল্পনায় দেখতে পাচ্ছি মেয়েটা গাল-মুখ ফুলিয়ে একা একা বসে আছে! অফিস শেষে বাসায় ফেরার পথে ওর জন্য একটা ফুলের তোড়া আর বেশ কিছু ডেইরি মিল্ক চকলেট নিলাম। মেয়েদের রাগ ভাঙাতে এগুলোর জুড়ি মেলা ভার! এবার একবার কলিংবেল টিপতেই মিম গেট খুলে দিলো.... -এই! সকালে গেট খুললে না কেন? -আমি কি করবো? সুমি ই তো খুলতে দেয় নি! তুমি দাড়িয়ে থাকলে আমার ও কি ভালো লাগে বলো? সর্বনাশ! ওর কথা-বার্তার ধরন মোটেও সুবিধার নয়। অনেকটা স্ত্রী স্বামীর কাছে কোনো কিছুর বায়না ধরলে যেমন করে অনেকটা সেরকম। আমার মনে হয় সুমি যদি আমার সাথে প্রেম না করতো তাহলে ও একটা চান্স নিতো..... যা ভেবেছি তাই, মেয়েটা একা একা মন খারাপ করে বসে আছে.... -সুমি? এই সুমি সুমি কোনো কথা কথা বললো না.... -রাগ করেছো? তুমি যা ভাবছো ভুল! -আমার চোখ ও কি ভুল? এই প্রথম ও মুখ খুললো.... -হ্যা, চোখও অনেক সময় ভুল করে সুমি -রাতে ওই মেয়ের জন্যই আমাকে ঘুমে রেখে চলে গিয়েছিলে তাই না? -উফ সুমি মোটেই না.... আমি সব ঘটনা ওকে খুলে বললাম। ওর ভুল ভেঙে গেলো, আমার কাছে লজ্জিত হলো সে। যাক! অবশেষে বোঝাতে তো পেরেছি? এই ই শান্তি..... -সুমি তোমার জন্য গিফট এনেছি! -কই দেখি দেখি? -এই যে নাও.... গিফট পেয়ে বাচ্চা মেয়েদের মতো খুশি হয়ে উঠলো পাগলি টা। অফিসের কাজের ব্যস্ততা, সুমির সাথে খুনসুটি ভালোই কেটে যাচ্ছিলো দিনগুলি! একদিন রাতে বাবা ফোন দিলো.... -হ্যালো? -হ্যা বাবা বলো.... -কাল সকালে বাড়ি চলে আয় তো বাবা। -কিন্তু কেন? -তোর মা জানে জানে, তুই তাড়াতাড়ি চলে আয়.... ফোনটা কেটে গেলো। মা যেহেতু বলেছে সেহেতু যেতেই হবে। কিন্তু কারনটা জানতে মন খচখচ করছে! সকাল ৯ টা নাগাদ আমি বাসায় এসে উপস্থিত। আমাকে হঠাৎ আসতে বলার কারন টা মায়ের কাছে জানতে চাইলাম। মা কিছু বললো না। শুধু বললো- 'আমার সাথে আয়।' আমি মায়ের পিছু পিছু গাড়িতে উঠলাম। বাবাও উঠলো। আমার মনে হচ্ছে আমাকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। অন্য কেউ হলে হয়তো সত্যি ভেবে নিতাম। কিন্তু স্বস্তি পাচ্ছি আমার পাশে আমার বাবা-মা বসে আছে। 'সিকদার ভিলা' নামের একটা বাড়ির পাশে গাড়ি টা থামলো। বাড়ি টা বেশ বড়, চারপাশে ফুলের বাগান। এক মধ্য বয়সী ভদ্র মহিলা দরজা খুলে দাড়িয়েই ছিলো, সাথে এক বয়স্ক ভদ্রলোক। সম্ভবত মহিলার হাজবেন্ড। আমরা বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলাম। ভেতর টা বেশ পরিচ্ছন্ন আর গোছানো। ডুপ্লেক্স স্টাইলের বাড়ি। -কই আপা আপনাদের মেয়ে কে নিয়ে আসুন! আমার তো দেখার জন্য তর সইছে নাহ....! মায়ের কথা শুনে আমি আকাশ থেকে পড়লাম! 'আপনাদের মেয়ে কে নিয়ে আসুন' আজব! এর মানে কি? এসব কি হচ্ছে এখানে? এতক্ষনে সব মাথায় ঢুকলো আমার। আমার বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে আসা হয়েছে এখানে। অথচ আমিই জানি না! যেন বিয়ে টা আমি না, আমার বাবা-মা ই করছে..... একটু পর ঘোমটা দেয়া এক রমনীর আবির্ভাব ঘটলো। আমাদের নাক বরাবর বসানো হয়েছে তাকে। -মা ঘোমটা সরাও? তোমার চাঁদ মুখ টা একটু দেখি? মা বললো.... তারপরের ঘটনা আরো ভয়াবহ! এই অকাজের মুলে যে আমার বাবা রয়েছে তা আর বুঝতে বাকি রইলো না। মেয়ের মুখ দেখে মা খুশি হলেও আমি খুশি হতে পারলাম না বরং আতকে উঠলাম কারন ওই 'চাঁদ মুখ' টা আমার খুব চেনা..... ঘোমটা দেয়া মেয়েটা আর কেউ না, আমার অফিস কলিগ 'রিয়া'.....


** ৭ম পর্ব **


: ঘোমটা দেয়া মেয়েটা আর কেউ না আমার অফিস কলিগ রিয়া..... মেয়েটা আমার দিকে আড় চোখে চাইছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। আমার মন চাচ্ছে উঠে চলে যাই। কিন্তু ভদ্রতার খাতিরে সেটা করা সম্ভব হচ্ছে না। -মাশাআল্লাহ, এতো দেখছি ডানা কাটা পরী! মেয়ে আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে! কি বলো ছেলের বাবা? -পছন্দ না হলেই কি তোমাকে এখানে নিয়ে এসেছি? তা ভাবী ছেলে কে আপনাদের পছন্দ হয়েছে তো! নাকি.... (রিয়ার মা কে উদ্দেশ্য করে বাবা) -কি যে বলেন! এমন সোনার টুকরো ছেলে কে কি পছন্দ না করে পারা যায়? (রিয়ার মা) ফাঁসির আসামী কে বিচারক রায় পড়ে শোনালে তার কাছে যেমন লাগে, ওনাদের কথা-বার্তা আমার কাছেও তেমন লাগছে! আর একটা কথা আমার মাথায় ঢুকছে না, আমি নাকি সোনার টুকরো ছেলে! আজব..... আমি তো নিজেকে কয়লার টুকরো ও ভাবি না। এজন্য মনে ক্ষীণ আশা ছিলো পাত্রী পক্ষ হয়তো আমাকে পছন্দ করবে না। কিন্তু ভাগ্য খারাপ হলে যা হয় আরকি.... -এবার কি তাহলে বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করা যায়? (মা বললো) আমি অবাক হয়ে গেলাম। একবারের জন্যও আমার পছন্দ অপছন্দ জিজ্ঞেস করা হলো না। যেন বিয়ে টা আমি না...আমার বাবা-মা করছে! -তার আগে ওদের আলাদা একটা রুমে কথা বলার সুযোগ দেয়া উচিৎ (রিয়ার মা) -হ্যা অবশ্যই! আমাদের একটা রুমে ঢুকিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়া হলো। এই মূহুর্তে নিজেকে খুব অসহায় লাগছে। স্কুল জীবনের প্রথম দিন স্টুডেন্ট কে ক্লাস রুমে ঢুকিয়ে বাবা-মা চলে গেলে তার কাছে যেরকম লাগে আমার ও সেরকম অনুভূতি হচ্ছে। রিয়া হুট করে এসে আমার কলার চেপে ধরলো। বাচ্চা মেয়েদের মতো হাসছে সে। এই হাসির একটা নাম আছে। মুক্তাঝরা হাসি। ওর এরকম আচরনের যুক্তিসংগত কোনো কারন খুজে পেলাম না। বেশিদিন হয় নি ওর সাথে পরিচয় হয়েছে, সম্পর্ক টা যে খুব বেশি ঘনিষ্ঠ তা ও কিন্তু না। মেয়েরা মাঝে মাঝেই এমন রহস্যময় আচরন করে। যার কোনো ব্যাখ্যা নেই। এজন্যই হয়তো নারীকে 'রহস্যময়' বলা হয়। -এই যে মিস্টার! আব্বু-আম্মুর সামনে এমন কাচুমাচু হয়ে বসেছিলে কেন? ভয় পাচ্ছিলে নাকি? -রিয়া আমি কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছি না, কিভাবে কি হলো? -আরে ওইদিন যে তোমার বাবা অফিসে গিয়েছিলো তখনই নাকি ওনার আমাকে পছন্দ হয়ে যায়। তারপর আমার কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে সরাসরি চলে আসে আমাদের বাসায়। পরের ঘটনার স্বাক্ষী তো তুমি নিজেই.....
-হুম বুঝলাম, এবার কি আমার কলার টা ছাড়া যায়? -নাহ...আগে বলো আমাকে তোমার পছন্দ হয় কি না! বিয়ে করবে তো আমায়? রিয়ার চোখ চকচক করছে। সেখানে আশার আলো। হয়তো আমার 'হ্যা' শোনার জন্য.... -কি হলো বলছো না যে? ওকে মুখের ওপর না বলে দিতে বিবেকে বাধছে। অন্য কোনো প্ল্যান বের করতে হবে.... -আচ্ছা রিয়া তুমি কি আমাকে ভালোবাসো? আচমকা প্রশ্নটা ছুড়ে দিলাম..... এবার ও আমার কলার ছেড়ে দিলো। বাঙালী ললনাদের চিরচেনা সহজাত বৈশিষ্ট্য তার মুখে ফুটে উঠলো। লজ্জায় লাল, নীল, বেগুনী হয়ে যাচ্ছে মেয়েটা। মেয়েদের কে সবচেয়ে বেশি সুন্দর লাগে যখন সে কাঁদে আর লজ্জা পায়.... -কি হলো বলছো না যে? -ভালো না বাসলেই কি তোমাকে আমার বেড রুমে ঢুকতে দিয়েছি? আমার বাবা বাদে তুমিই একমাত্র পুরুষ যে আমার রুমে পা রেখেছে। এতক্ষনে আমি চারপাশ টা খেয়াল করলাম। দেয়ালে রিয়ার বড় বড় ছবি টাঙানো। টেডি বিয়ার সহ নানা রকম মেয়েলি জিনিস পত্রে ঠাসা রুম টা.... -আমায় যে ভালোবাসো আগে তো বলো নি? -যখন থেকে আমাদের বিয়ের কথা-বার্তা শুরু হয়েছে তারপর থেকেই তোমাকে আমি ভালোবাসতে শুরু করি। জানো মনে মনে আমার স্বামীর আসনে তোমাকে বসিয়েছি..... সর্বনাশ! এই মেয়ের গতিশীলতা তো আলোর চেয়ে ও বেশি। কাউকে ভালোবাসতে না বাসতেই সরাসরি স্বামীর আসনে বসিয়ে দিয়েছে! অদ্ভুদ.... -আচ্ছা রিয়া আমরা তো একে অপরকে ভালো করে চিনি না, বিয়ের আগে ভালো করে পরিচিত হওয়া টা জরুরী না? আমি বলছিলাম কি আজকেই বিয়ের ডেট না করে আমরা কিছুদিন সময় নিয়ে দুজন দুজনকে চিনি-জানি, তারপর নাহয়..... -আইডিয়া টা কিন্তু খারাপ না! আমার কথায় রিয়া ও সায় দিলো.... আমাদের প্রস্তাব সংসদে পাশ হলো। কিন্তু বিরোধী দলীয় নেত্রীর মতো মা বারবার আপত্তি জানাচ্ছিলো। ছেলের বৌ কে ঘরে তুলতে তার যেন তর সইছে না! শেষমেষ বাবা অনেক বুঝিয়ে-সুঝিয়ে তাকে রাজি করালো। এরপর থেকে প্রতিদিন ডিউটি হলো রিয়ার বাসায় যাওয়া, তার সাথে গল্প করা, সময় কাটানো। আমি যেতে না চাইলেও বাবা-মা জোর করে পাঠাতো। আর রিয়া, রিয়ার বাবা-মায়ের চব্বিশ ঘন্টা ফোন তো আছেই! আমি যখন রিয়ার সাথে সময় কাটাই তখন বাড়ির চাকর-বাকরের ও আমাদের রুমে ঢুকে ঘর পরিষ্কার কিংবা অন্যান্য কার্যক্রম করা নিষিদ্ধ। শত হোক ওনাদের কাছে আমি এ বাড়ির হবু জামাই ( ) আমাদের ডির্স্টাব হোক তা কখনোই তাদের কাম্য নয়। রিয়া আমার কাধে মাথা রেখে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দেয়। কিন্তু আমার মন পড়ে থাকে সুমি কাছে। সুমি নিশ্চই আমাকে না দেখতে পেয়ে খুব কষ্ট পাচ্ছে? বাবা-মা কে মন থেকে সত্যি টা বলার তাগিদ অনুভব করলাম। যেই ভাবা সেই কাজ। কিন্তু আমি কি জানতাম তারা আমার মতামতের কোনো মূল্য দেবে না? তাদের মতে বেশি বড়লোকের মেয়েরা নাকি সংসারী হয় না। তাছাড়া রিয়ার কে নাকি তাদের খুব পছন্দ হয়েছে তাই অন্য কোনো মেয়ে দেখার প্রশ্নই উঠে না। হোক সে আমার পছন্দের.... সুমির কথা ওদের কাছে বলে আরও বিপদে পড়লাম। বিয়ের আগ পর্যন্ত আমার রিয়ার বাড়ি ছাড়া অন্য কোথাও যাওয়া সম্পূর্ন নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হলো। সুমির সাথে যে দেখা করবো সেই সুযোগ টা ও পাচ্ছি না। তার ফোন টা ও সুইচ অফ। সুমি সাথে যে করেই হোক দেখা করার সিদ্ধান্ত নিলাম। একদিন সবার অজান্তে চলে গেলাম তাদের বাসায়। কিন্তু আফসোস সুমি কে পেলাম না। বাসায় শুধু আন্টি আর মিম মানে সেই ডিম সেই যে সুমির জন্মদিনে বেড়াতে এসেছিলো আর যায় নি। আন্টির সাথে বেশ কিছুক্ষন কথা হলো। কিন্তু খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম যখন তিনি আমার বাসার ঠিকানা চাইলেন। অনিচ্ছা সত্বেও আমি দিয়ে দিলাম। কিন্তু তখন যদি জানতাম কেন চেয়েছে তাহলে কি আর আমি এ ভুল করতাম....? একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি ড্রয়িং রুমে সুমির মা বসে আছে। আমার মায়ের সাথে কি ব্যাপারে জানি কথা বলছে.... কথা-বার্তা শোনার জন্য কান পাতলাম। -আপা আমার মেয়ে কিন্তু আপনার ছেলে কে খুব পছন্দ করে। তাই আমি চাচ্ছিলাম ওদের দুটি হাত এক করে দিতে! আমি খুব খুশী হয়ে গেলাম যাক, এতোদিনে সুমি একটা কাজের কাজ করেছে! মা পাকা কথা না দিলেও বলেছে ভেবে দেখবে। ওনার সাথে কথা বলে আম্মুর নাকি খুব ভালো লেগেছে। তার ধারনা মহিলার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড ও নিশ্চই ভালো হবে। বেশি বড়লোকের মেয়েরা সংসারী হয় না তার এমন ধারনা পাল্টে যেতে লাগলো। মহিলার কথা-বার্তা যেহেতু ভদ্র, মার্জিত তার মেয়ে ও নিশ্চই সেরকম হবে..... একদিন আন্টি আমার মোবাইলে ফোন দিলো.... -বাবা আমার মেয়ে কে তোমার কেমন লাগে সত্যি করে বলো তো? আমি ভদ্রতার খাতিরে কিছু বললাম না। শত হোক লজ্জা-শরমের একটা ব্যাপার আছে তো! -কি হলো বাবা বলো? লজ্জার কিছু নেই! -আন্টি সত্যি বলতে কি ওকে আমার খুব ভালো লাগে। -বাহ! তাহলে তো খুব ভালো.... রিয়ার সাথে আমার বিয়ের অর্ধেক পাঁকা কথা হওয়া সত্বেও মা সুমিদের বাসায় গেলো একদিন। তাদের ঘর-বাড়ি পরিবেশ খুব পছন্দ হলো তার। মা বাসায় আসলে তার মতামত জানতে চাইলাম। সে জানালো সব কিছু তার পছন্দ হয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি নাকি পছন্দ হয়েছে তার পাত্রী কে.... আমি খুশি খুশি গলায় বললাম.... -হ্যা মা, সুমি খুবই ভদ্র আর সুন্দরী ওর মতো মেয়েই হয় না! -কি বলছিস তুই, মেয়ের নাম ও দেখি জানিস না! সুমি হচ্ছে ওর ছোট বোনের নাম, পাত্রীর নাম তো মরিয়ম ......!!!!
.................................... ......... .
................................................ আমার হাসি টা সেকেন্ডের মধ্যে উবে গেলো! নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছি না। বিধাতা এ কোন ধরনের খেলা খেলছে আমার সাথে? ঘরের চেয়ার-টেবিল, আসবাবপত্র আমার চোখের সামনে উল্টে-পাল্টে যেতে লাগলো। এমন কেন হচ্ছে? ভূমিকম্প নাকি? আমি আর দাড়িয়ে থাকতে পারলাম না, টলতে টলতে সোফায় হেলে পড়লাম। মা এসে আমাকে ধরে ফেললো। তারপর ই সব কিছু অন্ধকার.... চোখ মেলে নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করলাম। দেখি আমার পাশে মা বসে আছে। মা কাঁদছে। আমি মাকে অভয় দিলাম কিছুই হয় নি আমার..... বেশ কিছুদিন বিছানায় পরে রইলাম। মা যথাসাধ্য আমার সেবা করলো। কিন্তু শরীর আর ভালো হয় না। শেষমেষ আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হলো। আমার অসুস্থতার কারন মনে হতেই আমার খুব হাসি পেলো। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে হাসা টা সম্ভব নয়, তাই মুখে আসার আগেই হজম করে ফেললাম। যে কোনো ভাবেই হোক রিয়া আর মরিয়মদের বাসায় আমার অসুস্থতার খবর পৌঁছলো। দল বেঁধে দুই বাড়ির (কিংবা দুই শ্বশুর বাড়ির) লোকজন আসতে লাগলো। ওরা এমনভাবে কান্না-কাটি করছে যেন আমি ক্যান্সারের রোগী। আর কিছুক্ষনের মধ্যেই মারা যাচ্ছি..... মরিয়ম, মিম আর রিয়া দরজার পাশে দাড়িয়ে বড়দের বিলাপ করার সুযোগ দিচ্ছে। আমার সামনে আসছে না। ইশারায় আমি মিমের কাছে সুমি কথা জানতে চাইলাম। সে জানালো সুমি আসছে..... কর্তব্যরত মহিলা ডাক্তার (কিংবা মেয়ে ডাক্তার) সোনামনি এসে রুমের অবস্থা দেখে থমকে গেলেন..... -এ কি! আপনারা কি শুরু করেছেন!! এরকম কান্নাকাটি করলে তো পেশেন্ট এর অবস্থা আরও খারাপ হবে। প্লিজ আপনারা বেরিয়ে যান..... সবাই বেরিয়ে গেলেও অনেক রিকোয়েস্ট করে রিয়া আমার রুমে থেকে গেলো। ওর দেখা-দেখি মরিয়মও রিকোয়েস্ট করা শুরু করলো। ডাক্তার সাহেবা মনে হয় অনেক দয়ালু! দুজনকেই থাকার অনুমতি দিলেন..... আমি জানি ওদের দুজনের মনে এখন কি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে! রিয়া ভাবছে আমার হবু বরের সাথে এই বজ্জাত মেয়ে টা কি করছে? আর মরিয়মও একই কথা ভাবছে... আমার হবু বরের সাথে এই কুটনী মেয়েটা কি করছে? বাহ! খেলা তো জমে উঠেছে। এই খেলায় আমি দর্শক মাত্র। ফলাফল উপর থেকে ফিক্সড করে দেয়া হয়েছে। সময় মতো উত্তর পাওয়া যাবে। আমার অসুস্থতা ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করলো। চারপাশে বিনোদন দেয়ার মতো এতো মানুষ থাকলে কি আর অসুস্থ থাকা যায়? -রিয়া পরিচিত হয়ে নাও, এ হচ্ছে মরিয়ম আমার হবু বৌ। মরিয়ম তুমিও পরিচিত হয়ে নাও এ হচ্ছে রিয়া আমার হবু বৌ..... রিয়া আর মরিয়ম পরস্পর মুখ চাওয়া- চাওয়ি করলো! দেখার মতো একটা দৃশ্য...আমি সাথে সাথে হাহা করে হেসে উঠলাম। -কি হলো ভয় পেয়েছো? আমি তো মজা করলাম! তারা দুজন ও হেসে উঠলো। কিন্তু হাসির মধ্যে একটা অনিশ্চিত ভাব আছে। রাত ঘনিয়ে এলে রিয়া আর মরিয়ম কে রেখে পরিবারের বাকি সদস্য রা চলে গেলো। তারা দুজনই আমার দেখা- শোনার দায়িত্ব নিয়েছে। কিন্তু অন্য ফ্যামিলির একটা মেয়ে আমার সাথে কেন থাকবে এটা যেন দুই পরিবারের কেউই মেনে নিতে পারছে না। রিয়ার বাবা-মা ও না, মরিয়ম বাবা-মা ও না। কিন্তু সেটা প্রকাশ করলো না। কোনো ঝামেলা না পাকিয়েই বাড়ির পথ ধরলো..... রাত দশটা নাগাদ সুমি আমার কেবিনে উপস্থিত হলো সাথে মিম ও রয়েছে। সুমি চেহারা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলো। যেন কিছুই হয় নি! কিন্তু আমি জানি তার ভেতর টা ফেটে যাচ্ছে, আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে ইচ্ছে করছে। মেয়েটা সম্ভবত আমার উপর অভিমান করেছে। হুট করে না বলে বাসা থেকে চলে এসেছি বলে, কিন্তু কেন যে এসেছি সেটা যদি জানতো! আচ্ছা আমার ও তো সুমির সাথে রাগ করা উচিৎ? সে ও তো মোবাইল ফোন বন্ধ রেখেছে, আমার সাথে কোনো যোগাযোগ রাখে নি.... সুমির সাথে মন খুলে কথা বলতে খুব ইচ্ছা করছে। কিন্তু এই মূহুর্তে কেবিনে আরও তিনটা মেয়ে আছে (যাদের মধ্যে দুজন আমার হবু বৌ ) কাজেই সেটা করা সম্ভব হচ্ছে না..... -কিরে সুমি? তুই এতো রাতে? বাসায় চলে যেতে পারিস, আমি আছি এখানে... (মরিয়ম) -না আপু, আমার কোনো সমস্যা নেই থাকতে। তুমি চাইলে বরং যেতে পারো... -তাহলে আমরা একসাথেই থাকি, ওর কখন কি লাগে আবার.....কিরে মিম তুই ও কি থাকবি নাকি....? - না না আমিও থাকবো! মিম দ্রুত উত্তর দিলো.... রিয়া আর মরিয়ম আমার মাথার পাশে বসে আছে। রিয়ার লম্বা চুল (খায়রুন সুন্দরীর মতো) আমার মাথার অর্ধেক টা ঢেকে আছে। সুমি আর মিম আমার পায়ের কাছে বসলো। এই মূহুর্তে আমার নিজেকে সৌদি প্রিন্স মনে হচ্ছে। যার চারটা বিবি তাকে আদর-যত্ন করছে! আমি চারজনের ভাব-ভঙ্গি লক্ষ্য করলাম। একজন ও আমাকে ছেড়ে এক মূহুর্তের জন্য ও উঠছে না। মনে হচ্ছে একে-অপরকে পাহাড়া দিচ্ছে যেন আমার খুব বেশি ঘনিষ্ঠ না হতে পারে। মিম মনে মনে হিংসা করছে সুমি কে, সুমি।হিংসা করছে তার আপন বড় বোন মরিয়ম কে, মরিয়ম আবার হিংসা করছে রিয়া কে! কি অদ্ভুদ এক চক্র....
কিছুক্ষন পর দরজায় ঠকঠক আওয়াজ হলো..... -আসতে পারি? দরজায় মেয়ে বয়সী ডাক্তার টা কে দেখা যাচ্ছে..... -এ কি ম্যাডাম! আপনিই তো আমাদের থাকার অনুমতি দিয়েছেন আর আপনিই কি না আসার জন্য অনুমতি চাচ্ছেন!
রিয়া হেসে বললো.... -না ভাবলাম হঠাৎ এসে আপনাদের ডির্স্টাব করা টা ঠিক হবে না, তা কি নিয়ে আলাপ চলছিলো? -না তেমন কিছু না.... -আজ সারা রাত হাসপাতালে ডিউটি কিন্তু হাতে কোনো কাজ নেই। তাই ভাবলাম আপনাদের সাথে একটু গল্প করি। এখানে তো আমার সমবয়সী চারজন মেয়ে আছেই! আপনাদের কোনো সমস্যা নেই তো? -নাহ কি যে বলেন! আপনি আসাতে ভালোই হলো.....মরিয়ম বললো কিন্তু কিছুক্ষনের মধ্যেই বুঝতে পারলাম। ডাক্তার সোনামনি আসলে ওদের সঙ্গে নয় আমার সঙ্গে গল্প করতে এসেছেন! উনি আমাকে একের পর এক অস্বস্থিকর প্রশ্ন করেই যাচ্ছেন.... -আপনি কি বিয়ে করেছেন? -জি না -করার চিন্তা-ভাবনা নেই? -না তো! উত্তর টা দিয়েই বুঝতে পারলাম বড় রকমের ভুল করে ফেলেছি! আমার দু পাশে বসা দুই ললনা পারলে আমাকে তাদের দৃষ্টি দিয়ে ভস্ম করে দেয়। টের পেলাম শরীর টা আবার কেমন জানি লাগছে! এ কেমন ডাক্তার? রোগী কে ভালো না করে আরও অসুস্থ করে ফেলে? এ কেমন বিচার? কিন্তু এই ডাক্তার সম্ভবত আমার হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ না করে থামবে না! আবার ও প্রশ্ন করলো.... -কখনো প্রেম করেছেন? এখন যদি বলি 'হ্যা' তাহলে মরিয়ম আর রিয়া আমাকে গলা টিপে মেরে ফেলবে। আর যদি বলি 'না' তাহলে..... নীলা আমাকে খুন করে ফেলবে! উভয় সঙ্কট বুঝি একেই বলে? আম্মুউউউ..... আমাকে বাঁচাও! আমি আর জীবনে প্রেম ও করবো না বিয়েও করতে চাই না..... -কি হলো বলছেন না যে? অনেক ভেবে চিন্তে 'না' উত্তর দিলাম। দুজনের চেয়ে একজনের আক্রোশের স্বীকার হওয়া অনেক ভালো! সুমি পারলে এখনই উঠে এসে আমার কলার চেপে দু-চারটা কিল ঘুষি দিয়ে দেয়! কিন্তু আফসোস বেচারির জন্য, এই মূহুর্তে সেটা করা সম্ভব হচ্ছে না.... কিছুক্ষন পর কারেন্ট চলে গেলো। হাসপাতালের জেনারেটর এ ও সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাই কেবিন কিছুটা অন্ধকারাচ্ছন্ন, চাঁদের আলোর কারনে সম্পূর্ন অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যায় নি.... অদ্ভুদ একটা অনভুতি হচ্ছে। আমার কাছে মনে হচ্ছে আমি মরে গেছি। এজন্য সম্ভবত চাঁদের রহস্যময় আলো দায়ী। ইষৎ নীল জোছনা পরিবেশটা কে অপার্থিব করে তুলছে। চোখে কখন যে তন্দ্রা এসে গেলো টেরও পেলাম না! সকালে সূর্যের মিষ্টি আলো চোখে পড়তেই আমার ঘুম ভেঙে গেলো। কিন্তু একি! আমি হাত-পাত নাড়াতে পারছি না কেন? প্যারালাইসিস হয়ে গেলাম নাকি? না ঘটনা সেটা নয়...চারটি দেহ শরীরের ওপর পড়ে আছে! আমার বালিশের দুপাশে রিয়া আর মরিয়ম আমার দু হাত ওদের দুজনের পিঠের নিচে! আর ওদের দুজনের হাত আমার বুকের ওপরে। সুমি আর মিম ঠিক আমার পায়ের কাছে। আর ডাক্তার সোনামনি নিচে বসে বেডে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। তার ডান হাত আমার পা স্পর্শ করে আছে.... একটু পর দরজায় এক নার্স কে দেখতে পেলাম। আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে উধাও হয়ে গেলো। একটু পর চার/পাচজন নার্সের একটা দল হাজির হলো। আমার করুন অবস্থা দেখে খুব মজা পাচ্ছে! -প্লিজ হেল্প মি নার্স! আমাকে ধ্বংস স্তুপ থেকে উদ্ধার করুন.... আমি চেচিয়ে উঠলাম! আমার চিৎকারে পাঁচজনের ঘুম ভেঙে গেলো। উঠে দেখলো নার্স রা আমাদের দেখে হাসছে। লজ্জায় একেকজন পারলে মাটি ফুড়ে ভেতরে ঢুকে যায়! হাসপাতাল থেকে সেদিন বিকেলেই আমি রিলিজ পাই। বাসায় ফিরতে না ফিরতেই দুই পক্ষ থেকে বিয়ের ডেট ঠিক করার জন্য চাপ আসতে থাকে। মা বেশ চিন্তায় পড়ে যান। কি করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না তিনি। মা আমাকে জিজ্ঞেস করলেন..... -তুই কাকে বিয়ে করতে চাস বাবা? -সত্যি বলবো মা? -হ্যা বল.... -একজনকে ও না! -কি বলিস তুই! তাহলে কাকে বিয়ে করবি? -মরিয়ম ছোট বোন সুমি কে.... মা যেন আকাশ থেকে পড়লেন! -মানে? তুই কি ওকে পছন্দ করিস? -শুধু পছন্দ না মা, আমরা একে অপরকে ভালোবাসি..... -আমাকে তো আগে বলিস নি? -বলার সুযোগ ই তো দাও নি.... -ঠিকাছে আমি এ ব্যাপারে তার বাবা- মায়ের সাথে কথা বলবো..... আমি খুশিতে মা কে জড়িয়ে ধরে চুমু খেলাম। এবার আমার আর সুমির মাঝে কোনো বাধা নেই! আমি সুমির মোবাইলে ফোন দিলাম। নাম্বার টা খোলা আছে। দুবার রিং হতেই ধরে ফেললো..... -হ্যালো সুমি -হ্যা বলো.... -আমি তোমার আর আমার বিয়ের ব্যাপারে মা কে বলেছি। আর কোনো সমস্যা নাই, আমাদের দুজনের মধুর মিলন ঘটতে যাচ্ছে! -হাহাহা! কিন্তু শিমুল দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি....আমি যে তোমাকে বিয়ে করতে পারছি না...


** ৮ম পর্ব **

:
- হাহাহা কিন্তু শিমুল দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি....আমি যে তোমাকে বিয়ে করতে পারছি না..... - মানে.....??? তুমি মজা করছো তাই না সুমি? - তুমি আমার কে? যে তোমার সঙ্গে মজা করতে হবে? আমার সঙ্গে আর কখনো যোগাযোগের চেষ্টা করবে না! - সুমি তুমি কি সত্যিই আমাকে বিয়ে করতে চাও না? - হ্যা... আর এটাই আমার ফাইনাল ডিসিশান! - ঠিকাছে আমি মেনে নিলাম, কিন্তু হঠাৎ কেন এমন সিদ্ধান্ত নিলে জানতে পারি? - আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি.... বলেই ঠাস করে ফোনটা রেখে দিলো সুমি। তার কথা শুনে আমি বোবা হয়ে গেলাম। হঠাৎ এমন পাল্টে গেলো কেনো মেয়েটা? উল্টোপাল্টা কি বলছে এসব? হূমায়ুন আহমেদের একটা উক্তির কথা মনে পড়ে গেলো আমার.... "তরুণী মেয়েদের হঠাৎ আসা আবেগ হঠাৎ চলে যায়। আবেগকে বাতাস না দিলেই হলো। আবেগ বায়বীয় ব্যাপার, বাতাস পেলেই তা বাড়ে। অন্য কিছুতে বাড়ে না।" কথাটার মর্মার্থ এখন হাড়ে হাড়ে এমনকি মাংসে মাংসে টের পাচ্ছি। সুমির ক্ষনিকের আবেগ কে পাত্তা দেয়াটা মোটেই ঠিক হয় নি আমার। ও যদি অন্য কাউকে ভালোবেসে সুখী হতে পারে আমি কেনো অন্য কাউকে বিয়ে করে সুখী হতে পারবো না? মাথায় জেদ চেপে গেলো আমার। সুমিকে দেখিয়ে দিতে হবে! কারো জন্য জীবন থেমে থাকতে পারে না... কখনোই না.... বিভিন্ন দুশ্চিন্তায় আবার আমার শরীর খারাপ করলো। মা আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইলো কিন্তু আমি রাজি হলাম না। শেষমেষ বাধ্য হয়ে মা ডাক্তার সোনামনি কে ফোন করলো বাসায় এসে আমাকে চেক-আপ করে যেতে। যেই ভয়ে আমি হাসপাতালে যেতে চাচ্ছি না সেটাকেই মা ফোন করে বাসায় আনতে চাচ্ছে! কি মসিবত!! তবে একটা কথা ভেবে মনে মনে স্বস্তি পাচ্ছি, সোনামনির মতো একজন বড় মাপের MBBS ডাক্তার কখনো কারো বাসায় যেয়ে চেক-আপ করবে না। চেম্বারে রোগী দেখতে দেখতেই ওনার দম ফেলার সময় থাকার কথা না.... আমার মনের কথা মনেই রয়ে গেলো ওদিকে কলিং বেল বেজে উঠলো। দরজা ডাক্তার সোনামনি দাড়িয়ে আছে! এ দৃশ্য দেখে আমি আরও অসুস্থ হয়ে গেলাম.... মা আমার রুম দেখিয়ে দিতেই সোনামনি সরাসরি ঢুকে পড়লো। আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো সে। তার পরনে সাদা এপ্রোন ও সেলোয়ার-কামিজ। নিতান্তই সাধারন পোশাক। কিন্তু কেনো যেন তাকে সাধারন লাগছে না। একটা পার্টি সাজ দেয়া মেয়েকে যদি তার সামনে দাড় করিয়ে জিজ্ঞেস করা হয় হয় কাকে বেশি সুন্দর লাগছে। নব্বই শতাংশ মানুষের উত্তর হবে সোনামনি কে..... মনের ভেতর একটা প্রশ্ন খচমচ করছে। তাকে না বলে পারলাম না.... - আপনাকে একটা প্রশ্ন করতে পারি ম্যাডাম সোনা..? - ম্যাডাম বলা লাগবে না শুধু সোনা বললেই চলবে, চাইলে তুমি ও বলতে পারেন! - এতো তারাতারি একজন অপরিচিত মানুষ কে আপনার নাম ধরে ডাকার অনুমতি দিয়ে দিলেন? শুধু তাই না... আবার তুমি বলে ডাকার ও? - প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই। তবে একটা কথা বলতে পারি মেয়েরা সাধারন কাউকে তার নাম ধরে ডাকার কিংবা তুমি করে বলার অধিকার দেয় না.... - তারমানে আমি অসাধারন কেউ? - হয়তো! - কি যে বলেন না.... আমি অসাধারন হতে যাবো কোন দুঃখে? আমি তো আধমরা একটা রোগী! কিছুদিন পর মারা যাবো.... সোনামনি আমার মুখ ধরে ফেললো। যেন বিশাল কোনো অলুক্ষুনে কথা বলে ফেলেছি! সোনামনির এমন আচরনে আমি বেশ অবাক হয়েছি। এমনটা পরিচিতজন দের সাথে করা যায়। কিন্তু মাত্র কয়েকদিন হলো আমি তাকে চিনি। সোনামনি কে বেশ বিব্রত দেখাচ্ছে.... - সরি! - ইটস ওকে... - কি প্রশ্ন জানি করতে চেয়েছিলে? (আপনি থেকে সরাসরি তুমি) - না মানে বলছিলাম তোমার মতো একজন বড় ডাক্তার আমার বাসায় আসবে ভাবতে পারি নি। MBBS ডাক্তার রা তো চেম্বার আর হাসপাতাল ছাড়া রোগী দেখে না.... - তোমার কথা ঠিক কিন্তু সব জায়গায় সব নিয়ম খাটে না যে! - বুঝলাম না.... - মেয়েদের অনেক কথার অর্থ ই ছেলেরা বোঝে না। বাদ দাও.... - ওকে দিলাম! বিদায় নেয়ার আগে সোনামনি আগামীকাল আবার এসে আমাকে দেখে যাবে বলে মা কে কথা দিলো। মা তাকে পেমেন্ট দিতে চাইলে সে রাগ দেখিয়ে বললো এমনটা করলে আর কখনোই সে আমাদের বাসায় আসবে না! সোনামনির আচরন রহস্যময় মনে হলো আমার কাছে। কোনো কিছু ঘটার আগেই যা করার করতে হবে। মা কে বলে দিলাম রিয়ার সাথে আমার বিয়ের ডেট ফাইনাল করতে। মা সুমির কথা জানতে চাইলে আমি সু-কৌশলে এড়িয়ে গেলাম..... সোনামনি যথাসময়ে আবার এসে উপস্থিত। সবার আগে তাকেই আমি সংবাদ টা দিলাম.... - সোনামনি আমার বিয়ে ঠিক হচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যেই ডেট ফাইনাল হবে। প্রথম দাওয়াত টা তোমাকেই দিলাম। আসতেই হবে কিন্তু তোমাকে..... কথাটা শুনে সোনামনি থমকে গেলো। তারপর দ্রুত সামলে নিয়ে মুখে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে বললো..... - এ তো দারুন সংবাদ! আমি অবশ্যই আসবো। তা মেয়ে টা কে? - রিয়া! ওই যে সেদিন রাতে কেবিনে ছিলো, দীর্ঘকেশী মেয়েটা.... - চিনেছি, মেয়েটা কিন্তু দারুন সুন্দরী! - হ্যা, অনেকটা তোমার মতো.... - আমি বুঝি সুন্দরী? - নিঃসন্দেহে! মেয়েটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো.... - কিন্তু আমার এ রুপ যে বৃথা! - এ কথা বলছো কেন? - মধু আহরনকারী ভ্রমর টা যদি ফুলের মনের মতো না হয় তাহলে ফুলের যৌবন বৃথা গেলো.... - তোমার এই উচ্চমাপের দার্শনিক কথা- বার্তা বোঝা আমার কম্ম নয়! - বোঝো তো সবই না বোঝার ভান করে থাকো আরকি! আমি আজ তাহলে উঠি.... আমি তার গমন পথের দিকে চেয়ে রইলাম। মেয়েটা অনেক রহস্য করে কথা বলে। তার কথার মারপ্যাচ বোঝার সাধ্য সবার নেই..... ***** মা-বাবা রিয়াদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। ঘন্টাখানেকের মধ্যে আবার ফিরে আসলো। চেহারায় খুশি খুশি ভাব! - কি হলো মা, এতো খুশি যে? - খুশি হবো না? আমার ছেলের জন্য লাল টুকটুকে বৌ ঘরে আসছে! - কিন্তু মা রিয়া কি দেখতে লাল রংয়ের? - এই ফাজলামো ছার তো! - ওকে ছারলাম, তা বিয়ের ডেট কি হয়েছে? - হ্যা... সামনের শুক্রবার!!!


** পিচ্চি মেয়ের ভালোবাসা **
** ৯ম ও শেষ পর্ব **

 ↓
:
- বিয়ের ডেট কি ঠিক হয়েছে? - হ্যা...সামনের শুক্রবার! এটা সুসংবাদ নাকি দুঃসংবাদ বুঝতে পারছি না। আমি কল্পনায় দেখতে পাচ্ছি ফুলসজ্জার রাতে রিয়া আমার বেডরুমের খাটের ওপর ঘোমটা দিয়ে বসে আছে, আমাকে রুমের ভেতর ঢুকিয়ে দরজা বাইরে থেকে লাগিয়ে দেয়া হয়েছে! কি অবস্থা টা হবে আমার? এদিকে বিয়ের ধুমধাম শুরু হয়ে গেছে। পুরো বাড়ি লাল-নীল বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে। বিয়ের মার্কেট ও চলছে পুরোদমে। কিন্তু আমি একদিন ও বাবা-মায়ের সাথে শপিং এ গেলাম না। এক সপ্তাহ পর যে আমার বিয়ে কোনো ফিলিংস ই কাজ করছে না আমার মধ্যে! 'যার বিয়ে তার খবর নাই, পাড়া-পড়শীর ঘুম নাই' বুঝি একেই বলে? :p রিয়া একদিন ফোন করলো.... - হ্যালো? - হ্যা রিয়া বলো.... - কেমন আছো? একটা ফোন ও তো দাও না, কাকে নিয়ে এতো বিজি শুনি? - ওমা কাকে নিয়ে আর বিজি থাকবো! - তোমার কি আর মানুষের অভাব আছে নাকি? যাকগে... এতোদিন যা করার করেছো কিন্তু শুক্রবারের পর যদি আমার একটা কথার বাইরে গেছো তাহলে কিন্তু... - এই...এই! ভয় দেখাবা না প্লিজ, পরে দেখবা বরপক্ষ কনে পক্ষ সবাই আছে শুধু বরটাই নেই! ভেগে গেছে। :(
- ইস! বললেই হলো? কোথাও যেতে দেবো না তোমাকে, সারা জীবন আমার আচলের সাথে বেঁধে রাখবো। এই জানো? ফুল-সজ্জা রাতের জন্য না আমার আর তর সইছে না, কতো অপেক্ষা করে আছি! 
- ও তাই নাকি? ফুল-সজ্জার রাত কি খুব মজার? :D
- নাটক, সিনেমায় যতটুকু দেখেছি মজার ই তো হওয়ার কথা! ;)
- মজার না ব্যাথার পরে টের পাইবা! :p
- এই শয়তান কি বললা তুমি? দাড়াও তোমাকে পেয়ে নেই! এই শোনো...তুমি কি একটু আসবা? তোমাকে খুব দেখতে মন চাচ্ছে! :'(
- আসলে কি দিবা শুনি? ;)
- যা চাও! 
- তোমাকে একটা পাপ্পি দিবো! :*
- যাহ দুষ্টু... কি বলে এসব! :o ^_^ 

- যাও আসবো ই না হুম..... :(
- এই না....না! যা চেয়েছো পাবা। আসো প্লিজ? তুমি তো আমার হাজবেন্ড হবা ই। সো...সমস্যা কি! - আরে ধুর! আমি তো মজা করলাম। এইতো আর কয়েকটা দিন, একটু ওয়েট করো.... :)
- ওকে! কি আর করা। *** এদিকে বিয়ের দিন ক্রমেই ঘনিয়ে আসছে, আমি মানষিক ভাবে প্রস্তুত হচ্ছি রিয়ার আচলের গিট্রুর সাথে বাধা পড়ার জন্য। আমি যে রিয়ার প্রতি দুর্বল তা কিন্তু না, আসলে সুমি কে দেখিয়ে দিতে চাই সে যেমন আমাকে ছাড়া সুখে আছে, আমিও তাকে ছাড়া সুখে আছি। গায়ে হলুদের দিন আমার অফিস কলিগরা দলবল সহ হাজির হয়ে গেলো। তাদের মধ্যে আমার বন্ধু শুভ ও আছে, যে আমাকে সর্বপ্রথম রিয়ার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। তার সাথে অনেকদিন যোগাযোগ হয় নি। ফেমিলিগত প্রবলেম হয়েছিলো তার, বৌয়ের সাথে ডিভোর্স হয়ে গেছে! আমার বিয়ে কার সাথে হচ্ছে প্রথমে তাকে জানাই নি, এসে যখন জানতে পারলো তখন তার ভিড়মি খাওয়ার দশা..... :p আর হ্যা আরেকজন বিশেষ অতিথী ও কিন্তু এসে হাজির হয়েছে। ডাঃ সোনামনি! ভারী সাজ দিয়ে এসেছে, দুর্দান্ত সুন্দরী লাগছে মেয়েটাকে। সবার নজর ঘুরেফিরে তার দিকেই পড়ছে, কিছুক্ষনের মধ্যেই অনুষ্ঠানের মধ্যমনি হয়ে উঠলো সে। সোনামনি ইতিমধ্যেই বন্ধু মহলের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে গেছে। অনেকেই তার সাথে আলাপ জমানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু সে পাত্তাই দিলো না। সোনামনি আমার সাথেই কথা চালিয়ে যেতে লাগলো। শুভ আমাকে পাগল করে ফেললো তার সাথে রিলেশন করিয়ে দিতে, এমনকি ঘুষ ও সাধলো! :p আমি ব্যাপারটা দেখার আশ্বাস দিলাম..... সবাই মিলে আমার ব্যাচেলর জীবনের শেষ দিন খুব উপভোগ করলাম। আজ আমি জীবিত, আগামী কাল হয়ে যাবো বিবাহিত! ভাবতেই গা শিউরে উঠছে.... আমার মৃত্যু পরোয়ানা জারী হয়ে গেছে। লাল রংয়ের শেরওয়ানী নামক কাপড় পরিয়ে আমাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ফাঁসির মঞ্চে (মানে রিয়াদের বাড়িতে)। আমার পা চলে তো চলে না! হঠাৎ পকেটের ফোন বেজে উঠলো, নাম্বার টা সুমির ! দেখে মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। আমি কেটে দিলাম। কিন্তু অনবরত ফোন দিয়েই যাচ্ছে নাছোড়বান্দা মেয়েটা। ফোন ধরছি না দেখে শেষমেষ মেসেজ দিলো- 'প্লিজ ফোন টা ধরো! তোমার সাথে খুব জরুরী কিছু কথা আছে, কথা দিচ্ছি জীবনে আর কোনোদিন তোমাকে ফোন দিবো না।' দিলাম ফোনটা বন্ধ করে! নিজেই সবকিছু শেষ করে এখন আবার এসেছে আমার সাথে কথা বলতে...... >_< ভালোভাবেই বিয়ের সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়ে গেলো। আমি আর রিয়া এখন স্বামী-স্ত্রী! কবুল বলার আগে সোনামনি দিকে আড়চোখে একবার তাকালাম। দেখি আমার দিকেই চেয়ে আছে সে! প্রানপনে মুখে হাসি ধরে রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু চোখের অশ্রু কি আর বাধ মানে.....? ব্যান্ড বাজিয়ে বৌ ঘরে তুললাম। রাত বাড়ার সাথে সাথে একে একে সবাই বিদায় নিলো। শুধু শুভ আর সোনা বাদে। সোনামনি ও চলে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু শুভর অনুরোধে তাকে থাকতে বললাম। শত হোক সম্পর্ক তৈরী করার দায়িত্ব টা তো আমিই নিয়েছি.... নানান উছিলায় আমি বাড়ির এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করতে লাগলাম। রিয়া আমার রুমে ঘোমটা দিয়ে বসে অপেক্ষা করছে আমার জন্য। কিন্তু আমি তার সামনে যেতে খুবই ভয় পাচ্ছি! শুভ আর সোনামনি ব্যাপার টা ধরে ফেললো। আমাকে এক প্রকার জোর করে রুমের ভেতরে ঢুকিয়ে দিলো। আমি চোখের ইশারায় শুভ কে বলে দিলাম এই ফাকে সোনামনির সাথে যতোটা পারা যায় ফ্রি হয়ে নিতে। আজ সারা রাতই পড়ে আছে..... রিয়া আমাকে দেখে মুচকি মুচকি হাসছে। আমাকে দেখতে নিশ্চই গাধার মতো লাগছে? :( একটা ছুতো দিয়ে বাইরে যেতে চাইলাম আমি। কিন্তু রিয়া আমার হাত ধরে ফেললো! -কোথায় যাচ্ছো? -এইতো আসছি.... -না, বসো তুমি! -ইয়ে মানে... -বসতে বলেছি না? >_< আমি বাধ্য ছেলের মতো বসে পড়লাম... -এইতো লক্ষী ছেলে.... ;) :* আমি বালিশটা নিয়ে ফ্লোরে শুয়ে পড়লাম। কিন্তু এতেও শান্তি নাই! আমাকে ধরে খাটের ওপর বসানো হলো... -রিয়া প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও! আমি একটু শান্তিতে ঘুমোতে চাই.... :( -কি বললা তুমি! :o  -না না কিছু না.....   আচমকা আমাকে খাটে ধাক্কা দিয়ে ফেলে আমার উপরে উঠে পড়লো দুষ্টু মেয়েটা! আমার ঠোটে গভীর এক চুমু একে দিলো!! - সেদিনের পাওনা টা মিটিয়ে দিলাম! ;) ওর চুম্বনে আফিম জাতীয় কিছু একটা আছে। কেমন জানি মাতাল মাতাল লাগছে। -যেদিন রাতে প্রথম তোমার বাসায় গিয়েছিলাম সেদিন তো হা করে আমার দিকে চেয়েছিলে, আজ কেনো এতো কাছে পেয়েও ভনিতা করছো? :/ -রিয়া তুমি আমার বুকের ওপর থেকে একটু সরবে প্লিজ? তোমার ভার আমি কি করে সহ্য করি বলো? কিন্তু মেয়েটা সরছেই না। আমাকে ছাড়বে না বলে পন করে এসেছে মনে হয়! হঠাৎ মোবাইলে ফোন আসলো, সুমির মায়ের নাম্বার! ফোনটা ধরতে যেয়েও রিয়ার বাধার সম্মুখীন হলাম.... -আজ পুরো রাতটা আমি তোমার কাছে চাই! ফোন টোন সব বন্ধ করো! আমি তার বাধা উপেক্ষা করে ফোন টা ধরলাম.....ওপাশ থেকে সুমির মায়ের উদ্বিগ্ন কন্ঠ ভেসে এলো! -হ্যালো বাবা তুমি জলদি এসো, সুমি ভেতর থেকে গেট আটকে বসে আছে, কিছু হওয়ার আগেই তুমি আসো....!!! 
  আমি এক ধাক্কায় রিয়াকে সরিয়ে দিলাম, ও ছিটকে ফ্লোরে পড়ে গেলো। তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে যেতে চাইলাম আমি, রিয়া আবার আমার হাত ধরে ফেললো.... -কোথায় যাচ্ছো তুমি? এই ফুলসজ্জার রাতে তুমি আমাকে স্বামীর সোহাগ থেকে বঞ্চিত করবে?  -দেখো রিয়া এসব পরেও করা যাবে, এখন আমাকে যেতেই হবে! আমি ঝাড়া দিয়ে হাতটা ছুটিয়ে নিলাম, বাসার সবাই আমাকে বাধা দিয়েও আটকে রাখতে পারলো না..... সুমির বেডরুমের বাইরে তার মা মরিয়ম আর মিম কান্না করছে আর তাকে বেরিয়ে আসতে বলছে কিন্তু কিছুতেই গেট খুলছে না সে। আমিও অনেকক্ষন ডাকাডাকি করলাম। কিন্তু কোনো লাভ হলো না...... শেষে দুইটা লাথি দিয়ে দরজা ভেঙে ফেললাম! ভেতরের দৃশ্য দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না আমি। সুমি নিথর দেহটা ফ্লোরে পড়ে আছে! একহাত দুরে একটা ছোট শিশি। তারমানে বিষ খেয়েছে সে! :o আমি সোনামনিকে ফোন দিয়ে বললাম জলদি শুভকে নিয়ে এখানে চলে আসতে। সোনামনি একজন ডাক্তার, সুমিকে বাচাতে পারলে একমাত্র সেই পারবে! কিছুক্ষন পর সোনামনি এসে পৌঁছে গেলো। সুমিকে কিছুক্ষন দেখলো সে, তার হাতে নাড়ী টিপে ধরলো। 'আমি দুঃখিত! সুমি আর আমাদের মাঝে নেই!!' সোনামনি জানালো..... সাথে সাথে গগনবিদারী চিৎকার করে উঠলো সুমির মা আর দুই বোন। আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি! নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছি না। আমার ও ভেতর থেকে ফেটে কান্না বেরিয়ে আসলো। সুমি কে বুকে জড়িয়ে ধরে কাদতে লাগলাম আমি। মৃত্যু ও তার সৌন্দর্য এতোটুকু ম্লান করতে পারে নি! আমার মনে হচ্ছে এখনই সে চোখ খুলে বলে উঠবে- 'শিমুল আমি মজা করেছি, এইতো আমি বেচে আছি!' হঠাৎ তার হাতের দিকে চোখ পড়লো আমার। মুঠো করা, ভেতরে একটা কাগজ দেখা যাচ্ছে। ওটা একটা চিঠি! আমি পড়তে শুরু করলাম..... 'শিমুল আমি জানি, আমার মৃত্যুর খবর শুনে তুমি আসবে তাই তোমার জন্য চিঠিটা লেখা। চিঠি যখন পড়বে তখন হয়তো আমি আর থাকবো না। আমি তোমাকেই ভালোবাসি শিমুল অন্য কাউকে তো প্রশ্নই ওঠে না। আমি তোমাকে ফোনে উল্টো-পাল্টা কথা বলেছি যেন তুমি আমার ওপর জেদ করে মরিয়ম আপু কে বিয়ে করো। সে তোমাকে খুব পছন্দ করে। আমি কি করে ছোট বোন হয়ে আমার বড় বোনের পছন্দের জিনিস টা কেড়ে নেবো বলো? কিন্তু তুমি মরিয়ম আপু কে বিয়ে না করে অন্য মেয়ের হাত ধরেছো। আমার ছোটো বেলার অবুঝ ভালোবাসা আজ অন্যের! এ দৃশ্য দেখার চেয়ে মরে যাওয়াই অনেক ভালো মনে হয়েছে আমার। এ জন্মে হয়তো তোমাকে পাই নি তবে তোমাকে পাওয়ার জন্য আমি জন্ম-জন্মান্তর ধরে অপেক্ষা করবো। বিদায়........  :) ' আমি কেদেই চলেছি! পাগলের মতো সুমির শরীর ঝাকাচ্ছি। সুমি..... ও সুমি! ওঠো? একবার চোখ খুলে তাকাও? দেখো আমি এসেছি! আমার সাথে রাগ করবে না? আমার সাথে লুকিয়ে ছাদে দেখা করবে না? এই সুমি.....আমার না খুব ক্ষিদে পেয়েছে! আমার জন্যে খাবার রান্না করে আনবে না তুমি? দেখো আমি অন্য মেয়ের সাথে কথা বলছি! অভিমান করে মুখ ভার করে বসে থাকবে না তুমি? কিন্তু আমি জানি আর কখনোই সুমির মুখ দিয়ে কথা বেরোবে না, আর কখনোই কেউ আমার সাথে রাগ করবে না, কখনোই আর খাবার হাতে দরজার বাইরে দাড়িয়ে থাকবে না কেউ, অযথা অভিমান ও করবে না! আর কেউ কোনোদিন জোছনা রাতে ছাদে আমার জন্য অপেক্ষা করবে না..... যেখানেই থাকো ভালো থেকো সুমি, ভালো থেকো আমার অবুঝ ভালোবাসা......


                     সমাপ্ত


     * কমেন্ট বক্সে অবশ্যই কমেন্ট করে
    জানাবেন গল্পটি কেমন লাগব.....ধন্যবাদ *





ভালোবাসা বিষয়ক টিপস -১০

love-tips ♥ তুমি পাশে নেই তবুও তোমায় অনুভব করি। তুমি আমার হবে না জানি তবুও তোমার পথ চেয়ে আছি। সপ্ন সত্যি হবে না জানি তবু তোমায় নি...