ভালবাসা মানে বিশ্বাস, ভালোবাসা মানে সাহস। ভালোবাসা মানে ভয় ভেঙে বাধা পেরিয়ে কাছে আসার। আর সেই সব কাছে আসার গল্প নিয়ে সাজানো হয়েছে " কাছে আসার গল্প " ব্লগ সাইটি।☞হাজারো 'কাছে আসার গল্প' শুনতে আমাদের সাথেই থাকুন সব সময়।

Search

Latest update

Banner

29/09/2018

September 29, 2018

কাছে আসার গল্প : বন্ধুন্ত থেকে ভালোবাসা



-কি রে হনুমান।(শুভ্র)

-হুম বানর।(রাত্রি)

-তোর এত ভাব কিসের?

-আজিব আমি আবার ভাব দিলাম কখন।
-তুই ভাব দেস না,তাহলে ঠোটে এত কড়া লিপিষ্টিক লাগিয়েছিস কেন?

-আজিব ব্যাপার আমার ঠোটে আমি লিপিষ্টিক লাগালে সেটা ভাব হয়ে গেল।

-হ্যা ভাবই তো।তুই কাল থেকে হিজাব পরে আসবি।

-আজিব কেন?

-আমি বলছি তাই।

-তোর কথা আমায় রাখতে হবে কেন?

-কারন তুই আমার.......

-কি হল থামলি কেন বল।ভীতু একটা।

-কি আমি ভীতু?

-হ্যা ভীতুই তো।তা না হলে বল আমি তোর কি?
-তুই আমার ইয়ে মানে ভাল বন্ধু।(একটু ইতস্তত হয়ে
বলল)

-এই ছাড়া আর কিছু না?

-না।

-আচ্ছা আমি আজ থেকে তাহলে বেশি করে
সাজব,ঠোটে লিপিষ্টিক দিব,হিজাব পরব না দেখি তুই কি
করতে পারিস।

-মেরে তোর ঠ্যাং ভেঙে দিব।

-তাহলে তো ভালই হল।সারাজীবন তোর কোলে
থাকতে পারব।

-ইসস শখ কত।

-হ্যা অনেক।

-চল বাসায় যাই।

-না রে।এখন অন্য ডিপার্টমেন্টের ছেলেরা
বেরোবে।একটু ক্রাশ খেতে হবে।

-কি বললি তুই?মেরে তোর মুখ ভেঙে দিব।
-তাহলে তো ভালই হবে,সবাই বলবে শুভ্রর
বউয়ের মুখ বাকানো।

-কি বললি।

-কই কিছু না তো চল।

-চল মানে কোথায়?

-ফুসকা খাওয়াবি।

-আমি কি পাগল তোকে ফুসকা খাওয়াতে গিয়ে কে
সামলাবে শুনি,ঝাল খেয়ে কান্না করে আমার শার্টটা
নষ্ট করবি।

-না রে করব না।

-সত্যি।

-হুম চল তো।

-চল।

শুভ্র আর রাত্রি দুজন খুব ভাল বন্ধু।শুন্ধু বন্ধু বললে
ভুল হবে ওরা একে অপরের প্রতি অনেকটাই
দুর্বল।কিন্তু শুভ্র কখনও সেটা প্রকাশ করে না।তবুও
রাত্রি বোঝে শুভ্রকে।জানে শুভ্র তাকে অনেক
ভালবাসে।এজন্য তো রাত্রি শুভ্রর অপছন্দের কাজ
গুলো করে।শুধু একটিবার তার মুখ থেকে ভালবাসি
কথাটি শোনার জন্য।কিন্তু শুভ্র প্রতিবারই ওই একই
জায়গায় থেমে যায়।তবু রাত্রি আশায় আশা ছাড়েনি।
যেভাবেই হোক শুভ্রর মুখ থেকে কথাটি বের
করবে।
পরেরদিন ক্যাম্পাসে,
শুভ্র হন হন করে হাটছে অজানা গন্তব্যে।নিজের
চোখকে বিশ্বাস করতে খুব কষ্ট হচ্ছে।এটা
কিভাবে পারল রাত্রি।রাত্রি কি বোঝে না ও ছাড়া শুভ্র
অচল।তবু কেন করল এমনটা।
কিছুক্ষন আগে,
শুভ্র একা একা হেটে ক্লাসের দিকে যাচ্ছে,কিছুদূর
এগিয়ে দেখে রাত্রি একটা ছেলের সাথে হেসে
হেসে কথা বলছে।

শুভ্রকে ডাক দিল রাত্রি।

-দোস্ত এদিকে আয়(রাত্রি)

-বল কি হয়েছে।(রাগী সুরে)

-দোস্ত আমার জানু এইটা কেমন হয়েছে?(ঐ
ছেলেটাকে দেখিয়ে বলল)

-জানু মানে?

-বুদ্ধু আমার বি এফ।

-ভাল।থাক।শুভকামনা রইল।

-এই শুভ্র দাড়া না।দেখতো দুজনকে কেমন
লাগছে।

-অনেক সুন্দর রে।আসি।

-এখনই যাবি।ভেবেছিলাম তিনজনে ফুসকা খাব।

-তোরা খেয়ে নে।আমার কাজ আছে।

-ক্লাসে যাবি না।

-না।

-কেন?

-তোকে বলতে হবে নাকি?

-হ্যা বলতে হবে।

-আমি বাধ্য নই।(বলেই হাটা দিল শুভ্র)

-না তুই যেতে পারবি না।(পিছন থেকে হাতটি ধরল
রাত্রি)

-হাত ছাড় রাত্রি।

-না ছাড়ব না।বল যাবিনা।

-যাব।

-ছাড়ব না।

-রাত্রি মাথা গরম হচ্ছে কিন্তু।

-কি করবি মাথা গরম হলে,মারবি তো মার।
ঠাশ...........

কিছুক্ষন দুজনের চোখাচোখি হল,তারপর দুজনে
চোখের পানিতে বিদায় নিল।
আজ অনেক বেশি মন খারাপ শুভ্রর।না ওভাবে মারাটা
উচিৎ হয়নি মেয়েটাকে।তবে কেন করল এমন।ও
জানেনা ওকে ছাড়া আমি থাকতে পারব না।
বিকেল থেকে এখন রাত বারটা পর্যন্ত শুভ্র
ফোনে ট্রাই করে যাচ্ছে কিন্তু ফোন অফ
বলছে।নিজেকে অপরাধীর মত লাগছে।
পরেরদিন ক্যাম্পাসে,
শুভ্র বসে আছে একাকী মাঠে।খুব মনে পড়ছে
রাত্রির মুখটা।এটাই হল একমাত্র জায়গা যেখানে রাত্রির
দেখা পাওয়া যাবে।

কিছুক্ষন পর একটি রমনী,ধীরে ধীরে এগিয়ে
আসছে।কে হতে পারে।কাছে আসতেই শুভ্র
অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।কে এটা,রাত্রি হিজাব
পরেছে।ঠোটে লিপিষ্টিক নেই,মুখে মেকাপ
নেই শুধু ফোলা চোখে কাজল লাগিয়েছে।
অন্যরকম সুন্দর লাগছে রাত্রিকে।অবশ্য ভীষন
কান্না করেছে ওর চোখ দেখে বোঝা যাচ্ছে।
-কে এটা?(শুভ্র কেদে কেদে বলল)

-কেন চেনা যাচ্ছে না হনুমান কে।(রাত্রি কেদে
কেদে বলল)

-হুম তবে এ তো হনুমান নয় এ তো পরী।

-তাই।

-হুম।

-তো পরীকে কি মাফ করা যায় না?

-কেন?পরী তো কোন দোষ করেনি,দোষ
করেছি আমি।পরী আমাকে মাফ করবে তো।

-ধ্যাত পাগল দোষটা আমারই।

-বলছি না আমার দোষ পাগলী।

-আচ্ছা মানলাম।এবার বল তো আমাকে ওই ছেলেটির
সাথে দেখে এত রাগ হল কেন?

-জানিনা।তা তোর বিএফ কেমন আছে।

-ওটা আমার বিএফ না।

-তাহলে কি?

-তাহলে তোর মাথা।

-হুম।

-আচ্ছা তুই কি আমাকে কখনও বলবি না?

-কি বলব?

-জানিনা।(বলেই রাত্রি উঠে পড়ল)

-এই মেয়ে শোন,আমি তোমার পাশটাতে হাটতে
চাই,তোমার মনের আকাশে রঙধনু হতে চাই,তোমার
চোখের কাজল হতে চাই,বিনিময়ে শুধু ভালবাসা দিও
আমায়।থাকবে তুমি আমার মন পাজরে।

-বুদ্ধু এভাবে না ভালবাসি বল।

-আমি তোমাকে ভালবাসি বালিকা।(হাটুগেড়ে হাত ধরে
বলল)

-আমিও তোমাকে খুব ভালবাসি বালক।

-পাগলী একটা।

-হুম শুধুই তোমার।এই চল তো

-কোথায়?

-ফুসকা খাব।

-না তুমি সেদিনও আমার শার্ট নষ্ট করেছিলে।

-হ্যা করেছি আর করব এখনও বুঝেছ।

-চল।

-না।

-কি বললে?(কলার চেপে ধরেছে রাত্রি)

-এই ছাড় যাচ্ছি তো।

-হুম সুবোধ বালক।হি হি হি।(বুকে ঝাপিয়ে পড়ে মুখ
লুকালো রাত্রি)

-হুম সুবোধ বালিকা।

ভালবাসা কয়েকটা শব্দগুচ্ছ নয়,একটা অদৃশ্য বন্ধন।যে
বন্ধন দুটি মনকে একত্রিত করে।।।।



********সমাপ্ত-------

......ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু 👌🌹




25/09/2018

September 25, 2018

কাছে আসার গল্প : প্রকৃত ভালোবাসা

              

                        প্রকৃত ভালোবাসা

টানা ২০ টা মিসকল দেওয়ার পর......
বৃষ্টি কল দিলো বিজয়কে...!!!!

বিজয় :- হ্যালো...!!!!

বৃষ্টি :- এই তুমি এতো কিপটে
কেনো,, কত গুলা মিসকল দিলাম,,
ব্যাক করলে না কেনো বলতো...???

বিজয় :- মোবাইলে ব্যালেন্স নাই...!!!!

বৃষ্টি :- তো ইমারজেন্সি ব্যালেন্স এনে কল করতা....!!!

বিজয় :- সেটাও শেষ...!!!!

বৃষ্টি :- ওহহ,, সকাল থেকে কল করছি,,
আর এই ভরদুপুর বেলা কল রিসিভ করলা...!!!!

বিজয় :- ঘুমিয়ে ছিলাম...!!!!

বৃষ্টি :- এতক্ষণ কেউ ঘুমায়...????
ওরে বিলাসিতা রে...!!!!

বিজয় :- এটা বিলাসিতা না,,
এটা মানিব্যাগ খালি থাকার প্রতিক্রিয়া...!!!!

বৃষ্টি :- মানে...????

বিজয় :- মানে ঘুমিয়ে থাকলে ক্ষুধা লাগে না....!!!!

বৃষ্টি :- তার মানে তোমার কাছে
দুপুরে খাওয়ার টাকাও নাই...????

বিজয় :- না,, তবে ম্যানেজ করে
ফেলছি,, ২০ টাকা....!!!!

বৃষ্টি :- বিশ টাকা দিয়ে কি খাবে শুনি...????

বিজয় :- বিশ টাকা দিয়ে এক কাপ
চা,,দুইটা কেক আর একটা চকলেট খাবো
দোকানদার একটা ভাংতি দিতে
পারবে তাই...!!!!

বৃষ্টি :- এগুলা খাবা তুমি...????

বিজয় :- খাইতেছি...!!!!

বৃষ্টি :- কোথায়...!!!!

বিজয় :- টঙে বসে,, সাথে মুভি ফ্রি...!!!!

বৃষ্টি :- কি মুভি...????

বিজয় :- হঠাৎ বৃষ্টি..!!!!

বৃষ্টি :- কার...???

ভিন ডিজেল নাকি স্ট্যাটহামের... ???

বিজয় :- ফেরদৌস !!!

বৃষ্টি :- হা হা হা হা হা....!!!!

বিজয় :- হাসো কেনো....????

বৃষ্টি :- এমনি,,

আচ্ছা একটা হেল্প করবা...????

বিজয় :- কি বলো...????

বৃষ্টি :- তোমার ডাস বাংলা
এ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাচ্ছি,,
একটা লোক কে দিয়ে দিবা...????

বিজয় :- ঠিক আছে দিয়ে দিবো...!!!!

বৃষ্টি :- ওকে,, এখন বাই...!!!

বিজয় :- ঠিক আছে,, বাই...!!!!
.
ব্যাংকে ৩০০০ টাকা আসার পর
বিজয় বৃষ্টিকে কল দিলো....!!!!

বিজয় :- হ্যালো,, টাকা আসছে,, কাকে দিবো...????

বৃষ্টি :- একটা রেস্টুরেন্ট এ গিয়ে
এক প্যাকেট বিরিয়ানি কিনবা,
কোক কিনবা আর বাকিটা পকেটে রাখবা....!!!!

বিজয় :- তারপর...????

বৃষ্টি :- ওগুলা খাবা...!!!!

বিজয় :- তারপর...!!!!

বৃষ্টি :- তারপর হঠাৎ বৃষ্টি মুভিটা দেখবা....!!!!

বিজয় :- তারপর...???

বৃষ্টি :- পুরো মুভি টা শেষ হলে,, মোবাইলে রিচার্জ করে
আমাকে কল দিয়ে মুভির কাহিনী শোনাবা....!!!!

               
                   এই হলো ভালোবাসা......

                             সমাপ্ত

   গল্পটি আপনার কাছে কেমন লেগেছে
আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাবেন
                       
                           ধন্যবাদ

September 25, 2018

কাছে আসার গল্প : মন দিয়ে ভালোবাসি

             
                 মন দিয়ে ভালোবাসি
               লেখিকা : নাবিলা ইসহাক

আমেরিকা থেকে ফিরছে নেন্সি। এখন প্লেনে
বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে। নাহ একবার এর জন্য
যাচ্ছে না। শুধু নিজের খালা খালু কে দেখতে
যাচ্ছে। ৫ বছর ধরে দেখে নি। খালা _খালু নেন্সি
কে দেখার জন্য আত্তহারা হয়ে বসে আছে।
সিট এ বসে আনমনে জানালা দিয়ে আকাশ পানে
চেয়ে আছে নেন্সি। এই বাংলাদেশ ছেড়ে ছিলো আজ
৫ বছর আগে। চলে এসেছিলো আমেরিকা।
ছোটোবেলার ভালোবাসার মানুষ থেকে পাওয়া
ঘ্রিনা আর অপমান নিয়ে।
নেন্সি একমনে চোখ দুটি বন্ধ করে ভাবছে তার ৫ বছর
আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা।
৫ বছর আগে....
নেন্সির বয়স ছিলো ১৫ বছর মাত্র। তখন সে ৮ এ
পড়তো। খুব মেধাবি স্টুডেন্ট ছিলো। তেমন দেখতে
ভালো ছিলো না নেন্সি। আর অনেক মোটা ছিলো।
আর তেমনি গায়ের রঙ ছিলো শ্যমলা। মা তো
ছোটবেলা এই মারা গেছেন। একমাত্র সাথী ছিলো তার বাবা। সে ও আজ মারা গেলেন। পাগলের মতো কান্না করছে নেন্সি। ৪_৫ বার অজ্ঞান ও হয়ে গেছে। তার বেচে থাকার প্রদীপ টাও নিভে গেলো যে।

বাবা মারা গেছে আজ ৭ম দিন হচ্ছে। নেন্সি
আনমনে বাহিরে আকাশের দিকে তাকিয়ে কাদছে।
তখনি রুমে কারো আসার শব্দ পেয়ে তাকিয়ে দেখলো তার খালা এসেছে।
নেন্সি কান্না পুছে খালার সামনে গেলো। খালা
নেন্সি কে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেদে উঠে
সাথে নেন্সি ও।তাদের কান্না দেখে পাশে
দাঁড়ানো নেন্সির খালু ও কেদে দেয়। নেন্সির
একটাই খালা। আর সে নেন্সি কে পাগলের মতো
ভালোবাসেন খালু ও কম ভালোবাসেন না।
খালু নিজের চোখের পানি পুছে নেন্সি কে জড়িয়ে ধরে
তার চোখের পানি পুছে দেন।
আর বলল...

"আজ থেকে তুই আমাদের সাথে ঢাকা থাকবি
তোকে নিতে এসেছি। ওখানেই পড়াশুনা করবি।
নেন্সি কে তার খালা_খালু তাদের সাথে ঢাকা
নিয়ে আসেন। নেন্সির খালা_খালু অনেক ধনী।
কিন্তু নেন্সিরা যথেষ্ট গরিব ছিলো গ্রামে থাকতো।
নেন্সির খালা_খালুর একটা মাত্র ছেলে নাম
নিক। যেমন নাম নিক তেমনি ক্রাশ। নেন্সির থেকে ৪ বছরের বড় ইন্টার সেকেন্ডিয়ার এ পড়াশুনা করছে।
তাদের বাসায় ই থাকবে আজ থেকে নেন্সি।
নেন্সি গাড়ি করে যাচ্ছে তার খালা_খালুর
সাথে। নেন্সি বাহিরে তাকিয়ে মুচকি হেসে ফেললো
কারন এতোটুকু বয়সে সে তার খালাতো ভাই কে পছন্দ করে। শুধু পছন্দ বললে ভুল হবে ভালোবাসে।
অনেক বাহানায় ঢাকা আসতো নিক কে দেখার
জন্য। কিন্তু নিক সবসময় নেন্সি কে এভোয়েড করতো।
নেন্সি বুঝতো যে নিক তাকে দেখতে পারে না। তাও
সে নিক মন উজার করে # ভালোবাসে ।
নিক কখনি নেন্সির সাথে কথা বলতো না। কারন
নিক এর চোখে নেন্সি কালো মটকি যে কিনা পুরো
গাইয়া। তাই কখনো নিকদের বাসায় নেন্সি আসলে
এড়িয়ে যেতো। কখনো বোন হিসেবে ও কথা বলতো না
নেন্সির সাথে। আজ যখন শুনেছে নেন্সি আসবে তাই
আগেই বন্ধুর বাসায় উঠেছে। যদি ওই গাইয়া মটকি
কালো মেয়েকে না দেখতে হয়।
নেন্সি বাসায় এসে শুধু তার নিক ভাইয়া কেই
খুজছে। কিন্তু সারাদিন খুজে না পেয়ে খালা কেই
জিজ্ঞাস করলো..

" ওহ খালা বড় ভাইজান কই দেহি না যে।

" তুই খেয়ে নে ও মনে হচ্ছে আড্ডা দিতে গিয়েছে ফ্রেন্ডসদের সাথে।

" আইচ্ছা তুমি খাইবা না।তুমারে আর খালুরে
ছাড়া আমি খাইতাম না।

" আচ্ছা চল। তোর খালুরে ডেকে আন।

নেন্সি খালুর রুমে যায়। উপড়ের ২ তালায়।

" খালু আমু?

" হুম আয় মা।

" খালু চলেন একলগে খামু আমরা।

" চল মা।

নেন্সি ডিনার করে উপরে যায়। নেন্সির পাশের রুম
হলো নিক এর।
নেন্সি নিজের রুমে কিছুক্ষন পাইচারি করে নিক এর রুমে উকি দেয়। কেউ নেই তাই ধিরু পায়ে পুরো রুমটা ঘুরে ঘুরে দেখছে। নিক এর একটা ছবি নিয়ে নিজের রুমে এসে জড়িয়ে ধরে কথা বলছে...

" জানো তোমারে আমার অনেক ভালা লাগে।
একদম আমার মনের ড্রিমের প্রিন্সের মতো।
কওতো তোমারে আমার এতো কিল্লিগা ভাল
লাগে। জানো আমার সব সপ্নে তুমি থাকো। আচ্ছা আমারে কি একটু ভালোবাসা যায়। কসম কইতাছি তোমার মনের মতো হইবার চেস্টা করমু। রোদ্রে ঘুরুম না। ঢাকার ভাষায় কথা কমু। তুমি যেমন চাইবা ওমনে চলমু।

নেন্সি ছবির সাথে কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়লো। সকাল এ ঘুম থেকে উঠে নিক এর রুম এ গিয়ে আবার হতাশ কারন নিক নেই। নিক এর রুমে বই_খাতা গিটার,ছবি সব ধরে ধরে দেখছে নেন্সি। সারা রুমে
নিক এর অনেক ছবি আর তা হেসে হেসে দেখছে নেন্সি।
হঠাত রুমে কারো আসার শব্দ পেয়ে তাকিয়ে দেখলো নিক এসেছে। নিক কে দেখেই নেন্সি অনেক বড় একটা হাসি দিলো।
আর বলল..

" বড়ভাইজান কেমন আছেন?

নিক কিছু না বলে রুমে ঢুকে। মুখটা কালা করে
বলল...

" তুই আমার রুমে আমার পারমিশান ছাড়া কেন
আসছিস।

" না ভাইজান রুম টা একবার দেখবার আইলাম।

" বের হো আর যদি না দেখি আমার রুমে এ আসতে। রুমে কেনো, আমার সামনে আসবি না তুই। বের হো।ইডিয়াট?

নেন্সি মন খারাপ করে বেড়িয়ে এলো। এইসব কথা
নেন্সি আগেও শুনেছে নিক থেকে তাই প্রস্তুত ছিলো।এই কথা গুলি নিক এর মা শুনে ফেললো। নেন্সি মন খারাপ করে রুমে এসে নিক এর ছবি দেখছে আর কথা বলছে...

" নিক তুমি ছবিতে আর আমার সপ্নেই সুন্দর। বাস্তব এ আমারে ত দেখতেই পারো না।
কিন্তু আমি তোমারে অনেক পছন্দ করি। আর অনেক দেখতে পারি।

এভাবেই দিন গেলো ১ মাস এর মতো। সবসময় নিক নেন্সিকে অপমান করতো। কিন্তু নেন্সি সে নিক কে দেখার জন্য বেকুল হয়ে আসায় বসে থাকতো কখন নিক আসবে। নেন্সি সদা দূর থেকে নিক কে দেখতো।নিক এর জন্য বারান্দাতে দাঁড়িয়ে থাকতো। কখন নিক
এর গাড়ি আসবে আর নিক এ একটু দেখবে। নিক এর রুমে উকি দেওয়া। নিক হাসলে তা লুকিয়ে দেখা। নিকের মন খারাপ থাকলে নিজেই কেদে ফেলা ছিলো
তার অভ্যাস। নিক ব্যাথা পেলে নেন্সি পাগলের
মতো করতো।নিক এর মা--বাবা জানতো যে নেন্সি নিক কে পছন্দ করে। আর তারাও নেন্সিকে নিজের ঘড়ের বউ
বানাতে চায়। তাই ঠিক করে নেন্সির সাথে নিক
এর বিয়ে দেবে।

সেদিন ছিলো নিক এর জন্মদিন বাড়িতে বড় অনুষ্টান এর আয়োজন করা হয়েছে।নিক এর সকল ফ্রেন্ড আসছে। আর নেন্সি এক কোনায় দাঁড়িয়ে আছে।নেন্সিকে দেখে নিক এর ফ্রেন্ডরা বলে উঠলো।

" ওই গাইয়া মেয়েটা কে?

নিক বলল..
" ওহ,,,,, সি,,, আস,,,আসলে আমার খালার মেয়ে।

" ওহ সি ইছ ছো গাইয়া।

সেদিন নিক এর মা_বাবা নিক আর নেন্সির
এনগেজমেন্টটা সারতে চান। তারপর নেন্সি বড়
হলে বিয়েটা দিয়ে দেবেন।নিক এর মা যখন এই এনাউন্সমেন্ট করলেন তখন নেন্সি তো খুশিতে পাগলের মতো শরম পেয়ে হেসে দিলো।
নেন্সি যে খুশি তে তার খালা খালু কে জড়িয়ে চুমু দিলো।

আর এদিকে নিক এগুলি শুনে নিজের হাতের ড্রিনক এর গ্লাসটা ছুরে ফ্লোরে মারলো আর সবার সামনে
চেচিয়ে বলে উঠলো...

" মাম্মা তুমি এগুলি কি বলছো?

আর ইউ আউট ওফ ইওর মাইন্ড। তুমি এই গাইয়া মেয়েকে আমার বউ বানাতে চাও।যাকে আমি এক মিনিট সজ্জ করতে পারি না তাকে। এই মেয়েকে তুমি আমার জন্য কিভবে সিলেক্ট করো। একে আমার বাসায় টলরেট করি বিকজ ওফ খালা।বাট তার মানে কি তুমি এই গাইয়াটাকে আমার গলায় ঝুলিয়ে দেবে।

এগুলি শুনে নেন্সির মুখ চুপসে গেলো। কান্নাও আর আসছে না নেন্সির। এখন যে মনে হচ্ছে নিজের অস্তিত্ব ও নেই। দেখতে ভালো না বলে কি ভালোবাসতে পারবে না।তার কি ভালোবাসা
বারন হয়তো।নেন্সি মাথা নিচু করে নিজের রুমে গিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে নিক এর ছবিটা বুকে নিয়ে হাউমাউ করে কেদে দেয়। সে তো সত্যি ভালোবাসে নিক কে।
কেন এমন করলো নিক। আমি দেখতে সুন্দরী না তাই। নিক আমি এভাবে থাকি বলে কি তুমি ভাবো আমি স্টাইল, শুদ্ধ ভাষা, ইংলিশ জানি না।তুমি হয়তো জানো যে আমি টপার। মনের মানুষ চেয়েছিলাম যে  চেহেরা বা বডি দেখে না আমার সহজ বাচ্চা মনটাকে ভালোবাসবে।
নিক সবার সামনে এগুলি বলে আরও বলে এই
বাড়িতে এই মেয়ে থাকবে নাহলে নিক।
খালা_খালু কি করবে তারা জানেন না।
একপাশে বোনের মেয়ে একপাশে নিজের ছেলে। বড্ড সমস্যায় পড়লেন তারা।
তারপর নিকের মা_বাবা ডিসাইড করলেন নেন্সি
কে আমেরিকা পাঠিয়ে দেবেন তার বন্ধুর কাছে।
নিকের বাবার বেস্ট ফ্রেন্ড নিলয় রায়জাদা সে
নেন্সি কে অনেক ভালোবাসেন নিজের মেয়ের মতো। তাদের যে কোনো ছেলে মেয়ে নেই। প্রচুর বড়লোক তারা। বাংলাদেশ আসতো নেন্সিকে দেখার জন্য মাঝে মাঝে।
যখন নিলয় রায়জাদা শুনতে পান যে নেন্সির
বাবাও মারা গেছেন তারা নেন্সিকে এডপ্ট
করতে চেয়েছেন। কিন্তু নিকের মা_বাবা দেন নি।
কিন্তু এখন বাদ্ধ হয়ে পাঠিয়ে দেবেন আমেরিকা।আজ নেন্সি চলে যাবে আমেরিকা। একবার তার ভাইজান কে দেখতে চেয়েছে। কিন্তু নিক বলেছে ওই

-গাইয়া মেয়ে বাড়ি থেকে বের হলেই ও বাড়িতে
ঢুকবে।
তাই নেন্সি একবার নিক এর রুমে গিয়ে সব
ছুয়ে কেদে দিলো নিজের চোখের পানি মুছে নিকের একটা ছবি নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে এলো।খালা খালু কে সালাম করে জড়িয়ে কেদে দিলো। তারাও যে বুকে পাথর রেখে পাঠিয়ে দিচ্ছে নেন্সি কে। নিক বাসায় এসে ফ্রেস হয়ে শুয়ে পরলো। ঘুম তো তার আসছে না। কেন জানি শুধু নেন্সির হাসি ভরা
ফেসটা সামনে আসছে। হালুম হুলুম করে খাওয়া কাঠুন দেখে লাফালাফি করা, একটু পর পর নিকের রুমে উকি দেওয়া। না চাওয়া সত্তেও নিকের মনে শুধু নেন্সির কথা ভাসছে।

আমেরিকার এয়ারপোর্ট এ দাঁড়িয়ে আছে নেন্সি
পুরান ছেলোয়ার কামিজ পড়ে। নিলয় রায়জাদা
এসেছে নেন্সি কে নিতে। নেন্সিকে দেখে জড়িয়ে ধরেকপালে চুমু দিয়ে বলল..

" আমার আম্মুর সমস্যা হয় নি তো আসতে।

" জি না।

" চলো

একটা বিশাল গাড়ি নেন্সির সামনে দাড়ালো।
নিলয় রায়জাদা নিজে বসে নেন্সি কে ও বসিয়ে
দিলো। একটা বিশাল রাজমহল এর মতন বাড়িতে প্রবেশ করলো তাদের গাড়ি। কয়েকটা কাজের মেয়ে দৌড়ে আসলো এসে লাগেজ নিয়ে গেলো। নেন্সি বাড়িতে প্রবেশ করতেই নিলয় রায়জাদার ওয়াইফ রুহি রায়জাদা দৌড়েয়ে এসে জড়িয়ে ধরলো।
নেন্সির জন্য পুতুল এর মতো একটা বিশাল রুম রেডি করেছে রুহি বেগম। তার কোনো সন্তান নেই তাই নেন্সিকে পেয়ে সব আল্লাদ মিটাচ্ছেন তিনি।নেন্সি রুমে গিয়ে হতবাক এতো সুন্দর রুম জিবনে সে দেখেনি। রুহি বেগম রুমের কাবারড খুলে পুতুলের মতো একটা পেন্ট আর গেঞ্জি দিলেন পড়তে সাওয়ার
নিয়ে। নেন্সির আসার খবর শুনে সব রেডি করে কিনেছে রুহি বেগম।
নেন্সি সাওয়ার নিয়ে এসে দেখে রুহি বেগম হাতে খাবার নিয়ে বসে আছেন। নিজের হাতে নেন্সিকে খাইয়ে দিলেন।নেন্সি চোখে টলটল পানি নিয়ে খেলো।খাবার খেয়ে নিচে নেমে দেখে নিলয় রায়জাদা বসে আছেন সফায়। নেন্সি কে আসতে দেখে বললেন...

" আম্মু তোমার জন্য ইংলিশ টিচার এনেছি
বাসায়। তোমাকে ইংলিশ শিখাবে কারন এখানে
কেউ বাংলা বুঝবে না।
নেন্সি নিলয় রায়জাদা কে জড়িয়ে ধরে কেদে দিলেন। নিজের মা_বাবা কে যে তাদের ম্মদ্ধে দেখলো নেন্সি। তারাও পাগলের মতো ভালোবাসেন নেন্সিকে।
এখানে আসার পর নেন্সির বায়োলজিকেল
বাবা_মা এখন নিলয় রায়জাদা এন্ড তার
ওয়াইফ রুহি। আর তাদের একমাত্র কন্না নেন্সি
রায়জাদা। নেন্সি পড়াশুনা করছে এখানে এখন আর আগের নেন্সি নেই। সে এখন যথেস্ট সুন্দরী এবং স্লিম।নিজের গাড়ি ড্রাইভ করে চলা ফেরা করে। আগের গাইয়া নেই ইংলিশ ছাড়া কথা বলতে কষ্ট হয় তার। মন আর এখন খারাপ থাকে না। কারন তার নিউ মম ডেড তাকে মন খারাপ থাকতে দেয় না।
নেন্সির মন খারাপ থাকলেই পুরো বাড়িতে বিলাই বা অন্ন কিছু সেজে ওর মুড রেডি করে। নেন্সি খাবার না খেলে তারাও খায় না। এমন কিছু নেই যে নেন্সির জন্য করেন নি। নিলয় রায়জাদার সম্পত্তির ৫০ পারসেন্ট নেন্সির নামে। এখন কেউ শুধু নেন্সি ডাকে না। নেন্সি রায়জাদা ডাকে। সবাই তাকে নিলয় রায়জাদার মেয়ে হিসেবে চিনে।
খালা_খালুর সাথে প্রায় ভিডিও কলে কথা বলে
নেন্সি বাট কখনো একবার দেখেও নি নিক কে। আর নিক নেন্সির খোজ খবর চাইলেও নেন্সি কখনো কথা বা তার ছবি দেখে নি।

নেন্সি এখানে এসেও ঢাকায় থাকে তার দুই
বান্ধুবি নিলা আর শিলা তাদের সাথে কথা
বলে। হুম এখানে নেন্সির অনেক বড়লোক সুন্দর সুন্দর ফ্রেন্ড আছে কিন্তু নিলা আর শিলা তার কুতচিত ফেস আর মোটাপা দেখেও তাকে মন প্রানে বান্ধুবি মানতো।
নিলা আর শিলা তো নেন্সিকে মিস ওয়ার্ল্ড এর
সুন্দরী বলে। শিলা তো প্রতিদিন ফোনে বলে তুই কি সেই নেন্সি। আল্লাহ কেউ তোকে চিনবে না রে। খালা খালুর কান্নাকাটি তে নেন্সি বংলাদেশ
যাবে বলল। ভেবেছিলো জীবনে কখনো বাংলাদেশ পা রাখবে না। কিন্তু কি করার খালা খালু তাকে বুকে নেওয়ার জন্য উতলা হয়ে আছেন। তাই নেন্সির ডেড নিলয় রায়জাদা বললেন গিয়ে ঘুরে
আসতে। বাট মেয়েকে একা ছাড়তে পারবেন না। তাই ওয়াইফ কে সাথে পাঠালান। নেন্সির ডেড ও আসবেন কিন্তু ইম্পরট্যান্ট কাজ থাকায় পারেনি। কিছুদিন পরে আসবেন।
বর্তমানে....নেন্সি শিট এ হেলান দিয়ে কানে হেডফোন লাগিয়ে রেখেছিলো। কারো হাতের স্পর্শে নেন্সির ভাবনায়
ছেদ পরে। পাশে তাকিয়ে দেখে তার মম।
মম বললেন ফ্লাইট নেমে পড়েছে। নেন্সি রেডি হয়ে প্লেন থেকে নেমে এলো। এয়ারপোর্ট আসতেই দেখলো দূরে দাঁড়িয়ে আছে তার খালা খালু চোখে একরাশ
পানি নিয়ে। নেন্সি সামনে যেতেই পাগল এর মতো চুমু দিয়ে বুকে আগলে রাখলেন।
তারাও যে নেন্সিকে চিনতে পারছেন না।
মাশাল্লাহ কি রুপবতী হয়েছে তার ভাইছতি।
নেন্সি বলে উঠলো...

" ওহ কামন খালা স্টোপ ক্রাইং। আর ইয়াহ
খালু গিভ মে আ হাগ মেন।

নেন্সির খালু ও নেন্সি কে জড়িয়ে ধরলো।
বাহিরে গাড়িয়ে নিয়ে এসেছে নেন্সিদের নিতে। নেন্সি বলল...

" হেই মাই সুইটি মম তুমি খালা খালুর সাথে যাও।আমি আমার জন্য কার কিনে দেন আসবো।

" পরে কিনে নিস এখন একা যাওয়ার প্রয়োজন নেই।

" ওহ কামন সুইটি গো। আমি আসছি ওকে।

নেন্সি তাদের কথা অমান্ন করে নিজের লাগেজ
নিয়ে একটা শোরুমে ঢুকলো মন মতো পছন্দ করে ব্লাক কালারের গাড়ি কিনলো। দেন লাগেজ গাড়ীতে তুলে বেড়িয়ে পরলো তার বন্ধুবিদের সাথে দেখা করতে।
নেন্সি ফনটা হাতে নিয়ে নিলা কে কল দিলো..

" হেই নিলা হোয়ের আর ইউ

" কফি শপ এ আয়।,, ঠিকানা ......।

নেন্সি আশে পাশে জিজ্ঞাস করে ঠিকানায় পৌছিয়ে দেখলো নিলা,শিলা বসে আছে। নেন্সি কে দেখে নিলা দৌরিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলো। নেন্সিও।তিনজন মিলে কথা বলছে তখন পাশের টেবিলে চোখ
পরতেই নেন্সি থম হয়ে গেলো। তার পাশের টেবিলে যে নিক তার ফ্রেন্ডসদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে। একটুও চেঞ্জ হয় নি আগের মতোই স্টাইলিশ, হেন্ডসাম।
নিক হঠাত পাশে তাকিয়ে দেখে একটা মেয়ে কালো পেন্ট, হোয়াইট গেঞ্জই উপড়ে জেকেট পড়া। নিক এর কেমন জেনো টান অনুভব হলো সে তাকে চিনে এমন মনে হলো। অনেক্ষন যাবত তাকিয়ে থাকলো নেন্সির দিক। নেন্সি কিছূটা মাথা ঝুকে আবারো
নিলা,আর শিলার সাথে কথা বলা শুরু করলো।
বাট নিক শুধু নেন্সির দিক বারবার তাকাচ্ছে তার যে মেয়েটাকে কেমন অনুভব হচ্ছে। নেন্সির হাসিটা তাকে ঘায়েল করেছে।
আজ ও নিক এর জন্মদিন। বাসায় বড় পারটি থ্রো করা হয়েছে সন্ধায় শুরু হবে।
নিক তাই কফিশপে ফ্রেন্ডসদের সাথে ছেলিব্রেট
করছে। নিক এর ফ্রেন্ড গুলি হাত দিয়ে নেন্সিকে
দেখিয়ে বলছে...

" ইয়ার মেয়েটা তো সেই। এমন গফ পেলে লাইফে আর কোনো মেয়ের দিক নজর যাবে না।

নিক এর কেন জানি খারাপ লাগলো। সে নিজেও জানে না। নিক নেন্সির সাথে কথা বলার ট্রায় করার আগেই নেন্সি সেখান থেকে নিলা,শিলা কে নিয়ে বেড়িয়ে পরে। নিক এর সামনে গাড়িতে উঠে
গাড়ি ড্রাইভ করে চলে গেলো। সাধারণত কোনো
মেয়ে নিক কে এভোয়েড করে না।

নিক বাসায় চলে গেলো তার। সবাই আসা শুরু করে দিয়েছে। নিক ও পরিপাটি হয়ে
এসেছে। নিক শুনতে পেয়েছে যে আজ নেন্সি আসবে।তাই সে ও আগ্রহ নিয়ে নেন্সিকে দেখার জন্য উতলা হয়ে আছে। এই কটা বছর সে নেন্সিকে অনেক মিস করেছে।
নেন্সি নিলা আর শিলা কে নিয়ে পুরো ঢাকা ঘুরছে। ওদের অনেক কিছু খাওয়ালো আর নেন্সি ও।

সন্ধায় বাসায় আসতে হলো কারন তার মম তাকে বাসায় আসার জন্য পাগল করে তুলেছেন। নেন্সি নিলা, শিলা কে সাথে নিয়ে বাড়ির ভিতর গাড়ি ঢুকায়। বাড়ির দরজা খুলা থাকায় সবাই গাড়ির
আওয়াজ পেয়ে সামনে তাকিয়ে বড় গাড়ি দেখে।নেন্সি লাগেজ নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির ভিতর ঢুকতেই অনেকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। নিক তো থম।
নেন্সি ঢুকে দেখে তার খালা মুখ ফুলিয়ে রেখেছেন।
তাই নেন্সি ও সামনে গিয়ে খালার গাল টেনে
বলল...

" উফ কামন খালা। তুমি মুখ ফুলালে তোমাকে
একদম সুট করে না।তোমাকে স্মাইলেই দারুন
লাগে। সো প্লিজ গিভ আ স্মাইল।

সাথে সাথে খালা খালু হেসে দেয়। নেন্সি পাশে
তার মম কে জড়িয়ে বলে

" কামন মম তুমি আবার মুখ ফুলিয়ে রেখেছো কেন।আমার সুইট মম এর কি একটা পাপ্পি লাগবে।

মম ও হেসে দেয়। এতোক্ষন নিক এর মাথায় বড় বড় বাজ পরে সাথে নিকের বন্ধুদের মাথায় কারন এই সেই নেন্সি জারা তাকে নিয়ে মজা করে অপমান করেছিলো।
খালু যখন বলে উঠলো...

" নেন্সি যা কাপড় চেঞ্জ করে আয়। আর প্লিজ
কামিজ পড়বি তোকে ওগুলোতে দেখি না কতোদিন যাবত।

এখন নিক এর কাছে ক্লিয়ার যে ও নেন্সি। নিক
এখনো ট্রাস্ট করতে পারছে না যে এটাই নেন্সি।
পাশের থেকে নিক এর ফ্রেন্ড বলল...

" কিরে এই মেয়ে দেখি তোর খালাতো বোন। যার সাথে তোর বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো। ইয়ার তুই তো দেখি এখন পরি পাবি। মেয়েটা তো পুরাই চেঞ্জ হয়ে এসেছে।

নিক শুধু নেন্সির চেঞ্জ দেখছে। ওর কথা ওর
চাল,চরন, ওর বিহেভার, কথার স্টাইল, পরনের
কাপড়চপর।নেন্সি নিক এর দিক একবার তাকিয়ে উপড়ে চলে গেলো। গিয়ে গোল কামিজ পড়লো মিস্টি কালার এর।
নিচে নামতেই সবাই আবার সখ খেলো।
নেন্সির মম রুহি বেগম নিজের চোখের কাজল নিয়ে নেন্সির ঘারে দিয়ে বললেন..

" কারো নজর যেনো না লাগে আমার প্রিন্সেস এর উপড়।

সবাই নেন্সির সাথে কথা বলছে নেন্সি ও কিন্তু
নিক এখনো তাকিয়ে দেখছে নেন্সিকে।
নেন্সি সাইড হয়ে দাঁড়িয়ে নিলা, শিলার সাথে
কথা বলছে।
নিক কে কেক কাটতে বলা হচ্ছে বাট নিক কেক
কাটছে না দেখে নিকের মা বলে উঠলো....

" কিরে কেক কাট

" সবাই আসলে তো কাটবো
 [ নেন্সি কে উদ্দেশ্য করে ]

তাই নেন্সি ও এসে দাড়ালো। নিক কেক কেটে
সবাইকে খাওয়ালো নেন্সিকে খাওয়াতে নিলে
নেন্সি নিজের হাতে নিয়ে খায়। নিক অনেকবার
কথা বলার ট্রায় করেছে নেন্সির সাথে বাট
নেন্সি ইগনর করছে। নেন্সির বুকের ভিতর যে তুফান চলছে ছোটো বেলার ভালোবাসা যে আবার তার সামনে।

নিক সবার সামনে চিল্লিয়ে বলল...

" নেন্সি কেমন আছো।

এখন নেন্সি ইগনরে করতে পারলো না।

সে বলল..." ভালো ভাইয়া।

নিক এর হঠাত মনে পরলো নেন্সির কথার স্টাইল...বড়ভাইজান কেমন আছো।

নিজেই হেসে উঠলো। নিক সদা বুঝতো যে নেন্সি তাকে পছন্দ করে বাট ও তো তখন ওকে দেখতে পারতো না।
পারটি সেশে নিক নিজের রুমে পাইচারি করছে।
নেন্সিকে দেখার পর থেকে ওর প্রিথিবি ঘুরছে।
নেন্সিকে যে ওনেক মনে লেগেছে নিক এর। কিন্তু কোন মুখ নিয়ে যাবে ওর কাছে। ভাবতেই বুকে বেথা অনুভব হয়। সে যে কি বাজে বিহেভ করেছিলো।নিক ধিরু পায়ে পাশের রুমে গিয়ে দেখে নেন্সির মা হাতে খাবার নিয়ে ঘুরছে আর বলছে...

" নেন্সি খেয়ে নে আরেকটু। নাহলে কিন্তু তোর ডেড কে কল করবো আমি।

" ওহ প্লিজ মম শুধু ব্লাকমেইল করো। ওকে খাচ্ছি।

নিক একটু হেসে রুমে গিয়ে ওয়েট করতে থাকলো কখন
নেন্সির মম বের হবে রুম থেকে। নেন্সির মম রুম থেকে বের হতেই নিক রুমে ঢুকে দেখে নেন্সি গিটার নিয়ে
বাজাচ্ছে আর গুন গুন করছে।
নিক বলে উঠলো।

" গিটার বাজাতে পারো।

" নো জাস্ট এভাবেই।

বলেই নেন্সি চলে যাচ্ছিলো। নিক বলল..

" রেগে আছো। আমি অনেক সরি নেন্সি।
নেন্সি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল..

" ভাইয়া ডোন্ট সে সরি। দেটস নট ইওর ফল্ট আমি দেখতেই বাজে ছিলাম ইটছ ওকে।

নেন্সির কথা গুলি নিক এর বুকে গিয়ে বিধলো তাও বলল...

" পারলে মাফ করে দিয়ো। আমি আসোলে পরে
রিলাইজ করেছিলাম। বাট অনেক দেরি করে
রিলাইজ করেছি।

নেন্সি কিছু বলল না।নিক চলে গেলো তার রুমে।এভাবেই ১০_১২ দিন কেটে যাচ্ছে। নিক ও কিছু বলতে বা করতে পারছে না।

আর কিছুদিন পর চলে
যাবে নেন্সি। এই কয়েকদিন এ নিক প্রানপন চেস্টা করেছে নেন্সির সাথে কথা বলার। নিক যে সত্যি নেন্সি কে ভালোবেসে ফেলেছে। অনেক মনে পরে নেন্সির আগের রুপ।নেন্সির বলা বড়ভাইজান,নেন্সি
র গলুমলু খাওয়া দাওয়া,৷ কারটুন দেখে
লাফালাফি করা, একটু পর পর ওর রুমে উকি
দেওয়া, বারান্দায় দাড়িয়ে ওর অপেক্ষা করা।
নিজে বেথা পেলে ওর কেদে দেওয়া। নাহ নিক আর ভাবতেই পারছে না যে নেন্সি চলে যাবে। সে যে আর পারবে না ওকে ছাড়া থাকতে দেড়িতে বুঝেছে বাট বুঝেছে যে ভালোবাসে সে নেন্সিকে।

রাত ১২ টা.. নেন্সি তার ডেড এর সাথে কথা
বলে পিছনে ফিরে দেখে নিক পেন্টের পকেটে হাত দিয়েদাঁড়িয়ে।
নেন্সি বলল..

" কিছু বলবেন ভাইয়া.

নিক শুধু নেন্সিকে দেখছে আর তার আগের নেন্সিকে খুজছে। ও যে এখনো আগের নেন্সিকেই দেখছে কারন মন তো সেম।
নেন্সি আর দাড়াতে পারবে না নিক এর সামনে
তাই নিজেই বেড়িয়ে যেতে নিলে পিছন থেকে হাতে টান অনুভব করে তাকিয়ে দেখে নিক তার হাতশক্ত করে ধরে আছে।
 নেন্সি বলল...

" ভাইয়া কি করছেন ছাড়ুন হাতে লাগছে।

নিক নেন্সির হাত ধরে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে ধরে। নেন্সি কথা বলা ভুলে গেছে। নিক নেন্সিকে আরো নিজের সাথে চেপে ধরলো ধিরে ধিরে নেন্সির মুখের চুল গুলি শরিয়ে দিলো। নেন্সি কেপে কেপে উঠছিলো। নিক নেন্সির ঠোঁটে টাচ করে নিজের ঠোঁট
এগিয়ে নিচ্ছে।
নেন্সি চোখ খুলে নিক কে ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে
বেড়তে নিলে নিক দরজা লক করে দেয়। তাই নেন্সি বলল...
" ভাইয়া আপনি কি আজগবি কাহিনি করছেন।
নিক কোনো আন্সার না দিয়ে নেন্সির কমড় চেপে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেন্সির গাল ধরে কিস করতে শুরু করলো। পাগলের মতো কিস করছে নেন্সি কে। আর
নেন্সি নিক কে ধাক্কা দিওয়ার ট্রায় করছে।
নেন্সি না পেরে নিক এর ঠোটে কামড় দিয়ে দেয়। বাট নিক কিছুই বলল না বরং নেন্সির দু হাত পিছনে বেকিয়ে ঘারে কিস করতে থাকে। নেন্সি সজ্জ করতে
পারছে না। তারপর বলল...

" ভাইয়া আমি কিন্তু খালাকে ডাকবো।

নিক মাথা উচু করে আবার নেন্সির দিক কিছুক্ষন তাকিয়ে আবার নেন্সির ঠোটে নিজের ঠোট বিলিন করে দিলো। এইবার নেন্সি ও শান্ত হয়ে নিক এর সার্ট
আকড়ে ধরে। আর নিক নেন্সির হাত ছেড়ে কমড় চেপে
নিজের সাথে মিশিয়ে কিস করতে থাকে। নেন্সিও কিস
করছে আর নিক ও।
দুজনি চোখ বুঝে নিজের এতোদিনের একাকিত্ত দূর করছে। নিক নিজের হাত দিয়ে নেন্সির পেটে স্লাইড করছে। পেট থেকে উপড়ে উঠাচ্ছে। আর নেন্সি আরো খিচে নিক এর সার্ট আকড়ে ধরে।
অনেকটা সময় কিস করার পর নিক নেন্সি কে ছাড়ে। নেন্সির চোখ, নাক, ঠোট লাল হয়ে আছে। নিক পরম
জত্নে নেন্সির চোখ, নাক ঠোঁটে কিস করে। নিজের কপাল নেন্সির কপালে লাগিয়ে বলল...

" সরি নেন্সি তোমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য বাট পরে আমি বুঝতে পেরেছি যে আমিও তোমাকে
ভালোবাসি। নেন্সি চেহেরা দিয়ে না তোমার আগের মন নিয়েই ভালোবেসেছি তোমায়। জানি বুঝতে লেট করেছি। কিন্তু তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি যে।নেন্সি নিক কে জড়িয়ে হাউমাউ করে দেয়। পাগলের মতো কাদতে থাকে। নিক কে টাইট করে জড়িয়ে ধরে
কাদতে থাকে নেন্সি। আর নিকের চোখ লাল হয়ে
আছে এক ফোটা জল চোখ থেকে বেরিয়ে পরলো।
দুজন দুজনকে পাগলের মতো আদর করছে। আজ দুজনে কেদে তাদের কস্ট দূর করছে। তারা যে এখন
নিজেদের সুখ খুজে পেয়েছে।
সেইদিন এর পর থেকে তাদের ভালোবাসা শুরু হয়।

একদিন হঠাত নেন্সির গাড়ি এক্সিডেন্ট করে
যেখানে নেন্সির পুরো বডি পুরে যায়।
নেন্সি বেড এ শুয়ে চোখের পানি ফেলছে কারন তার চেহেরা দেখে ডাক্তার প্রজন্ত ভয় পাচ্ছে এই
পুরা দাগ সারতে অনেক সময় লাগবে। নেন্সি
হাউমাউ করে কাদছে সে জানে নিক ওকে দেখলে আবার চলে যাবে আবার ঘ্রিনা করবে। কিন্তু এখন নিক চলে গেলে সে যে নিক কে ঘ্রিনা করতে পারবে না। নিক পাগলের মতো হসপিটাল পৌছিয়ে দেখে
নেন্সি বেডে শুয়ে আছে অন্যপাশ ফিরে। নেন্সির
চোখের পানি ঝড়ে পড়ছে কারন নিক তার চেহেরা দেখে ভালোবেসে ছিলো হয়ত দেখলে আবার ভয় পেয়ে
চলে যাবে। নিক কাদতে কাদতে নেন্সি দিক আগায়।
নিক গিয়ে নেন্সির মুখটা নিজের দিক ঘুরায়। আর
নেন্সি চোখ বন্ধ করে কেদে দেয়। নিক আলতো করে পুরো
মুখটা ছুয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল।

" কিচ্ছু হবে না তুমি তারাতারি শুস্থ হয়ে যাবে।
আমি তোমায় সুস্থ করবো।

নিক নেন্সিকে জড়িয়ে ধরে আর নেন্সি কেদে দেয়। সেই দিনের ঘটনার পর নিক সারাদিন নেন্সির পাশে
থাকে ওর খেয়াল নেয়। এখন নেন্সি অনেক শুস্থ।

আজ নিক নেন্সির বিয়ে। হুম মুখে এখনো নেন্সির দাগ বাট সেই দাগেই চুমু খায় নিক। এক বিন্দু ভালোবাসা কমে নি তার বরং বেরেছে।
ভালোবাসা চেহেরা না মন দিয়ে হয়। আর তা
সারা জীবনের জন্য। পারফেক্ট জীবন সাথী সবার আছে। শুধু তার জন্য অপেক্ষা কর সে ধরা দেবে।মিত্থা ভালোবাসা খেলে জীবনটা কে নষ্ট করো না।

চেহেরা দেখে নয় মন দিয়ে ভালোবাসো।
সারাটাজীবন সুখে থাকবে ইনশাআল্লাহ।



                           সমাপ্ত

কমেন্ট বক্সে অবশ্যই কমেন্ট করে
    জানাবেন গল্পটি কেমন লাগব.....ধন্যবাদ *

   




24/09/2018

September 24, 2018

কাছে আসার গল্প : সিনিয়র বউ



গল্প :  সিনিয়র_বউ - সাকিব আহমেদ


-আম্মু বিয়া করমু...

-কি কইলি হারামজাদা!!!

-শিতের ভিতর একা ঘুমাইতে পারমু না।এমনিতেই শিত,তারউপরে কলেজ ছুটি।একা থাকা যায় বল।তাই বিয়া করাইয়া দাও

-হারামজাদা এই দিকে আয়,তোরে বিয়া করাইতেছি

কে যায় কার কাছে।এক দৌড়ে রুমে এসে দরজা লাগাইয়া দিলাম।ও হ্যা,আমি সাকিব আহমেদ।যদিও আম্মু বাদে সবাই আমাকে অর্ক বলেই ডাকে।

যাইহোক আমি ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি।বাবা মায়ের প্রথম সন্তান।আমার ছোট একটা বেন আছে।মিম। ।আমার কোন abcd নাই।মানে কোন গার্লফ্রেন্ড নাই।ভাবছেন,এত বড় ছেলে গার্লফেন্ড নাই।নিশ্চই পড়াশোনায় ভালো,নাহলে দেখতে ক্ষ্যাত।আমি দুইটার কোনটাই না।দেখতে মাশাল্লাহ কিন্তু পড়াশোনায় পুড়া ফাকিবাজ।এই যে,পড়াশুনা রেখে গল্প লিখতেছি।আমার জুনিয়র ভাইয়াও প্রেম করে।কিন্তু আমি!!কপাল,আজ পর্যন্ত একটা প্রেম করতে পারলাম না।যাইহোক এইবার মূল গল্পে আসি।

সকাল সকাল আম্মুর সাথে ফাজলামি করে এসে ঘুম দিলাম।এক ঘুমে দুপুর।ঘুম থেকে উঠে গোসল,খাওয়া দাওয়া করে আবার ঘুম দিলাম।ঘুম ভাঙল ছোটবোনের ডাকে।

-ভাইয়া,এই ভাইয়া।তাড়াতাড়ি উঠে রেডি হয়ে নে???

-ওই আম্মুরে গিয়া বল,আমি বাজারে যাইতে পারব না....

-বাজারে যাওয়া লাগবে না।

-তাইলে কানের ধারে আইসা ঘ্যানঘ্যান করছ ক্যান?কি হইছে??

-তুই নাকি কি বিয়া করবি???তোর জন্য মেয়ে দেখতে যাবো

-কি কস!!!
-হুমমমম

-সত্যি???মাইয়াটা কে???

-অনিকা আপু.....

-হুমমম।হইছে,এইবার ফাজলামি রাখ।আর এইখান থেকে আউট হ!!

-আরে সত্যি।আনিকা আপুর সাথে তোর বিয়ে ঠিক করছে আব্বু।রেডি হ তাড়াতাড়ি....

-তুই এইখান থেকে যাবি না আমি কানের নিচে একটা দিমু
.
এই বোনটাও না,একটা ফাজিলের ডিব্বা।সবসময় আমার সাথে ফাজলামি করে।আমি যে ওর বড় ভাই এইটা মনেই হয় না।আর অনিকা হচ্ছে আমার আব্বুর বন্ধুর মেয়ে।অনার্স ৩য় বর্ষে পড়ে।সেই রকমের রাগি আর ব্রিলিয়ান্ট মেয়ে।চোখে ইয়া বড় একটা চশমা।আমি তাকে খুব ভয় পাই।যদিও তার পিছনে,কারন আছে।

তখন আমি ক্লাস টেন এ পড়ি।অনিকা আপু আমাদের বাসায় বেড়াতে আসলে,আমাদের পাশের বাসার এক ভাইয়ার আপুকে পছন্দ হয়।তো,ভাইয়া আমাকে বলল কিছু একটা ব্যবস্থা করে যেন বিকালে আপুকে নিয়ে ঘুরতে বের হই।আমিও বিকালে আপুকে নিয়ে ঘুরতে বের হলাম।ভাইয়া রাস্তায় আপুকে প্রোপোজ করল।

তারপর,ভাইয়ার দুই গালে,আর আমার একগালে ৫ আঙুলের দাগ।সেই দাগ পুরা সাতদিন পর্যন্ত ছিল।সেই থেকেই অনিকা আপুকে ভয় পাই।তাছাড়া ছোটদের ভুল তিনি একদম দেখতে পারেন না।এই মেয়েকে যে বিয়ে করবে,তার জিবন শেষ
অনিকা আপুকে নিয়ে ছোটবোন মাঝে মাঝেই ফাজলামি করে।তাই ওর কথায় কান না দিয়া এফ বি লগ ইন করলাম।এর মধ্যেই মা এসে হাজির

-কিরে,তোরে রিতু রেডি হইতে কইছে না???

-কি মা!!তুমিও মিমের সাথে শুরু করলা??

-ফাজলামি না।তোর সত্যি সত্যি আজ বিয়ে...

-কার সাথে??

-অনিকার সাথে

-কি ইইই!!

-হুমমম।তুই তো জানোস অনিকার বাবা খুব অসুস্থ।তিনও চান,মৃত্যুর আগে তার মেয়ের বিয়ে দিতে।তাই দুপুরে তোর বাবাকে ফোন করছিল।আর সকালে তো তুই বিয়া করতে চাইলি।সেইটা তোর আব্বু শুনে ফেলছে।তাই তোর সাথেই অনিকার বিয়ে ঠিক করছে

-আরে আমিতো সকালে ফাজলামি করছিলাম...
-আমার কিছুই করার নাই।তোর আব্বু ঠিক করছে।তুই তো তোর আব্বুকে চিনোস।

-তাই বলে অনিকাকে???

-কেন?? কি হইছে??কত ভালো। কিউট একটা মাইয়া।পড়াশোনাও ভালো।

-হ!!ভাল।আমার জীবনটা শেষ।মুই বিয়া করমু না মা।
-আমি কিছু করতে পারব না।তোর আব্বুকে গিয়া বল।আমি গেলাম,তারাতারি রেডি হ।

এইটা কি হইল।শেষ পর্যন্ত কিনা আমার সাথেই অনিকা আপুর বিয়ে।অনিকা আপুর বাবা অসুস্থ তাই তারাতারি দিতে চান।আমার সকালের ফাজলামি সকালে আব্বু শুনে ফেলছে।এখন আব্বুকে কিছু বলতে পারব না।আমার আব্বু হচ্ছে বাঘ।সেই লেভেলের রাগি মানুষ।যা বলবেন,সেইটাই হবে।

যাইহোক রেডি হয়ে অনিকা আপুদের বাসায় গেলাম।গিয়ে তো আমি পুরা অবাক।কাজিও হাজির!!!ইয়া আল্লাহ।এই মেয়েকেই আমার বিয়ে করতে হবে।আমি আপুকে কয়েকবার চোখ টিপ দিলাম যাতে তার সাথে আমি কথা বলতে পাড়ি।কিন্তু চোখ টিপ দিতেই তার উল্টো টা হল।আমার দিকে রাগি লুক নিয়া তাকাইলেন।মনেহয়,আমি চুরি করে ফেলছি।

রাত ১১ টা।বিয়েটা আমাদের হয়ে গেল।অনিকা আমার রুমে।অনিকা বলছি তাই অবাক হচ্ছেন???আরে ও তো এখন আমার বউ,সিনিয়র বউ।আমি রুমের বাইরে দারাইয়া আছি।ভিতরে ডুকতে ভয় লাগছে।কি হবে ভিতরে ডুকলে???এই ভয়।
অনেকক্ষন পর ভিতরে ঢুকলাম।ঢুকে দেখি,মহারাণী আমার টেবিলে বসে পড়াশোনা করছে।আমাকে দেখে পড়া রেখে আমার দিকে আসল।আমার ডান কানটা ধরে বলল,হারামী,তখন চোখ মারছিলি কেন???

******

-উফ!!!কান ছাড়ো।বেয়াদব বৌ।স্বামীর কান ধরে
-ঐ তোর সাহস তো কম না...আমারে তুমি কইরা কইতাছোছ
-বিয়া করা বৌকে আপনি করে বলব নাকি???
-হুমমমম।আপনি করেই বলবি।
-ঐ বেয়াদব বৌ,স্বামী কে ইজ্জত দেও,নাহলে কিন্তু____
-নাহলে কি????

-জান্নাত পাবানা।মনে রাখবা স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর বেহেস্ত।
-ভালোই জ্ঞান দিতে পারোতো,দাড়াত তোর জ্ঞানগিরী ছুটাইতেছি।

-ঐ কান ছারো বলতেছি,নাহলে কিন্তু আম্মুকে ডাক দিমু...
-দে,ডাক দে...

-বলমু,তুমি আমারে নির্যাতন করতেছো??

-হারামি,আমি তোরে নির্যাতন করি।দাড়া,ডোকে আজ আমি

-দেখো ইজ্জত দিয়া কথা বল,পাঠক রা পরতেছে।সবাই ভাববে আমি ভিতু।
-তুই নিজেকে সাহসি মনে করিস নাকি??

-হুমমম।সাহসি না হলে কি তোমাকে বিয়া করতাম।
-বিয়া করছোস এইবার মজা বুঝবি।এতদিন ছোটদের থাপ্রাইতাম।আজ থেকে তোরে থাপ্রামু।

-ইয়া আল্লাহ!!!এই মাইয়া এইগুলা কি কয়??

-আল্লাহরে ডাইকা লাভ নাই।তাড়াতাড়ি মশারি টানা।আমার ঘুম পাচ্ছে।

-আমি মশারি টানাবো!!!!হাউ ফানি।তুমি টানাও
-তুই মশারি টানাবি না???

-এইতো টানাইতেছি।আজই কিন্তু শেষ।আর কোনদিন আমি টানাবো না।

-শুধু মশারু না,কাল থেকে তোকে আমার জামা কাপড় ও ধুতে হবে।
-ইয়ামপসিবল।।

-হইছে।এখন মশারি টানা।

মানুষের বিয়া নিয়া কত সপ্ন থাকে।আমারো কত সপ্ন ছিল।বিয়া,বাসর রাত।উফফ।সপ্ন গুলা সপ্নই থেকে গেল।আল্লাহ,এই মাইয়ার জন্য আমারেই পছন্দ হল।আর কোন ছেলে পাইলা না।

-কিরে,মশারি টানাইতে এতক্ষন লাগে।

-এইতো হইয়া গেছে।

মশারি টানাইয়া।পান্জাবিটা খুলে একটা গেন্জি পরে নিলাম।যখনই খাটে উঠতে যাবো তখনি
-কিরে তুই এখানে উঠতেছোস ক্যান??

-ওমা,আমি ঘুমাবো না!!!

-না,খাটে ঘুমাইতে পারবি না।বদ মতলব তাই না??

-তাইলে আমি ঘুমামু কই???

-আমি কি জানি??
আর,খবরদার,খাটে আসবি না।
ধুর এইটা মাইয়া???কথায় কথায় রাগ দেখায়।আমি এখন কই ঘুমাবো??অজ্ঞতা চেয়ারে বসে বই পড়তে লাগলাম।মহারাণী ঘুমিয়ে পড়েছে।সত্যি ঘুমন্ত অবস্হায় বৌ টা পরির মত লাগতেছে।চোখে এখন আর ইয়া বড় চশমাটা নাই।ওর কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েচি মনে নাই।
ঘুম ভাঙল সকাল ৮ টায়।ঘুম থেকে উঠে দেখি আমি খাটে শোয়া।ওমা আমি খাটে আসলাম কখন।বাসায় নানুর বাসা থেকে মেহমান এসেছে।মামা,মামি,মামাতো ভাই,ভাবি আরও অনেকে।বাহিরে বের হতেই ভাবির সাথে দেখা।

-কি দেবর???বাসর কেন হল???

-সুপারররর

-একি!!!এখনও গোসল করনি???ছি:

-ওমা।গোসল কেন করব??

-যাও গোসল কর।তারপর বাহিরে এসো।
গোসল কেন করব বুঝলাম না।তারপরেও গোসল করলাম।বাসায় মেহমান এসেছে।অনেক কাজ।সারাদিন মোটামুটি ব্যস্ত ছিলাম।সন্ধায় বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে বের হলাম।

-কিরে মামা,বিয়া করলি,একবার জানাইলিও না??

-আরে হুট করে হয়ে গেছে

-বুঝি বুঝি।তো ট্রিট কবে দিবি??

-কালকে দিমুনে

-মামা,আমাগো রাইখা বাসর কইরা ফালাইলি??

-কি কইলি হারামি???তোগো আমার বাসর ঘরে নিমু নাকি।

-আরে ব্যাটা,আমরাতো কেউ বিয়া করি নাই।তুই করছোস।সেইটা বল্লাম।

-তুই তোর আব্বারে গিয়া ক বিয়া করাইতে দিতে।তাইলেই বিয়া করাইয়া দিবো।

-হইছে চল,লেক পাড়ে যাই।ঔখানে জাহিদরা অপেক্ষা করতেছে।

-ওকে চল।

বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়া রাত ১০ টায় বাসায় ফিরলাম।মেহমানরা চলে গেছে।বাসায় আব্বু,আম্মু,রিতু,অনিকা আর আমি।রুমে গিয়া ড্রেস চেন্জ করব তখনই বৌ এসে হাজির
-কিরে কই ছিলি এতক্ষণ???

-না মানে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে গেছিলাম।

-আড্ডা???রাত ১০ টা পর্যন্ত আড্ডা???

হারামি,তুই আর কোনদিন যদি সন্ধা ৬ টার পর বাহিরে থাকলে থাপ্রাইয়া দাত যে কয়টা আছে ফালাইয়া দিমু।কয়দিন পর পরিক্ষা আর উনি বাহিরে ঘুরে।
-
-হাত মুখ ধুইয়া খাইতে যা।

-তুমি খাবানা???

-আমি তো আর আপনার মত ঘুরি না।আমি খাইছি

-কি!!!স্বামী রে রাইখা খাইতে পারলা???

-আইছে আমার স্বামী।ঐ আমার বর হওয়ার কোন যোগ্যতা আছে??

-ঐ আমি তোমার থেকে কোন অংশে কম নই।

-হইছে হইছে।এখন ঘ্যানঘ্যান করিস না।খাইতে যা।আমি পরবো
-ওকে

এই মাইয়ার কাছে আমার কোন মুল্যই নাই।কি মনে করে নিজেকে? হতে পারি আমি ওর জুনিয়র।তাতে কি??যাইহোক,হাতমুখ ধুইয়া রাতের খাবার খেতে গেলাম।মা আমাকে টেবিলে বসতে বলল,সে খাবার গরম করে নিয়া আসতেছে।
আমি টেবিলে বসে একটা আপেল ফল কাটার ছুরি দিয়ে কেটে খাচ্ছি।অন্যমনষ্ক হয়ে আপেল কাটতে গিয়ে ডান হাতের আঙুলে ছুরিটা লাগে।অনেকটা কেটে গেছে।আমার ডাক শুনে আম্মু ছুটে আসল। অনিকাও আসল।বাসায় ফাস্ট এইড থাকায় অনিকা ব্যান্ডেজ করে দিল।আমাকে রুমে গিয়ে শুয়ে থাকতে বলল। কিছুক্ষন পর অনিকা খাবার নিয়ে আসল।

-আমি খাবোনা..

-ঐ তাড়াতাড়ি খা।নাইলে কিন্তু

-কেমনে খাব??আমার হাত তো কাটা।তুমি খাওয়াইয়া দাও

-আমি পারবো না


-তাইলে আমিও খাব না।

-আয় দিচ্ছি।

বৌ টা আমাকে খাইতে দিচ্ছে।সত্যি এর থেকে আর রোমান্টিক কি হতে পারে।বৌ এর হাতে খাওয়া,এটাও একটা কপাল যা সবাই পায় না।খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে গেলাম।পরেরদিন আমার খুব জ্বর হল।৩দিন সেই জ্বর থাকল।এই তিনদিন অনিকা বোধহয় ঘুমায় নাই।সারাক্ষন আমার কাছেই থাকে।কিছুক্ষন পর পর কপালে পট্টি ভিজিয়ে দিয়ে দেয়।আমার গোসল করা,কাপড় ধোয়া,খাবার খাওয়ানো,ঔষধ খাওয়ানো সব অনিকাই করে।

তিনদিন পর রাতের বেলা।অনিকা আমাকে খাবার খাওয়াইয়া যেতে লাগলো।আমি অনিকার হাতটা ধরে বল্লাম
-কই যাও

-প্লেট টা রাইখা আসি।আর ঔষধ নিয়া আসি।

-আমার ঔষধ লাগবে না।

-কেন??ঔষধ না খেলে ভালো হবি নাতো।

-আমার ঔসধ লাগবে না।তুমি একটু আদর কর।তাইলেই আমি ভালো হয়ে যাব।

এইটা বলেই ওর হাতটা ধরে আমার দিকে টান দিলাম।ও এসে আমার বুকের উপর পরল।ওর কপালে একটা চুম্বন একে দিলাম।ও আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরেছে।
-কখনো ছেড়ে যাবিনাতো??

-নাহ কখনো ছেড়ে যাব না।

-খুব ভালোবাসি রে তোকে

-আমিও আমার সিনিয়র বো টাকে খুব ভালোবাসি।
-হুমম।এইবার ছাড়।ঔষধ নিয়ে আসি
-বল্লামতো,ঔষধ লাগবে না।তুমি আদর করলেই হবে।

-আগে ঔষধ খাবি তারপর আদর।
-ওকে।তাড়াতাড়ি আসবা।
যাক শেষ পর্যন্ত আমাদের ইয়ে টা হয়ে গেল।সিনিয়র বৌ পেয়ে আমি খুব খুশি।সিনিয়র বৌ যেমন আদরেও সেরা,তেমনি শাষনেও সেরা।আমি আমার বৌ কে নিয়ে বেশ সুখেই আছি।তাই আসুন,সিনিয়র কে বিয়ে করি,সুখি সমৃদ্ধ দেশ গড়ি।


                             সমাপ্ত

         * কমেন্ট বক্সে অবশ্যই কমেন্ট করে
    জানাবেন গল্পটি কেমন লাগব.....ধন্যবাদ *

September 24, 2018

কাছে আসার গল্প : না বলা ভালোবাসা



গল্পঃ না_বলা_ভালোবাসা #লেখকঃ সাব্বির

নীল একটু তাড়াহুড়া করেই ভার্সিটিতে ঢুকলো। হঠাৎ করেই সে কিছু একটার সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেলো। একটু ভালো করে লক্ষ্য করতেই সে বুঝতে পারলো ধাক্কাটা সে একটা হাইলেভেলের সুন্দরী মেয়ের সাথে খেয়েছে। নীল মনে মনে অনেক ভয় পেয়ে গেলো এই বুঝি সুন্দরীটা তাকে ইচ্ছামতো বকাবকি করে শেষ করে দিবে। এমনকি তার চরিত্র নিয়েও প্রশ্ন তুলবে, যেমনটা সচারচার হয়। নীলও নিজেকে প্রস্তুত করে নিয়েছে যদি কিছু বলে তাইলে সেও
ছেড়ে কথা বলবে না। কেনো তারা বুঝে না ভার্সিটিতে ছেলেরা সুন্দরী মেয়েদের সাথে তো ধাক্কা খাওয়ার জন্যই আসে। পাব্লিক বাসেও ধাক্কা খাওয়া যাবে না, রাস্তা-ঘাটেও যাবে না তাইলে ধাক্কাটা কোথায় খাবে আমাদের মতো নিরহ সিংগেল পোলাপাইন গুলো। কিন্তু আশ্চার্যের ব্যাপার সুন্দরীটা নীলকে কথাগুলা বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেলো। নীল তো পুরাই অবাক হলো এটা কি আসলেই মানুষ ছিলো নাকি অন্য কেউ ছিলো। মানুষ হলে তো আট-দশটা মেয়ের মতো পার্ট নিয়ে সব রাগ ঝাড়তো, রাগ না ঝাড়লেও অন্তত রাগী একটা লুক নিতো কিন্তু এতো দেখি নিজেই অপরাধীর মতো চলে যাচ্ছে। দেখে তো মনে হচ্ছে কোনো বিষয়ে সে চিন্তিত।
.
এই যে মিস। (নীল)
জ্বি, বলুন। (অন্তি)
এইটা আপনার বই না??(নীল)
আরে হ্যা, এইটা আপনি কই পেলেন??(অন্তি)
সেদিন যে আপনার সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেলাম তারপর তো আপনি একবারও পিছনে ফিরে তাকালেন না। ওইখানেই বইটা ফেলে রেখে গেছিলেন। (নীল)
অহ, থ্যাংকস, এইটা আমার অনেক প্রিয় একটা বই। অনেক খুঁজেছি অথচো এইটা আপনার কাছে।(অন্তি)
আরে থ্যাংকস কিসের, আমারই উল্টা আপনাকে সরি বলা উচিৎ কারন সেদিন আমার জন্য আপনি পড়ে গেলেন। যাই হোক কোন ডিপার্টমেন্টে আপনি??(নীল)
কেমিস্ট্রি, আপনি??(অন্তি)
গুড, আমরা তো একই ডিপার্টমেন্টের, তাইলে তো আমরা বন্ধু হতেই পারি।(নীল)
হুম, তা তো হতেই পারি।(অন্তি)
.
এইভাবেই চলতে থাকে নীল এবং অন্তির বন্ধুত্ব।
অন্তি ছিলো অনেক মিশুক এবং হাসি-খুশি টাইপের মেয়ে। সব সময়ই অন্তির মুখে হাসি লেগেই থাকতো আর সহজেই সবার সাথে বন্ধুত্ব করতো। অন্তির এই গুন গুলি নীলকে বরাবরি আকৃষ্ট করতো। নীল আস্তে আস্তে অন্তির প্রেমে পড়ে যায়। অন্তির প্রতি তীব্র দুর্বল হওয়ায় সে এক পর্যায়ে অন্তিকে তার মনের কথা জানিয়ে দেয়। নীলের মুখে এমন কথা শুনে অন্তি অনেকটাই আশ্চর্য হয়ে যায়। অন্তি নীলকে সরাসরি না করে দেয়। নীল অন্তিকে অনেক অনুরোধ করে। কিন্তু অন্তি বরাবরের মতোই বলতে থাকে আমি তোকে শুধু বন্ধুই ভাবি আর কিছু না।
কিন্তু কেনো?? (নীল)
তোর কোনো প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারবো না বলেই অন্তি সেখান থেকে চলে যায়।
.
প্রায় ২ মাস হলো অন্তি নীলের সাথে কোনো যোগাযোগ করে না। নীল এই দুই মাসে অন্তির জন্য আরো পাগল হয়ে যায়। অনেক চেষ্টা করেও সে অন্তির সাথে যোগাযোগ করতে পারে না। নীল বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো হঠাৎ তাদের এক বান্ধবী এসে বললো কাল অন্তির জন্মদিন। আর ওই চায় জন্মদিনটা তোদের সাথে পালন করতে। নীল তোকে কিন্তু যাওয়ার জন্য অনেকবার বলেছে আবার মিস করিস না যেনো। কথাটা শুনেই নীল অনেক খুঁশি হয়েছে কারন অন্তি তাকেও যেতে বলেছে। সবাই মিলে প্লান করে যে অন্তিকে তারা সারপ্রাইজ দিবে তাই সব বন্ধুরা মিলে অন্তির বাসায় গিয়ে অন্তির বাসা সাঁজাতে থাকে। অন্তির রুম সাঁজাতে সাঁজাতে হঠাৎ একটা ডায়েরি নীলের চোখে পড়ে। অন্তির জন্মদিনের অনুষ্ঠান শেষ হলে নীল অন্তির অজান্তেই ডায়েরিটা নিয়ে যায়।
.
রাতে ঘুমানোর আগে নীল অন্তির ডায়েরিটা পড়া শুরু করে। ডায়েরি থেকে নীল অন্তির অতীত সম্পর্কে জানতে পারে। সেখানে কথা গুলা এমন ছিলোঃ-
.
***
কলেজে আজকে নতুন একটি ছেলের সাথে পরিচিত হলাম। কলেজে তো অনেক ছেলেই ছিলো কিন্তু কেনো জানি আমার দৃষ্টি অই ছেলেটার দিকেই বারবার যাচ্ছিলো। কোনো তো একটা বিশেষ কিছু তার ভেতর আছে কিন্তু কিছুতেই মাথায় তা ঢুকতিছিলো না। বারবার চোঁখে পড়ার কারনে ছেলেটি নিজেই এগিয়ে এলো কথা বলার জন্য। কথা বলার মাধ্যমে জানতে পারলাম তার নাম মেঘ।
.
***
আজকে মেঘ আমাকে প্রপোজ করেছে। সেদিনের পর থেকে মেঘ আমার খুব ভাল বন্ধু হয়েছিলো। আমি কিছুই বুঝতাম না মেঘের সাথে কথা বললেই কেনো জানি অদ্ভুত একধরনের ভালো লাগা কাজ করে। আস্তে আস্তে আমিও ওর প্রতি দুর্বল হয়েছিলাম তাই আর না করিনি।
.
***
খুব সুন্দর ভাবেই আমাদের দিনগুলি কেটে যাচ্ছে। মেঘ আমাকে অনেক ভালোবাসে এবং আমার অনেক যত্ন নেয়। আজ যেনো সত্যিই নিজেকে ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে। আবার অনেক ভয়ও লাগতিছে, আমার কপালে কি এতো সুখ সইবে।
.
***
আজকে আম্মুর কাছে আমি ধরা পড়েছি। আম্মু আমার এবং মেঘের সম্পর্কের কথা জানতে পেরেছে। জানার পর থেকেই আম্মু অনেক রাগারাগি করতিছে। মেঘ আমাদের থেকে নিম্ন পরিবারের হওয়ায় বাবা কখনোই মেনে নিবে না তাই আম্মু ওকে ভুলে যেতে বলতিছে। আমি তো ওর বংশগত পরিচয়/ অর্থ দেখে ওকে ভালোবাসিনি তবে কেনো এখন ওকে ভুলে যাব।
.
***
আজকাল মেঘ যেনো কেমন হয়ে গেছে। আমাকে আর আগের মতো সময় দেয় না। মেঘকে কোনো কিছু করার কথা বললেই কেমন যেনো খারাপ ব্যবহার শুরু করে দেয়। তাকে তার পরিবার রাজী করানোর কথা বললেই সে এড়িয়ে যায়। পৃথিবীতে সব সহ্য করা যায় কিন্তু প্রিয় মানুষটার অবহেলা সহ্য করা যায় না।
.
***
সবকিছু যেনো তছনছ হয়ে গেলো, সাঁজানো-গোছানো সুখের জীবনটা যেনো ভেংগে চুরমার হয়ে গেল। মেঘ আজকে কোনো কারন ছাড়াই আমাদের দু বছরের সম্পর্কটা শেষ করে দিল। আমি মেঘকে অনেক অনুরোধ করেছিলাম এমনকি ওর পায়েও পড়েছিলাম যাতে আমায় ছেড়ে না যায়। মেঘকে বারবার বললাম আমার জন্য না হয় অন্তত আমাদের সন্তানের জন্য ও আমাকে ছেড়ে না যায়। হ্যা, মেঘের সন্তান আমার পেটে। মেঘ সম্পর্কের পর থেকেই শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য অনেক চাপ দিতো। প্রথমে আমি রাজি না হলেও শেষে তার আবদারের কাছে পরাজিত হয়ে যাই। যাকে মন দিয়েছি তাকে শরীর দিতে দ্বিধা বোধ করেনি আর সেই আজকে আমার সাথে এমন বিশ্বাসঘাতকতা করলো।
.
***
কয়েকদিন ধরেই মাথা ব্যাথাটা যেনো বেড়ে গেছে। হয়তো সারাদিন না খেয়ে কান্না কাটি করার ফলে মাথা ব্যাথাটা বেশী হয়েছে।
.
****
আজকে নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে। নিজের অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও এবোরশন করতে হলো। কারন এ সমাজ যে বড়ই নিষ্ঠুর, পিতৃপরিচয়হীন কোনো সন্তান যে এরা কিছুতেই মেনে নিবে না।
.
***
মাথা ব্যাথাটা সহ্য সীমার বাইরে চলে গেছিলো তাই ডাক্তারের কাছে চেক আপ করালাম। মেঘের কথা খুব মনে পড়তিছে। সে কেনো আমার সাথে এমন করলো সে যখন অন্য মেয়েকেই ভালোবাসবে তবে কেনো আমাকে নিয়ে খেলা করলো।
.
***
ডাক্তারের রিপোর্টটা আজকে পেয়েছি। তাতে যা দেখলাম তাতে আমি খুঁশি হবো নাকি দুঃখ পাবো কিছুই বুঝতিছি না। কারন আমার ব্রেন টিউমার হয়েছে এবং তা একদম শেষ পর্যায়ে এসে ধরা পড়েছে। আমার হাতে মাত্র ছয় মাস সময় আছে। এমন নির্দিষ্ট সময়ের জীবনের কথা শুনলে যে কেউই ঘাবরে যাবে কিন্তু আমার কেনো জানি তা হচ্ছে না কারন আমার সকল কষ্টের সময় সীমা এখন মাত্র ছয় মাস। মেঘ চলে গিয়ে ভালোই করেছে কারন তাকে তো আমি কখনোই পেতাম না, তবে এই ভাবে চলে না গেলেই পারতো।
.
***
আমি আমার জীবনের শেষ মুহূর্ত গুলা আনন্দের সাথে কাটাতে চেয়েছিলাম তাই তো সব সময় বন্ধুদের সাথে সময় কাটাতাম। আমার অনেক গুলা ভালো বন্ধু আছে তার মধ্যে নীল একটু বেশীই ভালো বন্ধু আমার বেশীর ভাগ সময় অর সাথেই কাটতো কিন্তু নীলও আমাকে ভালোবাসত শুরু করেছে। তাই এখন আমি ওর থেকে দূরে আছি। আমি আমার জীবনে একবার যা ভুল করেছি তা দ্বিতীয় বার আর করতে চাইনা, যদিও নীল মেঘের চেয়ে অনেক ভালো ছেলে। আমি আসলেই একটা গাধী আমার হাতেই আছে গোনা কয়েকটা দিন আর আমি এইসব কি ভাবছি।
.
***
কাল আমার জন্মদিন, হয়তো এটাই শেষ জন্মদিন। নীলের সাথে অনেক দিন হলো কোনো যোগাযোগ করা হয় না। আমি ওকে কিভাবে বুঝাই যে আমার সময় শেষ হয়ে এসেছে। কাল আমার সব বন্ধুরা আসবে সাথে নীলও। যাক সবার সাথে শেষ দেখাটা অন্তত হবে। আমি চাইনি আমার অসুখটা সবাই জানুক। জানলে হয়তো সবাই আমার প্রতি একটু বেশীই যত্ন নিতো অনেক দয়া দেখাতো, যা আমি কখনোই চাইনি। সবার মাঝ থেকে হঠাৎ করেই চলে যাব এতেই আমি খুঁশি। হয়তো আমি মারা যাওয়ার পর আম্মু-আব্বু অনেক কাঁদবে সাথে আমার বন্ধুরাও। নীলের জন্য অনেক খারাপ লাগছে তবে ওর জন্য আমার বেস্ট উইশটাই থাকলো যাতে অনেক ভালো একটা বউ পায়।
.
ডায়েরিটা পড়ে নীল পুরাই হতবিম্ব হয়ে যায়। মনের অজান্তেই চোঁখ দিয়ে পড়ছে তার। অন্তির মনে এতো কষ্ট আর অন্তি সব সময় হাসি-খুশি থাকার অভিনয় করেছে। মেয়েরা আসলেই রহস্যময়ী। নীল অন্তির অসুখটার কথা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। সারারাত নীল হতবিম্বের মতো এইসব ভাবতে থাকে,একটা মেয়ের মনে এতো কষ্ট ছিলো আমি বুঝার কোনো চেষ্টাই করিনি।এইসব ভাবতে ভাবতে নীল কখন যে ঘুমিয়ে পড়ে।
.
ফোনের রিং টনে নীলের ঘুম ভাংগে। বিরক্তের সাথে ফোনটা তুলতেই দেখে ৯ টা মিসকল তাসিনের নাম্বার থেকে। তাসিনকে ফোন দিতেই তাসিন ধরেই --
হ্যালো, নীল তোক সেই কখন থেকে ফোন দিচ্ছি ধরিস না কেনো??(তাসিন)
কেনো কি হয়েছে??(নীল)
তুই এখনি সিটি হাসপাতালে চলে যায়, অন্তি আজ ভোরে অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ে ওকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।(তাসিন)
.
নীল সাথে সাথে হাসপাতালে যায়। সেখানে গিয়ে দেখে অন্তিকে আই.সি.ইউ রুমে রাখা হয়েছে। ডাক্তার এসে বললো রোগীর অবস্থা অনেক খারাপ। সব বন্ধুরা সহ অন্তির বাবা-মা সবাই হা করে দাঁড়িয়ে আছে ডাক্তারের কথা শুনে। একি বলে অন্তির ব্রেন টিউমার??
হ্যা,আমি তো উনাকে অনেক আগেই ভর্তি হতে বলেছিলাম, কেনো উনি আপনাদের কিছু জানায়নি??(ডাক্তার)
.
কিছুক্ষন পর অন্তির জ্ঞান ফিরলো কিন্তু সে কাউকে চিন্তে পারতিছে না। প্রচন্ড মাথা ব্যাথার কারনে সেন্সলেস হওয়ায় তার মাথার স্নায়ু কোষ ক্ষতি গ্রস্থ হয়ে পড়েছে। ফলে সে তার স্মরণ শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। অন্তি শুধু সবার দিকে তাকিয়ে থাকে কিন্তু কাউকে চিন্তে পারে না। নীল অন্তির এই অবস্থা কিছুতেই মেনে নিতে পারে না। তার সামনে তার প্রিয়জন অথচো সে তাকে বলতে পাচ্ছে না অন্তি চিন্তা করিস না আমি আছি তোর সাথে, হ্যা আমি তোর সব অতীত জানতে পারছি তাও আমি তোকেই ভালোবাসি এবং তোকেই ভালোবাসব। কেনো আমায় একবারো বললি না তোর এইসব কষ্টের কথা, কেনো অন্তি কেনো।
.
অবশেষে তিনদিন মৃত্যুর সাথে লড়াই করে অন্তি পৃথিবীর মায়া ছেঁড়ে চিরতরে চলে যায়। সাথে রেখে যায় মেঘের মতো বিশ্বাসঘাতকতার প্রতি তীব্র ঘৃণা এবং নীলের মতো বন্ধুর প্রতি ভালোবাসা। নীল পুরা একমাস কারো সাথে কথা বলেনি, অন্ধকার ঘরে বসে শুধুই ডায়েরির দিকে চেয়ে থাকতো। আস্তে আস্তে নীল স্বাভাবিক হতে থাকে। স্বাভাবিক হওয়ার পর সর্বপ্রথম সে অন্তির ডায়েরিটা পুড়ে ফেলে কারন নীল চাইনি অন্তির অতীত সম্পর্কে কেউ জেনে তার প্রতি খারাপ ধারনা পোষণ করুক।আকাশের দিকে তাকিয়ে নীলের একটা কথাই মনে পড়ছে।
হায়রে দুনিয়ার অদ্ভুত খেলা। যে ভালোবাসতে চায় সে ভালোবাসার বদল পায় শুধুই কষ্ট আর হতাশা গ্রস্তময় জীবন আর যে চায় না তার ভালোবাসার অভাব হয় না।।
.
       
                           সমাপ্ত

23/09/2018

September 23, 2018

কাছে আসার গল্প : অমর ভালোবাসা

             
               
                ** অমর ভালোবাসা **

নিলয় : তোমাকে না বলছি অন্য ছেলেদের
সাথে কথা বলতে না..!

মীম : ওরা আমার ফ্রেন্ড ৪-৫ বছর এক সাথে পড়েছি কথা
না বললে কি হয় হা..??

নিলয় : তুমি নিষেধ করার পর আমি তো কোন মেয়ের
সাথে কথা বলিনা...!!
তুমি তোমার মেয়ে বন্ধুদের সাথে কথা
বলো সমস্যা নেই....।
কিন্তু ছেলে বন্ধুদের সাথে কোন কথা বলবে না, এটা
আমি পছন্দ করি না, এটা আমি সহ্য করতে পারি না।

মীম : তোমার পছন্দ অপছন্দে আমার কিছু
যায় আসে না....।
তুমি ছাড়াও আমার পার্সোনাল লাইফ আছে যা আমি
এড়িয়ে চলতে পারবো না।

নিলয় : কি....!!!...????
আমি ছাড়া তোমার অন্য পার্সোনাল লাইফ..!!!
আমি তোমার স্বামী, আমার কি তোমাকে কিছু বলার,
নিষেধ করার অধিকার নেই....???

মীম : বেশী অধিকার ফেলাতে এসো না !!

নিলয় : সরি, তোমাকে নিষেধ করা আমার ভুল হইছে, ক্ষমা
চাই, ক্ষমা করে দিও আমায়।

মীমের কথা শুনে নিলয় খুব কষ্ট পেলো। নিলয় কল্পনাও
করেনি এমন কথা বলবে বা বলতে পারে মীম।
নিজের অজান্তেই কয়েক ফোটা
অশ্রু গড়িয়ে দু'চোয়াল শিক্ত হলো..। মীমকে নিলয় অনেক
বেশী ভালবাসে।

মীম : কি ব্যপার না ঘুমিয়ে অমন করে কি
দেখছো......???
নিলয় : আচ্ছা মীম...!! ধরে নাও আমি
নেই... আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে....???

মীম : কেন কোথায় যাবে তুমি.....??

নিলয় : এমনি ধরে নাও মানুষ এই আছে এই নাই, কখন কি হয়
বলা তো যায় না...!!
আমায় ছাড়া একা থাকতে পারবে.....?

মীম : এসব কি বলতেছো.....??
ঘুমাও তো......

নিলয় : আমার কথা কি মনে পড়বে....???

মীম : না একটুও মনে পড়বে না।

নিলয় : আমি তোমার যোগ্য নই তাই না...??

মীম : আমার এসব একটুও ভালো লাগছে না......
ঘুমাও তো, আর একটা কথাও বলবে না।

মীম ওপাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়লো।
সকাল বেলা চোখ খুলতেই মীম দেখতে
পেলো নিলয় ওর দিকে চেয়ে আছে,
নিলয়ের চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে, পরিস্কার বোঝা
যাচ্ছে নিলয় রাতে ঘুমায় নি।

মীম : কি ব্যপার সারারাত ঘুমাও নি...???

নিলয় : হুম, ঘুমাইছি তো... একটু আগেই উঠলাম।

নিলয় : তুমি তো আমার আগে উঠো না আজ কেন..???

নিলয় : না এমনিতেই......

নিলয় কখনোই মীমের সাথে মিথ্যা বলেনা সেটা যে
বিষয়ই হোক না কেন।
কিন্তু মীম স্পষ্ট বুঝতে পারলো নিলয় মিথ্যে বলছে....
নিলয় সারারাত ঘুমায়নি।
নিলয় প্রতিদিন বের হবার সময় মীমের কপালে একটা চুমু
খেয়ে বের হয়।
আজ দুইবার চুমু খেলো, অন্য
দিন হাসিখুশি যায়, আজ চুপচাপ নিস্তব্ধ, চোখে পানি
ছলছল করছে।

নিলয় : যাই বাবু.... (কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে আবার ফিরে
আসলো)

মীম : কি হলো কিছু ফেলে গেছো.....???

নিলয় : না....

মীম : তবে.......

নিলয় কিছু না বলে মীমকে জড়িয়ে ধরলো
কপালে আবার চুমু খেলো আর বললো লক্ষী হয়ে থেকো
বাবু।
নিজেকে কনট্রোল করতে পারছে না নিলয়...।
আর কিছু না বলে নিলয় চলে আসলো,
মীমের চোখে পানি.... মীম ভাবছে নিলয়ের কি
হলো.....??? ও তো এমন না.....!!

নিলয়কে খুব ভাল করেই চিনে মীম, প্রেম
করে বিয়ে হয়েছে ওদের।
নিলয় মীমের চেয়ে পড়াশোনা কম করছে আবার চেহারার
দিক দিয়েও মীম ওয়াও আর নিলয় একটু কালো।
কিন্তু মীম জানে নিলয় ওকে নিজের
চেয়েও বেশী ভালবাসে।
নিলয় মীমকে অনেক বার বলেছে
আমি কি তোমার যোগ্য না ...?

উত্তরে মীম বলেছে : দেখো নিলয়...!! ভালবাসা যোগ্যতা
বা চেহারা দিয়ে হয় না, তুমি আর এসব কথা বলবে না।

মীম নিলয়ের অনেক কথাই মানতে
চাইতো না যুক্তি দেখানোর চেষ্টা করতো।
নিলয় কিছু বলতো না, কোন বিষয় জোর করতো না, হার
মেনে নিতো...।
বিছানা ঠিক করতে যেয়ে মীম একটা চিরকুট পেলো....।

নিলয়ের লিখা.......
বাবু তোমাকে ছাড়া থাকা কষ্টের।
তোমার সাথে অন্য কাউকে দেখা বা কথা বলা আরো
অনেক অনেক
বেশী কষ্টের যা আমি সহ্য করে নিতে পারছি না।
আমি চেষ্টা করেছি তোমাকে ফিরাতে কিন্তু আমি
ব্যর্থ।
হয়তো এখন আমার কোন মূল্য নেই
তোমার কাছে......
যেখানে আমি তোমার স্বামী
হয়ে কোন মূল্য পেলাম না তাই চলে যাচ্ছি অনেক দূরে
............
আজ থেকে তুমি স্বাধীন, মুক্তো করে
দিলাম তোমায়।
বাবু ' আমার কথা মনে পড়লে আকাশের তারাঁর দিকে
তাকাবে......
সবচেয়ে উজ্জ্বল তাঁরা টাই আমি,
দূর থেকে তোমায় দেখবো,
কথা বলবো আমার বাবুটার সাথে।
লক্ষী হয়ে থেকো, ভালো থেকো"
সাথে সাথে নিলয়ের মোবাইলে কল দিলো
মীম কিন্তু মোবাইল বন্ধ পেলো।
কি করবে বুঝতেছে পারছে না মীম।
নিলয় অন্য ছেলেদের তুলনায় খুব বেশী
ইমোশনাল।
মীম ফ্যামিলির সবার কাছে কল দিলো।
সবাই নিলয়ের নাম্বার বন্ধ পাচ্ছে....!!
মীম অঝোর ধারায় কাঁদছে এদিকে সবাই নিলয়কে খুঁজতে
খুঁজতে পেরেশান হয়ে যাচ্ছে কোথাও নিলয়কে পাওয়া
যাচ্ছে না।

প্রায় ৪-৫ ঘন্টা পর খবর এলো নিলয়ের লাশ
হাসপাতালে......!!!
রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছে নিলয়।
মীম পাথর হয়ে গেল, মীমের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে
পড়লো, মীম জানে এটা এক্সিডেন্ট না.....।
নিলয় আত্যহত্যা করছে।
আর এ জন্য দায়ী মীম........।

মীম কিছুতেই নিজেকে ক্ষমা করতে পারছে না,
মীম নিজের ভুল বুঝতে পারছে,
হাউ মাউ করে কাঁদতেছে...,
সামান্য কিছু ভুলের জন্য সে আজ তার
ভালোবাসার মানুষকে চিরদিনের জন্য হারিয়ে
ফেললো..।
মীম হাজার চাইলেও আর নিলয়কে
ফিরিয়ে আনতে পারবে না...।

মীম এখন রাত হলেই ছাদে গিয়ে বসে থাকে নিলয়ের
সাথে কথা বলার জন্য।
ছাদে গিয়ে সবচেয়ে উজ্জ্বল তাঁরাটার দিকে
তাকিয়ে থাকে আর কথা বলে.....

" বাবু কেমন আছো তুমি আমাকে ছেড়ে"...??
বাবু আমি এখন কারো সাথে কথা বলি না।
বিশ্বাস করো, প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও, শুধু
তোমার সাথে বলি এখন আমি শুধু তোমার বাবু।
আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি বাবু তাই না....??
বাবু আমি বুঝতে পারি নাই আমাকে ক্ষমা করে দাও,
আমি খুব পচা,খুব খারাপ তাই না বাবু.....??
কি বললে.?? আমার বাবু টা পচা না খারাপ না.....???
হুম আমি খারাপ আমার ভুলের জন্য তোমাকে আজ
হারিয়ে আমি এখন একা।
এভাবেই প্রতিদিন মীম কথা বলে নিলয়ের সাথে নিজ
থেকে নিজে।
মীমকে ডাক্তারর দেখানো হয়, আস্তে
আস্তে মীম কিছুটা স্বাভাবিক হয়।
মীম বিকাল হলেই ছাদে গিয়ে বসে থাকে
নিলয়ের জন্য...কিন্তু নিলয় তো আর ফিরে
আসে না.....!!

সে যে চলে গেছে না ফেরার দেশে।

তাই সবাইকে বলবো কেউ এমন ভুল করো না...
যে তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসে
তাকে যেন তোমার সামান্য অবহেলার কারণে হারাতে
না হয়.....।
যারা খুব বেশি ভালোবাসে তারা তাদের ভালোবাসার
মানুষ থেকে সামান্য একটু অবহেলা একটু কষ্ট সহ্য করতে
পারে না.......।
তখন তাদের কাছে ঐ কষ্ট বা ঐ অবহেলা মৃত্যুর চেয়েও
যন্ত্রণাদায়ক হয়ে যায়...।

                           
                              সমাপ্ত


September 23, 2018

কাছে আসার গল্প : পিচ্চি মেয়ের ভালোবাসা


** পিচ্চি মেয়ের ভালোবাসা **
লেখক : মুহাইমিন আহমদ
        ____ ১ম পর্ব ____

# আমি বসে আছি মরিয়মের বাসায়। এসি চলছে ফুল স্পিডে, তা সত্ত্বেও দরদর করে ঘামছি। এমনটা কেন ঘটছে মাথায় আসছে না। মনে হচ্ছে কোনো প্রাইভেট কোম্পানির চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিতে এসেছি! . নার্ভাসনেস কাটানোর জন্য আমি ৩৬০ ডিগ্রী এঙ্গেলে ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পুরো বাসাটা দেখার চেষ্ঠা করছি। কেমন যেন অপরিচিত লাগছে।

 না... পাঁচ বছর আগে যখন মরিয়ম কে পড়াতাম তখন বাসাটা এমন ছিলো না। এখন অনেক পরিপাটি করে সাজানো গোছানো। এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার কারনে ওদের বাসায় আর আসা হয় নি। হয়ত আর আসাও হতো না কিন্তু ভাগ্য আমাকে টেনে এখানে নিয়ে এসেছে।

গতকাল ই আমি লোটা-কম্বল সহ মরিয়মদের বিল্ডিংয়ের তিন তলায় উঠেছি। গোটা ছয় তলা এপার্টমেন্টের একমাত্র গর্বিত ব্যাচেলর আমি। ওরা ব্যাচেলর ভাড়া দেয় না, কিন্তু আমি পূর্ব পরিচিত হওয়ায় সানন্দে ফ্ল্যাট ভাড়া দিতে রাজি হয়ে গেছে! কিছুক্ষন পর নাদুস-নুদুস কিউট চেহারার এক মেয়ে (অথবা মহিলা) আমার সামনে উদয় হলো। সোফার সাথে এলিয়ে পড়া দেহটা আমার শিরদাড়া টান করে সোজা হয়ে বসলো। মেয়ে টা দেখতে অনেক টা মরিয়ম মতই..........এক সেকেন্ড! মরিয়ম মতো না মেয়েটা মরিয়ম ই!! তার ঠোঁটের বাম পাশের তিল টা খেয়াল না করলে হয়তো চিনতাম ই না।

 এতো মোটা হয়ে গেলো কি করে মেয়েটা? আমার কাছে যখন পড়তো তখন তো পাট কাঠি ছিলো! মরিয়ম মিটি-মিটি হাসছে, রহস্যময় হাসি..... হয়তো আমার অবস্থা দেখে মজা পাচ্ছে! -কেমন আছেন স্যার? -এইতো আছি বাজার দর! আগে তোমার খবর বলো...কেমন চলছে? -এইতো ভালোই, স্যার এখনো বিয়ে- সাদি করেন নি তাই না? -ওসব আমার দ্বারা হবে না, আমি নিজেকে চির-কুমার সমিতির চেয়ারম্যান দাবি করি! তা তোমার কোলে বাচ্চা-কাচ্চা কই?

তুমি ও কি আমার দলে নাকি? -হ্যা স্যার, আমি ও বিয়ে করি নি, তবে ছেলে দেখা চলছে। আপনার মতো কাউকে পেলে শুভ কাজ টা সেরে ফেলবো ভাবছি...... আমিও কিছু বলতে যাচ্ছিলাম কিন্তু তার আগেই আন্টি খাবার হাতে উপস্থিত। আমি তার পায়ে ধরে সালাম করলাম, তিনজন মিলে শুরু করলাম পুরনো দিনের স্মৃতি চারন। আড্ডার ফাকে একটা অদ্ভুদ ব্যাপার আমার দৃষ্টি আকর্ষন করলো। পাশের রুমে পর্দার আড়াল থেকে এক জোড়া মেয়েলি চোখ আমার দিকে চেয়ে আছে। চেহারা দেখা যাচ্ছে না। আমি তার দিকে আড় চোখে তাকালেই সে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে!!! -কি হলো স্যার? -ন...না কই কিছু না তো! কিন্তু মরিয়ম ঠিকই ব্যাপার টা বুঝতে পেরেছে.... -পর্দার ফাক দিয়ে কেউ আপনার দিকে তাকিয়ে আছে এই তো!? আমি বোকা বোকা একটা হাসি দিয়ে

বললাম..... -হ্যা তাই -স্যার বলুন তো ও কে? চেনা যায়? আমি ফ্ল্যাশ ব্যাকে চলে গেলাম, মরিয়ম সুমি নামের ক্লাস ৮ এ পড়ুয়া পিচ্চি একটা বোন ছিলো। অসম্ভব পাঁকা! আমার দেখলে কেমন জানি হিন্দী ছবির নায়িকাদের মতো রোমান্টিক লুক দিতো, মুচকি মুচকি হাসতো, আবার মাঝে মাঝে লজ্জা পাওয়ার অভিনয় ও করতো। এতটুকুন বাচ্চা মেয়ে এতোকিছু শিখলো কোথা থেকে আমার মাথায় ঢুকতো না। একবার হলো কি ওই মেয়ে আমাকে লাভ লেটার লিখে বসলো! তাতে লেখা ছিলো আই লাভ ইউ। সে নাকি আমাকে না পেলে বাঁচবে না আরো কতো কি হ্যান ত্যান! কিন্তু এই মেয়ে কিছুতেই সুমি হতে পারে না।

তার চোখে দুষ্টুমি খেলা করতো সব সময়, কিন্তু পর্দার আড়ালে সেই নয়ন জোড়া অসম্ভব সুন্দর, একদম শান্ত দীঘির জলের মতো স্বচ্ছ, আটলান্টিকের মতো গভীর! যেন কয়েক হাজার টাইটানিক অবলীলায় হারিয়ে যাবে ওই গভীর অতলে....... তাছাড়া ওই চোখের মালিক নিশ্চই প্রাপ্ত বয়স্ক কোনো তরুনী হবে, আর সুমি তো পিচ্চি একটা মেয়ে! -কি ভাবছেন স্যার? চিনতে পারেন নি? অনেক ভেবেও কোনো কুল কিনারা করতে না পারায় আমি অসহায়ের মতো

আত্নসমর্পন করলাম.... -না পারি নি, আগে দেখলে হয়তো চিনতে পারতাম! আন্টি আর মরিয়ম হাসির তীব্রতা ক্রমেই বাড়ছে, সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আমার অস্বস্তি.... -স্যার এই সেই মেয়ে পাঁচ বছর আগে আপনি যার ক্রাশ ছিলেন, যে আপনাকে লাভ লেটার লিখেছিলো! আমাদের সুমি ..... : আমার মাথা টা বো করে একটা চক্কর মারলো। হিসেব কিছুতেই মিলছে না। কি করে সম্ভব? এটা অবশ্য অস্বাভাবিক কিছু ও না।

"মানুষ মরে গেলে পঁচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়, কারনে অকারনে বদলায়" আমি মরিয়ম কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমার ফ্ল্যাটে চলে এলাম। বিছানায় সঙ্গে গা এলিয়ে ঘুমোতে চেষ্ঠা করলাম, পারলাম না। মনে একঝাক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। নানা আজগুবি কথা চিন্তা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম টের ও পেলাম না। সুমি দেবী বিকেল পাঁচ টা পর্যন্ত আমার চোখে ভর করে ছিলো। ঘুম থেকে উঠে মন টা ফ্রেশ লাগছে। জানালার পাশে গিয়ে বাইরের দৃশ্য টা পর্যবেক্ষন করলাম। চমৎকার বিকেল! ফুরফুরে হাওয়া বইছে। ভাবলাম ছাদে যাওয়া যাক..... ছাদে গিয়ে হাফিয়ে উঠলাম, কিছুক্ষন বিশ্রাম ও নিলাম। ছাদ টা বেশ বড়। চারপাশে ফুল-ফলের গাছ লাগানো। পরিবেশ টা ও মনোরম। আমার বেশ পছন্দ হয়েছে।

মাঝে মাঝে অবসর সময়ের এখানে আসা যাবে মনে মনে ভাবলাম। হঠাৎ ছাদের এক কর্নারে আমার চোখ আটকে গেলো। না ভুল দেখছি না.....একটা মেয়ে বসে আছে! ছাদ টা বড় হওয়ায় এতক্ষন চোখে পড়ে নি। কানে হেডফোন লাগিয়ে সম্ভবত গান শুনছে মেয়ে টা। কিন্তু লম্বা চুলের কারনে তার চেহারা দেখা যাচ্ছে না..... আমি এক পা দু পা করে সামনে এগিয়ে গেলাম। আমার উপস্থিতি টের পেয়ে মেয়ে টা পিছনে ফিরে চাইলো..... আর সাথে সাথে খুন হয়ে গেলাম আমি! এ আমি কি দেখছি... এতো সুন্দর ও মানুষ হয় নাকি? যেনো কোনো রোমান্টিক উপন্যাসের পাতা থেকে উঠে আসা অপূর্ব সুন্দরী এক নায়িকা! কিন্তু কেনো জানি খুব চেনা চেনা মনে হচ্ছে। কোথায় যেনো দেখেছি..... বিস্ময় ভাব টা চাপা দিয়ে মুখে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে বললাম.... -পরিচিত হতে পারি? -নতুন করে কি পরিচিত হওয়ার কিছু আছে? আমি তার কথা টা বুঝতে পারলাম না। মেয়ে টা আমাকে তার পাশে বসতে বললো। -আপনার নাম টা জানতে পারি? মেয়েটার মুখে রহস্যময় হাসি ফুটে উঠলো..... -আমার নাম? সুমি...


** ২য় পর্ব **


# এবার আমার অবাক হওয়ার পালা। সত্যিই কি আমার সামনে বসে থাকা অপরুপ সুন্দরী মেয়েটা সেদিনের সেই নাক বোচা পিচ্চি সুমি? বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও জানি এটাই সত্যি। কারন পর্দার আড়ালের চোখ জোড়ার সাথে এই মেয়েটার চোখের শতভাগ মিল রয়েছে..... -আমি তাহলে আজ যাই সুমির কাছ থেকে বিদায় নেয়ার জন্য উঠে দাড়ালাম.... -না বসুন, কথা বলবো -না মানে কাজ ছিলো তো তাই যেতে চাচ্ছি.... -উফ বসতে বলেছি বসুন! আমি বাধ্য ছেলের মতো বসে পড়লাম। -কেমন আছেন? -এইতো ভালো আছি! তুমি? -ভালো তো থাকার ই কথা, এখন তো আপনাকে আর কেউ ডির্স্টাব করে না, লাভ লেটার লিখে না! ওর কথা শুনে আমি লজ্জা পেয়ে গেলাম। মেয়ে টা এখনো সব কিছু মনে রেখেছে..... -তা কি করছেন ইদানিং? -এই তো একটা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে জব করছি, তুমি কি পড়শোনা করছো? -হ্যা, বিবিএ ফার্স্ট ইয়ারে পড়ছি -ও আচ্ছা -কিছু মনে না করলে একটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করি? -অবশ্যই! -শুনলাম এখনো নাকি বিয়ে সাদি করেন নাই, তাহলে নিশ্চই জিএফ টিএফ আছে? -ধুর! এসব কখনো ছিলোও না আর এখনো নাই! -মিথ্যে বলবেন না! -আরে মিথ্যে বলবো কেনো? -সত্যি? -হ্যা সত্যি! কিন্তু তুমি এতো খুশি কেনো?

আমার কথা শুনে লজ্জায় মুখ লাল হয়ে গেলো মেয়েটার..... -ইস! আমি খুশি হতে যাবো কেন শুধু শুধু? - তা তুমি নিশ্চই প্রেম করো সুমি? এতো সুন্দরী মেয়ের তো সিংগেল থাকার কথা নয়! -সত্যি বলছেন আমি সুন্দরী? -নিঃসন্দেহে! সুমি কে একটু খুশি খুশি লাগছে -যাক আপনার চোখে আমি সুন্দরী হতে পেরেছি তাহলে! আপনি তো শুধু আমাকে পিচ্চী বলতেন। কখনো এরকম ভাবে আমাকে দেখেন ই নাই....

আরও টুকটাক কিছু কথা হলো তার সাথে। কিছুক্ষন পর মাগরিবের আজান দিলো। পশ্চিম আকাশে আগুন লাগিয়ে অস্ত যাচ্ছে সূর্যটা। অসাধারন একটা দৃশ্য। আমরা ছাদের রেলিং এর পাশে দাড়িয়ে উপভোগ করতে লাগলাম। মৃদু হাওয়ায় সুমির চুল গুলো উড়ছে। সে দৃশ্য টা আরো বেশি সুন্দর! সন্ধ্যা সাত টার দিকে বাসায় আসলাম। টিভিতে কিছুই হচ্ছে না, চ্যানেল ঘুরাচ্ছি একের পর এক। অবশেষে স্টার মুভিজে দেখলাম আমার পছন্দের সিনেমা টাইটানিক চলছে। একা একা বসে দেখতে লাগলাম। কিছুক্ষন পর কলিং বেলের আওয়াজ কানে আসলো। দরজা খুলে দেখি সুমি দাড়িয়ে আছে। হাতে একটা প্লেট।

-সুমি তুমি? -হ্যা আমি, ভেতরে আসতে বলবেন না?

 -হ্যা...হ্যা আসো! সুমি ভেতরে ঢুকলো। আমার কিছু টা অস্বস্তি হচ্ছে। যত যাই হোক একটা ব্যাচেলর ছেলের বাসায় রাতের বেলা একা একটা মেয়ের আসা টা ভালো দেখায় না! -সুমি তুমি যে এখানে এসেছো আন্টি জানলে মাইন্ড করবে না? -আপনার আন্টিই তো আমাকে পাঠিয়েছে! -ও আচ্ছা তাহলে সমস্যা নাই... তোমার হাতে ওটা কি? -বিরিয়ানী, আম্মু রেধেছিলো বললো আপনার জন্য নিয়ে যেতে। (পরবর্তীতে জানতে পারি বিরিয়ানী টা সে নিজের হাতে রান্না করেছে তাও আবার আমার জন্য! ) বিরিয়ানী টা বেশ হয়েছে। অনেকদিন এমন রান্না খাই না। সুমি বসে বসে আমার খাওয়া দেখছে। আর আমি দেখছি মুভি টা। একটু পর সেই রোমান্টিক দৃশ্য টা আসলো রোজ আর জ্যাক হাত ছড়িয়ে জাহাজের কিনারে দাড়িয়েছে তারপর কিস..... আমি তড়িঘড়ি করে চ্যানেল টা পাল্টে ফেললাম। তবে দৃশ্য টা কিন্তু আসলেই অনেক সুন্দর, আমার পছন্দের। একা হলে নাহয় দেখা যেতো। কিন্তু আমার পাশে এখন জলজ্যান্ত একটা মেয়ে বসে আছে। আমার কান্ড দেখে সুমি হাসতে লাগলো। -কি হলো পাল্টে ফেললেন যে? -ধুর! আমি ভালো ছেলে, এসব দেখি না!

-আহারে..... তাই বুঝি? -হ্যা তাই, অনেক রাত তো হয়ে গেলো। বাসায় যাবে না? -না, ভাবছি আজকে রাত টা এখানেই থেকে যাবো! -কিইইই??? -আরে আমি তো মজা করলাম, যাচ্ছি...যাচ্ছি একটু পর সুমি চলে গেলো। কেমন যেনো একা একা লাগছে। এতক্ষন বেশ ভালোই লাগছিলো। ঘুমানোর সময় ও সুমির কথা মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো। এই অনুভূতির নাম কি? আমার জানা নেই...... *****

সকালে ঘুম ভাঙলো বাবার ফোনে। উদ্বিগ্ন কন্ঠে বাবা জানালেন মায়ের নাকি শরীর খুব খারাপ, বুকে প্রচন্ড ব্যাথা। হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। আমি কোনো রকম হাত-মুখ ধুয়ে রওনা দিলাম বাসার উদ্দেশ্যে। এজন্যই বাবা-মা কে ছেড়ে দুরে থাকতে মন চায় না, কিন্তু চাকরির খাতিরে থাকতে হয়! শান্তিনগর থেকে মিরপুর ১০ এর রাস্তা মিনিট চল্লিশের বেশি লাগার কথা না। কিন্তু জ্যামের কারনে দেড় ঘন্টা লেগে গেল......

 বাসায় গিয়ে দেখি মা চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। আমি তার পাশে বসে মাথায় হাত রাখলাম। চোখ খুলে আমাকে দেখে মায়ের ঠোঁটে মৃদু হাসি ফুটে উঠলো। আমি তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইলাম। কিন্তু তিনি কিছুতেই যাবেন না আমি পাশে থাকলেই নাকি তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। টানা সাত দিন আমি মায়ের পাশে থেকে তার সেবা করলাম। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠলেন তিনি। আমার ও বিদায় নেয়ার সময় হয়ে এলো। আমি ফিরে এলাম আমার শান্তি নগরের বাসায়। বাড়ির প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকতেই দেখি এলাহি কারবার! লাল নীল বাতি দিয়ে মোড়ানো হয়েছে পুরো বিল্ডিং, বিশাল বড় বড় পাতিলে বসানো হয়েছে রান্না! রমনীরা রংবেরং এর শাড়ী পরে এদিক সেদিক হাটা-হাটি করছে। ঘটনা কি? ভাবতে গিয়ে আমার মাথা হ্যাং করলো..... আমি একটা মেয়েকে দাড় করিয়ে জানতে চাইলাম এখানে কি হচ্ছে? সে আপাদমস্তক আমাকে দেখলো। তারপর মুখ-চোখ গম্ভীর করে বললো-'এখানে চল্লিশা হচ্ছে' বলেই ফিক করে হেসে দৌড় দিলো! এজন্যই অল্প বয়সী মেয়েদের সাথে আমি কথা বলতে চাই না। তারা কথার গুরুত্ব স্থান, কাল,পাত্র না বুঝেই সব জায়গায় সস্তা রসিকতা করে আর নিজেকে বোকা প্রমান করে। স্যুট-প্যান্ট পরা একজন ভদ্রলোকের কাছে জানতে চাইলাম যে এখানে কি হচ্ছে? সে আমাকে উল্টো প্রশ্ন ছুড়ে দিলো...... -আপনি কে? -জ্বি...আমি এই বাসায় ই ভাড়া থাকি -আপনি কিছু জানেন না? -জ্বি না! -আজ তো সুমির...... আমি তার মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বললাম -সুমি মানে? আজ সুমির কী ?



↓ ______৩য় পর্ব ________


# আমি তার মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বললাম...... -সুমির মানে? আজ সুমির কি? -আজ সুমির জন্মদিন! আমি হাপ ছেড়ে বাচলাম। যাক! আমি তো ভেবেছিলাম বিয়ে টিয়ে হবে হয়তো.....

কিন্তু কোন হিসেবে বড় বোন কে রেখে ছোট বোনের বিয়ে হবে এই বিষয় টা প্রথমে আমার মাথায় আসে নি। মানব মস্তিষ্ক যখন উত্তেজিত হয়ে যায় তখন যুক্তির ধার ধারে না....

আর আমার হাপ ছেড়ে বাচার ও কোনো মানানসই কারন খুজে পেলাম না। সুমি তো আমার কেউ না? ওর বিয়ে হলেই বা কি আর না হলেই কি? এই তুচ্ছ বিষয় টা কেন আমার মনে এতো গভীর ভাবে প্রভাব ফেলবে? আমার সেইদিনের কথাটা মনে পড়ে গেলো। যখন আমি ছাদের মধ্যে সুমিকে বললাম আমার কোনো জিএফ নেই সে খুব খুশী হয়ে গিয়েছিলো! যখন শুনলাম অনুষ্ঠান টা ওর বিয়ের না তখন আমিও খুশি হয়েছি, অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। আমার আর ওর আচরনের মধ্যে যোগসূত্র আছে। আমি বুঝতে পারছি প্রকৃতি আমাদের নিয়ে একধরনের খেলায় মেতেছে.....
রহস্যময় খেলা! ঘরে ফিরে সোফায় হেলান দিয়ে চুপ-চাপ বসে রইলাম। অনুষ্ঠানের আনন্দ- উত্তেজনা মোটেও আমাকে স্পর্শ করতে পারে নি। হঠাৎ কেন জানি মন খারাপ লাগছে। অবশ্য এর যুক্তিসঙ্গত কোনো কারন খুজে পেলাম না। তবে মাঝে মাঝে মন খারাপের জন্য কোনো কারন লাগে না। অযথাই মুড অফ হয়ে যায়.....

 হঠাৎ লাফ দিয়ে উঠলাম! চোখ কচলে ডানে-বামে চেয়ে দেখি আমি সোফায় বসে আছি, তখন আকাশ-কুসুম চিন্তা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি নিজেও টের পাই নি! হঠাৎ ঘুম ভাঙার কারন হয়তো কোনো স্বপ্ন....দিবা স্বপ্ন! কোনরকম হাত-মুখে পানি দিয়ে কুচকানো শার্ট টা গায়ে দিয়েই ছাদে চললাম হাওয়া খেতে। ছাদে প্যান্ডেল টাঙানো হয়েছে, খাওয়া-দাওয়ার পর্ব টা বোধহয় এখানেই সম্পন্ন হবে আর কেক কাটা হবে সুমিদের বাসায়। আজ কে ছাদের চারপাশ লোকে-লোকারন্য! পুরুষের চাইতে সংখ্যায় কয়েকগুন বেশি মেয়েরা। একেকজনের মুখে কমপক্ষে দুই ইঞ্চি পুরু করে মেকআপ দেয়া। আমার কাছে মনে হচ্ছে স্কুলের যেমন খুশি তেমন সাজ প্রতিযোগিতায় এসেছি।

একেকজন কে উদ্ভট আর হাস্যকর দেখাচ্ছে। এদিকে মহিলাদের যার যার মেয়েকে ক্যামেরার সামনে আনতে ব্যস্ততা চোখে পড়ার মতো! এসব অনুষ্ঠানে আসলে আমার কোরবানী ইদের কথা মনে হয়ে যায়। ব্যাপারী রা তাদের গরু কে শিঙে, গলায়, কপালে মালা টালা দিয়ে সাজিয়ে হাটে আনে যেন ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষন হয়। এখনকার বাবা-মায়েরা ঠিক সেভাবে তাদের বিবাহযোগ্য কন্যাকে সাজিয়ে- গুজিয়ে বিয়ে কিংবা জন্মদিনের অনুষ্ঠানে নিয়ে আসে সবার দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য। তাহলে ব্যাপার টা দাড়ালো হাট হলো অনুষ্ঠান, ব্যাপারী হলো কন্যার বাবা-মা, কাস্টোমার হলো ছেলের বাবা-মা আর গরু হলো..... থাক! সেদিকে না যাই!! আমি চলে যাওয়ার জন্য উঠে দাড়ালাম, সিড়িতে এক পা দিতেই কোমল হাতের স্পর্শ অনুভব করলাম। পেছনে তাকাতেই দেখি স্বয়ং সুমি দাড়িয়ে আছে! মেয়েটা এমনিতেই সুন্দর কিন্তু আজ তাকে অন্যরকম সুন্দর লাগছে।
কেমন ঠিক বোঝানো যাবে না। মেয়েদের কে বিয়ের পরদিন সাধারনত এমন দেখায়। তখন তাদের চেহারায় এক ধরনের লাবন্যতা আসে। আজ সুমি কে সেরকম ই লাগছে দেখতে......

 সুমি অভিমানী কন্ঠে বললো.... -এতোদিন কোথায় ছিলেন? জানেন আমি আপনাকে কতো করে খুজেছি?
-তাই বুঝি? তা আমাকে 'কতো করে' খোজার কারন টা জানতে পারি? -আজ আমার জন্মদিন। রাত আটটায় কেক কাটা হবে, আপনি অবশ্যই থাকবেন নাহলে আমি কেক কাটবো না! -অবশ্যই থাকতে চেষ্ঠা করবো! এখন আমি যাই তাহলে। -শুনুন! -হ্যা বলো? -ছাদে এতক্ষন কি করছিলেন? -কই তেমন কিছুই না তো! কেন? -মিথ্যে বলবেন না! আমি খেয়াল করেছি আপনি মেয়েদের দিকে তাকিয়ে ছিলেন! -আরে নাহ! কি বলো এসব.... -আবার মিথ্যে! কই কখনো তো এভাবে আমাকে দেখেন নি! ওরা কি আমার চেয়েও সুন্দরী? আমি পড়ে গেলাম মহা বিপদে! এই ধরনের কথা-বার্তা একমাত্র প্রেমিকা তার প্রেমিক কে বলতে পারে। কিন্তু আমাদের মাঝে সেরকম কোনো সম্পর্ক ই নেই। সুমি হয়তো সেটা ভুলে গেছে। তরুনী মেয়েদের আবেগের পারদ খুব ঘনঘন ওঠা নামা করে। তাদের মন বোঝা বড়ই দায়। যুগে যুগে বড় বড় কবি-সাহিত্যিক রা যা পারে নি আমার দ্বারা সেটা হওয়া এক কথায় অসম্ভব। কোনো একজন মনীষি বলেছিলেন- 'মেয়েদের বুঝতে যেও না হয় প্রেমে পড়ে যাবে নয় পাগল হয়ে যাবে'। আমার অবস্থা ও হয়েছে তাই! আমি ওকে বোঝানোর বৃথা চেষ্ঠা করলাম..... -কে বলেছে ওরা তোমার চেয়ে সুন্দরী? তুমিই এখানে সবার সেরা। আর কি বললে? আমি কখনো তোমাকে ওই ভাবে দেখি নি মানে? আমি তো সব সময় ই তোমাকে দেখছি! -আচ্ছা তাহলে বলুন তো আমি এখন কি ড্রেস পড়ে আছি? হায় হায়! সত্যিই তো আমি খেয়াল করি নি! আমি চোখ টা একটু নিচে নামাতে চেষ্টা করতেই ওর ধমক খেতে হলো। কোনো এক ছবিতে এরকম পরিস্থিতিতে টলিউডের নায়ক জিৎ কে একবার পড়তে দেখেছিলাম। তার অবস্থা আর আমার অবস্থা সেম..... সুমির মন খারাপ করে আমার সামনে থেকে চলে গেলো। বাসায় এসে আমি মহা দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলাম, বড়লোকের মেয়ে দাওয়াত তো দিয়ে গেলো এখন গিফট পাবো কোথায়? মধ্যবিত্ত মানুষ আমি কোনোরকম চলা ফেরা করি। এতো বড় অনুষ্ঠান কমদামী গিফট দিলে তো আর চলে না! পকেটে যা টাকা ছিলো তা দিয়েই মন মতো একটা গিফট কিনে আনলাম। শাহরুক খানের ওম শান্তি ওম ছবিতে যে শো পিছ টা দেখা যায় আমার টা সেটাই। কিন্তু আমার টা সাইজে অনেক বড়, ফুটবলের মতো! পুতুল জোড়া কাঁচের ভেতরে কি সুন্দর করে হাত ধরে ঘুরছে, আর পেছনে মিউজিক বাজছে..... রাত ৭ টা বেজে ৫০ মিনিট। আমার কেমন জানি নার্ভাস লাগছে। মন বলছে একবার যাবো আরেকবার যাবো না। কিছুক্ষনপর মরিয়ম এসে উপস্থিত। আমাকে না নিয়ে সে যাবেই না! আমি না গেলে নাকি তার বোন কেক কাটবে না!! কি ভয়ংকর ব্যাপার স্যাপার। আমি কি এতই গুরুত্বপূর্ন কোনো ব্যক্তি? মলিন শার্ট আর রংচটা একটা জিন্স প্যান্ট পরে হাজির হলাম অনুষ্ঠানে। সুমি আমাকে দেখে মৃদু হাসলো। কিছুক্ষন পর কেক কাটার মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হলো। দাড়িয়ে দাড়িয়ে কেক কাটা দেখছি এমন সময় পেছন থেকে কে জানি গায়ের ওপর এসে পড়লো..... ঘুরে দাড়িয়ে দেখি সেই মেয়ে যে আমাকে সকালে বলেছিলো এটা নাকি চল্লিশার অনুষ্ঠান! অনেকটা অপ্রস্তুত.......!!




** ৪র্থ পর্ব **


: সুমি আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে, চোখে মুখে প্রচন্ড ক্ষোভ। হাতে কেক কাটার ছুড়ি টা শক্ত করে ধরা! সামনে দাড়িয়ে থাকা মেয়েটা আমার হাত না ছেড়েই কথা বলতে লাগলো..... -আমি মিম , সুমির কাজিন। আপনি? -আমি ....শিমুল খেয়াল করলাম আমার মুখ দিয়ে কোনো আওয়াজ বের হলো না, যা বের হলো শুধু বাতাস। গলা শুকিয়ে কাঠ। কোনো কারনে মানুষ ভয় পেয়ে গেলে এরকম অবস্থা হয়! আমি ও কি তাহলে ভয় পাচ্ছি? সুমি আমাদের সামনে এসে দাড়ালো। মিম হাত থেকে ঝটকা দিয়ে আমার হাত টা সরিয়ে নিলাম। মেয়েটা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। এমনটা কেন করলাম আমি নিজেও এ ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত নই। - মিম এখানে কি করছিস? তোকে তোর আম্মু ডাকছে, যা..... - তুই যা একটু পরে আমি আসছি - না এখনই আয় নাহলে খালা তোকে বকবে.... এই বলে সুমি প্রায় জোর করেই তাকে আমার সামনে থেকে নিয়ে গেলো। মিম পেছনে ফিরে অসহায় দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। আমি খুব ভালো করেই জানি এটা মিম কে আমার সামনে থেকে সরানোর একটা উছিলা মাত্র। সুমি মিথ্যে বলেছে যেন মেয়েটা আমার সাথে কথা বলতে না পারে। (উফ আমি সব কিছু বুঝে ফেলি কেন!? ) অনুষ্ঠান শেষে রাত বারোটার পর ঘরে ফিরলাম। ক্লান্তিতে চোখ বুজে আসছে। পোশাক টা খোলার অবশিষ্ট শক্তি (কিংবা ইচ্ছা) টুকু ও যেন নেই। এমন সময় একটা নাম্বার থেকে ফোনে কল আসলো। ভ্রু কুচকে মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকালাম। নাম্বার টা অপরিচিত! ফোন রিসিভ করতেই একটা পরিচিত মেয়েলি গলা ভেসে এলো...... -হ্যালো শিমুল ?
- হ্যা, কে বলছেন? -আজ যার জন্মদিন ছিলো..... -কে সুমি? তুমি আমার নাম্বার পেলে কোথায়? -সেটা আপনার জানার দরকার নাই। ছাদে আসতে পারবেন একটু? -মাথা খারাপ? রাত কয়টা বাজে হিসেব আছে? লোকে দেখলে কি বলবে? -আমার এতো কিছু জানার দরকার নাই! আসতে বলেছি আসবেন ব্যাস!! পরক্ষনেই লাইন টা কেটে গেলো। অনেকবার ফোনে ট্রাই করেও পেলাম না তাকে। কিছুতেই ফোন ধরছে না জেদি মেয়েটা! আমার ও রাগ উঠে গেলো। সিদ্ধান্ত নিলাম যাবো না ছাদে, দেখি কি করে ও! এসব ভাবতে ভাবতে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম। ঘুম ভাঙতেই মোবাইলে তাকিয়ে দেখি দুুই ঘন্টা পার হয়ে গেছে। সুমির কথা মনে পড়লো। ও কি এখনো ছাদে আছে? এতক্ষন তো কখনোই থাকার কথা নয়। ওর কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ঘুমোতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসতে চাইছে না। মনটা খচখচ করছে। শেষমেষ ছাদে যাবো বলে মনস্থির করলাম..... গুটিগুটি পায়ে নিঃশব্দে ছাদে গিয়ে উঠলাম। চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখি কেউ নেই। নেমে যাওয়ার আগে আরেকবার ভালো করে তাকাতেই দেখি আমার ধারনা ভুল। সুমি এখনো অপেক্ষা করছে আমার আসার জন্য। একটা কোনায় চুপচাপ বসে আছে! কিন্তু ওর বসার ভঙ্গি দেখে ভয় পেয়ে গেলাম। বিপজ্জনক ভাবে রেলিংয়ের সাইডে পা ঝুলিয়ে বসে আছে সে। যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে.... আমি ওর পেছনে গিয়ে কয়েকবার ডাক দিলাম সাইডে থেকে চলে আসতে। কিন্তু কিছুতেই সে আমার কথা শুনছে না। শেষমেষ বাধ্য হয়েই তাকে জাপটে ধরে কোলে তুলে নিয়ে আসতে হলো..... মেয়েটার চেহারায় এখনো পার্টি সাজ আছে। চেহারায় হাল্কা মেকআপ, ঠোটে লাল লিপ্সটিপ, পরনে কালো শাড়ী। সকল কবি-সাহিত্যিকদের গল্পের নায়িকা সুন্দরী হয় আর তারা সবসময় লাল নাহলে নীল শাড়ি পরিহিত থাকে। যা দেখে নায়ক প্রেমে পড়ে। কিন্তু সাহিত্যিকগণ কি কখনো দেখেছেন একজন সুন্দরী রমনী কালো শাড়ী পড়লে তাকে কি রকম দেখায়? আমার মন চাইছে তাদের ডেকে এনে দেখাই! স্বর্গের অপ্সরী ও সুমি কে দেখে তিনবার 'সুবাহানআল্লাহ' বলবে। সুমি এখনো আমার কোলেই আছে। সময় যেন থমকে গেছে। আইনস্টাইনের থিওরী অব রিলেটিভিটির ভাষায় একে টাইম ডিল্যুশন বলে। এর কার্যকারিতা যখন শুরু হয় তখন মনে হয় সময় স্থির হয়ে আছে। চাঁদের ম্লান আলো তার মুখে পড়ছে, দেখলাম মেয়েটার চোখের পাতা থিরথির করে কাপছে। নাহ! সময় থেমে যায় নি তাহলে.... চলতে শুরু করেছে। তবে স্বাভাবিক ভাবে নয়, সিনেমার স্লো মোশন এফেক্টের গতিতে.... মনে হচ্ছে অনন্তকাল ধরে তার চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকতে পারবো আমি। আমার ধারনা কোলে যে মেয়েটা শুয়ে আছে সে সুমি নয়, রুপকথার পাতা থেকে উঠে আসা স্লিপিং বিউটি..... এতক্ষন এক ধরনের ঘোরের মধ্যে ছিলাম আমি। হঠাৎ সংবিৎ ফিরে এলো। কোল থেকে নামিয়ে দিলাম তাকে। নামাতে না নামাতেই সে আমাকে জড়িয়ে ধরলো! জড়িয়ে ধরে সে কি কান্না..... সুমির মতো মেয়েদের যেমন প্রচন্ড জেদ থাকে তেমনি থাকে বুক ভরা ভালোবাসা। সেই ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ করতে গিয়ে তারা যখন তখন কেঁদে ফেলে। এদের চোখে সম্ভবত অশ্রু ভরাই থাকে। স্থান বুঝে তা বাধ ভেঙে বেরিয়ে আসে। হুমায়ূন আহমেদ তার সাহিত্যে এ ধরনের মেয়েদের 'অশ্রুকন্যা' হিসেবে অভিহিত করেছেন..... সুমি কাদছো কেন? -আপনি এতো দেরিতে আসলেন কেন? -ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, তুমি তো চলে গেলেই পারতে? -আমার মন বলছিলো আপনি আসবেন, ঠিকই এসেছেন.... -কেন ডেকেছিলে আমায়? -আপনার উপহার টা খুব খুব খুব পছন্দ হয়েছে আমার! অংখ্য ধন্যবাদ.... -আরে ধুর কি বলো! ওটা নিতান্তই একটা সস্তা জিনিস। দাম মাত্র.... সুমি মুখ চেপে ধরলো আমার। -উপহার কে কখনো মূল্য দিয়ে বিচার করতে নেই! দাম যতই হোক সেটা আমার কাছে কোটি টাকার চেয়ে দামী.... মেয়েটা খুব রহস্য করে কথা বলে। আমার কাছে হয়তো চাইনিজ কিংবা হিব্রু ভাষার মর্ম ভেদ করা সম্ভব। কিন্তু ওর কথার আগা-মাথা বোঝা কিছুতেই সম্ভব না। একটা সস্তা শো পিস কেন কোটি টাকার চেয়ে দামী হবে সেটা কিছুতেই আমার মাথায় ঢুকলো না..... -আরেকটা কথা! আপনি তখন মিম হাত ধরে কি কথা বলছিলেন? প্রপোজ টপোজ করে বসেন নি তো আবার? -নাউযুবিল্লাহ! সেই তো আমার কাছে এসে পরিচিত পরিচিত হতে চাইলো.... -একদম পাত্তা দেবেন না ওকে। ছেলে দেখলে ছোকছোক করা ওর স্বভাব। আমি ওর কথায় না হেসে পারলাম না। আমি জানি মিম তার কাজিন হলেও হলেও ওদের সম্পর্কটা বন্ধুর মতো। মেয়েদের বন্ধুত্ব যতই গভীর হোক না কেন তাতে কিছুটা হলেও হিংসা থাকবেই। সেটা হতে পারে গায়ের রং নিয়ে, কে কতোটা ভালো ছাত্রী তা নিয়ে কিংবা বয়ফ্রেন্ড নিয়ে! এসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে তাদের মাঝে দ্বন্দ থাকে। কিন্তু এদের মাঝে অনেকেই একে অপরের জন্য জান ও দিতে পারে। কি অদ্ভুদ! মেয়েদের সাইকোলজি বোঝা টা ফিজিক্সে পিএইচডি করার চেয়েও কঠিন.... মিম মেয়েটা অনেকদিন বাঁচবে বলতে হবে। কথা শেষ হতে না হতেই দেখি ও দরজার সামনে এসে দাড়িয়ে আছে! ওকে দেখে চমকে গেলেও দ্রুত সামলে নিলাম.... -এই তোকে না বললাম এখানে না আসতে? সুমির কন্ঠে স্পষ্ট বিরক্তি.... -কি করবো এতো রাত হয়ে গেলো অথচ তুই ঘরে ফিরছিলি না তাই দেখতে এলাম বেঁচে আছিস না মরে গেছিস! -দেখছিস ই তো বেঁচে আছি এখন যা! মিম মুখ টা কালো করে চলে গেলো.... এতক্ষনে সুমি আমার সাথে কথা বলার সুযোগ পেলো। -কাল কি আপনি ফ্রি আছেন? -কেন বলো তো? -আপনার সাথে একটু বের হতাম.... -কোথায় যাবে? -নিরিবিলি কোনো পরিবেশে, যেখানে ডিম মানে মিম নামের কোনো কাবাবের হাড্ডি নেই! -এক সপ্তাহ অফিসে যাই নি, মায়ের শরীর খারাপ ছিলো। অনেক কাজ জমে আছে। আগামীকাল সারাদিন বিজি থাকতে হবে। আমি দুঃখিত সুমি .... মেয়েটা মন খারাপ করে চলে গেলো। পেছন থেকে ডাকলেও কোনো কথা শুনলো না। সকালে অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি এমন সময় শুভ র কল আসলো। শুভ আমার অফিস কলিগ, খুব ভালো বন্ধু ও। -কিরে শিমুল? অফিসে আসছিস না কেন? -মায়ের শরীর খারাপ ছিলো রে! সমস্যা নেই আমি আজ অফিসে আসবো.... -দ্রুত আয়! তোর পাশের টেবিলে নতুন কলিগ এসেছে। তাকে কাজ বুঝিয়ে দিতে হবে। উপর তলা থেকে বারবার এসে কাজ বোঝানো আমার পক্ষে সম্ভব না। অফিসে ঢুকেই আমার টেবিলে ফাইল- পত্র নিয়ে বসে পড়লাম। একটু পর শুভ এসে উপস্থিত। -শিমুল পরিচিত হয়ে নে। উনি আমাদের অফিসে নতুন জয়েন করেছেন, তোর পাশের টেবিলেই ওনার ডেস্ক। দেখলাম ওর পাশে একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে। চোখে কালো ফ্রেমের চশমা, লম্বা ছিপছিপে গড়ন, গোলগাল চেহারা, গাত্রবর্ণ লালচে ফর্সা। দেখলে হাই স্কুলের টিচারদের কথা মনে আসে। -আসসালামুআলাইকুম, আমি রিয়া। বলেই হাতটা বাড়িয়ে দিলো। আমি হাতটা ধরার আগে ডানে বামে দেখে নিশ্চিত হয়ে নিলাম সুমি আছে কি না! না নেই, হাত টা তাহলে ধরা যায়.... -আমি শিমুল পরিচিত হয়ে ভালো লাগলো.... -রিয়া, অফিসের যা টুকটাক কাজ আছে শিমুল তোমাকে বুঝিয়ে দেবে। শুভ বললো... মেয়েটা বেশ তড়িৎকর্মা। একটু দেখিয়ে দিলেই সব বুঝে যায়। এমন কলিগের সাথে কাজ করেও মজা আছে। শুধু তাই না, রিয়া অনেক ফ্রেন্ডলি। কথা বলার সময় সারাক্ষন মুখে হাসি লেগেই থাকে! অফিস শেষে শুভ আমাকে আর রিয়াকে তার গাড়িতে উঠতে বললো। যেহেতু আমরা একই রাস্তা দিয়ে যাবো তাই আপত্তি করলাম না। মাঝপথে সে একটা রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি থামালো। কারন জানতে চাইলে বললো তার নাকি খুব ক্ষিদে পেয়েছে। অবশ্য এমন কোনো মূহুর্ত নেই যখন তার পেটে খিদে থাকে না। কখনো কম কখনো বেশি। তার সাথে বন্ধুত্বের সুবাদে এই বিষয় টা আমার অজানা নয়। রেস্টুরেন্ট টা বেশ বড়। কর্নারের একটা টেবিলে বসলাম আমরা তিনজন। ওয়েটার কে ডেকে একগাদা খাবার অর্ডার দিলো পেটুক শুভ। এত খাবার কে খাবে আমার মাথায় ধরছে না। কিছুক্ষন পর ওয়েটার এসে খাবার দিয়ে গেলো। খাবারের ওপর প্রায় ঝাপিয়ে পড়লো শুভ। কিন্তু বেচারা বেশিক্ষন চালিয়ে যেতে পারলো না। তার বউ ফোন দিলো। আসার সময় স্কুল থেকে বাচ্চাকে নিয়ে আসার দায়িত্ব পড়লো বেচারার উপর। সে আমাদের কে বসিয়ে রেখে চলে গেলো। আমি পড়ে গেলাম দারুন অস্বস্তি তে। আমি রিয়া কে ভালো ভাবে চিনি না সেও আমাকে চেনে না। আজই তো পরিচয় হলো..... পরিবেশ হাল্কা করার জন্য মেয়েটা আলাপ জমাতে চেষ্টা করলো। কিছুক্ষনের মধ্যেই কথা-বার্তা বেশ জমে উঠলো। এখন আর তাকে অপরিচিত মনে হচ্ছে না। যে কোনো পরিস্থিতি নিজের কন্ট্রোলে নিয়ে আসার এক ধরনের ক্ষমতা আছে তার। দুজনের মধ্যে কথা তো চলতে থাকলোই পাশাপাশি আমরা হাসি-ঠাট্রায় ও মেতে উঠলাম। কিন্তু আমার হাসি পরিনত হলো আতঙ্কে যখন রেস্টুরেন্টের দরজা দিয়ে মিম আর সুমি।কে ভেতরে প্রবেশ করতে দেখলাম। পরিস্থিতি হয়তো সামাল দিতে পারতাম কিন্তু সমস্যা হলো আমার চোখে চোখ পড়ে গেলো তার......


** ৫ম পর্ব **


: পরিস্থিতিটা হয়তো সামাল দিতে পারতাম কিন্তু আমার চোখে চোখ পড়ে গেলো তার। রিয়া আমার হাত ধরো বললো.... -এই শিমুল কি দেখছো? -কই নাতো! কিছু নাহ.... সুমি রেগেমেগে গটগট করে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গেলো। মিম তার পিছু সুমি আমি ও দৌড়ে তাদের পথ অনুসরন করলাম। পিছে না তাকিয়েও আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম রিয়া মেয়েটা আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে.... বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে (যদিও এখন বৃষ্টির মৌসুম নয়)। ঝড়ো বাতাসে সামনের কয়েক ফুটের কিছু দেখাও দায়। এরই মধ্যে আবছা ভাবে দেখতে পেলাম সুমি আর মিম কে। বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হয়ে গেছে। আমি তাদের সামনে গিয়ে পথরোধ করে দাড়ালাম। সুমি মিমকে বাসায় যেতে বললো। কিন্তু মিম তাকে একা ছেড়ে যেতে নারাজ। শেষমেষ ধমক খেয়ে অগত্যা বাড়ির পথ ধরলো..... এতক্ষনে খেয়াল করলাম সুমির শরীরে ওড়না নেই। রেস্টুরেন্ট থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার সময় কখন যে পড়ে গেছে হয়তো নিজেও খেয়াল করে নি! রাস্তার পাশে দোকানের ছাউনিতে দাড়িয়ে থাকা লোকগুলো বদ নজরে ওর দিকে তাকাচ্ছে। ব্যাপার টা আমার মোটেই ভালো লাগছে না। সুমির মতো মেয়েরা যদি বোরখা ও পড়ে তবুও তাদের সৌন্দর্য ঠিকড়ে বের হয়। আর মানুষ তাদের দিকে কু-নজরে তাকায়। আর এখন তো ভেজা শরীরে তাও আবার ওড়না ছাড়া! কি সাংঘাতিক ব্যাপার.... আমি আমার শার্ট টা খুলে ওর গায়ে জড়িয়ে দিলাম। আমি এখন শুধু একটা স্যান্ডো গেঞ্জী পড়া। মেয়েটা থরথর করে কাঁপছে। দেখে আমার ভীষন মায়া লাগলো। ইচ্ছে করছে ওকে জড়িয়ে ধরে আমার সমস্ত উষ্ঞতা ওকে দিয়ে দেই। কিন্তু সেটা সম্ভব নয়.... -সুমি চলো বাসায় চলো, বৃষ্টিতে ভিজলে তোমার ঠান্ডা লাগবে! -আমার ঠান্ডা লাগলেই কি আর আমি মারা গেলেই কি? আপনার কিছু এসে যায়? মেয়েটার চোখে চোখ রাখলাম আমি। সেখানে গভীর অভিমান লুকিয়ে আছে, আর সেই অভিমান অশ্রু হয়ে চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে। 'বৃষ্টির পানির রহস্যময়তা হচ্ছে ঝমঝম বৃষ্টির মধ্যেও তা আলাদা করা যায়।' হুমায়ূন আহমেদ যে এই উক্তি শুধু শুধু করে নি তা আজ নিজের চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি। অঝোর বৃষ্টির মধ্যে একটি ছেলে আর একটি মেয়ে রাস্তায় দাড়িয়ে আছে। মেয়েটা অভিমান করে আছে আর ছেলেটা রাগ ভাঙাচ্ছে। আমাদের সামনে একটা ক্যামেরা থাকলে কোনো রোমান্টিক নাটকের শ্যুটিং বলে চালিয়ে দেয়া যেতো..... -সুমি পাগলামি করো না, চলো বাসায় চলো.... -না যাবো না আমি!!! -আচ্ছা তুমি রাগ করে আছো কেন বলো তো? আমার সাথে কোনো মেয়ে কে দেখলে তুমি এমন করো কেন? আমি কে হই তোমার.... -একটা মেয়ের না বলা ভাষাটুকু বোঝার ক্ষমতা আপনার নেই। মেয়েদের বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না এই কথাটা আপনার জানা আছে? -এতো কিছু আমি কি করে বলবো? আমি কি মেয়ে নাকি? -তাহলে কোনো ছেলে কে বিয়ে কইরেন! মেয়েটার শরীরে প্রচন্ড রাগ। ওভারলোডের কারনে যেমন বৈদ্যুতিক সংযোগের শর্ট-সার্কিট হয়ে যায় তেমনি প্রচন্ড রাগের কারনে তার মাথার দুই- একটা তার সম্ভবত ছিড়ে গেছে। যাদের মাথার তার ছিড়া তাদের পাগলামি শুরু হয় চৈত্র-বৈশাখ মাসে। এই শ্রেনীর পাগলদের 'চৈতা পাগল' বলে। কিন্তু এখন তো ষোল আনা বসন্ত! ওর নাম কি তাহলে 'বাসন্তী পাগল' কিংবা 'বাসন্তী পাগলী' দেয়া যায়? খারাপ হয় না তাহলে.... একটা ছেলে হয়ে আরেকটা ছেলে কে কি করে বিয়ে করবো আমি? এসব উদ্ভট কথার কোনো মানে হয়? -আমি আপনাকে ভালোবাসি!!! আপনি বোঝেন না গাধা? তাই অন্য মেয়ের সাথে দেখলে জেলাস ফিল হয়... ও আমাকে ভালোবাসে আমি খুব ভালো করেই জানি। কিন্তু এখন যে আচমকা বলে ফেলবে তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না! এতোদিন আমি না বোঝার ভান করে থাকতাম কিন্তু এখন সমস্যা টা হচ্ছে সে তার মনের কথাটা বলে দিয়েছে। এখন আর সেটা করা সম্ভব নয়..... -শিমুল তুমি আমায় ভালোবাসো না?
আপনি থেকে সরাসরি তুমি তে চলে গেলো সুমি... -দেখো সুমি আজ এপ্রিল ফুল না। সো ফান করা বন্ধ করো.... -আমার কথা শুনে কি আপনার ফান মনে হচ্ছে? কি করলে আপনার আমার কথা সিরিয়াস মনে হবে শুনি? ওই যে চলন্ত বাসটার নিচে লাফ দিবো? ওয়েট! সুমি এক পা বাড়ালো.... আর ওমনি আমি টান দিয়ে বুকে জড়িয়ে নিলাম। আমি কোথায় আছি এই কথাটা তখন আর আমার মাথায় নেই। চেপে না রাখতে পেরে আমিও বলে দিলাম মনের কথা.... -পাগলী আমিও তোমাকে খুব ভালোবাসি! তুমি কি আমার বাবুর আম্মু হবে? -সত্যি বলছো তো? -হ্যা সত্যি বলছি.... পাগলীটা লজ্জায় আমার বুকে মুখ লুকালো। (ব্যাকগ্রাউন্ডে আশিকি টু ছবির গান হলে ভালো হতো) পেছনে শিষ আর কড়তালির আওয়াজ শুনলাম। লোকগুলো ছাউনির নিচ থেকে এতক্ষন আমাদের রোম্যান্স দেখছিলো! কি লজ্জার কথা...!! আমি আর সুমি সেখান থেকে দ্রুত কেটে পড়লাম। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শুতেই বৃষ্টিতে ভেজার মজা টের পেলাম। শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বাড়ছে। জ্বর টর আসতে পারে.... রিয়াকে ফোন দিয়ে কোথায় আছে জানতে চাইলাম। সে বললো আমাদের অফিসের আশে-পাশেই কোথাও এক জায়গায় আছে, কি এক কাজে এসেছে। রিয়াকে জরুরী একটা কথা বলা দরকার। কিন্তু ঠিক ভরসা পাচ্ছি না। তবে ওর আচার-আচরন, কথা-বার্তা আমার কাছে ভালোই লেগেছে.... -রিয়া তুমি তো অফিসের পাশেই আছো! একটা কাজ করে দিবে প্লিজ? যদি কিছু মনে না করো? -অবশ্যই, বলো কি কাজ? -অফিসে আমার ডেস্কের উপর কিছু ফাইল আর হিসাবের কাগজ-পত্র আছে, একটু কষ্ট করে আমার বাসায় নিয়ে আসতে পারবে? এক সপ্তাহের জমানো কাজগুলো শেষ করতে হবে। নাহলে চাকরি নিয়ে টানাটানি হয়ে যাবে..... -এ আর এমন কি কাজ? তোমার ঠিকানা বলো? আমি তাকে আমার ঠিকানা দিয়ে দিলাম। মেয়েরা তেমন একটা হেল্পফুল হয় না। হেল্প চাইলে নানা টালবাহানা করে। কিন্তু ও একেবারেই ব্যতিক্রম! সন্ধ্যার দিকে আমি বারান্দায় বসে বৃষ্টি দেখছিলাম। দরজায় টোকা পড়লো। ভাবলাম রিয়া এসেছে। কিন্তু না দরজার ওপাশে সুমির বড় বোন মরিয়ম দাড়িয়ে আছে। হঠাৎ আসার কারন জানতে চাইলে বললো, সে আর তার বাবা-মা নাকি ঢাকার বাইরে কোন এক বিয়ের অনুষ্ঠানে যাচ্ছে। আগামীকাল নাগাদ ফিরবে। বাসায় সুমি আর মিম কে রেখে যাচ্ছে। কারন বৃষ্টিতে ভিজে সুমি নাকি জ্বর বাধিয়ে বসেছে। ওদের কোনো সমস্যা হলে যেন আমি দেখি..... দুইটা মেয়েকে একটা ব্যাচেলর ছেলের পাহারায় বাসায় রেখে যাওয়া হচ্ছে। ব্যাপার টা ইন্টারেস্টিং! পৃথিবীর ইতিহাসে এমন নজির আছে কিনা আমার জানা নাই..... তবে একটা ব্যাপার বুঝলাম ওর ফ্যামিলির সবাই আমাকে বিশ্বাস করে! বিশাল কালো গাড়িটায় চড়ে মরিয়মদের চলে যেতে দেখলাম। আর ওদের যাওয়ার প্রায় সাথে সাথে রিয়া এসে উপস্থিত! হাতে একগাদা ফাইল-পত্র নিয়ে দরজার সামনে হাসি-মুখে দাড়িয়ে আছে মেয়েটা..... মেয়েরাই সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে বৈচিত্র্যপূর্ন প্রানী। পৃথিবীর সাতশ কোটি মানুষের মধ্যে সম্ভবত সাড়ে তিনশ কোটি মেয়ে। আর এদের একেকজনের স্বভাব একেকরকম। রিয়া আর সুমিকে দেখলেই সেটা বোঝা যায়.... আমি তাকে ভেতরে আসতে বললাম। লম্বা চুলগুলো ভিজে গেছে বৃষ্টিতে। তাকে একটা তোয়ালে এগিয়ে দিলাম চুল মোছার জন্য। তার দীঘল কেশ কোমড় ছাড়িয়ে পড়েছে। সে মুছতে শুরু করলো। আমার মমতাজের গানটার কথা মনে পড়ে গেলো-খায়রুন লো....তোর লম্বা মাথার কেশ..... আমি বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকতে পারলাম না। কোনো পুরুষ ই সম্ভবত পারবে না। চোখ ঝলসে যেতে পারে। পুরুষ জাতি তাদের স্ত্রীদের এমন দৃশ্য দেখলে পেছন দিয়ে জড়িয়ে ধরে। -এভাবে কি দেখছো? রিয়ার ঠোটে মুচকি হাসি! আমি লজ্জা পেয়ে গেলাম... -ক.....কই না তো! ক....কিছু নাহ!! -কিছু না দেখেই এই অবস্থা? আর দেখলে কি করবা? খাইছে! রিয়াও তো দেখছি কম দুষ্টু নাহ! জীবনের প্রথম কোনো মেয়ে পরিচয়ের প্রথম দিনে আমার সাথে এতোটা ঘনিষ্ঠ হয়েছে। এটাই ওর আশ্চর্য একটা গুন। খুব সহজেই মিশে যেতে পারে সবার সাথে..... ওর রসিকতায় আমরা দুজন অনেকক্ষন হাসলাম। হঠাৎ সুমির কথা মনে পড়লো। মেয়েটার শরীর খারাপ। ওর কাছে যেতে হবে..... -রিয়া তুমি একটু বসবে? আমি একটু নীচ তলায় যাবো। -ওকে যাও, আমি কি তোমার কাজ গুলো গুছিয়ে ফেলবো? -আরে বাহ! এতো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। তুমি এগিয়ে রাখো আমি আসছি.... আমি সুমিদের বাসায় গেলাম। দেখি সুমি ঘুমিয়ে আছে। আমি তার কপালে হাত রাখলাম। জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। কপালে হাতের স্পর্শ সে চোখ মেলে তাকালো। আমাকে দেখে সে খুব খুশী হয়ে গেলো। আমার হাত টা জড়িয়ে ধরে বললো..... -তুমি এসেছো? আমি খুব খুশী হয়েছি, ভেবেছি আসবে না..... -আসবো না কেনো? তোমার শরীর খারাপ আর আমি আসবো না? -এই তোমার মুখ টা একটু সামনে আনো তো কানে কানে একটা কথা বলবো.... আমি মুখ টা তার সামনে বাড়িয়ে দিলাম। আর ওমনি সে টুক করে চুমু খেয়ে বসলো! পাশে বসে থাকা মিম চেহারা দেখে মনে হচ্ছে এই মাত্র পৃথিবীর সবচেয়ে বিভৎস দৃশ্য টা সে দেখলো। -সুমিএটা তুমি কি করলে? -কেন? আমার ভালোবাসার মানুষটা কে চুমু খেলাম! আমাদের কথা-বার্তা শুনে মিম রাগে আমাদের সামনে থেকে উঠে চলে গেলো। ওর এমন প্রতিক্রিয়ার কারন কি আমার জানা নাই..... বাইরে তুমুল বৃষ্টি। আমি চলে যেতে চাইলাম। কিন্তু সুমি কিছুতেই আমাকে যেতে দিবে না! অগত্যা আমি তার পাশে বসে রইলাম। সে ঘুমালে আমি চুপি- চুপি বাসায় চলে গেলাম। গিয়ে দেখি রিয়া কাগজ-কলম নিয়ে ব্যস্ত.... -কাজ কতোটুকু হলো? -এই যে মাত্র শেষ হলো..... মেয়েটার ওপর মনে মনে কৃতজ্ঞ হয়ে গেলাম। এতোটা উপকার কেউ কাউকে করে না! - তো এখন বাসায় যাবে না? চলো তোমাকে এগিয়ে দিয়ে আসি..... -বাইরে তো বৃষ্টি হচ্ছে! কিভাবে যাবো? -তা ও তো কথা! ঠিকাছে বৃষ্টি থামার অপেক্ষা করো..... বৃষ্টি তো থামলোই না বরং কারেন্ট টাই চলে গেলো! বৃষ্টির তেজ যেন ধীরে ধীরে বাড়ছে। -আমি বরং আজ রাত টা থেকে যাই। তোমার কোনো সমস্যা হবে? আমি বেশ চিন্তায় পড়ে গেলাম। -আমার কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু তুমি বাসায় কি বলবে? -সেটা নিয়ে কোনো সমস্যা নাই। আমি মহিলা হোস্টেলে থাকি ফ্যামিলির সাথে না! -ঠিকাছে তুমি থাকো, আমি বরং ছাদে গিয়ে বসি, বৃষ্টি দেখি। -ঘুমাবে না? -তুমি ঘুমিয়ে থাকো। আজ রাতটা না ঘুমালে কিছু হবে না! -কিন্তু.... -তুমি থাকো তো, আমার কোনো সমস্যা হবে না। ভেতর থেকে গেট টা লাগিয়ে দাও। আমি ছাদে চলে গেলাম। ছাদের গেট টা খুলে সিড়িতে বসে বৃষ্টি দেখতে দেখতে একসময় ঘুমিয়ে পড়লাম। উঠে দেখি সকাল হয়ে গেছে। বাসার দরজা নক করতেই রিয়া দরজা খুলে দিলো। ভেতর থেকে খাবারের সুগন্ধ ভেসে আসছে। দেখলাম কয়েক পদের তরকারি টেবিলে সাজানো। ফ্রিজে যা ছিলো তাই দিয়ে ই রান্না করেছে। আমরা এক সাথে ব্রেকফাস্ট করলাম। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে ও বিদায় নিলো। তাকে দরজার সামনে এগিয়ে দিলাম। এবং আবারো সুসংবাদ!!!! দরজা খুলেই সুমির মুখটা দেখতে পেলাম...... আমি জানি ও এখন কি ভাববে! আমি রিয়ার সাথে রাত কাটিয়েছি!!


** ৬ষ্ঠ পর্ব **

: আমি জানি ও এখন কি ভাববে! আমি রিয়ার সাথে রাত কাটিয়েছি.... সুমি ভুত দেখার মতো চমকে উঠেছে! এমন কিছু দেখবে সে হয়তো কল্পনা ও করেনি। তার হাতে একটা খাবার প্লেট। শরীরে জ্বর নিয়েও আমার জন্য কি যেনো রান্না করে এনেছে মেয়েটা। আস্তে করে মাথা নিচু করে চলে গেলো সে। আমি জানি ও এখন বাসায় গিয়ে বালিশ জড়িয়ে কাঁদবে। -মেয়েটা কে? রিয়ার প্রশ্ন... -আমাদের বাড়িওয়ালার মেয়ে। -এভাবে চলে গেলো কেন? -বলতে পারবো না, আচ্ছা এখন কি তুমি সরাসরি অফিস যাবে? -হ্যা... -আচ্ছা তুমি যাও, আমি আসছি। -ঠিকাছে... রিয়া চলে গেলো। আমার এখন কি করা উচিৎ বুঝতে পারছি না। কি বলে সুমি কে বুঝ দিবো? অফিসে যাওয়ার পথে সুমির বাসার কলিংবেল অনেকবার টেপা সত্বেও কেউ দরজা খুললো না। আমি মন খারাপ করে চলে গেলাম..... অফিসে গিয়ে দেখি বাবা বসে আছেন। আমি অবাক হয়ে গেলাম.... -বাবা তুমি এখানে? -হ্যা, জরুরী একটা কাজে এসেছি। আমার হাজার দশেক টাকা লাগবে। তোর মায়ের শরীর আবার অসুস্থ হয়ে গেছে, হাসপাতালে নিয়ে কিছু টেস্ট করাতে হবে। অফিসে আমার কয়েকমাসের বেতন জমা আছে। একা মানুষ তেমন খরচ লাগে না বলে রেখে দিয়েছি। সেখান থেকে টাকা উঠিয়ে বাবার হাতে দিলাম। বাবা চলে যাবে এমন সময় রিয়া এসে উপস্থিত। বাবার সঙ্গে রিয়াকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে আমি আমার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। কিন্তু পুরোপুরি মন বসছে না। বারবার সুমির কথা মনে হচ্ছে! কল্পনায় দেখতে পাচ্ছি মেয়েটা গাল-মুখ ফুলিয়ে একা একা বসে আছে! অফিস শেষে বাসায় ফেরার পথে ওর জন্য একটা ফুলের তোড়া আর বেশ কিছু ডেইরি মিল্ক চকলেট নিলাম। মেয়েদের রাগ ভাঙাতে এগুলোর জুড়ি মেলা ভার! এবার একবার কলিংবেল টিপতেই মিম গেট খুলে দিলো.... -এই! সকালে গেট খুললে না কেন? -আমি কি করবো? সুমি ই তো খুলতে দেয় নি! তুমি দাড়িয়ে থাকলে আমার ও কি ভালো লাগে বলো? সর্বনাশ! ওর কথা-বার্তার ধরন মোটেও সুবিধার নয়। অনেকটা স্ত্রী স্বামীর কাছে কোনো কিছুর বায়না ধরলে যেমন করে অনেকটা সেরকম। আমার মনে হয় সুমি যদি আমার সাথে প্রেম না করতো তাহলে ও একটা চান্স নিতো..... যা ভেবেছি তাই, মেয়েটা একা একা মন খারাপ করে বসে আছে.... -সুমি? এই সুমি সুমি কোনো কথা কথা বললো না.... -রাগ করেছো? তুমি যা ভাবছো ভুল! -আমার চোখ ও কি ভুল? এই প্রথম ও মুখ খুললো.... -হ্যা, চোখও অনেক সময় ভুল করে সুমি -রাতে ওই মেয়ের জন্যই আমাকে ঘুমে রেখে চলে গিয়েছিলে তাই না? -উফ সুমি মোটেই না.... আমি সব ঘটনা ওকে খুলে বললাম। ওর ভুল ভেঙে গেলো, আমার কাছে লজ্জিত হলো সে। যাক! অবশেষে বোঝাতে তো পেরেছি? এই ই শান্তি..... -সুমি তোমার জন্য গিফট এনেছি! -কই দেখি দেখি? -এই যে নাও.... গিফট পেয়ে বাচ্চা মেয়েদের মতো খুশি হয়ে উঠলো পাগলি টা। অফিসের কাজের ব্যস্ততা, সুমির সাথে খুনসুটি ভালোই কেটে যাচ্ছিলো দিনগুলি! একদিন রাতে বাবা ফোন দিলো.... -হ্যালো? -হ্যা বাবা বলো.... -কাল সকালে বাড়ি চলে আয় তো বাবা। -কিন্তু কেন? -তোর মা জানে জানে, তুই তাড়াতাড়ি চলে আয়.... ফোনটা কেটে গেলো। মা যেহেতু বলেছে সেহেতু যেতেই হবে। কিন্তু কারনটা জানতে মন খচখচ করছে! সকাল ৯ টা নাগাদ আমি বাসায় এসে উপস্থিত। আমাকে হঠাৎ আসতে বলার কারন টা মায়ের কাছে জানতে চাইলাম। মা কিছু বললো না। শুধু বললো- 'আমার সাথে আয়।' আমি মায়ের পিছু পিছু গাড়িতে উঠলাম। বাবাও উঠলো। আমার মনে হচ্ছে আমাকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। অন্য কেউ হলে হয়তো সত্যি ভেবে নিতাম। কিন্তু স্বস্তি পাচ্ছি আমার পাশে আমার বাবা-মা বসে আছে। 'সিকদার ভিলা' নামের একটা বাড়ির পাশে গাড়ি টা থামলো। বাড়ি টা বেশ বড়, চারপাশে ফুলের বাগান। এক মধ্য বয়সী ভদ্র মহিলা দরজা খুলে দাড়িয়েই ছিলো, সাথে এক বয়স্ক ভদ্রলোক। সম্ভবত মহিলার হাজবেন্ড। আমরা বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলাম। ভেতর টা বেশ পরিচ্ছন্ন আর গোছানো। ডুপ্লেক্স স্টাইলের বাড়ি। -কই আপা আপনাদের মেয়ে কে নিয়ে আসুন! আমার তো দেখার জন্য তর সইছে নাহ....! মায়ের কথা শুনে আমি আকাশ থেকে পড়লাম! 'আপনাদের মেয়ে কে নিয়ে আসুন' আজব! এর মানে কি? এসব কি হচ্ছে এখানে? এতক্ষনে সব মাথায় ঢুকলো আমার। আমার বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে আসা হয়েছে এখানে। অথচ আমিই জানি না! যেন বিয়ে টা আমি না, আমার বাবা-মা ই করছে..... একটু পর ঘোমটা দেয়া এক রমনীর আবির্ভাব ঘটলো। আমাদের নাক বরাবর বসানো হয়েছে তাকে। -মা ঘোমটা সরাও? তোমার চাঁদ মুখ টা একটু দেখি? মা বললো.... তারপরের ঘটনা আরো ভয়াবহ! এই অকাজের মুলে যে আমার বাবা রয়েছে তা আর বুঝতে বাকি রইলো না। মেয়ের মুখ দেখে মা খুশি হলেও আমি খুশি হতে পারলাম না বরং আতকে উঠলাম কারন ওই 'চাঁদ মুখ' টা আমার খুব চেনা..... ঘোমটা দেয়া মেয়েটা আর কেউ না, আমার অফিস কলিগ 'রিয়া'.....


** ৭ম পর্ব **


: ঘোমটা দেয়া মেয়েটা আর কেউ না আমার অফিস কলিগ রিয়া..... মেয়েটা আমার দিকে আড় চোখে চাইছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। আমার মন চাচ্ছে উঠে চলে যাই। কিন্তু ভদ্রতার খাতিরে সেটা করা সম্ভব হচ্ছে না। -মাশাআল্লাহ, এতো দেখছি ডানা কাটা পরী! মেয়ে আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে! কি বলো ছেলের বাবা? -পছন্দ না হলেই কি তোমাকে এখানে নিয়ে এসেছি? তা ভাবী ছেলে কে আপনাদের পছন্দ হয়েছে তো! নাকি.... (রিয়ার মা কে উদ্দেশ্য করে বাবা) -কি যে বলেন! এমন সোনার টুকরো ছেলে কে কি পছন্দ না করে পারা যায়? (রিয়ার মা) ফাঁসির আসামী কে বিচারক রায় পড়ে শোনালে তার কাছে যেমন লাগে, ওনাদের কথা-বার্তা আমার কাছেও তেমন লাগছে! আর একটা কথা আমার মাথায় ঢুকছে না, আমি নাকি সোনার টুকরো ছেলে! আজব..... আমি তো নিজেকে কয়লার টুকরো ও ভাবি না। এজন্য মনে ক্ষীণ আশা ছিলো পাত্রী পক্ষ হয়তো আমাকে পছন্দ করবে না। কিন্তু ভাগ্য খারাপ হলে যা হয় আরকি.... -এবার কি তাহলে বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করা যায়? (মা বললো) আমি অবাক হয়ে গেলাম। একবারের জন্যও আমার পছন্দ অপছন্দ জিজ্ঞেস করা হলো না। যেন বিয়ে টা আমি না...আমার বাবা-মা করছে! -তার আগে ওদের আলাদা একটা রুমে কথা বলার সুযোগ দেয়া উচিৎ (রিয়ার মা) -হ্যা অবশ্যই! আমাদের একটা রুমে ঢুকিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়া হলো। এই মূহুর্তে নিজেকে খুব অসহায় লাগছে। স্কুল জীবনের প্রথম দিন স্টুডেন্ট কে ক্লাস রুমে ঢুকিয়ে বাবা-মা চলে গেলে তার কাছে যেরকম লাগে আমার ও সেরকম অনুভূতি হচ্ছে। রিয়া হুট করে এসে আমার কলার চেপে ধরলো। বাচ্চা মেয়েদের মতো হাসছে সে। এই হাসির একটা নাম আছে। মুক্তাঝরা হাসি। ওর এরকম আচরনের যুক্তিসংগত কোনো কারন খুজে পেলাম না। বেশিদিন হয় নি ওর সাথে পরিচয় হয়েছে, সম্পর্ক টা যে খুব বেশি ঘনিষ্ঠ তা ও কিন্তু না। মেয়েরা মাঝে মাঝেই এমন রহস্যময় আচরন করে। যার কোনো ব্যাখ্যা নেই। এজন্যই হয়তো নারীকে 'রহস্যময়' বলা হয়। -এই যে মিস্টার! আব্বু-আম্মুর সামনে এমন কাচুমাচু হয়ে বসেছিলে কেন? ভয় পাচ্ছিলে নাকি? -রিয়া আমি কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছি না, কিভাবে কি হলো? -আরে ওইদিন যে তোমার বাবা অফিসে গিয়েছিলো তখনই নাকি ওনার আমাকে পছন্দ হয়ে যায়। তারপর আমার কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে সরাসরি চলে আসে আমাদের বাসায়। পরের ঘটনার স্বাক্ষী তো তুমি নিজেই.....
-হুম বুঝলাম, এবার কি আমার কলার টা ছাড়া যায়? -নাহ...আগে বলো আমাকে তোমার পছন্দ হয় কি না! বিয়ে করবে তো আমায়? রিয়ার চোখ চকচক করছে। সেখানে আশার আলো। হয়তো আমার 'হ্যা' শোনার জন্য.... -কি হলো বলছো না যে? ওকে মুখের ওপর না বলে দিতে বিবেকে বাধছে। অন্য কোনো প্ল্যান বের করতে হবে.... -আচ্ছা রিয়া তুমি কি আমাকে ভালোবাসো? আচমকা প্রশ্নটা ছুড়ে দিলাম..... এবার ও আমার কলার ছেড়ে দিলো। বাঙালী ললনাদের চিরচেনা সহজাত বৈশিষ্ট্য তার মুখে ফুটে উঠলো। লজ্জায় লাল, নীল, বেগুনী হয়ে যাচ্ছে মেয়েটা। মেয়েদের কে সবচেয়ে বেশি সুন্দর লাগে যখন সে কাঁদে আর লজ্জা পায়.... -কি হলো বলছো না যে? -ভালো না বাসলেই কি তোমাকে আমার বেড রুমে ঢুকতে দিয়েছি? আমার বাবা বাদে তুমিই একমাত্র পুরুষ যে আমার রুমে পা রেখেছে। এতক্ষনে আমি চারপাশ টা খেয়াল করলাম। দেয়ালে রিয়ার বড় বড় ছবি টাঙানো। টেডি বিয়ার সহ নানা রকম মেয়েলি জিনিস পত্রে ঠাসা রুম টা.... -আমায় যে ভালোবাসো আগে তো বলো নি? -যখন থেকে আমাদের বিয়ের কথা-বার্তা শুরু হয়েছে তারপর থেকেই তোমাকে আমি ভালোবাসতে শুরু করি। জানো মনে মনে আমার স্বামীর আসনে তোমাকে বসিয়েছি..... সর্বনাশ! এই মেয়ের গতিশীলতা তো আলোর চেয়ে ও বেশি। কাউকে ভালোবাসতে না বাসতেই সরাসরি স্বামীর আসনে বসিয়ে দিয়েছে! অদ্ভুদ.... -আচ্ছা রিয়া আমরা তো একে অপরকে ভালো করে চিনি না, বিয়ের আগে ভালো করে পরিচিত হওয়া টা জরুরী না? আমি বলছিলাম কি আজকেই বিয়ের ডেট না করে আমরা কিছুদিন সময় নিয়ে দুজন দুজনকে চিনি-জানি, তারপর নাহয়..... -আইডিয়া টা কিন্তু খারাপ না! আমার কথায় রিয়া ও সায় দিলো.... আমাদের প্রস্তাব সংসদে পাশ হলো। কিন্তু বিরোধী দলীয় নেত্রীর মতো মা বারবার আপত্তি জানাচ্ছিলো। ছেলের বৌ কে ঘরে তুলতে তার যেন তর সইছে না! শেষমেষ বাবা অনেক বুঝিয়ে-সুঝিয়ে তাকে রাজি করালো। এরপর থেকে প্রতিদিন ডিউটি হলো রিয়ার বাসায় যাওয়া, তার সাথে গল্প করা, সময় কাটানো। আমি যেতে না চাইলেও বাবা-মা জোর করে পাঠাতো। আর রিয়া, রিয়ার বাবা-মায়ের চব্বিশ ঘন্টা ফোন তো আছেই! আমি যখন রিয়ার সাথে সময় কাটাই তখন বাড়ির চাকর-বাকরের ও আমাদের রুমে ঢুকে ঘর পরিষ্কার কিংবা অন্যান্য কার্যক্রম করা নিষিদ্ধ। শত হোক ওনাদের কাছে আমি এ বাড়ির হবু জামাই ( ) আমাদের ডির্স্টাব হোক তা কখনোই তাদের কাম্য নয়। রিয়া আমার কাধে মাথা রেখে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দেয়। কিন্তু আমার মন পড়ে থাকে সুমি কাছে। সুমি নিশ্চই আমাকে না দেখতে পেয়ে খুব কষ্ট পাচ্ছে? বাবা-মা কে মন থেকে সত্যি টা বলার তাগিদ অনুভব করলাম। যেই ভাবা সেই কাজ। কিন্তু আমি কি জানতাম তারা আমার মতামতের কোনো মূল্য দেবে না? তাদের মতে বেশি বড়লোকের মেয়েরা নাকি সংসারী হয় না। তাছাড়া রিয়ার কে নাকি তাদের খুব পছন্দ হয়েছে তাই অন্য কোনো মেয়ে দেখার প্রশ্নই উঠে না। হোক সে আমার পছন্দের.... সুমির কথা ওদের কাছে বলে আরও বিপদে পড়লাম। বিয়ের আগ পর্যন্ত আমার রিয়ার বাড়ি ছাড়া অন্য কোথাও যাওয়া সম্পূর্ন নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হলো। সুমির সাথে যে দেখা করবো সেই সুযোগ টা ও পাচ্ছি না। তার ফোন টা ও সুইচ অফ। সুমি সাথে যে করেই হোক দেখা করার সিদ্ধান্ত নিলাম। একদিন সবার অজান্তে চলে গেলাম তাদের বাসায়। কিন্তু আফসোস সুমি কে পেলাম না। বাসায় শুধু আন্টি আর মিম মানে সেই ডিম সেই যে সুমির জন্মদিনে বেড়াতে এসেছিলো আর যায় নি। আন্টির সাথে বেশ কিছুক্ষন কথা হলো। কিন্তু খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম যখন তিনি আমার বাসার ঠিকানা চাইলেন। অনিচ্ছা সত্বেও আমি দিয়ে দিলাম। কিন্তু তখন যদি জানতাম কেন চেয়েছে তাহলে কি আর আমি এ ভুল করতাম....? একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি ড্রয়িং রুমে সুমির মা বসে আছে। আমার মায়ের সাথে কি ব্যাপারে জানি কথা বলছে.... কথা-বার্তা শোনার জন্য কান পাতলাম। -আপা আমার মেয়ে কিন্তু আপনার ছেলে কে খুব পছন্দ করে। তাই আমি চাচ্ছিলাম ওদের দুটি হাত এক করে দিতে! আমি খুব খুশী হয়ে গেলাম যাক, এতোদিনে সুমি একটা কাজের কাজ করেছে! মা পাকা কথা না দিলেও বলেছে ভেবে দেখবে। ওনার সাথে কথা বলে আম্মুর নাকি খুব ভালো লেগেছে। তার ধারনা মহিলার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড ও নিশ্চই ভালো হবে। বেশি বড়লোকের মেয়েরা সংসারী হয় না তার এমন ধারনা পাল্টে যেতে লাগলো। মহিলার কথা-বার্তা যেহেতু ভদ্র, মার্জিত তার মেয়ে ও নিশ্চই সেরকম হবে..... একদিন আন্টি আমার মোবাইলে ফোন দিলো.... -বাবা আমার মেয়ে কে তোমার কেমন লাগে সত্যি করে বলো তো? আমি ভদ্রতার খাতিরে কিছু বললাম না। শত হোক লজ্জা-শরমের একটা ব্যাপার আছে তো! -কি হলো বাবা বলো? লজ্জার কিছু নেই! -আন্টি সত্যি বলতে কি ওকে আমার খুব ভালো লাগে। -বাহ! তাহলে তো খুব ভালো.... রিয়ার সাথে আমার বিয়ের অর্ধেক পাঁকা কথা হওয়া সত্বেও মা সুমিদের বাসায় গেলো একদিন। তাদের ঘর-বাড়ি পরিবেশ খুব পছন্দ হলো তার। মা বাসায় আসলে তার মতামত জানতে চাইলাম। সে জানালো সব কিছু তার পছন্দ হয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি নাকি পছন্দ হয়েছে তার পাত্রী কে.... আমি খুশি খুশি গলায় বললাম.... -হ্যা মা, সুমি খুবই ভদ্র আর সুন্দরী ওর মতো মেয়েই হয় না! -কি বলছিস তুই, মেয়ের নাম ও দেখি জানিস না! সুমি হচ্ছে ওর ছোট বোনের নাম, পাত্রীর নাম তো মরিয়ম ......!!!!
.................................... ......... .
................................................ আমার হাসি টা সেকেন্ডের মধ্যে উবে গেলো! নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছি না। বিধাতা এ কোন ধরনের খেলা খেলছে আমার সাথে? ঘরের চেয়ার-টেবিল, আসবাবপত্র আমার চোখের সামনে উল্টে-পাল্টে যেতে লাগলো। এমন কেন হচ্ছে? ভূমিকম্প নাকি? আমি আর দাড়িয়ে থাকতে পারলাম না, টলতে টলতে সোফায় হেলে পড়লাম। মা এসে আমাকে ধরে ফেললো। তারপর ই সব কিছু অন্ধকার.... চোখ মেলে নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করলাম। দেখি আমার পাশে মা বসে আছে। মা কাঁদছে। আমি মাকে অভয় দিলাম কিছুই হয় নি আমার..... বেশ কিছুদিন বিছানায় পরে রইলাম। মা যথাসাধ্য আমার সেবা করলো। কিন্তু শরীর আর ভালো হয় না। শেষমেষ আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হলো। আমার অসুস্থতার কারন মনে হতেই আমার খুব হাসি পেলো। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে হাসা টা সম্ভব নয়, তাই মুখে আসার আগেই হজম করে ফেললাম। যে কোনো ভাবেই হোক রিয়া আর মরিয়মদের বাসায় আমার অসুস্থতার খবর পৌঁছলো। দল বেঁধে দুই বাড়ির (কিংবা দুই শ্বশুর বাড়ির) লোকজন আসতে লাগলো। ওরা এমনভাবে কান্না-কাটি করছে যেন আমি ক্যান্সারের রোগী। আর কিছুক্ষনের মধ্যেই মারা যাচ্ছি..... মরিয়ম, মিম আর রিয়া দরজার পাশে দাড়িয়ে বড়দের বিলাপ করার সুযোগ দিচ্ছে। আমার সামনে আসছে না। ইশারায় আমি মিমের কাছে সুমি কথা জানতে চাইলাম। সে জানালো সুমি আসছে..... কর্তব্যরত মহিলা ডাক্তার (কিংবা মেয়ে ডাক্তার) সোনামনি এসে রুমের অবস্থা দেখে থমকে গেলেন..... -এ কি! আপনারা কি শুরু করেছেন!! এরকম কান্নাকাটি করলে তো পেশেন্ট এর অবস্থা আরও খারাপ হবে। প্লিজ আপনারা বেরিয়ে যান..... সবাই বেরিয়ে গেলেও অনেক রিকোয়েস্ট করে রিয়া আমার রুমে থেকে গেলো। ওর দেখা-দেখি মরিয়মও রিকোয়েস্ট করা শুরু করলো। ডাক্তার সাহেবা মনে হয় অনেক দয়ালু! দুজনকেই থাকার অনুমতি দিলেন..... আমি জানি ওদের দুজনের মনে এখন কি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে! রিয়া ভাবছে আমার হবু বরের সাথে এই বজ্জাত মেয়ে টা কি করছে? আর মরিয়মও একই কথা ভাবছে... আমার হবু বরের সাথে এই কুটনী মেয়েটা কি করছে? বাহ! খেলা তো জমে উঠেছে। এই খেলায় আমি দর্শক মাত্র। ফলাফল উপর থেকে ফিক্সড করে দেয়া হয়েছে। সময় মতো উত্তর পাওয়া যাবে। আমার অসুস্থতা ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করলো। চারপাশে বিনোদন দেয়ার মতো এতো মানুষ থাকলে কি আর অসুস্থ থাকা যায়? -রিয়া পরিচিত হয়ে নাও, এ হচ্ছে মরিয়ম আমার হবু বৌ। মরিয়ম তুমিও পরিচিত হয়ে নাও এ হচ্ছে রিয়া আমার হবু বৌ..... রিয়া আর মরিয়ম পরস্পর মুখ চাওয়া- চাওয়ি করলো! দেখার মতো একটা দৃশ্য...আমি সাথে সাথে হাহা করে হেসে উঠলাম। -কি হলো ভয় পেয়েছো? আমি তো মজা করলাম! তারা দুজন ও হেসে উঠলো। কিন্তু হাসির মধ্যে একটা অনিশ্চিত ভাব আছে। রাত ঘনিয়ে এলে রিয়া আর মরিয়ম কে রেখে পরিবারের বাকি সদস্য রা চলে গেলো। তারা দুজনই আমার দেখা- শোনার দায়িত্ব নিয়েছে। কিন্তু অন্য ফ্যামিলির একটা মেয়ে আমার সাথে কেন থাকবে এটা যেন দুই পরিবারের কেউই মেনে নিতে পারছে না। রিয়ার বাবা-মা ও না, মরিয়ম বাবা-মা ও না। কিন্তু সেটা প্রকাশ করলো না। কোনো ঝামেলা না পাকিয়েই বাড়ির পথ ধরলো..... রাত দশটা নাগাদ সুমি আমার কেবিনে উপস্থিত হলো সাথে মিম ও রয়েছে। সুমি চেহারা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলো। যেন কিছুই হয় নি! কিন্তু আমি জানি তার ভেতর টা ফেটে যাচ্ছে, আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে ইচ্ছে করছে। মেয়েটা সম্ভবত আমার উপর অভিমান করেছে। হুট করে না বলে বাসা থেকে চলে এসেছি বলে, কিন্তু কেন যে এসেছি সেটা যদি জানতো! আচ্ছা আমার ও তো সুমির সাথে রাগ করা উচিৎ? সে ও তো মোবাইল ফোন বন্ধ রেখেছে, আমার সাথে কোনো যোগাযোগ রাখে নি.... সুমির সাথে মন খুলে কথা বলতে খুব ইচ্ছা করছে। কিন্তু এই মূহুর্তে কেবিনে আরও তিনটা মেয়ে আছে (যাদের মধ্যে দুজন আমার হবু বৌ ) কাজেই সেটা করা সম্ভব হচ্ছে না..... -কিরে সুমি? তুই এতো রাতে? বাসায় চলে যেতে পারিস, আমি আছি এখানে... (মরিয়ম) -না আপু, আমার কোনো সমস্যা নেই থাকতে। তুমি চাইলে বরং যেতে পারো... -তাহলে আমরা একসাথেই থাকি, ওর কখন কি লাগে আবার.....কিরে মিম তুই ও কি থাকবি নাকি....? - না না আমিও থাকবো! মিম দ্রুত উত্তর দিলো.... রিয়া আর মরিয়ম আমার মাথার পাশে বসে আছে। রিয়ার লম্বা চুল (খায়রুন সুন্দরীর মতো) আমার মাথার অর্ধেক টা ঢেকে আছে। সুমি আর মিম আমার পায়ের কাছে বসলো। এই মূহুর্তে আমার নিজেকে সৌদি প্রিন্স মনে হচ্ছে। যার চারটা বিবি তাকে আদর-যত্ন করছে! আমি চারজনের ভাব-ভঙ্গি লক্ষ্য করলাম। একজন ও আমাকে ছেড়ে এক মূহুর্তের জন্য ও উঠছে না। মনে হচ্ছে একে-অপরকে পাহাড়া দিচ্ছে যেন আমার খুব বেশি ঘনিষ্ঠ না হতে পারে। মিম মনে মনে হিংসা করছে সুমি কে, সুমি।হিংসা করছে তার আপন বড় বোন মরিয়ম কে, মরিয়ম আবার হিংসা করছে রিয়া কে! কি অদ্ভুদ এক চক্র....
কিছুক্ষন পর দরজায় ঠকঠক আওয়াজ হলো..... -আসতে পারি? দরজায় মেয়ে বয়সী ডাক্তার টা কে দেখা যাচ্ছে..... -এ কি ম্যাডাম! আপনিই তো আমাদের থাকার অনুমতি দিয়েছেন আর আপনিই কি না আসার জন্য অনুমতি চাচ্ছেন!
রিয়া হেসে বললো.... -না ভাবলাম হঠাৎ এসে আপনাদের ডির্স্টাব করা টা ঠিক হবে না, তা কি নিয়ে আলাপ চলছিলো? -না তেমন কিছু না.... -আজ সারা রাত হাসপাতালে ডিউটি কিন্তু হাতে কোনো কাজ নেই। তাই ভাবলাম আপনাদের সাথে একটু গল্প করি। এখানে তো আমার সমবয়সী চারজন মেয়ে আছেই! আপনাদের কোনো সমস্যা নেই তো? -নাহ কি যে বলেন! আপনি আসাতে ভালোই হলো.....মরিয়ম বললো কিন্তু কিছুক্ষনের মধ্যেই বুঝতে পারলাম। ডাক্তার সোনামনি আসলে ওদের সঙ্গে নয় আমার সঙ্গে গল্প করতে এসেছেন! উনি আমাকে একের পর এক অস্বস্থিকর প্রশ্ন করেই যাচ্ছেন.... -আপনি কি বিয়ে করেছেন? -জি না -করার চিন্তা-ভাবনা নেই? -না তো! উত্তর টা দিয়েই বুঝতে পারলাম বড় রকমের ভুল করে ফেলেছি! আমার দু পাশে বসা দুই ললনা পারলে আমাকে তাদের দৃষ্টি দিয়ে ভস্ম করে দেয়। টের পেলাম শরীর টা আবার কেমন জানি লাগছে! এ কেমন ডাক্তার? রোগী কে ভালো না করে আরও অসুস্থ করে ফেলে? এ কেমন বিচার? কিন্তু এই ডাক্তার সম্ভবত আমার হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ না করে থামবে না! আবার ও প্রশ্ন করলো.... -কখনো প্রেম করেছেন? এখন যদি বলি 'হ্যা' তাহলে মরিয়ম আর রিয়া আমাকে গলা টিপে মেরে ফেলবে। আর যদি বলি 'না' তাহলে..... নীলা আমাকে খুন করে ফেলবে! উভয় সঙ্কট বুঝি একেই বলে? আম্মুউউউ..... আমাকে বাঁচাও! আমি আর জীবনে প্রেম ও করবো না বিয়েও করতে চাই না..... -কি হলো বলছেন না যে? অনেক ভেবে চিন্তে 'না' উত্তর দিলাম। দুজনের চেয়ে একজনের আক্রোশের স্বীকার হওয়া অনেক ভালো! সুমি পারলে এখনই উঠে এসে আমার কলার চেপে দু-চারটা কিল ঘুষি দিয়ে দেয়! কিন্তু আফসোস বেচারির জন্য, এই মূহুর্তে সেটা করা সম্ভব হচ্ছে না.... কিছুক্ষন পর কারেন্ট চলে গেলো। হাসপাতালের জেনারেটর এ ও সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাই কেবিন কিছুটা অন্ধকারাচ্ছন্ন, চাঁদের আলোর কারনে সম্পূর্ন অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যায় নি.... অদ্ভুদ একটা অনভুতি হচ্ছে। আমার কাছে মনে হচ্ছে আমি মরে গেছি। এজন্য সম্ভবত চাঁদের রহস্যময় আলো দায়ী। ইষৎ নীল জোছনা পরিবেশটা কে অপার্থিব করে তুলছে। চোখে কখন যে তন্দ্রা এসে গেলো টেরও পেলাম না! সকালে সূর্যের মিষ্টি আলো চোখে পড়তেই আমার ঘুম ভেঙে গেলো। কিন্তু একি! আমি হাত-পাত নাড়াতে পারছি না কেন? প্যারালাইসিস হয়ে গেলাম নাকি? না ঘটনা সেটা নয়...চারটি দেহ শরীরের ওপর পড়ে আছে! আমার বালিশের দুপাশে রিয়া আর মরিয়ম আমার দু হাত ওদের দুজনের পিঠের নিচে! আর ওদের দুজনের হাত আমার বুকের ওপরে। সুমি আর মিম ঠিক আমার পায়ের কাছে। আর ডাক্তার সোনামনি নিচে বসে বেডে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। তার ডান হাত আমার পা স্পর্শ করে আছে.... একটু পর দরজায় এক নার্স কে দেখতে পেলাম। আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে উধাও হয়ে গেলো। একটু পর চার/পাচজন নার্সের একটা দল হাজির হলো। আমার করুন অবস্থা দেখে খুব মজা পাচ্ছে! -প্লিজ হেল্প মি নার্স! আমাকে ধ্বংস স্তুপ থেকে উদ্ধার করুন.... আমি চেচিয়ে উঠলাম! আমার চিৎকারে পাঁচজনের ঘুম ভেঙে গেলো। উঠে দেখলো নার্স রা আমাদের দেখে হাসছে। লজ্জায় একেকজন পারলে মাটি ফুড়ে ভেতরে ঢুকে যায়! হাসপাতাল থেকে সেদিন বিকেলেই আমি রিলিজ পাই। বাসায় ফিরতে না ফিরতেই দুই পক্ষ থেকে বিয়ের ডেট ঠিক করার জন্য চাপ আসতে থাকে। মা বেশ চিন্তায় পড়ে যান। কি করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না তিনি। মা আমাকে জিজ্ঞেস করলেন..... -তুই কাকে বিয়ে করতে চাস বাবা? -সত্যি বলবো মা? -হ্যা বল.... -একজনকে ও না! -কি বলিস তুই! তাহলে কাকে বিয়ে করবি? -মরিয়ম ছোট বোন সুমি কে.... মা যেন আকাশ থেকে পড়লেন! -মানে? তুই কি ওকে পছন্দ করিস? -শুধু পছন্দ না মা, আমরা একে অপরকে ভালোবাসি..... -আমাকে তো আগে বলিস নি? -বলার সুযোগ ই তো দাও নি.... -ঠিকাছে আমি এ ব্যাপারে তার বাবা- মায়ের সাথে কথা বলবো..... আমি খুশিতে মা কে জড়িয়ে ধরে চুমু খেলাম। এবার আমার আর সুমির মাঝে কোনো বাধা নেই! আমি সুমির মোবাইলে ফোন দিলাম। নাম্বার টা খোলা আছে। দুবার রিং হতেই ধরে ফেললো..... -হ্যালো সুমি -হ্যা বলো.... -আমি তোমার আর আমার বিয়ের ব্যাপারে মা কে বলেছি। আর কোনো সমস্যা নাই, আমাদের দুজনের মধুর মিলন ঘটতে যাচ্ছে! -হাহাহা! কিন্তু শিমুল দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি....আমি যে তোমাকে বিয়ে করতে পারছি না...


** ৮ম পর্ব **

:
- হাহাহা কিন্তু শিমুল দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি....আমি যে তোমাকে বিয়ে করতে পারছি না..... - মানে.....??? তুমি মজা করছো তাই না সুমি? - তুমি আমার কে? যে তোমার সঙ্গে মজা করতে হবে? আমার সঙ্গে আর কখনো যোগাযোগের চেষ্টা করবে না! - সুমি তুমি কি সত্যিই আমাকে বিয়ে করতে চাও না? - হ্যা... আর এটাই আমার ফাইনাল ডিসিশান! - ঠিকাছে আমি মেনে নিলাম, কিন্তু হঠাৎ কেন এমন সিদ্ধান্ত নিলে জানতে পারি? - আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি.... বলেই ঠাস করে ফোনটা রেখে দিলো সুমি। তার কথা শুনে আমি বোবা হয়ে গেলাম। হঠাৎ এমন পাল্টে গেলো কেনো মেয়েটা? উল্টোপাল্টা কি বলছে এসব? হূমায়ুন আহমেদের একটা উক্তির কথা মনে পড়ে গেলো আমার.... "তরুণী মেয়েদের হঠাৎ আসা আবেগ হঠাৎ চলে যায়। আবেগকে বাতাস না দিলেই হলো। আবেগ বায়বীয় ব্যাপার, বাতাস পেলেই তা বাড়ে। অন্য কিছুতে বাড়ে না।" কথাটার মর্মার্থ এখন হাড়ে হাড়ে এমনকি মাংসে মাংসে টের পাচ্ছি। সুমির ক্ষনিকের আবেগ কে পাত্তা দেয়াটা মোটেই ঠিক হয় নি আমার। ও যদি অন্য কাউকে ভালোবেসে সুখী হতে পারে আমি কেনো অন্য কাউকে বিয়ে করে সুখী হতে পারবো না? মাথায় জেদ চেপে গেলো আমার। সুমিকে দেখিয়ে দিতে হবে! কারো জন্য জীবন থেমে থাকতে পারে না... কখনোই না.... বিভিন্ন দুশ্চিন্তায় আবার আমার শরীর খারাপ করলো। মা আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইলো কিন্তু আমি রাজি হলাম না। শেষমেষ বাধ্য হয়ে মা ডাক্তার সোনামনি কে ফোন করলো বাসায় এসে আমাকে চেক-আপ করে যেতে। যেই ভয়ে আমি হাসপাতালে যেতে চাচ্ছি না সেটাকেই মা ফোন করে বাসায় আনতে চাচ্ছে! কি মসিবত!! তবে একটা কথা ভেবে মনে মনে স্বস্তি পাচ্ছি, সোনামনির মতো একজন বড় মাপের MBBS ডাক্তার কখনো কারো বাসায় যেয়ে চেক-আপ করবে না। চেম্বারে রোগী দেখতে দেখতেই ওনার দম ফেলার সময় থাকার কথা না.... আমার মনের কথা মনেই রয়ে গেলো ওদিকে কলিং বেল বেজে উঠলো। দরজা ডাক্তার সোনামনি দাড়িয়ে আছে! এ দৃশ্য দেখে আমি আরও অসুস্থ হয়ে গেলাম.... মা আমার রুম দেখিয়ে দিতেই সোনামনি সরাসরি ঢুকে পড়লো। আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো সে। তার পরনে সাদা এপ্রোন ও সেলোয়ার-কামিজ। নিতান্তই সাধারন পোশাক। কিন্তু কেনো যেন তাকে সাধারন লাগছে না। একটা পার্টি সাজ দেয়া মেয়েকে যদি তার সামনে দাড় করিয়ে জিজ্ঞেস করা হয় হয় কাকে বেশি সুন্দর লাগছে। নব্বই শতাংশ মানুষের উত্তর হবে সোনামনি কে..... মনের ভেতর একটা প্রশ্ন খচমচ করছে। তাকে না বলে পারলাম না.... - আপনাকে একটা প্রশ্ন করতে পারি ম্যাডাম সোনা..? - ম্যাডাম বলা লাগবে না শুধু সোনা বললেই চলবে, চাইলে তুমি ও বলতে পারেন! - এতো তারাতারি একজন অপরিচিত মানুষ কে আপনার নাম ধরে ডাকার অনুমতি দিয়ে দিলেন? শুধু তাই না... আবার তুমি বলে ডাকার ও? - প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই। তবে একটা কথা বলতে পারি মেয়েরা সাধারন কাউকে তার নাম ধরে ডাকার কিংবা তুমি করে বলার অধিকার দেয় না.... - তারমানে আমি অসাধারন কেউ? - হয়তো! - কি যে বলেন না.... আমি অসাধারন হতে যাবো কোন দুঃখে? আমি তো আধমরা একটা রোগী! কিছুদিন পর মারা যাবো.... সোনামনি আমার মুখ ধরে ফেললো। যেন বিশাল কোনো অলুক্ষুনে কথা বলে ফেলেছি! সোনামনির এমন আচরনে আমি বেশ অবাক হয়েছি। এমনটা পরিচিতজন দের সাথে করা যায়। কিন্তু মাত্র কয়েকদিন হলো আমি তাকে চিনি। সোনামনি কে বেশ বিব্রত দেখাচ্ছে.... - সরি! - ইটস ওকে... - কি প্রশ্ন জানি করতে চেয়েছিলে? (আপনি থেকে সরাসরি তুমি) - না মানে বলছিলাম তোমার মতো একজন বড় ডাক্তার আমার বাসায় আসবে ভাবতে পারি নি। MBBS ডাক্তার রা তো চেম্বার আর হাসপাতাল ছাড়া রোগী দেখে না.... - তোমার কথা ঠিক কিন্তু সব জায়গায় সব নিয়ম খাটে না যে! - বুঝলাম না.... - মেয়েদের অনেক কথার অর্থ ই ছেলেরা বোঝে না। বাদ দাও.... - ওকে দিলাম! বিদায় নেয়ার আগে সোনামনি আগামীকাল আবার এসে আমাকে দেখে যাবে বলে মা কে কথা দিলো। মা তাকে পেমেন্ট দিতে চাইলে সে রাগ দেখিয়ে বললো এমনটা করলে আর কখনোই সে আমাদের বাসায় আসবে না! সোনামনির আচরন রহস্যময় মনে হলো আমার কাছে। কোনো কিছু ঘটার আগেই যা করার করতে হবে। মা কে বলে দিলাম রিয়ার সাথে আমার বিয়ের ডেট ফাইনাল করতে। মা সুমির কথা জানতে চাইলে আমি সু-কৌশলে এড়িয়ে গেলাম..... সোনামনি যথাসময়ে আবার এসে উপস্থিত। সবার আগে তাকেই আমি সংবাদ টা দিলাম.... - সোনামনি আমার বিয়ে ঠিক হচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যেই ডেট ফাইনাল হবে। প্রথম দাওয়াত টা তোমাকেই দিলাম। আসতেই হবে কিন্তু তোমাকে..... কথাটা শুনে সোনামনি থমকে গেলো। তারপর দ্রুত সামলে নিয়ে মুখে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে বললো..... - এ তো দারুন সংবাদ! আমি অবশ্যই আসবো। তা মেয়ে টা কে? - রিয়া! ওই যে সেদিন রাতে কেবিনে ছিলো, দীর্ঘকেশী মেয়েটা.... - চিনেছি, মেয়েটা কিন্তু দারুন সুন্দরী! - হ্যা, অনেকটা তোমার মতো.... - আমি বুঝি সুন্দরী? - নিঃসন্দেহে! মেয়েটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো.... - কিন্তু আমার এ রুপ যে বৃথা! - এ কথা বলছো কেন? - মধু আহরনকারী ভ্রমর টা যদি ফুলের মনের মতো না হয় তাহলে ফুলের যৌবন বৃথা গেলো.... - তোমার এই উচ্চমাপের দার্শনিক কথা- বার্তা বোঝা আমার কম্ম নয়! - বোঝো তো সবই না বোঝার ভান করে থাকো আরকি! আমি আজ তাহলে উঠি.... আমি তার গমন পথের দিকে চেয়ে রইলাম। মেয়েটা অনেক রহস্য করে কথা বলে। তার কথার মারপ্যাচ বোঝার সাধ্য সবার নেই..... ***** মা-বাবা রিয়াদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। ঘন্টাখানেকের মধ্যে আবার ফিরে আসলো। চেহারায় খুশি খুশি ভাব! - কি হলো মা, এতো খুশি যে? - খুশি হবো না? আমার ছেলের জন্য লাল টুকটুকে বৌ ঘরে আসছে! - কিন্তু মা রিয়া কি দেখতে লাল রংয়ের? - এই ফাজলামো ছার তো! - ওকে ছারলাম, তা বিয়ের ডেট কি হয়েছে? - হ্যা... সামনের শুক্রবার!!!


** পিচ্চি মেয়ের ভালোবাসা **
** ৯ম ও শেষ পর্ব **

 ↓
:
- বিয়ের ডেট কি ঠিক হয়েছে? - হ্যা...সামনের শুক্রবার! এটা সুসংবাদ নাকি দুঃসংবাদ বুঝতে পারছি না। আমি কল্পনায় দেখতে পাচ্ছি ফুলসজ্জার রাতে রিয়া আমার বেডরুমের খাটের ওপর ঘোমটা দিয়ে বসে আছে, আমাকে রুমের ভেতর ঢুকিয়ে দরজা বাইরে থেকে লাগিয়ে দেয়া হয়েছে! কি অবস্থা টা হবে আমার? এদিকে বিয়ের ধুমধাম শুরু হয়ে গেছে। পুরো বাড়ি লাল-নীল বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে। বিয়ের মার্কেট ও চলছে পুরোদমে। কিন্তু আমি একদিন ও বাবা-মায়ের সাথে শপিং এ গেলাম না। এক সপ্তাহ পর যে আমার বিয়ে কোনো ফিলিংস ই কাজ করছে না আমার মধ্যে! 'যার বিয়ে তার খবর নাই, পাড়া-পড়শীর ঘুম নাই' বুঝি একেই বলে? :p রিয়া একদিন ফোন করলো.... - হ্যালো? - হ্যা রিয়া বলো.... - কেমন আছো? একটা ফোন ও তো দাও না, কাকে নিয়ে এতো বিজি শুনি? - ওমা কাকে নিয়ে আর বিজি থাকবো! - তোমার কি আর মানুষের অভাব আছে নাকি? যাকগে... এতোদিন যা করার করেছো কিন্তু শুক্রবারের পর যদি আমার একটা কথার বাইরে গেছো তাহলে কিন্তু... - এই...এই! ভয় দেখাবা না প্লিজ, পরে দেখবা বরপক্ষ কনে পক্ষ সবাই আছে শুধু বরটাই নেই! ভেগে গেছে। :(
- ইস! বললেই হলো? কোথাও যেতে দেবো না তোমাকে, সারা জীবন আমার আচলের সাথে বেঁধে রাখবো। এই জানো? ফুল-সজ্জা রাতের জন্য না আমার আর তর সইছে না, কতো অপেক্ষা করে আছি! 
- ও তাই নাকি? ফুল-সজ্জার রাত কি খুব মজার? :D
- নাটক, সিনেমায় যতটুকু দেখেছি মজার ই তো হওয়ার কথা! ;)
- মজার না ব্যাথার পরে টের পাইবা! :p
- এই শয়তান কি বললা তুমি? দাড়াও তোমাকে পেয়ে নেই! এই শোনো...তুমি কি একটু আসবা? তোমাকে খুব দেখতে মন চাচ্ছে! :'(
- আসলে কি দিবা শুনি? ;)
- যা চাও! 
- তোমাকে একটা পাপ্পি দিবো! :*
- যাহ দুষ্টু... কি বলে এসব! :o ^_^ 

- যাও আসবো ই না হুম..... :(
- এই না....না! যা চেয়েছো পাবা। আসো প্লিজ? তুমি তো আমার হাজবেন্ড হবা ই। সো...সমস্যা কি! - আরে ধুর! আমি তো মজা করলাম। এইতো আর কয়েকটা দিন, একটু ওয়েট করো.... :)
- ওকে! কি আর করা। *** এদিকে বিয়ের দিন ক্রমেই ঘনিয়ে আসছে, আমি মানষিক ভাবে প্রস্তুত হচ্ছি রিয়ার আচলের গিট্রুর সাথে বাধা পড়ার জন্য। আমি যে রিয়ার প্রতি দুর্বল তা কিন্তু না, আসলে সুমি কে দেখিয়ে দিতে চাই সে যেমন আমাকে ছাড়া সুখে আছে, আমিও তাকে ছাড়া সুখে আছি। গায়ে হলুদের দিন আমার অফিস কলিগরা দলবল সহ হাজির হয়ে গেলো। তাদের মধ্যে আমার বন্ধু শুভ ও আছে, যে আমাকে সর্বপ্রথম রিয়ার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। তার সাথে অনেকদিন যোগাযোগ হয় নি। ফেমিলিগত প্রবলেম হয়েছিলো তার, বৌয়ের সাথে ডিভোর্স হয়ে গেছে! আমার বিয়ে কার সাথে হচ্ছে প্রথমে তাকে জানাই নি, এসে যখন জানতে পারলো তখন তার ভিড়মি খাওয়ার দশা..... :p আর হ্যা আরেকজন বিশেষ অতিথী ও কিন্তু এসে হাজির হয়েছে। ডাঃ সোনামনি! ভারী সাজ দিয়ে এসেছে, দুর্দান্ত সুন্দরী লাগছে মেয়েটাকে। সবার নজর ঘুরেফিরে তার দিকেই পড়ছে, কিছুক্ষনের মধ্যেই অনুষ্ঠানের মধ্যমনি হয়ে উঠলো সে। সোনামনি ইতিমধ্যেই বন্ধু মহলের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে গেছে। অনেকেই তার সাথে আলাপ জমানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু সে পাত্তাই দিলো না। সোনামনি আমার সাথেই কথা চালিয়ে যেতে লাগলো। শুভ আমাকে পাগল করে ফেললো তার সাথে রিলেশন করিয়ে দিতে, এমনকি ঘুষ ও সাধলো! :p আমি ব্যাপারটা দেখার আশ্বাস দিলাম..... সবাই মিলে আমার ব্যাচেলর জীবনের শেষ দিন খুব উপভোগ করলাম। আজ আমি জীবিত, আগামী কাল হয়ে যাবো বিবাহিত! ভাবতেই গা শিউরে উঠছে.... আমার মৃত্যু পরোয়ানা জারী হয়ে গেছে। লাল রংয়ের শেরওয়ানী নামক কাপড় পরিয়ে আমাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ফাঁসির মঞ্চে (মানে রিয়াদের বাড়িতে)। আমার পা চলে তো চলে না! হঠাৎ পকেটের ফোন বেজে উঠলো, নাম্বার টা সুমির ! দেখে মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। আমি কেটে দিলাম। কিন্তু অনবরত ফোন দিয়েই যাচ্ছে নাছোড়বান্দা মেয়েটা। ফোন ধরছি না দেখে শেষমেষ মেসেজ দিলো- 'প্লিজ ফোন টা ধরো! তোমার সাথে খুব জরুরী কিছু কথা আছে, কথা দিচ্ছি জীবনে আর কোনোদিন তোমাকে ফোন দিবো না।' দিলাম ফোনটা বন্ধ করে! নিজেই সবকিছু শেষ করে এখন আবার এসেছে আমার সাথে কথা বলতে...... >_< ভালোভাবেই বিয়ের সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়ে গেলো। আমি আর রিয়া এখন স্বামী-স্ত্রী! কবুল বলার আগে সোনামনি দিকে আড়চোখে একবার তাকালাম। দেখি আমার দিকেই চেয়ে আছে সে! প্রানপনে মুখে হাসি ধরে রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু চোখের অশ্রু কি আর বাধ মানে.....? ব্যান্ড বাজিয়ে বৌ ঘরে তুললাম। রাত বাড়ার সাথে সাথে একে একে সবাই বিদায় নিলো। শুধু শুভ আর সোনা বাদে। সোনামনি ও চলে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু শুভর অনুরোধে তাকে থাকতে বললাম। শত হোক সম্পর্ক তৈরী করার দায়িত্ব টা তো আমিই নিয়েছি.... নানান উছিলায় আমি বাড়ির এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করতে লাগলাম। রিয়া আমার রুমে ঘোমটা দিয়ে বসে অপেক্ষা করছে আমার জন্য। কিন্তু আমি তার সামনে যেতে খুবই ভয় পাচ্ছি! শুভ আর সোনামনি ব্যাপার টা ধরে ফেললো। আমাকে এক প্রকার জোর করে রুমের ভেতরে ঢুকিয়ে দিলো। আমি চোখের ইশারায় শুভ কে বলে দিলাম এই ফাকে সোনামনির সাথে যতোটা পারা যায় ফ্রি হয়ে নিতে। আজ সারা রাতই পড়ে আছে..... রিয়া আমাকে দেখে মুচকি মুচকি হাসছে। আমাকে দেখতে নিশ্চই গাধার মতো লাগছে? :( একটা ছুতো দিয়ে বাইরে যেতে চাইলাম আমি। কিন্তু রিয়া আমার হাত ধরে ফেললো! -কোথায় যাচ্ছো? -এইতো আসছি.... -না, বসো তুমি! -ইয়ে মানে... -বসতে বলেছি না? >_< আমি বাধ্য ছেলের মতো বসে পড়লাম... -এইতো লক্ষী ছেলে.... ;) :* আমি বালিশটা নিয়ে ফ্লোরে শুয়ে পড়লাম। কিন্তু এতেও শান্তি নাই! আমাকে ধরে খাটের ওপর বসানো হলো... -রিয়া প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও! আমি একটু শান্তিতে ঘুমোতে চাই.... :( -কি বললা তুমি! :o  -না না কিছু না.....   আচমকা আমাকে খাটে ধাক্কা দিয়ে ফেলে আমার উপরে উঠে পড়লো দুষ্টু মেয়েটা! আমার ঠোটে গভীর এক চুমু একে দিলো!! - সেদিনের পাওনা টা মিটিয়ে দিলাম! ;) ওর চুম্বনে আফিম জাতীয় কিছু একটা আছে। কেমন জানি মাতাল মাতাল লাগছে। -যেদিন রাতে প্রথম তোমার বাসায় গিয়েছিলাম সেদিন তো হা করে আমার দিকে চেয়েছিলে, আজ কেনো এতো কাছে পেয়েও ভনিতা করছো? :/ -রিয়া তুমি আমার বুকের ওপর থেকে একটু সরবে প্লিজ? তোমার ভার আমি কি করে সহ্য করি বলো? কিন্তু মেয়েটা সরছেই না। আমাকে ছাড়বে না বলে পন করে এসেছে মনে হয়! হঠাৎ মোবাইলে ফোন আসলো, সুমির মায়ের নাম্বার! ফোনটা ধরতে যেয়েও রিয়ার বাধার সম্মুখীন হলাম.... -আজ পুরো রাতটা আমি তোমার কাছে চাই! ফোন টোন সব বন্ধ করো! আমি তার বাধা উপেক্ষা করে ফোন টা ধরলাম.....ওপাশ থেকে সুমির মায়ের উদ্বিগ্ন কন্ঠ ভেসে এলো! -হ্যালো বাবা তুমি জলদি এসো, সুমি ভেতর থেকে গেট আটকে বসে আছে, কিছু হওয়ার আগেই তুমি আসো....!!! 
  আমি এক ধাক্কায় রিয়াকে সরিয়ে দিলাম, ও ছিটকে ফ্লোরে পড়ে গেলো। তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে যেতে চাইলাম আমি, রিয়া আবার আমার হাত ধরে ফেললো.... -কোথায় যাচ্ছো তুমি? এই ফুলসজ্জার রাতে তুমি আমাকে স্বামীর সোহাগ থেকে বঞ্চিত করবে?  -দেখো রিয়া এসব পরেও করা যাবে, এখন আমাকে যেতেই হবে! আমি ঝাড়া দিয়ে হাতটা ছুটিয়ে নিলাম, বাসার সবাই আমাকে বাধা দিয়েও আটকে রাখতে পারলো না..... সুমির বেডরুমের বাইরে তার মা মরিয়ম আর মিম কান্না করছে আর তাকে বেরিয়ে আসতে বলছে কিন্তু কিছুতেই গেট খুলছে না সে। আমিও অনেকক্ষন ডাকাডাকি করলাম। কিন্তু কোনো লাভ হলো না...... শেষে দুইটা লাথি দিয়ে দরজা ভেঙে ফেললাম! ভেতরের দৃশ্য দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না আমি। সুমি নিথর দেহটা ফ্লোরে পড়ে আছে! একহাত দুরে একটা ছোট শিশি। তারমানে বিষ খেয়েছে সে! :o আমি সোনামনিকে ফোন দিয়ে বললাম জলদি শুভকে নিয়ে এখানে চলে আসতে। সোনামনি একজন ডাক্তার, সুমিকে বাচাতে পারলে একমাত্র সেই পারবে! কিছুক্ষন পর সোনামনি এসে পৌঁছে গেলো। সুমিকে কিছুক্ষন দেখলো সে, তার হাতে নাড়ী টিপে ধরলো। 'আমি দুঃখিত! সুমি আর আমাদের মাঝে নেই!!' সোনামনি জানালো..... সাথে সাথে গগনবিদারী চিৎকার করে উঠলো সুমির মা আর দুই বোন। আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি! নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছি না। আমার ও ভেতর থেকে ফেটে কান্না বেরিয়ে আসলো। সুমি কে বুকে জড়িয়ে ধরে কাদতে লাগলাম আমি। মৃত্যু ও তার সৌন্দর্য এতোটুকু ম্লান করতে পারে নি! আমার মনে হচ্ছে এখনই সে চোখ খুলে বলে উঠবে- 'শিমুল আমি মজা করেছি, এইতো আমি বেচে আছি!' হঠাৎ তার হাতের দিকে চোখ পড়লো আমার। মুঠো করা, ভেতরে একটা কাগজ দেখা যাচ্ছে। ওটা একটা চিঠি! আমি পড়তে শুরু করলাম..... 'শিমুল আমি জানি, আমার মৃত্যুর খবর শুনে তুমি আসবে তাই তোমার জন্য চিঠিটা লেখা। চিঠি যখন পড়বে তখন হয়তো আমি আর থাকবো না। আমি তোমাকেই ভালোবাসি শিমুল অন্য কাউকে তো প্রশ্নই ওঠে না। আমি তোমাকে ফোনে উল্টো-পাল্টা কথা বলেছি যেন তুমি আমার ওপর জেদ করে মরিয়ম আপু কে বিয়ে করো। সে তোমাকে খুব পছন্দ করে। আমি কি করে ছোট বোন হয়ে আমার বড় বোনের পছন্দের জিনিস টা কেড়ে নেবো বলো? কিন্তু তুমি মরিয়ম আপু কে বিয়ে না করে অন্য মেয়ের হাত ধরেছো। আমার ছোটো বেলার অবুঝ ভালোবাসা আজ অন্যের! এ দৃশ্য দেখার চেয়ে মরে যাওয়াই অনেক ভালো মনে হয়েছে আমার। এ জন্মে হয়তো তোমাকে পাই নি তবে তোমাকে পাওয়ার জন্য আমি জন্ম-জন্মান্তর ধরে অপেক্ষা করবো। বিদায়........  :) ' আমি কেদেই চলেছি! পাগলের মতো সুমির শরীর ঝাকাচ্ছি। সুমি..... ও সুমি! ওঠো? একবার চোখ খুলে তাকাও? দেখো আমি এসেছি! আমার সাথে রাগ করবে না? আমার সাথে লুকিয়ে ছাদে দেখা করবে না? এই সুমি.....আমার না খুব ক্ষিদে পেয়েছে! আমার জন্যে খাবার রান্না করে আনবে না তুমি? দেখো আমি অন্য মেয়ের সাথে কথা বলছি! অভিমান করে মুখ ভার করে বসে থাকবে না তুমি? কিন্তু আমি জানি আর কখনোই সুমির মুখ দিয়ে কথা বেরোবে না, আর কখনোই কেউ আমার সাথে রাগ করবে না, কখনোই আর খাবার হাতে দরজার বাইরে দাড়িয়ে থাকবে না কেউ, অযথা অভিমান ও করবে না! আর কেউ কোনোদিন জোছনা রাতে ছাদে আমার জন্য অপেক্ষা করবে না..... যেখানেই থাকো ভালো থেকো সুমি, ভালো থেকো আমার অবুঝ ভালোবাসা......


                     সমাপ্ত


     * কমেন্ট বক্সে অবশ্যই কমেন্ট করে
    জানাবেন গল্পটি কেমন লাগব.....ধন্যবাদ *





ভালোবাসা বিষয়ক টিপস -১০

love-tips ♥ তুমি পাশে নেই তবুও তোমায় অনুভব করি। তুমি আমার হবে না জানি তবুও তোমার পথ চেয়ে আছি। সপ্ন সত্যি হবে না জানি তবু তোমায় নি...